Ajker Patrika

নুরু

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ০৯: ২২
নুরু

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নতুন বিশ-এর ২ নম্বর ব্লকে নুরুদ্দিন নামে এক ডাকাতির আসামীকে আনা হয়েছিল। ফরিদপুরের গোয়ালন্দ মহকুমায় তার বাড়ি। রাতে যখন সে গান গাইত, তখন খুব ভালো লাগত শেখ মুজিবের। বঙ্গবন্ধু তার সুন্দর কণ্ঠস্বরের তারিফ করতেন। তিনি মনে করতেন, ডাকাতি মামলায় কয়েদী হওয়া এই নুরু যদি সঙ্গীত সাধনা করত, তাহলে নামকরা গায়ক হতে পারত।

জেলখানায় নুরুর জীবনটা ছিল ভয়ঙ্কর। মূলত ভালো আচরণ করলে জেলখানায় ১২ মাসে বছর ধরা হয় না। ধরা হয় ৯ মাস বা সাড়ে ৯ মাসে। তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই মুক্তি পেয়ে যায় কয়েদী। কিন্তু নুরু এমন এক জীবনযাপন করত যে, ওর সাজার মেয়াদ একেবারেই কমত না। রীতি অমান্য করায় মারও খেয়েছে অনেক।

নুরু ২২ বছর বয়সে জেলে এসেছে। ৭-৮ বছর সাজা খাটা হয়ে গেছে। শরীর ভেঙে পড়েছে তার। বঙ্গবন্ধু ওর কাছে গিয়ে বলেন, ‘নুরু, কেন জীবন নষ্ট করলে, বলতে পার? বাবা-মার মুখে চুনকালি দিলে, বংশের ইজ্জত নষ্ট করলে, কারাগারে কষ্ট করলে, কী লাভ হলো? তোমাকে জেলের সবাই খারাপ বলে।’

নুরু বিষণ্ন মনে বলে, ‘স্যার, আমার কথা না-ই শুনলেন। চেষ্টা করব আপনার কথা রাখতে।’

ছেলেটার প্রতি মায়া হলো বঙ্গবন্ধুর। বললেন, ‘তোমার জেল থেকে বের হওয়ার আগে যদি আমি বের হই, তাহলে আমার সঙ্গে দেখা কোরো। তোমার বাবা আর ভাইকে আমি চিঠি দেব। ওই কুপথে আর পা বাড়িও না।’

নুরু বলল, ‘আপনার কাছে আমাকে নিয়ে নিন।’

বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমার আপত্তি নেই। তুমি গান গাও নুরু।’

নুরু গান ধরল। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘বাংলার মাটির সঙ্গে যার সম্পর্ক আছে, সেই গান গাও।’

নুরু গাইতে থাকে। অনেকক্ষণ ধরে বঙ্গবন্ধু সে গান শুনতে থাকেন।

সূত্র: শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ১২৯-১৩০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত