আজকের পত্রিকা ডেস্ক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন পশ্চাদ্গামী। তার জায়গায় গড়ে উঠছে নতুন এক প্রভাব ও বৈধতার লড়াই। যেখানে ক্রমেই নিজেদের ‘বৈশ্বিক নেতৃত্বের’ দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে চীন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক ঐকমত্য, যার মূল ভিত্তি ছিল উদার গণতন্ত্র, বহুপাক্ষিকতা ও উন্মুক্ত বাজারনীতি। কয়েক দশক ধরে এই তথাকথিত ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ ইউরোপ ও এশিয়ার মিত্র দেশগুলোকে দিয়েছে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি। একই সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকেও। তবে এই ব্যবস্থা কখনোই দ্বন্দ্বমুক্ত ছিল না। ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন ও দখলদারত্ব—প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত আগ্রাসী ভূমিকা তার নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট আরও উন্মোচন করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা।
তবে এই ব্যবস্থার আসল ভাঙন শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে। জাতীয়তাবাদের চরম হয়ে ওঠা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবজ্ঞা এবং আক্রমণাত্মক বাণিজ্যনীতি—সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকার প্রচলিত বৈশ্বিক নেতৃত্বের ধারা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়। তাঁর দৃষ্টিতে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করার মতো কোনো ঐতিহ্য নয়, বরং এক বোঝা। কারণ, তাঁর মতে, এটি চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে আমেরিকার ক্ষতির বিনিময়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অস্থির আচরণ কিংবা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে দেওয়া তীব্র ভাষার বক্তৃতা থেকে সরলীকৃত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো বিপজ্জনক হতে পারে। তবু যখন তিনি এক টুইটে ভারত ও রাশিয়াকে ‘চীনের গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন, তখন যেন সেটিই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিমুখতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। যদিও পরে গাজা সংকট নিয়ে ‘শান্তিচুক্তি’র নাটকীয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি কিছুটা পিছু হটেছেন বলে মনে হয়।
এই চিন্তাগত বিভাজন গভীর প্রভাব ফেলেছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেগুলোকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। এতে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থার ধারণাগুলোর জন্য পথ খুলে যায়। আমেরিকার আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ থাকা বেইজিং এই সুযোগে নিজেকে বহুপাক্ষিকতা ও স্থিতিশীলতার রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা শুরু করে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বারবার বলেছেন, ‘জাতিসংঘের কর্তৃত্ব রক্ষা’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন’ প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা। এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক নীতির বিপরীতে চীনকে এক দায়িত্বশীল বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে।
আজকের দিনে সির এই বার্তা এক দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি সাড়া ফেলছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত ও ব্রাজিলের মতো গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোর প্রতি তাঁর প্রশাসনের মুখোমুখি অবস্থান তাদের ওয়াশিংটন থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে এবং বেইজিংয়ের দিকে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে সি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি পরোক্ষ সমালোচনা করে ‘আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ এবং ‘সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতার’ আহ্বান জানান।
এই পুনর্গঠন কেবল প্রতীকী নয়। চীন এখন ১০০ টিরও বেশি দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, যাদের অনেকেই এসসিও সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই যুগে, ট্রাম্পের শুল্কের হুমকি ও বাণিজ্যযুদ্ধে মত্ত আমেরিকার তুলনায় চীনের স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি—বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে—আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠছে। যদিও চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতি অনেকাংশে অস্বচ্ছ ও রাষ্ট্রনির্ভর, তবু তা এখন ওয়াশিংটনের অস্থির নীতি, বাণিজ্যযুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার তুলনায় কম বিপর্যয়কর বলে মনে হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক। ট্রাম্পের নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ারকেই দুর্বল করেনি, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতাকেও ক্ষুণ্ন করেছে। ইউএসএআইডি, পাবলিক ডিপ্লোমেসি তথা জনকূটনীতি বিভাগ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাঁদা প্রদান এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার—এসব পদক্ষেপ দেশটির সেই কূটনৈতিক কাঠামোকেই ভেঙে দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনে প্রভাব বিস্তার করত। এই আত্মঘাতী পশ্চাদপসরণ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাহসী করে তুলেছে এবং মিত্রদের অস্থির করে তুলেছে এই বিষয়ে যে—শূন্যতা চীন পূরণ করতে উদ্গ্রীব।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক কাঠামো ভেঙে পড়লে তা শুধু স্থিতিশীলতার জন্য নয়, কূটনৈতিক অগ্রগতির জন্যও বিপজ্জনক হবে। যদিও কিছু বিশ্লেষক সর্বনাশা ভবিষ্যদ্বাণী করা থেকে বিরত থাকছেন, তবু অনেকেই একমত যে ট্রাম্পের নীতিগুলো পৃথিবীকে এক বিভক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক নতুন যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নতুন এই যুগকে আর আগের মতো মতাদর্শভিত্তিক জোটে ভাগ করা যায় না; বরং সেটি বাস্তববাদী সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন বোঝাপড়া—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত নীতির ঝুঁকি, অন্যদিকে চীনের অংশীদার হওয়ার লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করছে। অনেক দেশের কাছে বিষয়টি কর্তৃত্ববাদকে সমর্থন করার নয়, বরং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বহুমেরু বিশ্বে কৌশলগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়।
তবে চীনের উত্থানও চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের আগ্রাসী ভূমিকা, মানবাধিকার রেকর্ড, ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা, পাকিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ এবং দুর্লভ খনিজ সম্পদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা অনেকের উদ্বেগের কারণ। তবুও বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের আকর্ষণ এসব উদ্বেগকে অনেকাংশে আড়াল করে দিচ্ছে। ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বায়নের কাঠামো ভেঙে দিচ্ছেন, তখন বেইজিংয়ের বয়ান আরও প্রভাবশালী হচ্ছে। সবাই যে সেটি গ্রহণ করছে তা নয়, কিন্তু শূন্যস্থানটি চীনের বয়ানই পূরণ করছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা কখনোই অটল বা অপরিবর্তনীয় ছিল না। এটি ছিল সময়ের দাবি অনুযায়ী তৈরি একটি কাঠামো—স্নায়ুযুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উদার গণতন্ত্রের অঙ্গীকারে গড়া। আজ সেই অঙ্গীকারই টলমলে। বিশ্ব এখন আর বিংশ শতাব্দীর মতো দুই মেরুভিত্তিক জামানার উত্তেজনায় ফিরছে না, বরং প্রবেশ করছে আরও পরিবর্তনশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একপর্যায়ে। যেখানে ক্ষমতা বিভিন্ন কেন্দ্রে বণ্টিত, অংশীদারত্বগুলো স্বার্থভিত্তিক, আর বৈধতা নিয়ে চলছে টানাটানি।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে রয়েছে দুটি পথ। তারা চাইলে আত্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের পথে হাঁটতে পারে—যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রভাব বৃদ্ধি করবে এবং মিত্রদের দূরে সরিয়ে দেবে। অথবা তারা আবারও বিশ্বমঞ্চে সক্রিয় হতে পারে, আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং বহুমেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের নেতৃত্বকে মানিয়ে নিতে পারে। পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অবশ্যই বড় মূল্য চোকাতে হবে, কিন্তু পিছু হটার খরচ তার চেয়েও বড় হতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন পশ্চাদ্গামী। তার জায়গায় গড়ে উঠছে নতুন এক প্রভাব ও বৈধতার লড়াই। যেখানে ক্রমেই নিজেদের ‘বৈশ্বিক নেতৃত্বের’ দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে চীন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক ঐকমত্য, যার মূল ভিত্তি ছিল উদার গণতন্ত্র, বহুপাক্ষিকতা ও উন্মুক্ত বাজারনীতি। কয়েক দশক ধরে এই তথাকথিত ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ ইউরোপ ও এশিয়ার মিত্র দেশগুলোকে দিয়েছে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি। একই সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকেও। তবে এই ব্যবস্থা কখনোই দ্বন্দ্বমুক্ত ছিল না। ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন ও দখলদারত্ব—প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত আগ্রাসী ভূমিকা তার নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট আরও উন্মোচন করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা।
তবে এই ব্যবস্থার আসল ভাঙন শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে। জাতীয়তাবাদের চরম হয়ে ওঠা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবজ্ঞা এবং আক্রমণাত্মক বাণিজ্যনীতি—সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকার প্রচলিত বৈশ্বিক নেতৃত্বের ধারা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়। তাঁর দৃষ্টিতে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করার মতো কোনো ঐতিহ্য নয়, বরং এক বোঝা। কারণ, তাঁর মতে, এটি চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে আমেরিকার ক্ষতির বিনিময়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অস্থির আচরণ কিংবা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে দেওয়া তীব্র ভাষার বক্তৃতা থেকে সরলীকৃত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো বিপজ্জনক হতে পারে। তবু যখন তিনি এক টুইটে ভারত ও রাশিয়াকে ‘চীনের গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন, তখন যেন সেটিই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিমুখতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। যদিও পরে গাজা সংকট নিয়ে ‘শান্তিচুক্তি’র নাটকীয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি কিছুটা পিছু হটেছেন বলে মনে হয়।
এই চিন্তাগত বিভাজন গভীর প্রভাব ফেলেছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেগুলোকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। এতে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থার ধারণাগুলোর জন্য পথ খুলে যায়। আমেরিকার আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ থাকা বেইজিং এই সুযোগে নিজেকে বহুপাক্ষিকতা ও স্থিতিশীলতার রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা শুরু করে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বারবার বলেছেন, ‘জাতিসংঘের কর্তৃত্ব রক্ষা’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন’ প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা। এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক নীতির বিপরীতে চীনকে এক দায়িত্বশীল বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে।
আজকের দিনে সির এই বার্তা এক দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি সাড়া ফেলছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত ও ব্রাজিলের মতো গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোর প্রতি তাঁর প্রশাসনের মুখোমুখি অবস্থান তাদের ওয়াশিংটন থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে এবং বেইজিংয়ের দিকে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে সি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি পরোক্ষ সমালোচনা করে ‘আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ এবং ‘সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতার’ আহ্বান জানান।
এই পুনর্গঠন কেবল প্রতীকী নয়। চীন এখন ১০০ টিরও বেশি দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, যাদের অনেকেই এসসিও সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই যুগে, ট্রাম্পের শুল্কের হুমকি ও বাণিজ্যযুদ্ধে মত্ত আমেরিকার তুলনায় চীনের স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি—বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে—আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠছে। যদিও চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতি অনেকাংশে অস্বচ্ছ ও রাষ্ট্রনির্ভর, তবু তা এখন ওয়াশিংটনের অস্থির নীতি, বাণিজ্যযুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার তুলনায় কম বিপর্যয়কর বলে মনে হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক। ট্রাম্পের নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ারকেই দুর্বল করেনি, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতাকেও ক্ষুণ্ন করেছে। ইউএসএআইডি, পাবলিক ডিপ্লোমেসি তথা জনকূটনীতি বিভাগ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাঁদা প্রদান এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার—এসব পদক্ষেপ দেশটির সেই কূটনৈতিক কাঠামোকেই ভেঙে দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনে প্রভাব বিস্তার করত। এই আত্মঘাতী পশ্চাদপসরণ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাহসী করে তুলেছে এবং মিত্রদের অস্থির করে তুলেছে এই বিষয়ে যে—শূন্যতা চীন পূরণ করতে উদ্গ্রীব।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক কাঠামো ভেঙে পড়লে তা শুধু স্থিতিশীলতার জন্য নয়, কূটনৈতিক অগ্রগতির জন্যও বিপজ্জনক হবে। যদিও কিছু বিশ্লেষক সর্বনাশা ভবিষ্যদ্বাণী করা থেকে বিরত থাকছেন, তবু অনেকেই একমত যে ট্রাম্পের নীতিগুলো পৃথিবীকে এক বিভক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক নতুন যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নতুন এই যুগকে আর আগের মতো মতাদর্শভিত্তিক জোটে ভাগ করা যায় না; বরং সেটি বাস্তববাদী সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন বোঝাপড়া—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত নীতির ঝুঁকি, অন্যদিকে চীনের অংশীদার হওয়ার লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করছে। অনেক দেশের কাছে বিষয়টি কর্তৃত্ববাদকে সমর্থন করার নয়, বরং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বহুমেরু বিশ্বে কৌশলগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়।
তবে চীনের উত্থানও চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের আগ্রাসী ভূমিকা, মানবাধিকার রেকর্ড, ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা, পাকিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ এবং দুর্লভ খনিজ সম্পদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা অনেকের উদ্বেগের কারণ। তবুও বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের আকর্ষণ এসব উদ্বেগকে অনেকাংশে আড়াল করে দিচ্ছে। ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বায়নের কাঠামো ভেঙে দিচ্ছেন, তখন বেইজিংয়ের বয়ান আরও প্রভাবশালী হচ্ছে। সবাই যে সেটি গ্রহণ করছে তা নয়, কিন্তু শূন্যস্থানটি চীনের বয়ানই পূরণ করছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা কখনোই অটল বা অপরিবর্তনীয় ছিল না। এটি ছিল সময়ের দাবি অনুযায়ী তৈরি একটি কাঠামো—স্নায়ুযুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উদার গণতন্ত্রের অঙ্গীকারে গড়া। আজ সেই অঙ্গীকারই টলমলে। বিশ্ব এখন আর বিংশ শতাব্দীর মতো দুই মেরুভিত্তিক জামানার উত্তেজনায় ফিরছে না, বরং প্রবেশ করছে আরও পরিবর্তনশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একপর্যায়ে। যেখানে ক্ষমতা বিভিন্ন কেন্দ্রে বণ্টিত, অংশীদারত্বগুলো স্বার্থভিত্তিক, আর বৈধতা নিয়ে চলছে টানাটানি।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে রয়েছে দুটি পথ। তারা চাইলে আত্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের পথে হাঁটতে পারে—যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রভাব বৃদ্ধি করবে এবং মিত্রদের দূরে সরিয়ে দেবে। অথবা তারা আবারও বিশ্বমঞ্চে সক্রিয় হতে পারে, আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং বহুমেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের নেতৃত্বকে মানিয়ে নিতে পারে। পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অবশ্যই বড় মূল্য চোকাতে হবে, কিন্তু পিছু হটার খরচ তার চেয়েও বড় হতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন পশ্চাদ্গামী। তার জায়গায় গড়ে উঠছে নতুন এক প্রভাব ও বৈধতার লড়াই। যেখানে ক্রমেই নিজেদের ‘বৈশ্বিক নেতৃত্বের’ দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে চীন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক ঐকমত্য, যার মূল ভিত্তি ছিল উদার গণতন্ত্র, বহুপাক্ষিকতা ও উন্মুক্ত বাজারনীতি। কয়েক দশক ধরে এই তথাকথিত ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ ইউরোপ ও এশিয়ার মিত্র দেশগুলোকে দিয়েছে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি। একই সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকেও। তবে এই ব্যবস্থা কখনোই দ্বন্দ্বমুক্ত ছিল না। ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন ও দখলদারত্ব—প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত আগ্রাসী ভূমিকা তার নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট আরও উন্মোচন করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা।
তবে এই ব্যবস্থার আসল ভাঙন শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে। জাতীয়তাবাদের চরম হয়ে ওঠা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবজ্ঞা এবং আক্রমণাত্মক বাণিজ্যনীতি—সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকার প্রচলিত বৈশ্বিক নেতৃত্বের ধারা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়। তাঁর দৃষ্টিতে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করার মতো কোনো ঐতিহ্য নয়, বরং এক বোঝা। কারণ, তাঁর মতে, এটি চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে আমেরিকার ক্ষতির বিনিময়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অস্থির আচরণ কিংবা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে দেওয়া তীব্র ভাষার বক্তৃতা থেকে সরলীকৃত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো বিপজ্জনক হতে পারে। তবু যখন তিনি এক টুইটে ভারত ও রাশিয়াকে ‘চীনের গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন, তখন যেন সেটিই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিমুখতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। যদিও পরে গাজা সংকট নিয়ে ‘শান্তিচুক্তি’র নাটকীয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি কিছুটা পিছু হটেছেন বলে মনে হয়।
এই চিন্তাগত বিভাজন গভীর প্রভাব ফেলেছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেগুলোকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। এতে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থার ধারণাগুলোর জন্য পথ খুলে যায়। আমেরিকার আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ থাকা বেইজিং এই সুযোগে নিজেকে বহুপাক্ষিকতা ও স্থিতিশীলতার রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা শুরু করে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বারবার বলেছেন, ‘জাতিসংঘের কর্তৃত্ব রক্ষা’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন’ প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা। এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক নীতির বিপরীতে চীনকে এক দায়িত্বশীল বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে।
আজকের দিনে সির এই বার্তা এক দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি সাড়া ফেলছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত ও ব্রাজিলের মতো গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোর প্রতি তাঁর প্রশাসনের মুখোমুখি অবস্থান তাদের ওয়াশিংটন থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে এবং বেইজিংয়ের দিকে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে সি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি পরোক্ষ সমালোচনা করে ‘আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ এবং ‘সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতার’ আহ্বান জানান।
এই পুনর্গঠন কেবল প্রতীকী নয়। চীন এখন ১০০ টিরও বেশি দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, যাদের অনেকেই এসসিও সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই যুগে, ট্রাম্পের শুল্কের হুমকি ও বাণিজ্যযুদ্ধে মত্ত আমেরিকার তুলনায় চীনের স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি—বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে—আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠছে। যদিও চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতি অনেকাংশে অস্বচ্ছ ও রাষ্ট্রনির্ভর, তবু তা এখন ওয়াশিংটনের অস্থির নীতি, বাণিজ্যযুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার তুলনায় কম বিপর্যয়কর বলে মনে হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক। ট্রাম্পের নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ারকেই দুর্বল করেনি, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতাকেও ক্ষুণ্ন করেছে। ইউএসএআইডি, পাবলিক ডিপ্লোমেসি তথা জনকূটনীতি বিভাগ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাঁদা প্রদান এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার—এসব পদক্ষেপ দেশটির সেই কূটনৈতিক কাঠামোকেই ভেঙে দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনে প্রভাব বিস্তার করত। এই আত্মঘাতী পশ্চাদপসরণ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাহসী করে তুলেছে এবং মিত্রদের অস্থির করে তুলেছে এই বিষয়ে যে—শূন্যতা চীন পূরণ করতে উদ্গ্রীব।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক কাঠামো ভেঙে পড়লে তা শুধু স্থিতিশীলতার জন্য নয়, কূটনৈতিক অগ্রগতির জন্যও বিপজ্জনক হবে। যদিও কিছু বিশ্লেষক সর্বনাশা ভবিষ্যদ্বাণী করা থেকে বিরত থাকছেন, তবু অনেকেই একমত যে ট্রাম্পের নীতিগুলো পৃথিবীকে এক বিভক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক নতুন যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নতুন এই যুগকে আর আগের মতো মতাদর্শভিত্তিক জোটে ভাগ করা যায় না; বরং সেটি বাস্তববাদী সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন বোঝাপড়া—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত নীতির ঝুঁকি, অন্যদিকে চীনের অংশীদার হওয়ার লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করছে। অনেক দেশের কাছে বিষয়টি কর্তৃত্ববাদকে সমর্থন করার নয়, বরং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বহুমেরু বিশ্বে কৌশলগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়।
তবে চীনের উত্থানও চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের আগ্রাসী ভূমিকা, মানবাধিকার রেকর্ড, ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা, পাকিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ এবং দুর্লভ খনিজ সম্পদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা অনেকের উদ্বেগের কারণ। তবুও বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের আকর্ষণ এসব উদ্বেগকে অনেকাংশে আড়াল করে দিচ্ছে। ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বায়নের কাঠামো ভেঙে দিচ্ছেন, তখন বেইজিংয়ের বয়ান আরও প্রভাবশালী হচ্ছে। সবাই যে সেটি গ্রহণ করছে তা নয়, কিন্তু শূন্যস্থানটি চীনের বয়ানই পূরণ করছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা কখনোই অটল বা অপরিবর্তনীয় ছিল না। এটি ছিল সময়ের দাবি অনুযায়ী তৈরি একটি কাঠামো—স্নায়ুযুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উদার গণতন্ত্রের অঙ্গীকারে গড়া। আজ সেই অঙ্গীকারই টলমলে। বিশ্ব এখন আর বিংশ শতাব্দীর মতো দুই মেরুভিত্তিক জামানার উত্তেজনায় ফিরছে না, বরং প্রবেশ করছে আরও পরিবর্তনশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একপর্যায়ে। যেখানে ক্ষমতা বিভিন্ন কেন্দ্রে বণ্টিত, অংশীদারত্বগুলো স্বার্থভিত্তিক, আর বৈধতা নিয়ে চলছে টানাটানি।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে রয়েছে দুটি পথ। তারা চাইলে আত্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের পথে হাঁটতে পারে—যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রভাব বৃদ্ধি করবে এবং মিত্রদের দূরে সরিয়ে দেবে। অথবা তারা আবারও বিশ্বমঞ্চে সক্রিয় হতে পারে, আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং বহুমেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের নেতৃত্বকে মানিয়ে নিতে পারে। পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অবশ্যই বড় মূল্য চোকাতে হবে, কিন্তু পিছু হটার খরচ তার চেয়েও বড় হতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন পশ্চাদ্গামী। তার জায়গায় গড়ে উঠছে নতুন এক প্রভাব ও বৈধতার লড়াই। যেখানে ক্রমেই নিজেদের ‘বৈশ্বিক নেতৃত্বের’ দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে চীন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক ঐকমত্য, যার মূল ভিত্তি ছিল উদার গণতন্ত্র, বহুপাক্ষিকতা ও উন্মুক্ত বাজারনীতি। কয়েক দশক ধরে এই তথাকথিত ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ ইউরোপ ও এশিয়ার মিত্র দেশগুলোকে দিয়েছে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি। একই সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকেও। তবে এই ব্যবস্থা কখনোই দ্বন্দ্বমুক্ত ছিল না। ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন ও দখলদারত্ব—প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত আগ্রাসী ভূমিকা তার নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট আরও উন্মোচন করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা।
তবে এই ব্যবস্থার আসল ভাঙন শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে। জাতীয়তাবাদের চরম হয়ে ওঠা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবজ্ঞা এবং আক্রমণাত্মক বাণিজ্যনীতি—সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকার প্রচলিত বৈশ্বিক নেতৃত্বের ধারা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়। তাঁর দৃষ্টিতে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করার মতো কোনো ঐতিহ্য নয়, বরং এক বোঝা। কারণ, তাঁর মতে, এটি চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে আমেরিকার ক্ষতির বিনিময়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অস্থির আচরণ কিংবা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে দেওয়া তীব্র ভাষার বক্তৃতা থেকে সরলীকৃত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো বিপজ্জনক হতে পারে। তবু যখন তিনি এক টুইটে ভারত ও রাশিয়াকে ‘চীনের গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন, তখন যেন সেটিই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিমুখতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। যদিও পরে গাজা সংকট নিয়ে ‘শান্তিচুক্তি’র নাটকীয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি কিছুটা পিছু হটেছেন বলে মনে হয়।
এই চিন্তাগত বিভাজন গভীর প্রভাব ফেলেছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেগুলোকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। এতে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থার ধারণাগুলোর জন্য পথ খুলে যায়। আমেরিকার আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ থাকা বেইজিং এই সুযোগে নিজেকে বহুপাক্ষিকতা ও স্থিতিশীলতার রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা শুরু করে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বারবার বলেছেন, ‘জাতিসংঘের কর্তৃত্ব রক্ষা’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন’ প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা। এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক নীতির বিপরীতে চীনকে এক দায়িত্বশীল বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে।
আজকের দিনে সির এই বার্তা এক দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি সাড়া ফেলছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত ও ব্রাজিলের মতো গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোর প্রতি তাঁর প্রশাসনের মুখোমুখি অবস্থান তাদের ওয়াশিংটন থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে এবং বেইজিংয়ের দিকে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে সি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি পরোক্ষ সমালোচনা করে ‘আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ এবং ‘সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতার’ আহ্বান জানান।
এই পুনর্গঠন কেবল প্রতীকী নয়। চীন এখন ১০০ টিরও বেশি দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, যাদের অনেকেই এসসিও সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই যুগে, ট্রাম্পের শুল্কের হুমকি ও বাণিজ্যযুদ্ধে মত্ত আমেরিকার তুলনায় চীনের স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি—বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে—আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠছে। যদিও চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতি অনেকাংশে অস্বচ্ছ ও রাষ্ট্রনির্ভর, তবু তা এখন ওয়াশিংটনের অস্থির নীতি, বাণিজ্যযুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার তুলনায় কম বিপর্যয়কর বলে মনে হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক। ট্রাম্পের নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ারকেই দুর্বল করেনি, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতাকেও ক্ষুণ্ন করেছে। ইউএসএআইডি, পাবলিক ডিপ্লোমেসি তথা জনকূটনীতি বিভাগ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাঁদা প্রদান এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার—এসব পদক্ষেপ দেশটির সেই কূটনৈতিক কাঠামোকেই ভেঙে দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনে প্রভাব বিস্তার করত। এই আত্মঘাতী পশ্চাদপসরণ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাহসী করে তুলেছে এবং মিত্রদের অস্থির করে তুলেছে এই বিষয়ে যে—শূন্যতা চীন পূরণ করতে উদ্গ্রীব।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক কাঠামো ভেঙে পড়লে তা শুধু স্থিতিশীলতার জন্য নয়, কূটনৈতিক অগ্রগতির জন্যও বিপজ্জনক হবে। যদিও কিছু বিশ্লেষক সর্বনাশা ভবিষ্যদ্বাণী করা থেকে বিরত থাকছেন, তবু অনেকেই একমত যে ট্রাম্পের নীতিগুলো পৃথিবীকে এক বিভক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক নতুন যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নতুন এই যুগকে আর আগের মতো মতাদর্শভিত্তিক জোটে ভাগ করা যায় না; বরং সেটি বাস্তববাদী সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন বোঝাপড়া—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত নীতির ঝুঁকি, অন্যদিকে চীনের অংশীদার হওয়ার লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করছে। অনেক দেশের কাছে বিষয়টি কর্তৃত্ববাদকে সমর্থন করার নয়, বরং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বহুমেরু বিশ্বে কৌশলগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়।
তবে চীনের উত্থানও চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের আগ্রাসী ভূমিকা, মানবাধিকার রেকর্ড, ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা, পাকিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ এবং দুর্লভ খনিজ সম্পদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা অনেকের উদ্বেগের কারণ। তবুও বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের আকর্ষণ এসব উদ্বেগকে অনেকাংশে আড়াল করে দিচ্ছে। ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বায়নের কাঠামো ভেঙে দিচ্ছেন, তখন বেইজিংয়ের বয়ান আরও প্রভাবশালী হচ্ছে। সবাই যে সেটি গ্রহণ করছে তা নয়, কিন্তু শূন্যস্থানটি চীনের বয়ানই পূরণ করছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা কখনোই অটল বা অপরিবর্তনীয় ছিল না। এটি ছিল সময়ের দাবি অনুযায়ী তৈরি একটি কাঠামো—স্নায়ুযুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উদার গণতন্ত্রের অঙ্গীকারে গড়া। আজ সেই অঙ্গীকারই টলমলে। বিশ্ব এখন আর বিংশ শতাব্দীর মতো দুই মেরুভিত্তিক জামানার উত্তেজনায় ফিরছে না, বরং প্রবেশ করছে আরও পরিবর্তনশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একপর্যায়ে। যেখানে ক্ষমতা বিভিন্ন কেন্দ্রে বণ্টিত, অংশীদারত্বগুলো স্বার্থভিত্তিক, আর বৈধতা নিয়ে চলছে টানাটানি।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে রয়েছে দুটি পথ। তারা চাইলে আত্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের পথে হাঁটতে পারে—যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রভাব বৃদ্ধি করবে এবং মিত্রদের দূরে সরিয়ে দেবে। অথবা তারা আবারও বিশ্বমঞ্চে সক্রিয় হতে পারে, আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং বহুমেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের নেতৃত্বকে মানিয়ে নিতে পারে। পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অবশ্যই বড় মূল্য চোকাতে হবে, কিন্তু পিছু হটার খরচ তার চেয়েও বড় হতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
গাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
১ দিন আগেএ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই।
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার নিশ্চিত করেছেন, তিনি লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে। তারা জানায়, মার্কিন প্রশাসনের কৌশল মূলত
২ দিন আগেইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর আর্থিক শক্তি অনেকটাই তাদের তেলের ওপর নির্ভরশীল। আর রাশিয়ার এই তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে। ওয়াশিংটনের যুক্তি, রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ হলে মস্কোর আর্থিক সামর্থ্য কমবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
গাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সমালোচকেরা বলছেন, যুদ্ধের আড়ালে নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ও বিচারসংক্রান্ত সংকট থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর সেসব সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এমনকি এই যুদ্ধবিরতিকেও তিনি ‘জয়’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, যদিও অনেকে একে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাপের ফল বলে মনে করছেন।
সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত অ্যালন পিনকাসের ভাষায়, এটি ছিল সাজানো এক সমাপ্তি, যা ওয়াশিংটনের ধৈর্যের শেষ সীমা টেনে এনেছে।
তাহলে যুদ্ধ শেষ হলে নেতানিয়াহুর সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আসছে? নিচে ছয়টি বড় দিক তুলে ধরা হলো—
আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন
ইসরায়েল আজ বিশ্বমঞ্চ থেকে বিচ্ছিন্ন। গত দুই বছরে গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, লাখো মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যত দিন গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হবে, তত দিন এই বিচ্ছিন্নতা দূর হবে না।
গত সেপ্টেম্বরে নেতানিয়াহু ‘সুপার স্পার্টা’ (প্রাচীন গ্রিক সামরিক সাম্রাজ্য) গঠনের স্বপ্ন দেখিয়ে একপ্রকার আত্মনির্ভর, যুদ্ধনির্ভর ইসরায়েলের রূপরেখা দেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা সেটি ভালোভাবে নেননি। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ ধসে পড়ে, শেকেল দুর্বল হয়ে যায়। ইসরায়েলের ব্যবসায়ী সংগঠন ইসরায়েল বিজনেস ফোরাম স্পষ্ট করে জানায়, ‘আমরা স্পার্টা নই।’
ভেঙে পড়তে পারে ডানপন্থী জোট
গাজা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোট ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নেতানিয়াহু তা ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন।
যুদ্ধকালে তিনি মূলত ডানপন্থী ও ধর্মীয় চরমপন্থীদের ওপর নির্ভর করেছেন। বিশেষ করে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সমর্থনে। তাঁরা যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও এখনো জোটে রয়েছেন।
তবে আশঙ্কা রয়েছে, তাঁরা জোট ছেড়ে দিতে পারেন। সে সম্ভাবনা এড়াতে নেতানিয়াহু নতুন আইনের প্রস্তাব আনছেন, যেখানে উগ্রবাদী ইহুদি শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এতে তিনি আশা করছেন, ধর্মীয় দলগুলো আবারও তাঁর জোটে ফিরে আসবে।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে কি দোষী সাব্যস্ত হবেন নেতানিয়াহু
এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাস কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা শুনছেন। দোষী প্রমাণিত হলে এর দায়ও পড়বে নেতানিয়াহুর ওপর।
যদিও রায় দিতে এখনো সময় লাগবে। আইসিসির মামলার নিষ্পত্তি অনিশ্চিত আর আইসিজের রায় ২০২৭ সালের আগে আসার সম্ভাবনা নেই। তবে দোষী সাব্যস্ত হলে আইসিসি সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারেন।
ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে ছেড়ে যাবেন
এ সম্ভাবনাও বেশ জোরালো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান অর্থনৈতিক ও সামরিক মিত্র। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়তারও সীমা রয়েছে।
২০২১ সালে নেতানিয়াহু যখন জেতার সঙ্গে সঙ্গে জো বাইডেনকে জয়ের শুভেচ্ছা জানান, তখন ট্রাম্প নাকি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।
সম্প্রতি দোহায় হামাস প্রতিনিধিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্প নাকি চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘সে (নেতানিয়াহু) আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে!’ তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ‘গাজায় পুনরায় ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন আমার অনুমতি ছাড়া হবে না।’ সুতরাং, যদি নেতানিয়াহু আবার আগ্রাসী পদক্ষেপ নেন, ট্রাম্পের সমর্থন হারানো অবশ্যম্ভাবী।
৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ, এর তদন্ত হবে কি
এখন ইসরায়েলে এ বিষয় ক্রমেই সম্ভাব্য হয়ে উঠছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনার পর ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মারাত্মক ব্যর্থতা প্রকাশ পায়। পরে তাদের প্রধানেরা পদত্যাগ করেন।
নেতানিয়াহু নিজের সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে বারবার এ তদন্তের বিরোধিতা করেছেন। তবে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছেন, আর তদন্ত ঠেকানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সরকারকে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নেতানিয়াহুর কি জেলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে
হ্যাঁ, সেটি পুরোপুরি সম্ভব। ট্রাম্প নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, গাজা যুদ্ধ আসলে নেতানিয়াহুর চলমান দুর্নীতির বিচার থেকে দৃষ্টি সরানোর উপায় ছিল।
নেতানিয়াহু বর্তমানে তিনটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত—ঘুষ, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
এর আগে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগকে সিগারেট ও শ্যাম্পেইন কেলেঙ্কারির জন্য নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া থামেনি এবং যুদ্ধবিরতির পর সেটি আরও গতি পেতে পারে। তাই বলা যায়, নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রেও সে দেশের আইন থেমে থাকবে না।
গাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সমালোচকেরা বলছেন, যুদ্ধের আড়ালে নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ও বিচারসংক্রান্ত সংকট থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর সেসব সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এমনকি এই যুদ্ধবিরতিকেও তিনি ‘জয়’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, যদিও অনেকে একে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাপের ফল বলে মনে করছেন।
সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত অ্যালন পিনকাসের ভাষায়, এটি ছিল সাজানো এক সমাপ্তি, যা ওয়াশিংটনের ধৈর্যের শেষ সীমা টেনে এনেছে।
তাহলে যুদ্ধ শেষ হলে নেতানিয়াহুর সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আসছে? নিচে ছয়টি বড় দিক তুলে ধরা হলো—
আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন
ইসরায়েল আজ বিশ্বমঞ্চ থেকে বিচ্ছিন্ন। গত দুই বছরে গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, লাখো মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যত দিন গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হবে, তত দিন এই বিচ্ছিন্নতা দূর হবে না।
গত সেপ্টেম্বরে নেতানিয়াহু ‘সুপার স্পার্টা’ (প্রাচীন গ্রিক সামরিক সাম্রাজ্য) গঠনের স্বপ্ন দেখিয়ে একপ্রকার আত্মনির্ভর, যুদ্ধনির্ভর ইসরায়েলের রূপরেখা দেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা সেটি ভালোভাবে নেননি। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ ধসে পড়ে, শেকেল দুর্বল হয়ে যায়। ইসরায়েলের ব্যবসায়ী সংগঠন ইসরায়েল বিজনেস ফোরাম স্পষ্ট করে জানায়, ‘আমরা স্পার্টা নই।’
ভেঙে পড়তে পারে ডানপন্থী জোট
গাজা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোট ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নেতানিয়াহু তা ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন।
যুদ্ধকালে তিনি মূলত ডানপন্থী ও ধর্মীয় চরমপন্থীদের ওপর নির্ভর করেছেন। বিশেষ করে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সমর্থনে। তাঁরা যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও এখনো জোটে রয়েছেন।
তবে আশঙ্কা রয়েছে, তাঁরা জোট ছেড়ে দিতে পারেন। সে সম্ভাবনা এড়াতে নেতানিয়াহু নতুন আইনের প্রস্তাব আনছেন, যেখানে উগ্রবাদী ইহুদি শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এতে তিনি আশা করছেন, ধর্মীয় দলগুলো আবারও তাঁর জোটে ফিরে আসবে।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে কি দোষী সাব্যস্ত হবেন নেতানিয়াহু
এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাস কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা শুনছেন। দোষী প্রমাণিত হলে এর দায়ও পড়বে নেতানিয়াহুর ওপর।
যদিও রায় দিতে এখনো সময় লাগবে। আইসিসির মামলার নিষ্পত্তি অনিশ্চিত আর আইসিজের রায় ২০২৭ সালের আগে আসার সম্ভাবনা নেই। তবে দোষী সাব্যস্ত হলে আইসিসি সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারেন।
ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে ছেড়ে যাবেন
এ সম্ভাবনাও বেশ জোরালো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান অর্থনৈতিক ও সামরিক মিত্র। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়তারও সীমা রয়েছে।
২০২১ সালে নেতানিয়াহু যখন জেতার সঙ্গে সঙ্গে জো বাইডেনকে জয়ের শুভেচ্ছা জানান, তখন ট্রাম্প নাকি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।
সম্প্রতি দোহায় হামাস প্রতিনিধিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্প নাকি চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘সে (নেতানিয়াহু) আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে!’ তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ‘গাজায় পুনরায় ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন আমার অনুমতি ছাড়া হবে না।’ সুতরাং, যদি নেতানিয়াহু আবার আগ্রাসী পদক্ষেপ নেন, ট্রাম্পের সমর্থন হারানো অবশ্যম্ভাবী।
৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ, এর তদন্ত হবে কি
এখন ইসরায়েলে এ বিষয় ক্রমেই সম্ভাব্য হয়ে উঠছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনার পর ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মারাত্মক ব্যর্থতা প্রকাশ পায়। পরে তাদের প্রধানেরা পদত্যাগ করেন।
নেতানিয়াহু নিজের সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে বারবার এ তদন্তের বিরোধিতা করেছেন। তবে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছেন, আর তদন্ত ঠেকানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সরকারকে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নেতানিয়াহুর কি জেলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে
হ্যাঁ, সেটি পুরোপুরি সম্ভব। ট্রাম্প নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, গাজা যুদ্ধ আসলে নেতানিয়াহুর চলমান দুর্নীতির বিচার থেকে দৃষ্টি সরানোর উপায় ছিল।
নেতানিয়াহু বর্তমানে তিনটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত—ঘুষ, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
এর আগে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগকে সিগারেট ও শ্যাম্পেইন কেলেঙ্কারির জন্য নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া থামেনি এবং যুদ্ধবিরতির পর সেটি আরও গতি পেতে পারে। তাই বলা যায়, নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রেও সে দেশের আইন থেমে থাকবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি
১ দিন আগেএ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই।
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার নিশ্চিত করেছেন, তিনি লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে। তারা জানায়, মার্কিন প্রশাসনের কৌশল মূলত
২ দিন আগেইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর আর্থিক শক্তি অনেকটাই তাদের তেলের ওপর নির্ভরশীল। আর রাশিয়ার এই তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে। ওয়াশিংটনের যুক্তি, রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ হলে মস্কোর আর্থিক সামর্থ্য কমবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
এ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পানি সরবরাহকারী সংস্থা, এমনকি প্রেসিডেন্সির সঙ্গেও কথা বলেছিলাম।’
কিন্তু ছয় মাস ধরে ঘোরাঘুরির পরেও কোনো সাড়া না পেয়ে আন্দ্রিয়ানাইভো অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এই আন্দোলন দ্রুত হাজারো তরুণের বিক্ষোভে রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত এই বিক্ষোভের মুখে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পতন ঘটেছে।
উল্কিতে ভরা দুই মুষ্টি তুলে ধরে আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘ওই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিনগুলোর একটি ছিল। এই জয় আমাদের জনগণের জন্য, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য।’
তবে পরে কী হবে—সে বিষয়ে আন্দ্রিয়ানাইভো ও রাজধানীর কেন্দ্রে জমায়েত হাজারো তরুণের এখনো স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই, তাঁরা সেটি নিয়ে তেমন চিন্তিতও নন। এতে দেশটির ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে রাজোয়েলিনা বলেন, তিনি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ আছেন এবং দেশটির নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই আছে। যদিও তখন গুঞ্জন ওঠে, তিনি ফরাসি একটি বিমানে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের বিশ্বাস, রাজোয়েলিনা দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছেন।
এর ঘণ্টাকয়েক পরেই পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে হামলা চালিয়ে সিনেট, সাংবিধানিক আদালত ও জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কেবল জাতীয় সংসদকে রেখে অন্য সব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হয়।
ক্যাপসাট নামে বিশেষ সেনাদলের প্রধান কর্নেল মাইকেল র্যানড্রিয়ানিরিনা জানান, শুক্রবার তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নেবেন। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপ একটি সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থান। আফ্রিকান ইউনিয়ন এরই মধ্যে ‘সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত’ মাদাগাস্কারের সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। আগেও আফ্রিকান জোটটি মালি, বুরকিনা ফাসো ও গিনির মতো দেশে একই ব্যবস্থা নিয়েছিল।
১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মাদাগাস্কার অভ্যুত্থানের ইতিহাসে ভরা। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়। তিনি তখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এক সাবেক ডিজে। পরে সেনাবাহিনী গঠিত একটি ট্রানজিশনাল কাউন্সিল তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের বর্জিত এক ‘নির্বাচনে’ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মাদাগাস্কারের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ইতিহাসবিদ আরনো লেওনার্দ বলেন, একটার পর একটা সরকার আসে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে তারা অরাজকতা দূর করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাই বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটি প্রেসিডেন্টই ‘উদ্ধারকর্তা’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আর প্রতিটি প্রজন্ম রাস্তায় নেমে তাদের তাড়িয়ে দেয়। এবার শুধু একটাই পার্থক্য, আগে স্লোগান ছাপা হতো লিফলেটে আর এখন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু মানুষের ক্ষোভ ঠিক একই রকম রয়ে গেছে।
এখন পর্যন্ত তরুণ আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থাশীল। বিক্ষোভে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত সিকার লেব্লাঁ বলেন, ‘আমি বেশ আশাবাদী যে, ধীরে ধীরে সেনাবাহিনী সবকিছু ঠিক করে ফেলবে। তাদের হাতে দুই বছর সময়। যদি তারা ব্যর্থ হয়, আমরা তাদেরও তাড়াব।’
তবে দ্বীপ দেশটির সামনে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। শীর্ষ ভ্যানিলা রপ্তানিকারক ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের এই দেশ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। মাথাপিছু আয় মাত্র ৫০০ ডলারের মতো এবং প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
নিয়মিত বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে মানুষ দিনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বৈশ্বিক সমৃদ্ধির মানদণ্ডে পৌঁছাতে হলে মাথাপিছু আয় ১৪ গুণ বাড়াতে হবে।
বিশ্বজুড়ে জেন-জি তরুণদের বিস্ফোরণ
যে জেন-জিদের বিক্ষোভে মাদাগাস্কারের সরকারের পতন ঘটেছে, সে বিক্ষোভের ঢেউ এর আগে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও (মরক্কো, বাংলাদেশ, নেপাল, কেনিয়া ও পেরু) দেখা গেছে। তবে দেশগুলোতে এখনো আশাব্যঞ্জক কোনো পরিবর্তন আসেনি।
এ তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরকে সহায়তা করছে। অনেকে ‘ওয়ান পিস’ নামের জনপ্রিয় জাপানি অ্যানিমের ‘স্কাল অ্যান্ড বোনস’ লোগো ব্যবহার করে প্রতিবাদের প্রতীক তৈরি করেছে। তবে ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রশ্নে তাঁদের স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই।
মাদাগাস্কারের পাহাড়ি রাজধানী আনতানানারিভোর ‘মে ১৩ স্কয়ার’ দেশটির ১৯৭২ সালের ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিবাহী স্থান। এখানেই জেন-জিরা কর্নেল র্যানড্রিয়ানিরিনার শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ বিয়ার খাচ্ছে, কেউ গ্রিল করা স্ন্যাকস খাচ্ছে আর মঞ্চে ব্যান্ড সংগীত গাইছে—পতিত রাজোয়েলিনাকে নিয়ে অশ্লীল ব্যঙ্গাত্মক গান।
শিল্পকলার ছাত্র হেনরি রাফেহিভোলা বলেন, রাজোয়েলিনার মতো লোকজন সবারই বিদেশি নাগরিকত্ব থাকে। দেশ খারাপ হলে তাঁরা ফ্রান্সে পালিয়ে যান।
রাজোয়েলিনার সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, তিনি ফ্রান্সের (সাবেক ঔপনিবেশিক) কাছের মানুষ এবং বিদেশি প্রভাবের কাছে নত।
সরকার পতনের পর মাদাগাস্কারের পানির সমস্যার তড়িত সুরাহা হয়নি। এখন সন্ধ্যা নামলে আন্দ্রিয়ানাইভো ‘মে ১৩ স্কয়ার’ থেকে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মতোই তাঁর বাড়িতেও পানি নেই।
প্রতিদিন তিনি কমিউনিটি ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন, যেটি দিনে কয়েক ঘণ্টা খোলা থাকে। দুটি হলুদ জেরিক্যান কাঁধে নিয়ে তিনি সরু গলির ভেতর দিয়ে দুই কামরার টিনশেড বাড়িতে ফেরেন, যেখানে ঝুলছে একটিমাত্র বাল্ব।
আন্দ্রিয়ানাইভোর ৭৮ বছর বয়সী দাদি তাঁকে জড়িয়ে ধরেন এবং নাতির আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানান। দাদি বলেন, ‘আমি সামরিক শাসন পছন্দ করি না, আগেও তাদের অধীনে থেকেছি।’ আন্দ্রিয়ানাইভো শুধু কাঁধ ঝাঁকান। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার পানি ফিরেছিল, কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের জন্য। এখনো পানি নেই।
নিরুপায় স্বরে আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর বিশ্বাস করতেই হবে।’
এ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পানি সরবরাহকারী সংস্থা, এমনকি প্রেসিডেন্সির সঙ্গেও কথা বলেছিলাম।’
কিন্তু ছয় মাস ধরে ঘোরাঘুরির পরেও কোনো সাড়া না পেয়ে আন্দ্রিয়ানাইভো অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এই আন্দোলন দ্রুত হাজারো তরুণের বিক্ষোভে রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত এই বিক্ষোভের মুখে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পতন ঘটেছে।
উল্কিতে ভরা দুই মুষ্টি তুলে ধরে আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘ওই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিনগুলোর একটি ছিল। এই জয় আমাদের জনগণের জন্য, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য।’
তবে পরে কী হবে—সে বিষয়ে আন্দ্রিয়ানাইভো ও রাজধানীর কেন্দ্রে জমায়েত হাজারো তরুণের এখনো স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই, তাঁরা সেটি নিয়ে তেমন চিন্তিতও নন। এতে দেশটির ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে রাজোয়েলিনা বলেন, তিনি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ আছেন এবং দেশটির নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই আছে। যদিও তখন গুঞ্জন ওঠে, তিনি ফরাসি একটি বিমানে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের বিশ্বাস, রাজোয়েলিনা দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছেন।
এর ঘণ্টাকয়েক পরেই পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে হামলা চালিয়ে সিনেট, সাংবিধানিক আদালত ও জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কেবল জাতীয় সংসদকে রেখে অন্য সব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হয়।
ক্যাপসাট নামে বিশেষ সেনাদলের প্রধান কর্নেল মাইকেল র্যানড্রিয়ানিরিনা জানান, শুক্রবার তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নেবেন। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপ একটি সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থান। আফ্রিকান ইউনিয়ন এরই মধ্যে ‘সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত’ মাদাগাস্কারের সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। আগেও আফ্রিকান জোটটি মালি, বুরকিনা ফাসো ও গিনির মতো দেশে একই ব্যবস্থা নিয়েছিল।
১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মাদাগাস্কার অভ্যুত্থানের ইতিহাসে ভরা। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়। তিনি তখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এক সাবেক ডিজে। পরে সেনাবাহিনী গঠিত একটি ট্রানজিশনাল কাউন্সিল তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের বর্জিত এক ‘নির্বাচনে’ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মাদাগাস্কারের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ইতিহাসবিদ আরনো লেওনার্দ বলেন, একটার পর একটা সরকার আসে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে তারা অরাজকতা দূর করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাই বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটি প্রেসিডেন্টই ‘উদ্ধারকর্তা’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আর প্রতিটি প্রজন্ম রাস্তায় নেমে তাদের তাড়িয়ে দেয়। এবার শুধু একটাই পার্থক্য, আগে স্লোগান ছাপা হতো লিফলেটে আর এখন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু মানুষের ক্ষোভ ঠিক একই রকম রয়ে গেছে।
এখন পর্যন্ত তরুণ আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থাশীল। বিক্ষোভে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত সিকার লেব্লাঁ বলেন, ‘আমি বেশ আশাবাদী যে, ধীরে ধীরে সেনাবাহিনী সবকিছু ঠিক করে ফেলবে। তাদের হাতে দুই বছর সময়। যদি তারা ব্যর্থ হয়, আমরা তাদেরও তাড়াব।’
তবে দ্বীপ দেশটির সামনে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। শীর্ষ ভ্যানিলা রপ্তানিকারক ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের এই দেশ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। মাথাপিছু আয় মাত্র ৫০০ ডলারের মতো এবং প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
নিয়মিত বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে মানুষ দিনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বৈশ্বিক সমৃদ্ধির মানদণ্ডে পৌঁছাতে হলে মাথাপিছু আয় ১৪ গুণ বাড়াতে হবে।
বিশ্বজুড়ে জেন-জি তরুণদের বিস্ফোরণ
যে জেন-জিদের বিক্ষোভে মাদাগাস্কারের সরকারের পতন ঘটেছে, সে বিক্ষোভের ঢেউ এর আগে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও (মরক্কো, বাংলাদেশ, নেপাল, কেনিয়া ও পেরু) দেখা গেছে। তবে দেশগুলোতে এখনো আশাব্যঞ্জক কোনো পরিবর্তন আসেনি।
এ তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরকে সহায়তা করছে। অনেকে ‘ওয়ান পিস’ নামের জনপ্রিয় জাপানি অ্যানিমের ‘স্কাল অ্যান্ড বোনস’ লোগো ব্যবহার করে প্রতিবাদের প্রতীক তৈরি করেছে। তবে ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রশ্নে তাঁদের স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই।
মাদাগাস্কারের পাহাড়ি রাজধানী আনতানানারিভোর ‘মে ১৩ স্কয়ার’ দেশটির ১৯৭২ সালের ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিবাহী স্থান। এখানেই জেন-জিরা কর্নেল র্যানড্রিয়ানিরিনার শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ বিয়ার খাচ্ছে, কেউ গ্রিল করা স্ন্যাকস খাচ্ছে আর মঞ্চে ব্যান্ড সংগীত গাইছে—পতিত রাজোয়েলিনাকে নিয়ে অশ্লীল ব্যঙ্গাত্মক গান।
শিল্পকলার ছাত্র হেনরি রাফেহিভোলা বলেন, রাজোয়েলিনার মতো লোকজন সবারই বিদেশি নাগরিকত্ব থাকে। দেশ খারাপ হলে তাঁরা ফ্রান্সে পালিয়ে যান।
রাজোয়েলিনার সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, তিনি ফ্রান্সের (সাবেক ঔপনিবেশিক) কাছের মানুষ এবং বিদেশি প্রভাবের কাছে নত।
সরকার পতনের পর মাদাগাস্কারের পানির সমস্যার তড়িত সুরাহা হয়নি। এখন সন্ধ্যা নামলে আন্দ্রিয়ানাইভো ‘মে ১৩ স্কয়ার’ থেকে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মতোই তাঁর বাড়িতেও পানি নেই।
প্রতিদিন তিনি কমিউনিটি ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন, যেটি দিনে কয়েক ঘণ্টা খোলা থাকে। দুটি হলুদ জেরিক্যান কাঁধে নিয়ে তিনি সরু গলির ভেতর দিয়ে দুই কামরার টিনশেড বাড়িতে ফেরেন, যেখানে ঝুলছে একটিমাত্র বাল্ব।
আন্দ্রিয়ানাইভোর ৭৮ বছর বয়সী দাদি তাঁকে জড়িয়ে ধরেন এবং নাতির আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানান। দাদি বলেন, ‘আমি সামরিক শাসন পছন্দ করি না, আগেও তাদের অধীনে থেকেছি।’ আন্দ্রিয়ানাইভো শুধু কাঁধ ঝাঁকান। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার পানি ফিরেছিল, কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের জন্য। এখনো পানি নেই।
নিরুপায় স্বরে আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর বিশ্বাস করতেই হবে।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি
১ দিন আগেগাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার নিশ্চিত করেছেন, তিনি লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে। তারা জানায়, মার্কিন প্রশাসনের কৌশল মূলত
২ দিন আগেইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর আর্থিক শক্তি অনেকটাই তাদের তেলের ওপর নির্ভরশীল। আর রাশিয়ার এই তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে। ওয়াশিংটনের যুক্তি, রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ হলে মস্কোর আর্থিক সামর্থ্য কমবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার নিশ্চিত করেছেন, তিনি লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে। তারা জানায়, মার্কিন প্রশাসনের কৌশল মূলত ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ওপর কেন্দ্রীভূত।
ট্রাম্প আরও বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার নৌযানের ওপর একাধিক মার্কিন হামলার পর এবং সেখানে মার্কিন সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়ার পর, তাঁর প্রশাসন এখন ভেনেজুয়েলায় স্থল আক্রমণের কথাও বিবেচনা করছে।
তবে বুধবার রাতে জাতীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে মাদুরো পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানান এবং আরও উত্তেজনা না বাড়ানোর সতর্কতা দেন। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার মতো ব্যর্থ যুদ্ধের স্মৃতি জাগানো সরকার পরিবর্তনের (রেজিম চেঞ্জ) পরিকল্পনা চাই না… সিআইএ–নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানও চাই না… লাতিন আমেরিকা এগুলো চায় না, প্রয়োজন নেই এবং তা প্রত্যাখ্যান করছে।’
ট্রাম্প আসলে কী ঘোষণা দিয়েছেন
এক সাংবাদিক হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কেন সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় যেতে অনুমোদন দিয়েছেন?’ ট্রাম্প জবাব দেন, ‘দুটি কারণেই আমি অনুমোদন দিয়েছি। প্রথমত, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মাদক—আমাদের দেশে প্রচুর মাদক আসছে ভেনেজুয়েলা থেকে। এর বেশির ভাগই সমুদ্রপথে আসে। আমরা সেগুলো সমুদ্রপথে ঠেকাব, তবে এখন স্থলপথেও ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সাংবাদিক জানতে চান, সিআইএ কি ‘মাদুরোকে সরানোর ক্ষমতা পেয়েছে?’ জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না… এটা অদ্ভুত প্রশ্ন নয়, তবে আমার উত্তর দেওয়া বোকামি হবে। আমি শুধু বলব, ভেনেজুয়েলা এখন চাপ অনুভব করছে।’
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কী কী অভিযান চালিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র অন্তত পাঁচটি হামলা চালিয়েছে ভেনেজুয়েলার জলসীমায় থাকা নৌযানে, যেগুলোকে ‘মাদকবাহী নৌকা’ বলে দাবি করেছে ওয়াশিংটন। এসব হামলায় মোট ২৭ জন নিহত হয়েছে। ট্রাম্প জানান, সর্বশেষ হামলাটি মঙ্গলবার হয়েছে।
তিনি নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আমার ক্ষমতা অনুযায়ী আজ সকালে যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এক প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছেন, যা ভেনেজুয়েলার উপকূলে ‘নির্ধারিত সন্ত্রাসী সংগঠন’-এর সঙ্গে যুক্ত একটি নৌযানের ওপর চালানো হয়েছিল।’ ট্রাম্প দাবি করেন, নৌযানটিতে থাকা ছয় ‘পুরুষ মাদকসন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।
প্রথম হামলাটি হয় ২ সেপ্টেম্বর, তাতে ১১ জন নিহত হয়। এরপর ১৫ ও ১৯ সেপ্টেম্বর দুটি হামলা হয়, প্রত্যেকটিতে তিনজন করে নিহত হন। ৩ অক্টোবর চতুর্থ হামলায় নিহত হন আরও চারজন। এ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন এই নৌযানগুলোতে মাদক ছিল—এমন কোনো প্রমাণ হাজির করেনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই দেশের বাইরে গোপন বা সামরিক অভিযান চালাতে পারেন
বিশেষজ্ঞরা আল–জাজিরাকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার নৌযানে মার্কিন হামলাগুলো আন্তর্জাতিক আইন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান উভয়েরই লঙ্ঘন হতে পারে। ভেনেজুয়েলার স্থলভাগে সিআইএ বা মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হলে তা আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা পরীক্ষা করবে।
নেদারল্যান্ডসের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সালভাদর সান্তিনো রেজিলমে আল–জাজিরাকে বলেন, ‘সমুদ্রপথে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জীবনের অধিকার, আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং সামঞ্জস্যের নীতিমালা মেনে চলতে হয়। জাতিসংঘের সমুদ্র আইন (আনক্লস) ও ১৯৮৮ সালের জাতিসংঘের মাদক পাচারবিরোধী কনভেনশন স্পষ্টভাবে সহযোগিতা, তল্লাশি এবং সম্মতি–ভিত্তিক পদক্ষেপের কথা বলে, ধ্বংস বা হত্যা নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক আইনজীবী ব্রুস ফাইন আরও স্পষ্টভাবে বলেন, ‘আত্মরক্ষার পরিস্থিতি ছাড়া কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিতে হলে কংগ্রেসের প্রকাশ্য অনুমোদন জরুরি। ভেনেজুয়েলার কথিত মাদকবাহী নৌকায় হামলা ছিল অসাংবিধানিক।’
১৯৭৩ সালের ওয়ার পাওয়ারস রেজ্যুলেশন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হয়, এবং পদক্ষেপের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে তা জানাতে হয়। ফাইন বলেন, এমন কোনো ভোট কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত হয়নি। দায়িত্বের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার মাদক চক্রগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেন। কিন্তু ফাইন বলেন, এই ঘোষণা ‘আইনবিরোধী, কারণ এটি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার জন্য নির্ধারিত সাংবিধানিক মানদণ্ড পূরণ করে না।’
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কোনো গোষ্ঠীকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে হলে সেটি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভিত্তিক হতে হবে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকতে হবে এবং মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে হবে।
কিন্তু ট্রাম্প বহুবার অভিযোগ করেছেন, মাদুরোর সরকারই এসব মাদক চক্রের পেছনে রয়েছে—যদিও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিজেরাই বলেছে, এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
ভেনেজুয়েলার প্রতিক্রিয়া
ভেনেজুয়েলা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের জন্য একটি বৈধতা তৈরি করা, যাতে তারা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।’
মাদুরো সিআইএ–এর বিশ্বজুড়ে সম্পৃক্ততার সমালোচনা করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করছে, আর এখন ভেনেজুয়েলাতেও একই কৌশল নিচ্ছে।’
ভেনেজুয়েলার রাজনীতি বিশ্লেষক কার্লোস পিনা বলেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণা মাদুরোর রাজনৈতিক ঘাঁটিকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আজ মাদুরো আবারও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানালেন এবং লাতিন আমেরিকার বামপন্থী দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী ‘ঔপনিবেশিক বিরোধী’ বক্তব্যকেই জোরদার করলেন।’
তবে পিনা সতর্ক করে বলেন, ‘বাস্তবে এই ঘোষণা ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ নজরদারি ও দমননীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি করবে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার নিশ্চিত করেছেন, তিনি লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে। তারা জানায়, মার্কিন প্রশাসনের কৌশল মূলত ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ওপর কেন্দ্রীভূত।
ট্রাম্প আরও বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার নৌযানের ওপর একাধিক মার্কিন হামলার পর এবং সেখানে মার্কিন সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়ার পর, তাঁর প্রশাসন এখন ভেনেজুয়েলায় স্থল আক্রমণের কথাও বিবেচনা করছে।
তবে বুধবার রাতে জাতীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে মাদুরো পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানান এবং আরও উত্তেজনা না বাড়ানোর সতর্কতা দেন। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার মতো ব্যর্থ যুদ্ধের স্মৃতি জাগানো সরকার পরিবর্তনের (রেজিম চেঞ্জ) পরিকল্পনা চাই না… সিআইএ–নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানও চাই না… লাতিন আমেরিকা এগুলো চায় না, প্রয়োজন নেই এবং তা প্রত্যাখ্যান করছে।’
ট্রাম্প আসলে কী ঘোষণা দিয়েছেন
এক সাংবাদিক হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কেন সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় যেতে অনুমোদন দিয়েছেন?’ ট্রাম্প জবাব দেন, ‘দুটি কারণেই আমি অনুমোদন দিয়েছি। প্রথমত, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মাদক—আমাদের দেশে প্রচুর মাদক আসছে ভেনেজুয়েলা থেকে। এর বেশির ভাগই সমুদ্রপথে আসে। আমরা সেগুলো সমুদ্রপথে ঠেকাব, তবে এখন স্থলপথেও ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সাংবাদিক জানতে চান, সিআইএ কি ‘মাদুরোকে সরানোর ক্ষমতা পেয়েছে?’ জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না… এটা অদ্ভুত প্রশ্ন নয়, তবে আমার উত্তর দেওয়া বোকামি হবে। আমি শুধু বলব, ভেনেজুয়েলা এখন চাপ অনুভব করছে।’
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কী কী অভিযান চালিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র অন্তত পাঁচটি হামলা চালিয়েছে ভেনেজুয়েলার জলসীমায় থাকা নৌযানে, যেগুলোকে ‘মাদকবাহী নৌকা’ বলে দাবি করেছে ওয়াশিংটন। এসব হামলায় মোট ২৭ জন নিহত হয়েছে। ট্রাম্প জানান, সর্বশেষ হামলাটি মঙ্গলবার হয়েছে।
তিনি নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আমার ক্ষমতা অনুযায়ী আজ সকালে যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এক প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছেন, যা ভেনেজুয়েলার উপকূলে ‘নির্ধারিত সন্ত্রাসী সংগঠন’-এর সঙ্গে যুক্ত একটি নৌযানের ওপর চালানো হয়েছিল।’ ট্রাম্প দাবি করেন, নৌযানটিতে থাকা ছয় ‘পুরুষ মাদকসন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।
প্রথম হামলাটি হয় ২ সেপ্টেম্বর, তাতে ১১ জন নিহত হয়। এরপর ১৫ ও ১৯ সেপ্টেম্বর দুটি হামলা হয়, প্রত্যেকটিতে তিনজন করে নিহত হন। ৩ অক্টোবর চতুর্থ হামলায় নিহত হন আরও চারজন। এ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন এই নৌযানগুলোতে মাদক ছিল—এমন কোনো প্রমাণ হাজির করেনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই দেশের বাইরে গোপন বা সামরিক অভিযান চালাতে পারেন
বিশেষজ্ঞরা আল–জাজিরাকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার নৌযানে মার্কিন হামলাগুলো আন্তর্জাতিক আইন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান উভয়েরই লঙ্ঘন হতে পারে। ভেনেজুয়েলার স্থলভাগে সিআইএ বা মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হলে তা আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা পরীক্ষা করবে।
নেদারল্যান্ডসের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সালভাদর সান্তিনো রেজিলমে আল–জাজিরাকে বলেন, ‘সমুদ্রপথে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জীবনের অধিকার, আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং সামঞ্জস্যের নীতিমালা মেনে চলতে হয়। জাতিসংঘের সমুদ্র আইন (আনক্লস) ও ১৯৮৮ সালের জাতিসংঘের মাদক পাচারবিরোধী কনভেনশন স্পষ্টভাবে সহযোগিতা, তল্লাশি এবং সম্মতি–ভিত্তিক পদক্ষেপের কথা বলে, ধ্বংস বা হত্যা নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক আইনজীবী ব্রুস ফাইন আরও স্পষ্টভাবে বলেন, ‘আত্মরক্ষার পরিস্থিতি ছাড়া কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিতে হলে কংগ্রেসের প্রকাশ্য অনুমোদন জরুরি। ভেনেজুয়েলার কথিত মাদকবাহী নৌকায় হামলা ছিল অসাংবিধানিক।’
১৯৭৩ সালের ওয়ার পাওয়ারস রেজ্যুলেশন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হয়, এবং পদক্ষেপের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে তা জানাতে হয়। ফাইন বলেন, এমন কোনো ভোট কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত হয়নি। দায়িত্বের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার মাদক চক্রগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেন। কিন্তু ফাইন বলেন, এই ঘোষণা ‘আইনবিরোধী, কারণ এটি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার জন্য নির্ধারিত সাংবিধানিক মানদণ্ড পূরণ করে না।’
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কোনো গোষ্ঠীকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে হলে সেটি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভিত্তিক হতে হবে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকতে হবে এবং মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে হবে।
কিন্তু ট্রাম্প বহুবার অভিযোগ করেছেন, মাদুরোর সরকারই এসব মাদক চক্রের পেছনে রয়েছে—যদিও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিজেরাই বলেছে, এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
ভেনেজুয়েলার প্রতিক্রিয়া
ভেনেজুয়েলা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের জন্য একটি বৈধতা তৈরি করা, যাতে তারা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।’
মাদুরো সিআইএ–এর বিশ্বজুড়ে সম্পৃক্ততার সমালোচনা করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করছে, আর এখন ভেনেজুয়েলাতেও একই কৌশল নিচ্ছে।’
ভেনেজুয়েলার রাজনীতি বিশ্লেষক কার্লোস পিনা বলেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণা মাদুরোর রাজনৈতিক ঘাঁটিকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আজ মাদুরো আবারও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানালেন এবং লাতিন আমেরিকার বামপন্থী দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী ‘ঔপনিবেশিক বিরোধী’ বক্তব্যকেই জোরদার করলেন।’
তবে পিনা সতর্ক করে বলেন, ‘বাস্তবে এই ঘোষণা ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ নজরদারি ও দমননীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি করবে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি
১ দিন আগেগাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
১ দিন আগেএ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই।
১ দিন আগেইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর আর্থিক শক্তি অনেকটাই তাদের তেলের ওপর নির্ভরশীল। আর রাশিয়ার এই তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে। ওয়াশিংটনের যুক্তি, রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ হলে মস্কোর আর্থিক সামর্থ্য কমবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর আর্থিক শক্তি অনেকটাই তাদের তেলের ওপর নির্ভরশীল। আর রাশিয়ার এই তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে। ওয়াশিংটনের যুক্তি, রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ হলে মস্কোর আর্থিক সামর্থ্য কমবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এবার তিনি চীনকেও একই পথে আনতে চান।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। আজ বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল বুধবার দুই নেতার মধ্যে কোনো টেলিফোন আলাপ হয়নি। ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এর আগে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, খুব শিগগির ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে।
প্রসঙ্গত, ভারত ও চীন—এই দুই দেশ রাশিয়ার সমুদ্রপথে তেল রপ্তানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
ভারতের ওপর বাণিজ্য চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্প চলমান যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য আলোচনাকে ব্যবহার করছেন রাশিয়ার তেল ইস্যুতে দিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য। গত আগস্টে তিনি ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানিকে অজুহাত দেখিয়ে দিল্লির ওপর অতিরিক্ত বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেন। তবে মোদি সরকার এখনো তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি।
ভারত বরাবরই বলে এসেছে, রাশিয়ার তেল কেনা ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। তাই তেল আমদানি বন্ধ করা ভারতের অর্থনীতি ও জনগণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
যদি ভারত সত্যিই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে এটি মস্কোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। কারণ, রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনায় তেল রপ্তানি অন্যতম প্রধান অর্থের উৎস।
তেল ইস্যুতেই কেন দ্বন্দ্ব?
ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চাপ। আগস্টে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান, যা মোট শুল্কহারকে ৫০ শতাংশে পৌঁছে দেয়। তবে একইভাবে চীনের ওপর তিনি কোনো এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি—যদিও চীন এখন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা।
চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটি গত বছর রাশিয়া থেকে রেকর্ড ১০৯ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা তাদের মোট জ্বালানি আমদানির প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত আমদানি করেছে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন টন।
এ কারণে নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে, ওয়াশিংটন একপাক্ষিকভাবে ভারতকে নিশানা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই অবস্থান আংশিকভাবে এসেছে ভারতের বাণিজ্য আলোচনায় ‘অবাধ্যতা’ থেকে।
হংকংভিত্তিক গবেষক ও অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরো আল-জাজিরাকে বলেন, ভারতের কৃষিপণ্যে উচ্চ শুল্ক ও ওষুধে ভর্তুকি দেওয়ার মতো সুরক্ষামূলক নীতিই যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের মূল বাধা। যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত এসব খাতে বিনিয়োগ ও ভর্তুকি কমিয়ে অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করুক।
চীনের প্রতি ভিন্ন মনোভাবের কারণ
চীনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প তুলনামূলক নরম অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি চীনের সঙ্গে বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির প্রত্যাশায় আপাতত অপেক্ষা করছেন। সেই চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ‘রেয়ার আর্থ মেটাল’ বা দুর্লভ খনিজ পদার্থের বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে চায়।
এই দুর্লভ খনিজগুলো গাড়ির যন্ত্রাংশ, সামরিক প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকস উৎপাদনে অপরিহার্য। বর্তমানে চীন ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশ্বে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে এবং এর মধ্যে ১২টি রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
চীনের নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কিছু নির্দিষ্ট খনিজ কেনার আগে বেইজিংয়ের অনুমতি নিতে হচ্ছে। ট্রাম্প এর প্রতিক্রিয়ায় ১ নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।
রাশিয়ান তেলের ওপর ভারতের নির্ভরতা
রাশিয়া বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী দেশ। শিপিং বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের (Kpler) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত প্রতিদিন গড়ে ৪৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যার মধ্যে ১৬ লাখ ব্যারেল বা ৩৪ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে।
২০২২ সালের জানুয়ারির তুলনায় এটি ২ হাজার ২৫০ শতাংশ বেশি। তখন প্রতিদিন ভারত রাশিয়া থেকে মাত্র ৬৮ হাজার ব্যারেল তেল কিনত।
গবেষণা সংস্থা সিআরইএর তথ্য অনুযায়ী, চীন রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ৪৭ শতাংশ কিনেছে আর ভারত ৩৮ শতাংশ।
ভারত কেন এত রাশিয়ান তেল কিনছে
২০২২ সালের ডিসেম্বরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর ৬০ ডলারের মূল্যসীমা নির্ধারণ করে। এর ফলে রাশিয়া বাধ্য হয় প্রতিযোগিতামূলক দামে তেল বিক্রি করতে, যা ভারতের জন্য সুবিধাজনক হয়।
সস্তায় তেল কেনার কারণে ভারতের চলতি হিসাবের ঘাটতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় ৬৫ শতাংশ কমে যায়। এর ফলে দেশটির বৃহৎ তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (আরআইএল) সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়।
২০২১ সালে রিলায়েন্সের জামনগর রিফাইনারিতে আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের মধ্যে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ৩ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে বেড়ে প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।
সিআরইএর হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত জামনগর রিফাইনারি থেকে বিশ্বব্যাপী ৮৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেলজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে—এর মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ বা ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য গেছে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশগুলোতে।
ট্রাম্পের দাবিতে ভারতের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবির বিষয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ বলেন, ভারতের জ্বালানি নীতি সর্বদা স্থিতিশীল দাম ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর নির্ভর করে।
আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছি। আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গতকাল এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি।’ ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
জয়সওয়াল আরও বলেন, ‘আমাদের নীতির দুটি মূল লক্ষ্য হলো—স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্য বজায় রাখা ও নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ জন্য আমরা জ্বালানির উৎস বৈচিত্র্যপূর্ণ করার নীতিতে অটল।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের জ্বালানি সহযোগিতা সম্প্রসারণে আলোচনা চলছে।
অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরোর মতে, আগামী তিন থেকে ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক ‘উত্তেজনাপূর্ণ কিন্তু বাস্তবসম্মত সমঝোতায়’ পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি কিছুটা কমায়, তবে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক কিছুটা শিথিল করতে পারে এবং ২০২৬ সালের শুরুর দিকে একটি ক্ষুদ্র বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে।
কিন্তু ভারত কি আসলেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমাবে বা বন্ধ করবে? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত কখনোই এমন সিদ্দান্ত নেবে না। কারণ, কৌশলগতভাবে রাশিয়া ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। আর সবচেয়ে বড় কথা, যেখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় কম দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কি ভারত এ বাণিজ্য বন্ধ করবে? এমনটা ভাবা অমূলক।
তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কীভাবে ভারতকে ঠেকাবেন? তিনি কি ভারতকে রাশিয়ার তেল না কিনতে বাধ্য করতে পারবেন? ট্রাম্প এমনটা করতেই পারেন। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়, ভারত ট্রাম্পের বাধ্যবাধকতা কেন মানবে? বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার তেল কেনার অপরাধে ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ (৫০ শতাংশ) শুল্ক আরোপ করেছেন। তেল কেনা বন্ধ না করলে হয়তো আরও শুল্ক আরোপ করবেন। এভাবেই তিনি ভারতকে বাধ্য করতে চাইবেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর আর্থিক শক্তি অনেকটাই তাদের তেলের ওপর নির্ভরশীল। আর রাশিয়ার এই তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে। ওয়াশিংটনের যুক্তি, রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ হলে মস্কোর আর্থিক সামর্থ্য কমবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এবার তিনি চীনকেও একই পথে আনতে চান।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। আজ বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল বুধবার দুই নেতার মধ্যে কোনো টেলিফোন আলাপ হয়নি। ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এর আগে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, খুব শিগগির ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে।
প্রসঙ্গত, ভারত ও চীন—এই দুই দেশ রাশিয়ার সমুদ্রপথে তেল রপ্তানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
ভারতের ওপর বাণিজ্য চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্প চলমান যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য আলোচনাকে ব্যবহার করছেন রাশিয়ার তেল ইস্যুতে দিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য। গত আগস্টে তিনি ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানিকে অজুহাত দেখিয়ে দিল্লির ওপর অতিরিক্ত বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেন। তবে মোদি সরকার এখনো তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি।
ভারত বরাবরই বলে এসেছে, রাশিয়ার তেল কেনা ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। তাই তেল আমদানি বন্ধ করা ভারতের অর্থনীতি ও জনগণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
যদি ভারত সত্যিই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে এটি মস্কোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। কারণ, রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনায় তেল রপ্তানি অন্যতম প্রধান অর্থের উৎস।
তেল ইস্যুতেই কেন দ্বন্দ্ব?
ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চাপ। আগস্টে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান, যা মোট শুল্কহারকে ৫০ শতাংশে পৌঁছে দেয়। তবে একইভাবে চীনের ওপর তিনি কোনো এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি—যদিও চীন এখন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা।
চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটি গত বছর রাশিয়া থেকে রেকর্ড ১০৯ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা তাদের মোট জ্বালানি আমদানির প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত আমদানি করেছে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন টন।
এ কারণে নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে, ওয়াশিংটন একপাক্ষিকভাবে ভারতকে নিশানা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই অবস্থান আংশিকভাবে এসেছে ভারতের বাণিজ্য আলোচনায় ‘অবাধ্যতা’ থেকে।
হংকংভিত্তিক গবেষক ও অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরো আল-জাজিরাকে বলেন, ভারতের কৃষিপণ্যে উচ্চ শুল্ক ও ওষুধে ভর্তুকি দেওয়ার মতো সুরক্ষামূলক নীতিই যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের মূল বাধা। যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত এসব খাতে বিনিয়োগ ও ভর্তুকি কমিয়ে অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করুক।
চীনের প্রতি ভিন্ন মনোভাবের কারণ
চীনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প তুলনামূলক নরম অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি চীনের সঙ্গে বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির প্রত্যাশায় আপাতত অপেক্ষা করছেন। সেই চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ‘রেয়ার আর্থ মেটাল’ বা দুর্লভ খনিজ পদার্থের বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে চায়।
এই দুর্লভ খনিজগুলো গাড়ির যন্ত্রাংশ, সামরিক প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকস উৎপাদনে অপরিহার্য। বর্তমানে চীন ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশ্বে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে এবং এর মধ্যে ১২টি রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
চীনের নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কিছু নির্দিষ্ট খনিজ কেনার আগে বেইজিংয়ের অনুমতি নিতে হচ্ছে। ট্রাম্প এর প্রতিক্রিয়ায় ১ নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।
রাশিয়ান তেলের ওপর ভারতের নির্ভরতা
রাশিয়া বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী দেশ। শিপিং বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের (Kpler) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত প্রতিদিন গড়ে ৪৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যার মধ্যে ১৬ লাখ ব্যারেল বা ৩৪ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে।
২০২২ সালের জানুয়ারির তুলনায় এটি ২ হাজার ২৫০ শতাংশ বেশি। তখন প্রতিদিন ভারত রাশিয়া থেকে মাত্র ৬৮ হাজার ব্যারেল তেল কিনত।
গবেষণা সংস্থা সিআরইএর তথ্য অনুযায়ী, চীন রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ৪৭ শতাংশ কিনেছে আর ভারত ৩৮ শতাংশ।
ভারত কেন এত রাশিয়ান তেল কিনছে
২০২২ সালের ডিসেম্বরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর ৬০ ডলারের মূল্যসীমা নির্ধারণ করে। এর ফলে রাশিয়া বাধ্য হয় প্রতিযোগিতামূলক দামে তেল বিক্রি করতে, যা ভারতের জন্য সুবিধাজনক হয়।
সস্তায় তেল কেনার কারণে ভারতের চলতি হিসাবের ঘাটতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় ৬৫ শতাংশ কমে যায়। এর ফলে দেশটির বৃহৎ তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (আরআইএল) সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়।
২০২১ সালে রিলায়েন্সের জামনগর রিফাইনারিতে আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের মধ্যে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ৩ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে বেড়ে প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।
সিআরইএর হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত জামনগর রিফাইনারি থেকে বিশ্বব্যাপী ৮৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেলজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে—এর মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ বা ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য গেছে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশগুলোতে।
ট্রাম্পের দাবিতে ভারতের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবির বিষয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ বলেন, ভারতের জ্বালানি নীতি সর্বদা স্থিতিশীল দাম ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর নির্ভর করে।
আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছি। আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গতকাল এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি।’ ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
জয়সওয়াল আরও বলেন, ‘আমাদের নীতির দুটি মূল লক্ষ্য হলো—স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্য বজায় রাখা ও নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ জন্য আমরা জ্বালানির উৎস বৈচিত্র্যপূর্ণ করার নীতিতে অটল।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের জ্বালানি সহযোগিতা সম্প্রসারণে আলোচনা চলছে।
অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরোর মতে, আগামী তিন থেকে ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক ‘উত্তেজনাপূর্ণ কিন্তু বাস্তবসম্মত সমঝোতায়’ পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি কিছুটা কমায়, তবে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক কিছুটা শিথিল করতে পারে এবং ২০২৬ সালের শুরুর দিকে একটি ক্ষুদ্র বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে।
কিন্তু ভারত কি আসলেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমাবে বা বন্ধ করবে? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত কখনোই এমন সিদ্দান্ত নেবে না। কারণ, কৌশলগতভাবে রাশিয়া ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। আর সবচেয়ে বড় কথা, যেখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় কম দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কি ভারত এ বাণিজ্য বন্ধ করবে? এমনটা ভাবা অমূলক।
তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কীভাবে ভারতকে ঠেকাবেন? তিনি কি ভারতকে রাশিয়ার তেল না কিনতে বাধ্য করতে পারবেন? ট্রাম্প এমনটা করতেই পারেন। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়, ভারত ট্রাম্পের বাধ্যবাধকতা কেন মানবে? বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার তেল কেনার অপরাধে ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ (৫০ শতাংশ) শুল্ক আরোপ করেছেন। তেল কেনা বন্ধ না করলে হয়তো আরও শুল্ক আরোপ করবেন। এভাবেই তিনি ভারতকে বাধ্য করতে চাইবেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি
১ দিন আগেগাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
১ দিন আগেএ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই।
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার নিশ্চিত করেছেন, তিনি লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে। তারা জানায়, মার্কিন প্রশাসনের কৌশল মূলত
২ দিন আগে