Ajker Patrika

আমার রবীন্দ্রনাথ

জাহীদ রেজা নূর
আমার রবীন্দ্রনাথ

মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে যে স্বাধীনতা এল, তারই প্রশস্ত পথ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল আমাদের শৈশব। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশকে এখনকার তরুণ চিনবে না। সেই সরু সরু রাস্তা, ছোট ছোট বাড়ি, বাড়ির সামনে লন, বড় বড় গাছ—এগুলো কি এখন আর প্রাসঙ্গিক? সে সময়ের ঢাকা শহরকে চিনতে হলে যেতে হবে মফস্বলের কোনো শহরে, কিংবা ভারতের আগরতলায়। বেশ ক’বছর আগে আগরতলায় গিয়ে মনে হয়েছিল, আরে! আমার ছেলেবেলায় দেখা ঢাকার সঙ্গে এই শহরের কত মিল!

সে সময় শহুরে তারুণ্যকে গ্রাস করেছিলেন আজম খান। তাঁর ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’ শুনতে শুনতে মাতাল হয়ে যেত তরুণেরা। মাতাল হতো আমাদের মতো শিশুরাও। পপ সংগীত যেন আমাদের নিয়ে যেত মোক্ষধামে। বাকি সব এই ঘোরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল।

এরই মধ্য থেকে কখনো ঝলক দিয়ে উঠত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কোনো গান। ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি।’ 

আর সেই গানগুলোর মধ্য থেকে ঝলক দিয়ে ওঠে, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।’ আমাদের জাতীয় সংগীত। 

বাহাত্তরে বয়স যখন ছয়, তখন আমরা চিৎকার করে জাতীয় সংগীত গাইতে থাকি। ‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়নজলে ভাসি’ বলতে গিয়ে দেশের চেহারা নয়, আমার চোখে ফুটে উঠত আমার মায়ের চেহারা। রাষ্ট্রপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী আমাদের ৫ নং চামেলিবাগের ভাড়া বাড়িতে এসে মাকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে যাওয়ার পর যে ছবিতে আমরা আট ভাই মায়ের সঙ্গে বসে আছি, সে ছবিটাই ভেসে উঠত চোখে।

‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক আমি তোমায় ছাড়ব না মা’, কিংবা ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গানটি বেসুরো কণ্ঠে গাইতে গিয়ে কখন নিজেরই অলক্ষ্যে মাটির সঙ্গে মাথার মোলাকাত হয়েছে, টেরই পাইনি।

হ্যাঁ, তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গাওয়া গানগুলোর কিছু কিছু আমরা মুখস্থ করে নিয়েছিলাম। নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’, অতুল প্রসাদ সেনের ‘মোদের গরব মোদের আশা’, মুকুন্দ দাসের ‘ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে’, গুরুসদয় দত্তের ‘মানুষ হ মানুষ হ আবার তোরা মানুষ হ’ গানগুলো আমাদের মোহিত করে তুলত। সলিল চৌধুরীর দুটো গান ‘মানব না এ বন্ধনে না, মানব না এ শৃঙ্খলে’, কিংবা ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা’ শুনলে শরীরে অদ্ভুত শক্তি আসত। আর ছিল মোহিনী সেনের ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’। এই গানটি নাচের সঙ্গে দেখতে ভালো লাগত বেশি।

এভাবেই আজম খানের প্রবল প্রমত্ত ঝড়ের মাঝে দেশের গানেরা শান্ত হয়ে মনের মাঝে বসত। কী করে সেগুলোই একসময় হয়ে উঠল তৃষ্ণার জল, সে কথাই তো বলার জন্য এই আয়োজন।

হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ
আমাদের একটা টেলিভিশন ছিল। ফিলিপস। দেশে যখন প্রথম টেলিভিশন এসেছে, তখন তার একটি এসেছিল আমাদের বাড়িতে। পাড়ার লোকেরা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান হলে চলে আসত আমাদের বাড়িতে। তখন বারান্দায় রাখা হতো টেলিভিশন। বাড়ির সামনের লনে দাঁড়িয়ে-বসে পাড়ার মানুষেরা টিভি দেখত।

সেই টিভিতে হতো গানের অনুষ্ঠান। সম্ভবত রবীন্দ্রসংগীতের অনুষ্ঠানটির নাম ছিল গীতবিতান। রাত ৮টার খবরের আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বোধ হয় ছিল সে অনুষ্ঠান। সারা দিন কাজের পর আমাদের মা সে সময় একটু বসতেন টেলিভিশনের সামনে। তিনিই বলতেন সন্‌জীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন, কলিম শরাফীর কথা। জাহেদুর রহিমের কথা। স্বীকার করে নেওয়া ভালো, সে সময় রবীন্দ্রসংগীতে মোটেই আনন্দ পেতাম না। মনে হতো, একঘেয়ে সুরে কী হচ্ছে এটা? কোথাও কোনো চমক নেই, চিৎকার নেই। একটানা কী সব কথা বলে যাওয়া হচ্ছে!

সে বয়সেই হঠাৎ করে কানে এল কয়েকটি গান। আমূল পাল্টে গেল রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ভাবনা। গানগুলোর কয়েকটির উল্লেখ না করলে এই পাল্টে যাওয়ার ঘটনাটি বোঝা যাবে না। বলে রাখি, তখনো টেপ রেকর্ডার বা স্টেরিও সেট নেই আমাদের বাড়িতে। সম্বল এক ব্যান্ডের একটা রেডিও, আর টেলিভিশন। রেডিওটা থাকে আমাদের পঞ্চম ভ্রাতার শাসনে, ফলে সেটার কাছাকাছি হওয়া যেত শুধু সে বাড়িতে না থাকলেই।

শিশুদেরই কোনো অনুষ্ঠানে যখন শুনলাম, ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’, তখন সে গানের কথাগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে মনে হলো, আরে! এ দেখি আমার কথাই বলা হচ্ছে। আমাদের সবার কথাই বলা হচ্ছে। রাজা বলে আলাদা কেউ নেই। এ রাজা তো আমি, এ রাজা তো তুমি, এ রাজা তো সে! এ যে কী এক অনবদ্য আবিষ্কার, সেটা অনুভব না করলে বলে লাভ নেই।

তারপর ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে!’ এই গান শুনতে গিয়ে একটা খটকা আসত মনে। এখানে তুমি, আর তুইয়ের ব্যবহার একই সঙ্গে করলেন কেন রবীন্দ্রনাথ, সেটা বুঝতে পারতাম না। খুদে এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করায় সে বিজ্ঞের মতো উত্তর দিয়েছিল, ‘রবীন্দ্রনাথ তো কবি, ব্যাকরণ জানে না। বড়ুয়া স্যারের ক্লাসে গেলে রবীন্দ্রনাথ বুঝত কত ধানে কত চাল!’ উত্তরটা অবশ্য আজও পাইনি।

এবার কয়েকটি গানের কথা এক নিশ্বাসে বলে যাই, তাতে বোঝা যাবে, কেন রবীন্দ্রসংগীতকে আর প্যানপ্যানানি বলে মনে হতো না। যদিও অনেক পরে এসে বুঝতে শুরু করেছি, যাকে প্যানপ্যানানি ভেবেছি সেই ছেলেবেলায়, তা ছিল দুঃখ নামক রোগের প্রতিষেধক, নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ওষুধ। কিন্তু সে বয়সে কে আর তা ভাবে?

‘বাঁধ ভেঙে দাও বাঁধ ভেঙে দাও।’

‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক।’

‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে।’

‘সংকোচের বিহ্বলতা নিজের অপমান।’

‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো।’

‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে জয় মা বলে ভাসা তরী।’

অন্যরকম হলেও অনেক পরে আরেকটি গান খুব ভালো লেগেছিল, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’। সে কথাও বলব যথাসময়ে।

এই যে হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথ ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন, তা কিন্তু ‘মনে মনেই’। হারিয়ে গেছি মনে মনে। এবং হ্যাঁ, নিজের কণ্ঠে সে গান করার চেষ্টা করিনি মোটেও, নিজে বেসুরো বলে। অন্যের কণ্ঠে শুনেই প্রাণের আশ মিটিয়েছি।

কৈশোরে রবীন্দ্রনাথ
স্বাধীন দেশের প্রাথমিক চলার পথে ছিল অনেক খানা-খন্দ। রাজনীতির মাঠে যে খেলা চলছিল, তাতে রেফারির বাঁশি হয়ে গিয়েছিল গৌণ। এর পর তো উদ্ভট উটের পিঠে চড়ে বসল দেশ। সে যে কোনদিকে যাচ্ছে, তা বুঝবে সাধ্য কার?

সেই অরাজকতায় ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ বাক্যটি হয়ে উঠল কারও কারও জন্য হীরন্ময়। রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি জটিল করে দেওয়ার খেলা শুরু হলো। মরুভূমির লু হাওয়া বইতে লাগল বাংলাদেশজুড়ে।

তখন রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলেন কী করে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। দেখা গেল, হারমোনিয়ামের রিডে আঙুল বুলিয়ে তুলছে রবীন্দ্রনাথের সুর। পাড়ায়-মহল্লায় সকালের দিকে তখনো শোনা যেত গলা সাধার আওয়াজ। ভোরবেলাটায় রাঙিয়ে যেত মন, ‘যাবার আগে নয়’, দিনের শুরুতেই।

সে সময় বইয়ের পাতায় আসতেন রবীন্দ্রনাথ। ‘বলাই’ কিংবা ‘ছুটি’ গল্পের মাধ্যমে তিনি ঢুকে যেতেন মনের ভিতর। গানে গানে রবীন্দ্রনাথকে পেতাম না তখন।

এর মাঝে বাড়িতে ঘটে গেল এক পরিবর্তন। মেজ ভাই মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। ফেরার পথে সেখান থেকে নিয়ে এসেছেন একটা স্টেরিও সেট। সেখানে ক্যাসেট দিলেই শোনা যাবে গান। যখন ইচ্ছে, তখন শোনা যাবে। যখন ইচ্ছে, তা বন্ধ করে অন্য একটি গান দেওয়া যাবে। গানের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য।

সে সময় যে ক্যাসেটগুলো এল, তার একটি ছিল ‘শ্যামা’, একটি ‘চিত্রাঙ্গদা’, একটি ‘মায়ার খেলা’, একটি ‘চণ্ডালিকা’। হতে পারে দুই পিঠে দুটো গীতিনাট্য।

আলাদাভাবে এল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের রবীন্দ্র সংগীতের ক্যাসেট। যে ক্যাসেট থেকে সবার আগে মুখস্থ হয়ে গেল ‘প্রাঙ্গণে মোর শিরীষ শাখায় ফাগুন মাসের কী উচ্ছ্বাসে’।

শ্যামার মধ্যেই দেখি হেমন্ত! বজ্রসেন হয়ে মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন! এই প্রথম রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে একটু স্থিত হই। শ্যামাকে বোঝার চেষ্টা করি। বজ্রসেন আর শ্যামার মধ্যে কে বেশি আপন, তা ঠিক করে নিতে দ্বিধান্বিত হয়ে ওঠে মন। উত্তীয়কে বিপদে ফেলার পরও শ্যামাকে একমাত্র অপরাধী বলে ভাবতে ভাল্লাগে না। বজ্রসেনের জন্যই তো এত ত্যাগ, তাহলে বজ্রসেন কেন ক্ষমা করতে পারবে না শ্যামাকে! শেষে এসে বলছে ‘যাও যাও যাও, যাও ফিরে যাও।’ তারপর বলছে, ‘ক্ষম হে মম দীনতা, পাপীজন স্মরণ প্রভু।’ ‘ক্ষমিবে না আমার ক্ষমাহীনতা’—কী মারাত্মক কথা!

এইচএসসি দিলাম ১৯৮৪ সালে। এর পর ‘কণ্ঠশীলন’ নামে একটি আবৃত্তি সংগঠনে যোগ দিলাম। সেখানে কবিতার পাশাপাশি বিশ্ববীক্ষার সুযোগ হলো। রবীন্দ্রনাথের গানের পথে হাঁটার সুযোগ হলো একেবারে ভিন্ন একটি মাধ্যমে।

কণ্ঠশীলনে আবৃত্তি করতেন ফওজিয়া মান্নান। আমি তাঁকে মিলি আপা বলে ডাকি। মহড়া শেষ হলে আমরা কয়েকজন তাঁকে আর ছন্দা আপাকে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিতাম। টিএসসি থেকে নীলক্ষেত হয়ে আজিমপুর কলোনিতে মিলি আপা, আর কবরস্থান ছাড়িয়ে নতুন পল্টনে ছন্দা আপাকে পৌঁছে দিতাম। ওয়াহিদুল হক সে সময় মিলি আপাদের বাড়িতে গিয়ে আটকে যেতেন। সেখানে ছিল ক্লাস নাইন পড়ুয়া তানিয়া মান্নান, মিলি আপার ছোট বোন। আমরাও কখনো কখনো বসতাম সে বাড়িতে। তানিয়া নিয়ে আসত হারমোনিয়াম। তারপর গাইত গান।

এখনো তানিয়ার রেওয়াজ করা কয়েকটি গান মনে আছে। রবীন্দ্রনাথের দিকে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে এ গানগুলো ছিল দিশারি। একটি গান হলো, ‘আকাশ আমায় ভরল আলোয়, আকাশ আমি ভরব গানে।’ গানটা শুনি আর ভাবি, এ কি অসাধারণ কথা! বিনে পয়সার বিনিময়! আকাশ মানে সূর্য, নিশ্চয়ই আলো দিচ্ছে পৃথিবীকে, আর তাতে পৃথিবী মানে পৃথিবীর মানুষের কত আনন্দ! সে গান দিয়ে সে পুরস্কারের মূল্য দিচ্ছে!

সে সময় আরও দুটো গানের সুধা এসে মিশে যায় মনে।

‘তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই’

‘অল্প লইয়া থাকি তাই মোর যাহা যায়, তাহা যায়।’

গান দুটি শুনি সুবিনয় রায়ের ক্যাসেটে। রাশিয়ার দশ বছর কেটেছে এই দুই গানের ওমে। সে আরও পরের ব্যাপার।

এ ছাড়া আরও দুটি গান হলো, ‘জাগো পূরবাসী, ভগবৎ প্রেমপিয়াসি।’ অন্যটা ‘ধীরে ধীরে মোরে টেনে লহ তোমা পানে।’ পরের দুটি গান রবীন্দ্রসংগীত নয়, কিন্তু একই সঙ্গে গান তিনটি শুনতাম, এবং অবাক হয়ে খেয়াল করে দেখতাম, গান তিনটি আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে। আর এ সময় পেয়ে যাই এক অমোঘ বার্তা: রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে সৃষ্টিশীল সময় হলো ১৮৯১ থেকে ১৯০০ সাল। এ সময়টিতে তিনি কাটিয়েছেন পূর্ববঙ্গে!

‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’
এক নতুন জগতের ঠিকানা লিখে দিল সে কালের পূর্ববঙ্গ। শাহজাদপুর, শিলাইদহ, আর পতিসর। বোটটা যেন আমি নিজের চোখে দেখি। ছিন্নপত্রগুলো ভেসে ওঠে চোখে। রবীন্দ্রনাথ নিজের চোখে মানুষ দেখছেন। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছাচ্ছেন। এতকাল যে বদ্ধ জলাশয়ে ছিল বসবাস, সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এ যেন মহাসাগর! 

গানের কথা বলছি। তাই আগে শোনা একটি গানকে এই সময়ের গায়ে লেপ্টে দিলাম: 

‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
তাই হেরি তায় সকল খানে।’

‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে’ গানটির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওয়াহিদুল হক বলেন, ‘এ সময় বাউল সংগীতের সঙ্গে একাত্ম হচ্ছেন কবি। এই যে গানটা, সেটাও লেখা হয়েছে বাউল সুরে। একটা গান আছে, “হরিনাম দিয়ে জগৎ মাতালে, আমার একলা নিতাই!” সেই সুরেই তো গানটা!’

গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে’ গানটির সুরে হলো ‘আমার সোনার বাংলা’, এখন যা আমাদের জাতীয় সংগীত। এর পর থেকে নানাভাবেই তো রবীন্দ্রনাথ এসেছেন আমার কাছে। এসেছেন তাঁর প্রবন্ধের মাধ্যমে, কবিতায়। এসেছেন অন্যদের হাত ধরে। সে রকমই কিছু কথা শোনানো জরুরি।

বিচ্ছিন্ন কিছু কথা
আমার গালে একটা চটকানা দিলেন বিষ্ণু দে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখলেন:

‘তুমি কি কেবল-ই স্মৃতি, শুধু এক উপলক্ষ, কবি? 
হরেক উৎসবে হৈ হৈ
মঞ্চে মঞ্চে কেবল-ই কি ছবি? 
তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ
আর বাইশে শ্রাবণ?’

তারপর বললেন—
‘তোমার আকাশ দাও, কবি, দাও
দীর্ঘ আশি বছরের
আমাদের ক্ষীয়মাণ মানসে ছড়াও
সূর্যোদয় সূর্যাস্তের আশি বছরের আলো, 
বহুধা কীর্তিতে শত শিল্পকর্মে উন্মুক্ত উধাও
তোমার কীর্তিতে আর তোমাতে যা দিকে দিকে
একাগ্র মহৎ, 
সে কঠিন ব্রতের গৌরবে, 
আমাদের বিকারের গড্ডল ধুলার দিনগত অন্যায়ের কুৎসিতে
শুনি যেন সুন্দরের গান’

ওলোট পালট হয়ে গেল ভাবনার জগৎ। মেকি মনে হলো অনেক কিছুই। আসলেই কি উপলক্ষ তৈরি করে হইহই করলে রবীন্দ্রনাথকে পাওয়া যায়? ওই জন্ম-মৃত্যুর দুটি দিন, আর নববর্ষে ‘এসো হে বৈশাখ’ গাইলেই কর্তব্য শেষ? তাঁর গান কবিতাটিতে এসে ‘এ পরবাসে রবে কে এ পরবাসে’ পঙ্‌ক্তিটিতে এসে থমকে দাঁড়াই। মালতী ঘোষালকে চিনি না। কিন্তু তিনি যেন এসে গানটি শুনিয়ে যান। সে কবিতায় দেবব্রত বিশ্বাসের উদাত্ত কণ্ঠের বর্ণনা শুনে ক্যাসেটে তাঁর গান শোনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম!

‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধ সংগীত’ বইটি পড়ে আহত হয়েছিলাম। 

শামসুর রাহমান তাঁর ঋণী কবিতায় লেখেন ফাহমিদা খাতুনের রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে: 

‘ফাহমিদা সুর ভাঁজে, এ-ও এক বৃষ্টি অপরূপ
অস্তিত্ব ডুবিয়ে নামে, গীতবিতানের কিছু নিভৃত নিশ্চুপ
পাতা ওড়ে অলৌকিক কলরবে, গাংচিলের মতো ওড়ে
ঘোরে সারা ঘরে
প্রাণের ঊর্মিল জল ছুঁয়ে যায় কত ছল ভরে।’

আরেকটা কথা বলি ফাহমিদা খাতুনকে নিয়ে। এটা অবশ্য গান। আমাদের গর্বের ইতিহাস। ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানটি নিয়েই কথা।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে পাকিস্তান টেলিভিশনে গান গাইছিলেন ফাহমিদা খাতুন। স্বাধিকার আন্দোলনের সেই তুঙ্গ মুহূর্তে টেলিভিশনের বাঙালি কর্মকর্তারা চাইছিলেন না টেলিভিশনে পাকিস্তানি পতাকা দেখিয়ে অধিবেশন শেষ করতে। তাই ফাহমিদা খাতুনকে নির্দেশ দেওয়া হলো গান গেয়ে মাঝ রাত পার করে দিতে। ফাহমিদা খাতুন গাইতে থাকলেন, ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি, তুমি কী অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী।’ এবং সত্যিই রাত ১২টা পেরিয়ে গেলে অধিবেশন শেষ হলো। ২৩ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান টেলিভিশনে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত