Ajker Patrika

এইচএমভিতে

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২২, ১২: ০২
এইচএমভিতে

পিয়ানো কিংবা হারমোনিয়াম পেলেই বাজাতে বসে যেতেন লাকী আখান্দ্। পাকিস্তানের এইচএমভিতে গেলে বয়স্ক গীতিকারেরা তাঁকে বসতে দিতেন না। বলতেন, ‘স্কুলের কবিতার বই থেকে শুরু করো।’ খুব মন খারাপ হতো লাকীর।

মুক্তিযুদ্ধের সময় লাকী আখান্দ্ চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়। গানে সুর করবেন, এই ছিল ভাবনা। কিন্তু মে মাসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গিয়ে সমর দাসের সঙ্গে দেখা করে জানতে পারলেন, এ মুহূর্তে সেখানে সুরকার লাগবে না। খুব বিপদে পড়ে গেলেন তিনি। বললেন, ‘আমি তো টাকাপয়সা কিছুই আনিনি। আমি কি রাস্তায় থাকব?’ উত্তর পেলেন, ‘এখন যাও, পরে আমরা ব্যবস্থা করব।’

শ্যামল মিত্রের ঠিকানা জোগাড় করে গেলেন তাঁর বাড়ি। ছেলেবেলা থেকেই শ্যামল মিত্রের গান শুনে মন ভরেছে লাকীর। বাড়ির দরজা খোলার পর বৃত্তান্ত শুনে শ্যামল মিত্র বললেন, ‘আপনি আমার এখানে এসেছেন কেন? সরাসরি এইচএমভিতে গেলেই তো পারেন।’

খুব মন খারাপ হলো লাকী আখান্দের। তিনি বললেন, ‘আমি আপনার গান গেয়ে বড় হয়েছি। আপনি আমার সবকিছু। আপনি যদি এভাবে কথা বলেন, তাহলে আমি একা একাই চলে যাব।’

শ্যামল মিত্র নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। তিনি ১৫-১৬ বছর বয়সী ছেলেটির হাতে তুলে দিলেন একটা চিরকুট। বললেন এটি প্রতিষ্ঠানের সন্তোষ সেনগুপ্তের হাতে দিতে। সন্তোষ সেনগুপ্ত লাকীকে বসালেন। চা-বিস্কুট খাওয়ালেন। ১২টার দিকে ব্রেক হলো। সে সময় হাতের কাছে একটা হারমোনিয়াম দেখে পাগল হয়ে গেলেন লাকী। শুরু করলেন বাজাতে। গাইতে লাগলেন একের পর এক গান। অনেকেই এসে জড়ো হলেন লাকীর সামনে। সন্তোষ সেনগুপ্ত হাসতে হাসতে বললেন, ‘তোমার জন্য শিল্পী ঠিক করে ফেলেছি। বনশ্রী সেনগুপ্ত আর গোরাচাঁদ মুখার্জি তোমার সুরে গাইবেন।’

উজ্জ্বল হয়ে উঠল লাকী আখান্দের মুখ। এইচএমভিতে স্থান হলো তাঁর। হাওড়া সার্কিট হাউসের একচিলতে এক ঘরে থাকার ব্যবস্থাও হয়ে গেল।

সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, ভালো ফিচার লিখতে হলে, পৃষ্ঠা ১০৬-১০৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত