Ajker Patrika

৩৯ বছর পর্যন্ত পড়তেই জানতেন না, তাঁর বই এখন বেস্টসেলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৩৭
ক্যারেন উডসের লেখা ২৭টি বই এখন বেস্ট সেলার। ছবি: সংগৃহীত
ক্যারেন উডসের লেখা ২৭টি বই এখন বেস্ট সেলার। ছবি: সংগৃহীত

আর এক বছর পর ৪০-এর কোঠায় পৌঁছাবে বয়স। হঠাৎ পদোন্নতি হলো পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করা ক্যারেন উডসের। এখন থেকে ই-মেইল লিখতে হবে তাঁকে। কিন্তু তিনি তো নিরক্ষর। কীভাবে পড়তে-লিখতে হয়, জানেন না। প্রথমে বেশ লজ্জায় পড়ে যান। সবাই জেনে ফেললে কী ভাববে! তবে, সেই লজ্জা-ভয় তাঁকে আটকে রাখেনি। বরং নতুন পথ দেখিয়েছে।

যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন, ওই প্রতিষ্ঠানই তাঁকে একটি অ্যাডল্ট লিটারেসি কোর্সে ভর্তি করে দেয়। ৩৯ বছর বয়সে তিনি শেখেন কীভাবে পড়তে ও লিখতে হয়। তখনই ঠিক করেছিলেন একটি বই লিখবেন। কোর্সের সহপাঠীদের সে কথা জানিয়েছিলেনও তিনি। বিন্দুমাত্র হাসি-ঠাট্টা না করে সবাই তাঁকে উৎসাহ দিলেন। ক্যারেন উডস জানান, ‘আমি সেই কোর্সে বসেই প্রথমবার ভাবলাম, আমি একটা বই লিখতে চাই। তখন কেউ হাসেনি, কেউ ঠাট্টা করেনি। বরং সবাই বলেছিল, লিখো! তিন মাসের মধ্যেই আমি “ব্রোকেন ইউথ” শেষ করে ফেললাম। হাতে লিখেছিলাম পুরোটা।’

তাঁর লেখা প্রথম বইয়ের পাণ্ডুলিপিই কোনোভাবে পৌঁছায় স্থানীয় এক পত্রিকার কাছে। সেখানে থেকে পৌঁছে যায় এম্পায়ার পাবলিকেশনস নামের এক প্রকাশনা সংস্থার কাছে। ওই প্রকাশনীটির জন্য একের পর এক ২০টি উপন্যাস লিখেছেন তিনি। পরে, ২০২০ সালে হ্যাপারনর্থ প্রকাশনী তাঁর লেখা গ্রহণ করে। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ক্যারেনকে। দেশের বড় বড় সুপার মার্কেটে, অ্যামাজনের মতো প্ল্যাটফর্মে বেস্টসেলারের তালিকায় উঠে আসে তাঁর নাম। তবে এত কিছুর পরও নিজেকে এতটুকু বদলাননি ক্যারেন। এখনো ক্লিনারের কাজ করেন তিনি।

পাশাপাশি একটি স্কুলে ‘বিহেভিয়ার টিমে’ কাজ করেন তিনি। এ ছাড়া, কারাগারে বন্দীদেরও নতুন করে জীবন শুরু করতে অনুপ্রেরণা দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কারাগারে গিয়ে যখন বলি আমি ক্লিনার ছিলাম, পড়তে পারতাম না, ওরা চমকে যায়। কারণ, ওদের অনেকেই ভাবে নতুন করে জীবন শুরু করার আর কোনো সুযোগ নেই। আমি ওদের বলি, নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলে অবশ্যই দ্বিতীয় সুযোগ আসবে।’

তিনি জানান, বই বিক্রি থেকে এখনো খুব বেশি আয় হয় না তাঁর। ছয় মাসে চার হাজার পাউন্ডের মতো আয় হয় বই থেকে। তবে, বই লিখে যে পরিচয় তৈরি হয়েছে তাতে তিনি আগের তুলনায় অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। পাশাপাশি মানুষের কাছে অনেক বেশি সম্মান পাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, ৪০ পেরোনো নারীরা জানুক—এখনো শুরু করা যায়। আমি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। যারা ভাবে সন্তান আছে বলে আর কিছু করা যাবে না। আমি আজও বাসা পরিষ্কার করি, স্কুলে কাজ করি, নাটক লিখি, বই লিখি—সব একসঙ্গে। কেউ বলেনি আমাকে থামতে হবে, আমিও থামিনি।’

ক্যারেনের জন্ম ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। বড় হয়েছেন একটি কাউন্সিল এস্টেটে, যেখানে দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী আর পারিবারিক অশান্তি ছিল রোজকার বাস্তবতা। মাত্র ১৩ বছর বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তিনি নিজে গর্ভবতী হন ১৫ বছর বয়সে। যে কারণে আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে, গর্ভবতী হওয়ার সাত মাস পরেই জন্ম দেন এক মৃত সন্তানের। একের পর এক ধাক্কায় ভেঙে পড়তে পারতেন ক্যারেন। তবে, তা না করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

উল্লেখ্য, ক্যারেনের লেখা বেশির ভাগ উপন্যাসই মূলত ক্রাইম থ্রিলার জনরার। তিনি শুধু বই লেখেন না, তাঁর ঝুলিতে আছে সফল নাট্যকারের খ্যাতিও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমাদের অর্জন অনেক

সম্পাদকীয়
আমাদের অর্জন অনেক

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।

এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।

সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত