Ajker Patrika

শচীনের চলে যাওয়া

সম্পাদকীয়
শচীনের চলে যাওয়া

সেকালের বোম্বেতে শচীন দেববর্মনের মতো এত সম্মান আর কোনো বাঙালি পেয়েছে বলে জানা নেই। রাজপরিবারের ছেলে তিনি। মানুষও হয়েছেন সেই স্টাইলে। সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়তেন, টেনিস খেলতেন সাউথ ক্লাবে। কলকাতায় এসে কৃষ্ণচন্দ্র দের কাছে গান শিখেছেন, এরপর শিখেছেন ভীষ্মদেবের কাছে।

এক মেঘলা দুপুরে নিজেই হারমোনিয়াম বাজিয়ে গুনগুন করছিলেন। এ সময় কাজী নজরুল ইসলাম এসে হাজির। গুনগুন শুনেই দরজায় দাঁড়িয়েই নজরুল বললেন, ‘আরে! মুখটা তো বেশ করেছ, শচীন! দাঁড়াও, একটা কাগজ-পেনসিল দাও।’ পনেরো মিনিটের মধ্যে নজরুল লিখে ফেললেন গান, ‘মেঘলা নিশি ভরে, মন যে কেমন করে...’। সুর হলো ঘণ্টাখানেকের মধ্যে।

তপন সিংহের ছবিতে গানে সুর করার সময় বলতেন, ‘তুমি একটু রেকর্ডিংয়ের আগে গানটা শোনো।’ তপন সিংহ বলতেন, ‘খুব প্রয়োজন দেখছি না। আপনি যখন সংগীত পরিচালক।’ শচীন বলতেন, ‘ধুৎ! তা হয় নাকি! তুমি পরিচালক, সবকিছু তোমার নির্দেশে হবে।’

বোম্বেতে একবার গেলেন তপন সিংহ। ফোন করলেন দিলীপ কুমারকে। দিলীপ বোম্বেতে ছিলেন না। ফোন ধরেছিলেন সায়রা বানু। তিনি বললেন, ‘সাহেব হায়দরাবাদ গেছেন, পরশু ফিরবেন। দাদা, আপনি শুনেছেন, শচীনদার স্ট্রোক হয়েছে?’

আকাশ থেকে পড়লেন তপন সিংহ। সায়রা বানু বললেন, ‘শচীনদা বোম্বে হাসপাতালে আছেন। আমি আপনাকে বিকেল ৪টার সময় তুলে নিয়ে যাব।’

হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখা গেল, শচীনকর্তার শরীরের বাঁ দিক অবশ হয়ে গেছে। তপন সিংহের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকলেন শচীন দেববর্মন। তারপর বিকৃত স্বরে শুধু বললেন, ‘তপন, আর কিছু চাই না—যদি গুনগুন করে গান গাইতে পারতাম!’

তপন বললেন, ‘নিশ্চয়ই পারবেন। বড়ে গোলাম আলী সাহেব স্ট্রোকের পরও গেয়েছেন। আমি নিজে শুনেছি সে গান।’

কিন্তু শচীন দেববর্মন গান করতে পারেননি। তপন যখন কলকাতায় ফিরেছেন, তখন সন্তোষকুমার ঘোষ ফোনে জানালেন, ‘তপন, শচীনদা চলে গেছেন।’ 

সূত্র: তপন সিংহ, মনে পড়ে, পৃষ্ঠা ৮৬-৮৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত