Ajker Patrika

পথের পাঁচালী

সম্পাদকীয়
পথের পাঁচালী

ভারতে ভাগলপুরের বাঙালিটোলার গাঙ্গুলিরা খুবই বনেদি পরিবার। সেটা শরৎচন্দ্রের মামাবাড়ি। উপেন্দ্রনাথ এই পরিবারের ছেলে। কলকাতা থেকে আইন পাস করে ভাগলপুরে তিনি এসেছিলেন ওকালতি করতে।

ভাগলপুরের বাড়িতে উপেন্দ্রনাথ বসাতেন সাহিত্যের আড্ডা। সেই আড্ডায় আসতেন এক অপরিচিত বাঙালি। হাঁটু ছুঁই ছুঁই খাটো ধুতি, গায়ে ইস্তিরিবিহীন নিজ হাতে কাচা মার্কিন কাপড়ের পাঞ্জাবি, এক হাতে লণ্ঠন, অন্য হাতে লাঠি।

একদিন কেউ আসার আগে উপেন্দ্রনাথ তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলেন। উত্তর এল, ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।’ কলকাতা থেকে ভাগলপুরে খেলাৎ ঘোষদের জমিদারি সেরেস্তায় নায়েবের চাকরি নিয়ে এসেছেন। সেটা তো এখান থেকে চার-পাঁচ মাইল দূর! সাহিত্য আড্ডার নেশায় গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তিনি চলে আসেন। লেখালেখির অভ্যাস আছে কি না, জানতে চাইলে উত্তর পেলেন, ‘একটু-আধটু।’

বললেন, ‘আমি একটা উপন্যাস লিখেছি।’ আকাশ থেকে পড়লেন উপেন্দ্রনাথ। উপন্যাস! উপন্যাস লেখার নিয়মকানুন কিছু জানেন কি না, প্রশ্ন করে বুঝলেন, সেসব নিয়ে ভাবেননি বিভূতি। উপন্যাসের অধ্যায়গুলো সমমাপের হবে, সেটাও তিনি জানেন না। উপেন্দ্রনাথ বললেন, ‘আমার কাছে নিয়ে আসবেন।’

গুনে দেখা গেল একেক অধ্যায় একেক আকারের। তবু একসময় পড়ে ফেললেন উপেন্দ্র। বললেন, ‘আমি আগাগোড়া পড়েছি। আপনার হবে। হবে কেন? হয়েছে।’
প্রকাশের ব্যবস্থাও উপেন্দ্র করবেন বলে জানালেন। এরপর আবার কলকাতায় ফিরলেন উপেন্দ্র। বিচিত্রা নামের একটি মাসিক পত্রিকা করলেন। বিভূতি বুঝলেন না, তাঁর উপন্যাসের কী হবে। বিচিত্রা বের হয়, কিন্তু তাতে বিভূতির লেখা নেই। একদিন কলকাতায় গেলেন বিভূতি। বিচিত্রা অফিসে দেখা হলো উপেন্দ্রের সঙ্গে। উপেন্দ্র বললেন, ‘এই সংখ্যা থেকেই আপনার উপন্যাস বের হবে।’

বিভূতি আর দেরি না করে কলকাতার রাস্তায় নেমে এলেন। এই প্রথম কলকাতাকে তাঁর বড্ড আপন মনে হলো। এটি ছিল ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস।

সূত্র: সাগরময় ঘোষ, সম্পাদকের বৈঠকে, পৃষ্ঠা ৮৫-৯২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের দেহরক্ষীর হাতে ‘মলমূত্রবাহী স্যুটকেস’ কেন

সিলেটের ডিসি হলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পাওয়া সারওয়ার আলম

শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল নেতার পোস্ট, শোকজ পেয়ে নিলেন অব্যাহতি

অপারেশন সিঁদুরে নিহত প্রায় দেড় শ সেনার তালিকা প্রকাশ করে মুছে ফেলল পাকিস্তানি টিভি

আমরা দখল করি লঞ্চঘাট-বাসস্ট্যান্ড, জামায়াত করে বিশ্ববিদ্যালয়: আলতাফ হোসেন চৌধুরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত