Ajker Patrika

রসিক সুকুমার

সুকুমার রায়
রসিক সুকুমার

শৈশব থেকেই সুকুমার রায় অভিনয় করতে ভালোবাসতেন। তখন ছোটদের যেসব পত্রিকা বের হতো, সেগুলোয় প্রকাশিত ছড়া আবৃত্তি করতেন, গল্পগুলো নিয়ে অভিনয় করতেন। বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জীবজন্তু নিয়ে লেখা বই থেকে নানা ছবি দেখিয়ে ছোট বোন টুনি (শান্তিলতা), মনি (সুবিনয়) আর বোন পুণ্যলতাকে গল্প শোনাতেন। নিজেও মনগড়া সব প্রাণীর কথা বলতেন। সে রকম একটা জীবের নাম হলো ‘ভবন্দোলা’। সেই প্রাণীটি থপথপ করে দুলে দুলে হাঁটত। আরেকটির নাম ছিল ‘মন্তুপাইন’। প্রাণীটি সরু লম্বা গলাটা কেমন পেঁচিয়ে, গিঁট পাকিয়ে রাখে, সেটা দেখাতেন। আর কিছু ড্যাবাচোখা কম্পু।

অন্ধকার বারান্দার কোণে তা দেয়ালের পেরেকে বাদুড়ের মতো ঝুলে থাকত। এই চরিত্রগুলোই পরে দেখা গেল হ-য-ব-র-ল, আবোলতাবোল আর হেঁসোরাম হুঁশিয়ারের ডায়েরিতে।

উপেন্দ্রকিশোর নিজেই ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। ছবি আঁকা শেখাতেন সন্তানদের। প্রত্যেকেই ভালো আঁকতে শিখেছিলেন, তবে খুব বেশি ভালো আঁকতেন দুজন—সুখলতা আর সুকুমার। আঁকার নেশা এমন ছিল যে পড়ার বইয়ের ফাঁকা জায়গাগুলোয় ছবি এঁকে ভরিয়ে দিতেন। আর যে সাদা-কালো ছবিগুলো থাকত বইয়ে, সেগুলো রঙিন করে তুলতেন।

রসিক হয়েই বুঝি জন্মেছিলেন তিনি। মাস্টারমশাই একবার বলেছিলেন, ‘নিজের জিনিসপত্র সব গুছিয়ে রাখবে। ভাইবোনেরা যদি কিছু ছড়িয়ে ফেলে রাখে, তা-ও তুলে ফেলে দেবে।’

মাস্টারমশাইয়ের কথাটা আক্ষরিক অর্থেই পালন করেছিলেন রসিক সুকুমার। পড়াশোনা শেষ হলে দেখলেন, ছোট বোন টুনি (শান্তিলতা) পা ছড়িয়ে মাটিতে বসে কী যেন করছে। আর যায় কোথায়! সুকুমার রায় তাকে সুদ্ধ তুলে নিয়ে ডেস্কে ভর্তি করলেন!

মাঘোৎসবের মধ্যে বালক-বালিকাদের সম্মেলন হলো। ময়রা এক ড্রামভর্তি রসগোল্লা দিয়ে গেল। পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই, এত রসগোল্লা কে একা খেতে পারে?’

কেউ কথা বলে না। তখন সুকুমার বললেন, ‘আমি পারি।’ তারপর ফিসফিস করে যোগ করলেন, ‘অনেক দিনে!’

সূত্র: কল্যাণী কার্লেকর, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪-৫

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত