খান মুহাম্মদ রুমেল

তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা লাইন দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা। ফাঁকা মানে—একেবারেই সুনসান! দু-একটি স্টলের সামনে যা-ও কিছুটা ভিড় আছে—হাতে গোনা যায়। এত মানুষ তাহলে গেল কোথায়? গেট দিয়ে ঢুকে নিশ্চয় বাতাসে মিলিয়ে যায়নি তারা? হাঁটতে থাকি আপনমনে। পরিচিত কারও খোঁজ মেলে না। হঠাৎ ফোন করেন মনি হায়দার। জনপ্রিয় লেখক, বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক! মনি ভাইয়ের উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠ।
— কোথায় তুমি?
— এই তো ভাই, মেলায় ঢুকলাম মাত্র।
— কোথায় আছ?
— হাঁটছি।
— আমিও আছি, দেখা হবে!
— জি, দেখা হবে।
ফোন রেখে দেন মনি হায়দার। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দাঁড়াই অনিন্দ্য প্রকাশের সামনে। বই নেড়েচেড়ে দেখি। বিষণ্ন মুখে বসে আছেন বিক্রয়কর্মীরা। আমাকে দেখে আগ্রহ জাগে তাঁদের মনে। হয়তো ভাবেন, একজন ক্রেতা তো পাওয়া গেল।
— দাদা?
পেছন থেকে ডেকে ওঠেন কেউ একজন! তাকিয়ে দেখি অরুণ কুমার বিশ্বাস। এই শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোয়েন্দা কাহিনি লিখে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন। কিশোর থ্রিলার, ভ্রমণকাহিনি এবং বড়দের জন্যও লেখেন তিনি। এবারও মেলায় এসেছে তাঁর বেশ কয়েকটি বই। এর মধ্যে অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে এসেছে গোয়েন্দা কাহিনি— সিগনেট।
— কাহিনি কী বইয়ের? জিজ্ঞেস করি আমি।
— এটা আমার অলোকেশ রায় সিরিজের একটি বই। সম্পূর্ণ গোয়েন্দা কাহিনি।
— আপনার অলোকেশ রায় সিরিজ খুব পাঠকপ্রিয় হয়েছে।
— হুম্, এটা ঠিক। বাংলাদেশে গোয়েন্দা কাহিনির পাঠক বাড়ছে। আমি ছাড়াও আর যাঁরা লিখছেন, সবাই ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
— জি দাদা। এমনটাই দেখছি।
দুজন গণমাধ্যমকর্মী এসে দাঁড়ান আমাদের পাশে। অরুণ কুমার বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার নেবেন তাঁরা। ক্যামেরা প্রস্তুত হচ্ছে।
— দাদা, তাহলে আপনি কথা বলেন। আমি সামনের দিকে যাই।
— জি দাদা, ভালো থাকবেন। দেখা হবে আবার।
যাই সামনের দিকে। আস্তে আস্তে ডুবছে সূর্যটা। কমে আসছে দিনের আলো। স্টলগুলোয় জ্বলে উঠছে সাদা হলুদ বাতি। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি শিশুচত্বরে। এদিকটায় ভীষণ ভিড়। বেচাকেনাও চলছে ধুমসে। সাধারণত শুক্র-শনিবার ছাড়া শিশুদের এত সমাগম হয় না। কিন্তু সোমবারে এত ভিড়ের হেতু কী? সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে, এদিন সরস্বতীপূজা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। আর এ জন্যই বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে ছুটে এসেছেন মেলায়। প্রায় সব শিশুর হাতেই বইয়ের প্যাকেট, একাধিক। বাবা-মায়ের হাত ধরে স্টলে স্টলে ঘুরছে তারা। ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে শিশুদের কলকাকলি দেখে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি মেলার পুব দিকে একেবারে শেষ মাথায়। এদিকটায় সারি সারি অসংখ্য খাবারের দোকান। দোকানগুলোর সামনে চেয়ার-টেবিল পাতা। কোনো টেবিলই খালি নেই। চেয়ার না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক মানুষ। তা-ও বিক্রেতারা হাঁকডাক করে ডাকছেন মানুষজনকে— আসেন আসেন, ভালো কাবাব আছে...চটপটি ফুচকা আছে...আসেন...আসেন...বসেন! এবার আমার বোধোদয় হয়, প্রবেশমুখের উপচে পড়া মানুষ থাকার পরেও মেলার মাঠ কেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল! মানুষ বেশির ভাগ এসে ভিড় জমিয়েছেন খাবারের দোকানে!
হাঁটা পথে দেখা হয়ে যায় মনি হায়দারের সঙ্গে। মনি হায়দার মানেই উচ্ছল প্রাণবন্ত আড্ডা আর প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি। তবে এদিন মনি হায়দারের সঙ্গে মাত্র একজন মানুষ। খুব শান্ত নিরিবিলি গোছের। মনি ভাই পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সঙ্গে। ড. সাগর রশিদ সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। খুবই পড়াশোনা জানা মানুষ। মেলায় এবার আসছে তাঁর লেখা বই—বাংলা বানান সংস্কার: বাংলাদেশ। ড. সাগর রশিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে বাংলা পড়াতে পড়াতে তাঁর মনে হয়েছে ব্যাকরণ ও বানান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভীতি আছে। এ ছাড়া সঠিক নির্দেশনাও পায় না তারা। সেই তাগিদ থেকেই এই বই লেখা। বেশ আগ্রহ জাগে তাঁকে ঘিরে! কথা বলে মনে হয়, এ বিষয়ে তাঁর পড়াশোনাও প্রচুর। বানান নিয়ে নানা আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে। কিছু প্রচলিত শব্দের বানানের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন তিনি। যেমন ‘তৈরি’ শব্দটি সাধারণত এখন আমরা হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লিখি। কিন্তু সাগর রশিদ জানান, এটি দীর্ঘ ই–কার দিয়েও লেখা যায়।
— সেটা কেমন? কৌতূহলী জিজ্ঞাসা আমার!
— যেমন ধরেন, আপনি বলছেন আমার জন্য এক কাপ চা তৈরি করো। এখানে র-এর ওপর হ্রস্ব ই-কার হবে। আবার, আমার জন্য একটি জামা তৈরী করুন। এখানে র-এর ওপর দীর্ঘ ই-কার হবে।
— বাহ্, বেশ মজা তো!
— হুম্, বাংলা বানানে এমন আরও অনেক মজা আছে। এসব বিষয়ই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বইটিতে।
— আচ্ছা, বলুন তো, বানান নিয়ে আমাদের মধ্যে এত সংশয়, গোলমাল কেন?
— আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন? খুব শান্ত স্বরে বলেন সাগর রশিদ।
— মানে, বাংলা একাডেমি কিছুদিন পরপর বানানরীতি পরিবর্তন করে। আর সেটা নিয়ে তৈরি হয় দ্বিধা। যেমন বাংলা একাডেমি একবার বলল—‘ঈদ’ না লিখে ‘ইদ’ লেখার জন্য। এই পরিবর্তনটা বেশির ভাগ মানুষ গ্রহণ করেননি। তবে এখন যেটা হচ্ছে ‘ইদ’ এবং ‘ঈদ’ দুটোই চলছে। যে যার মতো লিখছে। আবার ধরুন, ‘কাহিনী’ নাকি ’কাহিনি’—কোনটা লিখব। এ নিয়েও দেখি বাহাস আছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ দিতে পারব।
— আচ্ছা, একটা গল্প বলি আপনাকে। একবার সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বললেন—গুরুজি, এখন থেকে আমি এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি করে বলতে চাই। আর ‘গরু’ না লিখে ‘গোরু’ লিখতে চাই। রবীন্দ্রনাথ বললেন—হ্যাঁ, এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি—তুমি বলতেই পারো। আর গরুতে ও-কার দিলে গরুগুলো একটু মোটাতাজা হবে এই আরকি! এ ছাড়া আর বিশেষ কোনো হেরফের হবে বলে আমি মনে করিনে!
ড. সাগর রশিদের কথা শুনে হাহা করে হেসে ওঠেন মনি হায়দার। হাসতে থাকি আমিও। হাসেন সাগর রশিদও।
বিশেষ কী কাজ আছে বলে চলে যেতে চান মনি হায়দার।
— এত তাড়া কিসের আপনার? বলি আমি।
— তাড়া কিছু নেই। তবে তুমি লিখে দিয়ো—‘মোকাম সদরঘাট’ নিয়ে অস্থির হয়ে আছে মনি হায়দার।
— আচ্ছা ভাই। লিখব।
আবার সেই প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি মনি হায়দারের।
মোকাম সদরঘাট নামে একটা উপন্যাস বের হওয়ার কথা রয়েছে এবার মনি হায়দারের। চলে যান তিনি। আমিও বিদায় নিই সাগর রশিদের কাছ থেকে। ধীর পায়ে বের হয়ে আসি মেলা থেকে। ঢোকার মুখে ভিড় আরও বেড়েছে। মানুষের চাপ সামলে কোনোমতে বের হয়ে ফুটপাতে দাঁড়াই। টিএসসির দিক থেকে ভেসে আসছে গানের সুর—
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।
আসবার কালে কী জাত ছিলে
এসে তুমি কী জাত নিলে...

তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা লাইন দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা। ফাঁকা মানে—একেবারেই সুনসান! দু-একটি স্টলের সামনে যা-ও কিছুটা ভিড় আছে—হাতে গোনা যায়। এত মানুষ তাহলে গেল কোথায়? গেট দিয়ে ঢুকে নিশ্চয় বাতাসে মিলিয়ে যায়নি তারা? হাঁটতে থাকি আপনমনে। পরিচিত কারও খোঁজ মেলে না। হঠাৎ ফোন করেন মনি হায়দার। জনপ্রিয় লেখক, বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক! মনি ভাইয়ের উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠ।
— কোথায় তুমি?
— এই তো ভাই, মেলায় ঢুকলাম মাত্র।
— কোথায় আছ?
— হাঁটছি।
— আমিও আছি, দেখা হবে!
— জি, দেখা হবে।
ফোন রেখে দেন মনি হায়দার। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দাঁড়াই অনিন্দ্য প্রকাশের সামনে। বই নেড়েচেড়ে দেখি। বিষণ্ন মুখে বসে আছেন বিক্রয়কর্মীরা। আমাকে দেখে আগ্রহ জাগে তাঁদের মনে। হয়তো ভাবেন, একজন ক্রেতা তো পাওয়া গেল।
— দাদা?
পেছন থেকে ডেকে ওঠেন কেউ একজন! তাকিয়ে দেখি অরুণ কুমার বিশ্বাস। এই শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোয়েন্দা কাহিনি লিখে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন। কিশোর থ্রিলার, ভ্রমণকাহিনি এবং বড়দের জন্যও লেখেন তিনি। এবারও মেলায় এসেছে তাঁর বেশ কয়েকটি বই। এর মধ্যে অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে এসেছে গোয়েন্দা কাহিনি— সিগনেট।
— কাহিনি কী বইয়ের? জিজ্ঞেস করি আমি।
— এটা আমার অলোকেশ রায় সিরিজের একটি বই। সম্পূর্ণ গোয়েন্দা কাহিনি।
— আপনার অলোকেশ রায় সিরিজ খুব পাঠকপ্রিয় হয়েছে।
— হুম্, এটা ঠিক। বাংলাদেশে গোয়েন্দা কাহিনির পাঠক বাড়ছে। আমি ছাড়াও আর যাঁরা লিখছেন, সবাই ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
— জি দাদা। এমনটাই দেখছি।
দুজন গণমাধ্যমকর্মী এসে দাঁড়ান আমাদের পাশে। অরুণ কুমার বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার নেবেন তাঁরা। ক্যামেরা প্রস্তুত হচ্ছে।
— দাদা, তাহলে আপনি কথা বলেন। আমি সামনের দিকে যাই।
— জি দাদা, ভালো থাকবেন। দেখা হবে আবার।
যাই সামনের দিকে। আস্তে আস্তে ডুবছে সূর্যটা। কমে আসছে দিনের আলো। স্টলগুলোয় জ্বলে উঠছে সাদা হলুদ বাতি। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি শিশুচত্বরে। এদিকটায় ভীষণ ভিড়। বেচাকেনাও চলছে ধুমসে। সাধারণত শুক্র-শনিবার ছাড়া শিশুদের এত সমাগম হয় না। কিন্তু সোমবারে এত ভিড়ের হেতু কী? সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে, এদিন সরস্বতীপূজা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। আর এ জন্যই বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে ছুটে এসেছেন মেলায়। প্রায় সব শিশুর হাতেই বইয়ের প্যাকেট, একাধিক। বাবা-মায়ের হাত ধরে স্টলে স্টলে ঘুরছে তারা। ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে শিশুদের কলকাকলি দেখে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি মেলার পুব দিকে একেবারে শেষ মাথায়। এদিকটায় সারি সারি অসংখ্য খাবারের দোকান। দোকানগুলোর সামনে চেয়ার-টেবিল পাতা। কোনো টেবিলই খালি নেই। চেয়ার না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক মানুষ। তা-ও বিক্রেতারা হাঁকডাক করে ডাকছেন মানুষজনকে— আসেন আসেন, ভালো কাবাব আছে...চটপটি ফুচকা আছে...আসেন...আসেন...বসেন! এবার আমার বোধোদয় হয়, প্রবেশমুখের উপচে পড়া মানুষ থাকার পরেও মেলার মাঠ কেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল! মানুষ বেশির ভাগ এসে ভিড় জমিয়েছেন খাবারের দোকানে!
হাঁটা পথে দেখা হয়ে যায় মনি হায়দারের সঙ্গে। মনি হায়দার মানেই উচ্ছল প্রাণবন্ত আড্ডা আর প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি। তবে এদিন মনি হায়দারের সঙ্গে মাত্র একজন মানুষ। খুব শান্ত নিরিবিলি গোছের। মনি ভাই পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সঙ্গে। ড. সাগর রশিদ সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। খুবই পড়াশোনা জানা মানুষ। মেলায় এবার আসছে তাঁর লেখা বই—বাংলা বানান সংস্কার: বাংলাদেশ। ড. সাগর রশিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে বাংলা পড়াতে পড়াতে তাঁর মনে হয়েছে ব্যাকরণ ও বানান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভীতি আছে। এ ছাড়া সঠিক নির্দেশনাও পায় না তারা। সেই তাগিদ থেকেই এই বই লেখা। বেশ আগ্রহ জাগে তাঁকে ঘিরে! কথা বলে মনে হয়, এ বিষয়ে তাঁর পড়াশোনাও প্রচুর। বানান নিয়ে নানা আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে। কিছু প্রচলিত শব্দের বানানের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন তিনি। যেমন ‘তৈরি’ শব্দটি সাধারণত এখন আমরা হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লিখি। কিন্তু সাগর রশিদ জানান, এটি দীর্ঘ ই–কার দিয়েও লেখা যায়।
— সেটা কেমন? কৌতূহলী জিজ্ঞাসা আমার!
— যেমন ধরেন, আপনি বলছেন আমার জন্য এক কাপ চা তৈরি করো। এখানে র-এর ওপর হ্রস্ব ই-কার হবে। আবার, আমার জন্য একটি জামা তৈরী করুন। এখানে র-এর ওপর দীর্ঘ ই-কার হবে।
— বাহ্, বেশ মজা তো!
— হুম্, বাংলা বানানে এমন আরও অনেক মজা আছে। এসব বিষয়ই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বইটিতে।
— আচ্ছা, বলুন তো, বানান নিয়ে আমাদের মধ্যে এত সংশয়, গোলমাল কেন?
— আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন? খুব শান্ত স্বরে বলেন সাগর রশিদ।
— মানে, বাংলা একাডেমি কিছুদিন পরপর বানানরীতি পরিবর্তন করে। আর সেটা নিয়ে তৈরি হয় দ্বিধা। যেমন বাংলা একাডেমি একবার বলল—‘ঈদ’ না লিখে ‘ইদ’ লেখার জন্য। এই পরিবর্তনটা বেশির ভাগ মানুষ গ্রহণ করেননি। তবে এখন যেটা হচ্ছে ‘ইদ’ এবং ‘ঈদ’ দুটোই চলছে। যে যার মতো লিখছে। আবার ধরুন, ‘কাহিনী’ নাকি ’কাহিনি’—কোনটা লিখব। এ নিয়েও দেখি বাহাস আছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ দিতে পারব।
— আচ্ছা, একটা গল্প বলি আপনাকে। একবার সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বললেন—গুরুজি, এখন থেকে আমি এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি করে বলতে চাই। আর ‘গরু’ না লিখে ‘গোরু’ লিখতে চাই। রবীন্দ্রনাথ বললেন—হ্যাঁ, এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি—তুমি বলতেই পারো। আর গরুতে ও-কার দিলে গরুগুলো একটু মোটাতাজা হবে এই আরকি! এ ছাড়া আর বিশেষ কোনো হেরফের হবে বলে আমি মনে করিনে!
ড. সাগর রশিদের কথা শুনে হাহা করে হেসে ওঠেন মনি হায়দার। হাসতে থাকি আমিও। হাসেন সাগর রশিদও।
বিশেষ কী কাজ আছে বলে চলে যেতে চান মনি হায়দার।
— এত তাড়া কিসের আপনার? বলি আমি।
— তাড়া কিছু নেই। তবে তুমি লিখে দিয়ো—‘মোকাম সদরঘাট’ নিয়ে অস্থির হয়ে আছে মনি হায়দার।
— আচ্ছা ভাই। লিখব।
আবার সেই প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি মনি হায়দারের।
মোকাম সদরঘাট নামে একটা উপন্যাস বের হওয়ার কথা রয়েছে এবার মনি হায়দারের। চলে যান তিনি। আমিও বিদায় নিই সাগর রশিদের কাছ থেকে। ধীর পায়ে বের হয়ে আসি মেলা থেকে। ঢোকার মুখে ভিড় আরও বেড়েছে। মানুষের চাপ সামলে কোনোমতে বের হয়ে ফুটপাতে দাঁড়াই। টিএসসির দিক থেকে ভেসে আসছে গানের সুর—
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।
আসবার কালে কী জাত ছিলে
এসে তুমি কী জাত নিলে...
খান মুহাম্মদ রুমেল

তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা লাইন দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা। ফাঁকা মানে—একেবারেই সুনসান! দু-একটি স্টলের সামনে যা-ও কিছুটা ভিড় আছে—হাতে গোনা যায়। এত মানুষ তাহলে গেল কোথায়? গেট দিয়ে ঢুকে নিশ্চয় বাতাসে মিলিয়ে যায়নি তারা? হাঁটতে থাকি আপনমনে। পরিচিত কারও খোঁজ মেলে না। হঠাৎ ফোন করেন মনি হায়দার। জনপ্রিয় লেখক, বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক! মনি ভাইয়ের উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠ।
— কোথায় তুমি?
— এই তো ভাই, মেলায় ঢুকলাম মাত্র।
— কোথায় আছ?
— হাঁটছি।
— আমিও আছি, দেখা হবে!
— জি, দেখা হবে।
ফোন রেখে দেন মনি হায়দার। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দাঁড়াই অনিন্দ্য প্রকাশের সামনে। বই নেড়েচেড়ে দেখি। বিষণ্ন মুখে বসে আছেন বিক্রয়কর্মীরা। আমাকে দেখে আগ্রহ জাগে তাঁদের মনে। হয়তো ভাবেন, একজন ক্রেতা তো পাওয়া গেল।
— দাদা?
পেছন থেকে ডেকে ওঠেন কেউ একজন! তাকিয়ে দেখি অরুণ কুমার বিশ্বাস। এই শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোয়েন্দা কাহিনি লিখে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন। কিশোর থ্রিলার, ভ্রমণকাহিনি এবং বড়দের জন্যও লেখেন তিনি। এবারও মেলায় এসেছে তাঁর বেশ কয়েকটি বই। এর মধ্যে অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে এসেছে গোয়েন্দা কাহিনি— সিগনেট।
— কাহিনি কী বইয়ের? জিজ্ঞেস করি আমি।
— এটা আমার অলোকেশ রায় সিরিজের একটি বই। সম্পূর্ণ গোয়েন্দা কাহিনি।
— আপনার অলোকেশ রায় সিরিজ খুব পাঠকপ্রিয় হয়েছে।
— হুম্, এটা ঠিক। বাংলাদেশে গোয়েন্দা কাহিনির পাঠক বাড়ছে। আমি ছাড়াও আর যাঁরা লিখছেন, সবাই ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
— জি দাদা। এমনটাই দেখছি।
দুজন গণমাধ্যমকর্মী এসে দাঁড়ান আমাদের পাশে। অরুণ কুমার বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার নেবেন তাঁরা। ক্যামেরা প্রস্তুত হচ্ছে।
— দাদা, তাহলে আপনি কথা বলেন। আমি সামনের দিকে যাই।
— জি দাদা, ভালো থাকবেন। দেখা হবে আবার।
যাই সামনের দিকে। আস্তে আস্তে ডুবছে সূর্যটা। কমে আসছে দিনের আলো। স্টলগুলোয় জ্বলে উঠছে সাদা হলুদ বাতি। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি শিশুচত্বরে। এদিকটায় ভীষণ ভিড়। বেচাকেনাও চলছে ধুমসে। সাধারণত শুক্র-শনিবার ছাড়া শিশুদের এত সমাগম হয় না। কিন্তু সোমবারে এত ভিড়ের হেতু কী? সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে, এদিন সরস্বতীপূজা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। আর এ জন্যই বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে ছুটে এসেছেন মেলায়। প্রায় সব শিশুর হাতেই বইয়ের প্যাকেট, একাধিক। বাবা-মায়ের হাত ধরে স্টলে স্টলে ঘুরছে তারা। ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে শিশুদের কলকাকলি দেখে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি মেলার পুব দিকে একেবারে শেষ মাথায়। এদিকটায় সারি সারি অসংখ্য খাবারের দোকান। দোকানগুলোর সামনে চেয়ার-টেবিল পাতা। কোনো টেবিলই খালি নেই। চেয়ার না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক মানুষ। তা-ও বিক্রেতারা হাঁকডাক করে ডাকছেন মানুষজনকে— আসেন আসেন, ভালো কাবাব আছে...চটপটি ফুচকা আছে...আসেন...আসেন...বসেন! এবার আমার বোধোদয় হয়, প্রবেশমুখের উপচে পড়া মানুষ থাকার পরেও মেলার মাঠ কেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল! মানুষ বেশির ভাগ এসে ভিড় জমিয়েছেন খাবারের দোকানে!
হাঁটা পথে দেখা হয়ে যায় মনি হায়দারের সঙ্গে। মনি হায়দার মানেই উচ্ছল প্রাণবন্ত আড্ডা আর প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি। তবে এদিন মনি হায়দারের সঙ্গে মাত্র একজন মানুষ। খুব শান্ত নিরিবিলি গোছের। মনি ভাই পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সঙ্গে। ড. সাগর রশিদ সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। খুবই পড়াশোনা জানা মানুষ। মেলায় এবার আসছে তাঁর লেখা বই—বাংলা বানান সংস্কার: বাংলাদেশ। ড. সাগর রশিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে বাংলা পড়াতে পড়াতে তাঁর মনে হয়েছে ব্যাকরণ ও বানান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভীতি আছে। এ ছাড়া সঠিক নির্দেশনাও পায় না তারা। সেই তাগিদ থেকেই এই বই লেখা। বেশ আগ্রহ জাগে তাঁকে ঘিরে! কথা বলে মনে হয়, এ বিষয়ে তাঁর পড়াশোনাও প্রচুর। বানান নিয়ে নানা আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে। কিছু প্রচলিত শব্দের বানানের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন তিনি। যেমন ‘তৈরি’ শব্দটি সাধারণত এখন আমরা হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লিখি। কিন্তু সাগর রশিদ জানান, এটি দীর্ঘ ই–কার দিয়েও লেখা যায়।
— সেটা কেমন? কৌতূহলী জিজ্ঞাসা আমার!
— যেমন ধরেন, আপনি বলছেন আমার জন্য এক কাপ চা তৈরি করো। এখানে র-এর ওপর হ্রস্ব ই-কার হবে। আবার, আমার জন্য একটি জামা তৈরী করুন। এখানে র-এর ওপর দীর্ঘ ই-কার হবে।
— বাহ্, বেশ মজা তো!
— হুম্, বাংলা বানানে এমন আরও অনেক মজা আছে। এসব বিষয়ই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বইটিতে।
— আচ্ছা, বলুন তো, বানান নিয়ে আমাদের মধ্যে এত সংশয়, গোলমাল কেন?
— আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন? খুব শান্ত স্বরে বলেন সাগর রশিদ।
— মানে, বাংলা একাডেমি কিছুদিন পরপর বানানরীতি পরিবর্তন করে। আর সেটা নিয়ে তৈরি হয় দ্বিধা। যেমন বাংলা একাডেমি একবার বলল—‘ঈদ’ না লিখে ‘ইদ’ লেখার জন্য। এই পরিবর্তনটা বেশির ভাগ মানুষ গ্রহণ করেননি। তবে এখন যেটা হচ্ছে ‘ইদ’ এবং ‘ঈদ’ দুটোই চলছে। যে যার মতো লিখছে। আবার ধরুন, ‘কাহিনী’ নাকি ’কাহিনি’—কোনটা লিখব। এ নিয়েও দেখি বাহাস আছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ দিতে পারব।
— আচ্ছা, একটা গল্প বলি আপনাকে। একবার সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বললেন—গুরুজি, এখন থেকে আমি এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি করে বলতে চাই। আর ‘গরু’ না লিখে ‘গোরু’ লিখতে চাই। রবীন্দ্রনাথ বললেন—হ্যাঁ, এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি—তুমি বলতেই পারো। আর গরুতে ও-কার দিলে গরুগুলো একটু মোটাতাজা হবে এই আরকি! এ ছাড়া আর বিশেষ কোনো হেরফের হবে বলে আমি মনে করিনে!
ড. সাগর রশিদের কথা শুনে হাহা করে হেসে ওঠেন মনি হায়দার। হাসতে থাকি আমিও। হাসেন সাগর রশিদও।
বিশেষ কী কাজ আছে বলে চলে যেতে চান মনি হায়দার।
— এত তাড়া কিসের আপনার? বলি আমি।
— তাড়া কিছু নেই। তবে তুমি লিখে দিয়ো—‘মোকাম সদরঘাট’ নিয়ে অস্থির হয়ে আছে মনি হায়দার।
— আচ্ছা ভাই। লিখব।
আবার সেই প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি মনি হায়দারের।
মোকাম সদরঘাট নামে একটা উপন্যাস বের হওয়ার কথা রয়েছে এবার মনি হায়দারের। চলে যান তিনি। আমিও বিদায় নিই সাগর রশিদের কাছ থেকে। ধীর পায়ে বের হয়ে আসি মেলা থেকে। ঢোকার মুখে ভিড় আরও বেড়েছে। মানুষের চাপ সামলে কোনোমতে বের হয়ে ফুটপাতে দাঁড়াই। টিএসসির দিক থেকে ভেসে আসছে গানের সুর—
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।
আসবার কালে কী জাত ছিলে
এসে তুমি কী জাত নিলে...

তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা লাইন দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা। ফাঁকা মানে—একেবারেই সুনসান! দু-একটি স্টলের সামনে যা-ও কিছুটা ভিড় আছে—হাতে গোনা যায়। এত মানুষ তাহলে গেল কোথায়? গেট দিয়ে ঢুকে নিশ্চয় বাতাসে মিলিয়ে যায়নি তারা? হাঁটতে থাকি আপনমনে। পরিচিত কারও খোঁজ মেলে না। হঠাৎ ফোন করেন মনি হায়দার। জনপ্রিয় লেখক, বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক! মনি ভাইয়ের উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠ।
— কোথায় তুমি?
— এই তো ভাই, মেলায় ঢুকলাম মাত্র।
— কোথায় আছ?
— হাঁটছি।
— আমিও আছি, দেখা হবে!
— জি, দেখা হবে।
ফোন রেখে দেন মনি হায়দার। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দাঁড়াই অনিন্দ্য প্রকাশের সামনে। বই নেড়েচেড়ে দেখি। বিষণ্ন মুখে বসে আছেন বিক্রয়কর্মীরা। আমাকে দেখে আগ্রহ জাগে তাঁদের মনে। হয়তো ভাবেন, একজন ক্রেতা তো পাওয়া গেল।
— দাদা?
পেছন থেকে ডেকে ওঠেন কেউ একজন! তাকিয়ে দেখি অরুণ কুমার বিশ্বাস। এই শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোয়েন্দা কাহিনি লিখে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন। কিশোর থ্রিলার, ভ্রমণকাহিনি এবং বড়দের জন্যও লেখেন তিনি। এবারও মেলায় এসেছে তাঁর বেশ কয়েকটি বই। এর মধ্যে অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে এসেছে গোয়েন্দা কাহিনি— সিগনেট।
— কাহিনি কী বইয়ের? জিজ্ঞেস করি আমি।
— এটা আমার অলোকেশ রায় সিরিজের একটি বই। সম্পূর্ণ গোয়েন্দা কাহিনি।
— আপনার অলোকেশ রায় সিরিজ খুব পাঠকপ্রিয় হয়েছে।
— হুম্, এটা ঠিক। বাংলাদেশে গোয়েন্দা কাহিনির পাঠক বাড়ছে। আমি ছাড়াও আর যাঁরা লিখছেন, সবাই ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
— জি দাদা। এমনটাই দেখছি।
দুজন গণমাধ্যমকর্মী এসে দাঁড়ান আমাদের পাশে। অরুণ কুমার বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার নেবেন তাঁরা। ক্যামেরা প্রস্তুত হচ্ছে।
— দাদা, তাহলে আপনি কথা বলেন। আমি সামনের দিকে যাই।
— জি দাদা, ভালো থাকবেন। দেখা হবে আবার।
যাই সামনের দিকে। আস্তে আস্তে ডুবছে সূর্যটা। কমে আসছে দিনের আলো। স্টলগুলোয় জ্বলে উঠছে সাদা হলুদ বাতি। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি শিশুচত্বরে। এদিকটায় ভীষণ ভিড়। বেচাকেনাও চলছে ধুমসে। সাধারণত শুক্র-শনিবার ছাড়া শিশুদের এত সমাগম হয় না। কিন্তু সোমবারে এত ভিড়ের হেতু কী? সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে, এদিন সরস্বতীপূজা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। আর এ জন্যই বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে ছুটে এসেছেন মেলায়। প্রায় সব শিশুর হাতেই বইয়ের প্যাকেট, একাধিক। বাবা-মায়ের হাত ধরে স্টলে স্টলে ঘুরছে তারা। ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে শিশুদের কলকাকলি দেখে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি মেলার পুব দিকে একেবারে শেষ মাথায়। এদিকটায় সারি সারি অসংখ্য খাবারের দোকান। দোকানগুলোর সামনে চেয়ার-টেবিল পাতা। কোনো টেবিলই খালি নেই। চেয়ার না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক মানুষ। তা-ও বিক্রেতারা হাঁকডাক করে ডাকছেন মানুষজনকে— আসেন আসেন, ভালো কাবাব আছে...চটপটি ফুচকা আছে...আসেন...আসেন...বসেন! এবার আমার বোধোদয় হয়, প্রবেশমুখের উপচে পড়া মানুষ থাকার পরেও মেলার মাঠ কেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল! মানুষ বেশির ভাগ এসে ভিড় জমিয়েছেন খাবারের দোকানে!
হাঁটা পথে দেখা হয়ে যায় মনি হায়দারের সঙ্গে। মনি হায়দার মানেই উচ্ছল প্রাণবন্ত আড্ডা আর প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি। তবে এদিন মনি হায়দারের সঙ্গে মাত্র একজন মানুষ। খুব শান্ত নিরিবিলি গোছের। মনি ভাই পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সঙ্গে। ড. সাগর রশিদ সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। খুবই পড়াশোনা জানা মানুষ। মেলায় এবার আসছে তাঁর লেখা বই—বাংলা বানান সংস্কার: বাংলাদেশ। ড. সাগর রশিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে বাংলা পড়াতে পড়াতে তাঁর মনে হয়েছে ব্যাকরণ ও বানান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভীতি আছে। এ ছাড়া সঠিক নির্দেশনাও পায় না তারা। সেই তাগিদ থেকেই এই বই লেখা। বেশ আগ্রহ জাগে তাঁকে ঘিরে! কথা বলে মনে হয়, এ বিষয়ে তাঁর পড়াশোনাও প্রচুর। বানান নিয়ে নানা আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে। কিছু প্রচলিত শব্দের বানানের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন তিনি। যেমন ‘তৈরি’ শব্দটি সাধারণত এখন আমরা হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লিখি। কিন্তু সাগর রশিদ জানান, এটি দীর্ঘ ই–কার দিয়েও লেখা যায়।
— সেটা কেমন? কৌতূহলী জিজ্ঞাসা আমার!
— যেমন ধরেন, আপনি বলছেন আমার জন্য এক কাপ চা তৈরি করো। এখানে র-এর ওপর হ্রস্ব ই-কার হবে। আবার, আমার জন্য একটি জামা তৈরী করুন। এখানে র-এর ওপর দীর্ঘ ই-কার হবে।
— বাহ্, বেশ মজা তো!
— হুম্, বাংলা বানানে এমন আরও অনেক মজা আছে। এসব বিষয়ই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বইটিতে।
— আচ্ছা, বলুন তো, বানান নিয়ে আমাদের মধ্যে এত সংশয়, গোলমাল কেন?
— আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন? খুব শান্ত স্বরে বলেন সাগর রশিদ।
— মানে, বাংলা একাডেমি কিছুদিন পরপর বানানরীতি পরিবর্তন করে। আর সেটা নিয়ে তৈরি হয় দ্বিধা। যেমন বাংলা একাডেমি একবার বলল—‘ঈদ’ না লিখে ‘ইদ’ লেখার জন্য। এই পরিবর্তনটা বেশির ভাগ মানুষ গ্রহণ করেননি। তবে এখন যেটা হচ্ছে ‘ইদ’ এবং ‘ঈদ’ দুটোই চলছে। যে যার মতো লিখছে। আবার ধরুন, ‘কাহিনী’ নাকি ’কাহিনি’—কোনটা লিখব। এ নিয়েও দেখি বাহাস আছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ দিতে পারব।
— আচ্ছা, একটা গল্প বলি আপনাকে। একবার সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বললেন—গুরুজি, এখন থেকে আমি এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি করে বলতে চাই। আর ‘গরু’ না লিখে ‘গোরু’ লিখতে চাই। রবীন্দ্রনাথ বললেন—হ্যাঁ, এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি—তুমি বলতেই পারো। আর গরুতে ও-কার দিলে গরুগুলো একটু মোটাতাজা হবে এই আরকি! এ ছাড়া আর বিশেষ কোনো হেরফের হবে বলে আমি মনে করিনে!
ড. সাগর রশিদের কথা শুনে হাহা করে হেসে ওঠেন মনি হায়দার। হাসতে থাকি আমিও। হাসেন সাগর রশিদও।
বিশেষ কী কাজ আছে বলে চলে যেতে চান মনি হায়দার।
— এত তাড়া কিসের আপনার? বলি আমি।
— তাড়া কিছু নেই। তবে তুমি লিখে দিয়ো—‘মোকাম সদরঘাট’ নিয়ে অস্থির হয়ে আছে মনি হায়দার।
— আচ্ছা ভাই। লিখব।
আবার সেই প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি মনি হায়দারের।
মোকাম সদরঘাট নামে একটা উপন্যাস বের হওয়ার কথা রয়েছে এবার মনি হায়দারের। চলে যান তিনি। আমিও বিদায় নিই সাগর রশিদের কাছ থেকে। ধীর পায়ে বের হয়ে আসি মেলা থেকে। ঢোকার মুখে ভিড় আরও বেড়েছে। মানুষের চাপ সামলে কোনোমতে বের হয়ে ফুটপাতে দাঁড়াই। টিএসসির দিক থেকে ভেসে আসছে গানের সুর—
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।
আসবার কালে কী জাত ছিলে
এসে তুমি কী জাত নিলে...

অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ!
৬ দিন আগে
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
৬ দিন আগে
আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ...
৭ দিন আগে
মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ! শব্দটি হলো ‘67’ (উচ্চারণ: ‘সিক্স সেভেন’), যার কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ নেই। সামাজিক মাধ্যম এবং স্কুলে জেন-আলফা এই শব্দটিকে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, জেন-জি-এর পরবর্তী প্রজন্মকে জেন-আলফা বলা হচ্ছে। মূলত ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা প্রজন্মই জেনারেশন আলফা বা জেন-আলফা।
ডিকশনারি ডটকম এই শব্দটি বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে এর ব্যাপকতা এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে। ডিকশনারি মিডিয়া গ্রুপের শব্দকোষ পরিচালক স্টিভ জনসন সিবিএস নিউজকে জানান, যে শব্দটিকে আপনি ভেবেছিলেন সহজে বিলীন হয়ে যাবে, সেটিই একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে আরও বিস্তৃত হতে শুরু করেছে।
এই শব্দে কী বোঝায়?
‘সিক্স-সেভেন’ শব্দটি অতীতের বর্ষসেরা শব্দগুলোর থেকে আলাদা। কারণ এটি কোনো জটিল ধারণা বা বড় ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে না। স্টিভ জনসন এটিকে একটি ‘ইন্টারজেকশন’ বা বিস্ময়সূচক শব্দ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ শব্দ মূলত উদ্দেশ্যহীনভাবে চিৎকার করে বলা হয়।
ডিকশনারি ডটকম-এর মতে, এই শব্দের ব্যবহার অস্পষ্ট এবং পরিবর্তনশীল। কিছু ক্ষেত্রে এটিকে ‘মোটামুটি’ বা ‘হতে পারে এটা, হতে পারে ওটা’-এমন বোঝাতে ব্যবহার করা হলেও, শব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্থহীন।
একই সঙ্গে ডিকশনারি ডটকম এটিকে ‘ব্রেনরট স্ল্যাং’-এর উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থহীন এবং উদ্ভট। স্টিভ জনসনের মতে, এটি আসলে জেন-আলফা-এর একটি দলগত পরিচয়ের প্রতীক। এই প্রজন্মের কাছে এটি একটি ‘ইন-গ্রুপ জোক’-এর মতো। সমবয়সীদের নিজস্ব কোড ভাষায় কৌতুক করে যেভাবে বোঝানো হয় যে, ‘আমি এই প্রজন্মের অংশ, এটাই আমি।’
কীভাবে হলো এর উৎপত্তি?
এই অপ্রচলিত শব্দটির (স্ল্যাং) উৎপত্তি হয়েছে র্যাপার স্করিলার-এর গান ‘Doot Doot (6 7) ’ থেকে। পরবর্তীতে এটি বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের ভিডিও ক্লিপে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার বাস্কেটবল খেলোয়াড় লামেলো বল-এর ভিডিও ক্লিপ। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে এই গান বাস্কেটবল দৃশ্যের সঙ্গে ভাইরাল হতে শুরু করে এবং দ্রুত তরুণ দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি একটি জনপ্রিয় টিভি শো ‘সাউথ পার্ক’-এর একটি পর্বেও এটি স্থান পায়।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এই শব্দের নির্বাচন নিয়ে প্রজন্ম ভেদে প্রতিক্রিয়া বিভক্ত। স্টিভ জনসন জানান, একজন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক তাঁকে ভোরবেলা মেসেজ করে অনুরোধ করেন, যেন তাঁরা এই শব্দটিকে বর্ষসেরা নির্বাচন না করেন। জনসন মজা করে বলেন, ‘শিক্ষকেরাও এটি ধরে ফেলেছেন!’
জনসন এই প্রবণতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘একটি নতুন প্রজন্ম তাদের ভাষাগত শক্তিমত্তা ও প্রভাব প্রদর্শন করছে। ইংরেজি ভাষার ওপর এটি অসাধারণ প্রভাব ফেলছে। এটা উদ্যাপন করার মতো বিষয়।’ তবে অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য, যারা দৈনিক সময় অসময়ে ‘সিক্স সেভেন’ চিৎকার শুনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া অনেকাংশেই বিরক্তি এবং হতাশার মিশ্রণ!
সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা অন্যান্য শব্দ
ডিকশনারি ডট কম ২০২৫ সালের বর্ষসেরা শব্দের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রাজনীতি এবং সমাজ সম্পর্কিত আরও কয়েকটি শব্দ বিবেচনা করেছিল। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল:
Agentic: (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত) লক্ষ্য পূরণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম।
Aura farming: ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের আকর্ষণ, স্টাইল বা ভাবমূর্তি তৈরি করা, যা অনলাইন মনোযোগ বা সামাজিক প্রভাব অর্জনের জন্য করা হয়।
Gen Z stare: জেন-জি-এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অভিব্যক্তি, যা উদাসীন বা নির্লিপ্ত বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।
Overtourism: কোনো জনপ্রিয় গন্তব্যে অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়, যার ফলে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সমাজ-সাংস্কৃতিক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়।
Tradwife: একজন বিবাহিত নারী যিনি ঐতিহ্যবাহী নারীসুলভ লিঙ্গ ভূমিকা মেনে নিয়ে গৃহিণী হিসেবে জীবনযাপন করেন। এটি প্রায়শই রক্ষণশীল রাজনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি শব্দ।

অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ! শব্দটি হলো ‘67’ (উচ্চারণ: ‘সিক্স সেভেন’), যার কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ নেই। সামাজিক মাধ্যম এবং স্কুলে জেন-আলফা এই শব্দটিকে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, জেন-জি-এর পরবর্তী প্রজন্মকে জেন-আলফা বলা হচ্ছে। মূলত ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা প্রজন্মই জেনারেশন আলফা বা জেন-আলফা।
ডিকশনারি ডটকম এই শব্দটি বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে এর ব্যাপকতা এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে। ডিকশনারি মিডিয়া গ্রুপের শব্দকোষ পরিচালক স্টিভ জনসন সিবিএস নিউজকে জানান, যে শব্দটিকে আপনি ভেবেছিলেন সহজে বিলীন হয়ে যাবে, সেটিই একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে আরও বিস্তৃত হতে শুরু করেছে।
এই শব্দে কী বোঝায়?
‘সিক্স-সেভেন’ শব্দটি অতীতের বর্ষসেরা শব্দগুলোর থেকে আলাদা। কারণ এটি কোনো জটিল ধারণা বা বড় ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে না। স্টিভ জনসন এটিকে একটি ‘ইন্টারজেকশন’ বা বিস্ময়সূচক শব্দ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ শব্দ মূলত উদ্দেশ্যহীনভাবে চিৎকার করে বলা হয়।
ডিকশনারি ডটকম-এর মতে, এই শব্দের ব্যবহার অস্পষ্ট এবং পরিবর্তনশীল। কিছু ক্ষেত্রে এটিকে ‘মোটামুটি’ বা ‘হতে পারে এটা, হতে পারে ওটা’-এমন বোঝাতে ব্যবহার করা হলেও, শব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্থহীন।
একই সঙ্গে ডিকশনারি ডটকম এটিকে ‘ব্রেনরট স্ল্যাং’-এর উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থহীন এবং উদ্ভট। স্টিভ জনসনের মতে, এটি আসলে জেন-আলফা-এর একটি দলগত পরিচয়ের প্রতীক। এই প্রজন্মের কাছে এটি একটি ‘ইন-গ্রুপ জোক’-এর মতো। সমবয়সীদের নিজস্ব কোড ভাষায় কৌতুক করে যেভাবে বোঝানো হয় যে, ‘আমি এই প্রজন্মের অংশ, এটাই আমি।’
কীভাবে হলো এর উৎপত্তি?
এই অপ্রচলিত শব্দটির (স্ল্যাং) উৎপত্তি হয়েছে র্যাপার স্করিলার-এর গান ‘Doot Doot (6 7) ’ থেকে। পরবর্তীতে এটি বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের ভিডিও ক্লিপে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার বাস্কেটবল খেলোয়াড় লামেলো বল-এর ভিডিও ক্লিপ। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে এই গান বাস্কেটবল দৃশ্যের সঙ্গে ভাইরাল হতে শুরু করে এবং দ্রুত তরুণ দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি একটি জনপ্রিয় টিভি শো ‘সাউথ পার্ক’-এর একটি পর্বেও এটি স্থান পায়।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এই শব্দের নির্বাচন নিয়ে প্রজন্ম ভেদে প্রতিক্রিয়া বিভক্ত। স্টিভ জনসন জানান, একজন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক তাঁকে ভোরবেলা মেসেজ করে অনুরোধ করেন, যেন তাঁরা এই শব্দটিকে বর্ষসেরা নির্বাচন না করেন। জনসন মজা করে বলেন, ‘শিক্ষকেরাও এটি ধরে ফেলেছেন!’
জনসন এই প্রবণতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘একটি নতুন প্রজন্ম তাদের ভাষাগত শক্তিমত্তা ও প্রভাব প্রদর্শন করছে। ইংরেজি ভাষার ওপর এটি অসাধারণ প্রভাব ফেলছে। এটা উদ্যাপন করার মতো বিষয়।’ তবে অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য, যারা দৈনিক সময় অসময়ে ‘সিক্স সেভেন’ চিৎকার শুনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া অনেকাংশেই বিরক্তি এবং হতাশার মিশ্রণ!
সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা অন্যান্য শব্দ
ডিকশনারি ডট কম ২০২৫ সালের বর্ষসেরা শব্দের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রাজনীতি এবং সমাজ সম্পর্কিত আরও কয়েকটি শব্দ বিবেচনা করেছিল। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল:
Agentic: (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত) লক্ষ্য পূরণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম।
Aura farming: ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের আকর্ষণ, স্টাইল বা ভাবমূর্তি তৈরি করা, যা অনলাইন মনোযোগ বা সামাজিক প্রভাব অর্জনের জন্য করা হয়।
Gen Z stare: জেন-জি-এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অভিব্যক্তি, যা উদাসীন বা নির্লিপ্ত বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।
Overtourism: কোনো জনপ্রিয় গন্তব্যে অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়, যার ফলে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সমাজ-সাংস্কৃতিক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়।
Tradwife: একজন বিবাহিত নারী যিনি ঐতিহ্যবাহী নারীসুলভ লিঙ্গ ভূমিকা মেনে নিয়ে গৃহিণী হিসেবে জীবনযাপন করেন। এটি প্রায়শই রক্ষণশীল রাজনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি শব্দ।

তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা সারি দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
৬ দিন আগে
আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ...
৭ দিন আগে
মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
২০০৫ সালে হানিফ বিরিয়ানির প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর ছেলে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম রনি। অনেকে বলেন, কয়েক বছর হানিফের স্বাদে নাকি ভাটা পড়েছিল। এই কথা এখন ডাহা মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয় দোকানের ভিড়ভাট্টা দেখলেই। পুরান ঢাকার খ্যাতনামা সব বিরিয়ানির মধ্যে এখন হানিফ যে তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে, তা আর বলতে হয় না।
ছবি: জাহিদুল ইসলাম

পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
২০০৫ সালে হানিফ বিরিয়ানির প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর ছেলে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম রনি। অনেকে বলেন, কয়েক বছর হানিফের স্বাদে নাকি ভাটা পড়েছিল। এই কথা এখন ডাহা মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয় দোকানের ভিড়ভাট্টা দেখলেই। পুরান ঢাকার খ্যাতনামা সব বিরিয়ানির মধ্যে এখন হানিফ যে তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে, তা আর বলতে হয় না।
ছবি: জাহিদুল ইসলাম

তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা সারি দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ!
৬ দিন আগে
আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ...
৭ দিন আগে
মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছিল সব গরিব ঘরেরই ছেলে। আমাদের গ্রামে আলাদা কোনো বুর্জোয়া বা সামন্তসমাজ ছিল না। সেখানে বিশ থেকে ত্রিশ জন ভূস্বামী ছিল, যারা অবশ্য সব সময় একসঙ্গে থাকত। কিন্তু আমার বাবা ওদের থেকে পৃথক থাকতেন।
... আমি বাইরের মানুষ বলতে বাবার খামারে কাজ করা ওই গরিব মানুষদেরই দেখতাম। আমি হাইতিয়ানদের কুঁড়েঘরে যেতাম। হাইতিয়ানদের বাড়িতে ওদের সঙ্গে বসে একবার খাওয়ার জন্য আমি বেশ বকা খেয়েছিলাম। আমাকে ঠিক সামাজিকতার প্রশ্নে বকা দেওয়া হয়নি, বকা খেয়েছিলাম স্বাস্থ্যগত প্রশ্নে। আমার বাবা-মার শ্রেণির কোনো অহমবোধ ছিল না। তাদের ঠিক ভূস্বামী মানসিকতাও ছিল না।
আমার ভেতর নৈতিকতার ধারণা এসেছে আমার স্কুল এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে, আমার পরিবার থেকেও। খুব ছোটবেলা থেকেই আমাকে বলা হয়েছে কোনোভাবেই মিথ্যা কথা বলা যাবে না। আমার স্কুলের শিক্ষকেরাও তা-ই বলেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মার্ক্সীয় দর্শন বা নৈতিক আদর্শ থেকে বলেননি, বলেছেন ধর্মীয় নৈতিকতার দিক থেকে। তারা আমাকে শিখিয়েছেন কোনটা সঠিক কোনটা ভুল। আমাদের সমাজে এইভাবে ধর্মীয় আবহ থেকে ঐতিহ্যগতভাবে সবাই নৈতিকতার শিক্ষা পায়। যদিও তাতে অনেক অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাও থাকে। ধীরে ধীরে আমার ভেতরে ভুল-শুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা জন্ম নিতে থাকে এবং বেশ কিছু তথাকথিত নৈতিকতাকে আমি ভঙ্গ করতে থাকি। ছোটবেলা থেকেই আমার যেমন নৈতিকতার শিক্ষার অভিজ্ঞতা হয়েছে, তেমনি নৈতিকতা ভঙ্গের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তথাকথিত নৈতিকতার নামে মানুষের অনেক অনৈতিক কাজ আমি দেখেছি।
সূত্র: শাহাদুজ্জামান কর্তৃক ফিদেল কাস্ত্রোর অনূদিত সাক্ষাৎকার। ‘কথা পরম্পরা’, পৃষ্ঠা-২২৩।

আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছিল সব গরিব ঘরেরই ছেলে। আমাদের গ্রামে আলাদা কোনো বুর্জোয়া বা সামন্তসমাজ ছিল না। সেখানে বিশ থেকে ত্রিশ জন ভূস্বামী ছিল, যারা অবশ্য সব সময় একসঙ্গে থাকত। কিন্তু আমার বাবা ওদের থেকে পৃথক থাকতেন।
... আমি বাইরের মানুষ বলতে বাবার খামারে কাজ করা ওই গরিব মানুষদেরই দেখতাম। আমি হাইতিয়ানদের কুঁড়েঘরে যেতাম। হাইতিয়ানদের বাড়িতে ওদের সঙ্গে বসে একবার খাওয়ার জন্য আমি বেশ বকা খেয়েছিলাম। আমাকে ঠিক সামাজিকতার প্রশ্নে বকা দেওয়া হয়নি, বকা খেয়েছিলাম স্বাস্থ্যগত প্রশ্নে। আমার বাবা-মার শ্রেণির কোনো অহমবোধ ছিল না। তাদের ঠিক ভূস্বামী মানসিকতাও ছিল না।
আমার ভেতর নৈতিকতার ধারণা এসেছে আমার স্কুল এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে, আমার পরিবার থেকেও। খুব ছোটবেলা থেকেই আমাকে বলা হয়েছে কোনোভাবেই মিথ্যা কথা বলা যাবে না। আমার স্কুলের শিক্ষকেরাও তা-ই বলেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মার্ক্সীয় দর্শন বা নৈতিক আদর্শ থেকে বলেননি, বলেছেন ধর্মীয় নৈতিকতার দিক থেকে। তারা আমাকে শিখিয়েছেন কোনটা সঠিক কোনটা ভুল। আমাদের সমাজে এইভাবে ধর্মীয় আবহ থেকে ঐতিহ্যগতভাবে সবাই নৈতিকতার শিক্ষা পায়। যদিও তাতে অনেক অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাও থাকে। ধীরে ধীরে আমার ভেতরে ভুল-শুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা জন্ম নিতে থাকে এবং বেশ কিছু তথাকথিত নৈতিকতাকে আমি ভঙ্গ করতে থাকি। ছোটবেলা থেকেই আমার যেমন নৈতিকতার শিক্ষার অভিজ্ঞতা হয়েছে, তেমনি নৈতিকতা ভঙ্গের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তথাকথিত নৈতিকতার নামে মানুষের অনেক অনৈতিক কাজ আমি দেখেছি।
সূত্র: শাহাদুজ্জামান কর্তৃক ফিদেল কাস্ত্রোর অনূদিত সাক্ষাৎকার। ‘কথা পরম্পরা’, পৃষ্ঠা-২২৩।

তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা সারি দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ!
৬ দিন আগে
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
৬ দিন আগে
মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
একই নামে ঢাকায় আরও বিরিয়ানির দোকান থাকলেও শর্ষের তেলে তৈরি মামুনের তেহারির স্বাদ পাওয়া যায় কেবল নাজিমুদ্দীন রোডের দুটি, নাজিরাবাজার ও এলিফ্যান্ট রোডের একটি করে শাখায়। মামুন বিরিয়ানি হাউসের নব্য সংযোজন গরু ও খাসির কাচ্চি কিংবা মোরগ পোলাও হলেও তেহারির সুঘ্রাণেই সেখানে ছুটে যান ভোজনরসিকেরা। পুরান ঢাকাবাসীর জন্য হোম ডেলিভারির বিশেষ সুবিধা দেয় এই রেস্তোরাঁটি। বিয়েশাদিতে তেহারির ‘ডেগ’ ভাড়া নেবেন? তা-ও সম্ভব।
ছবি: জাহিদুল ইসলাম

মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
একই নামে ঢাকায় আরও বিরিয়ানির দোকান থাকলেও শর্ষের তেলে তৈরি মামুনের তেহারির স্বাদ পাওয়া যায় কেবল নাজিমুদ্দীন রোডের দুটি, নাজিরাবাজার ও এলিফ্যান্ট রোডের একটি করে শাখায়। মামুন বিরিয়ানি হাউসের নব্য সংযোজন গরু ও খাসির কাচ্চি কিংবা মোরগ পোলাও হলেও তেহারির সুঘ্রাণেই সেখানে ছুটে যান ভোজনরসিকেরা। পুরান ঢাকাবাসীর জন্য হোম ডেলিভারির বিশেষ সুবিধা দেয় এই রেস্তোরাঁটি। বিয়েশাদিতে তেহারির ‘ডেগ’ ভাড়া নেবেন? তা-ও সম্ভব।
ছবি: জাহিদুল ইসলাম

তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা সারি দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ!
৬ দিন আগে
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
৬ দিন আগে
আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ...
৭ দিন আগে