রজত কান্তি রায়
গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে সবাই আমরা নীরব ছিলাম। ভীষণ নীরব। অফিসের সামনে মাইক্রোবাসে উঠে নিঃশব্দে নেমে গিয়েছিলাম যে যার গন্তব্যে। সম্ভবত সবাই আমরা ফাহিরের কথা ভাবছিলাম। ২৪ বছর বয়সী সাংবাদিক মো. ফখরুল ইসলাম ভূঞা, যে আমাদের কাছে পরিচিত ছিল ফাহির ফখরুল নামে। তাকে আরও সংক্ষেপে ফাহির নামে ডাকতাম আমরা।
ফাহিরকে নিয়ে ‘আপনি’ সম্বোধনেও লিখতে পারি। হয়তো সেটাই রীতি। কিন্তু ‘চিল ডুড’ ফাহিরকে আপনি বলে সম্বোধন করলে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। সেটা করা কঠিন বৈকি। তাই ফাহির ‘তুমি’ হিসেবেই থাক।
ফাহিরের মৃত্যু সব অর্থে এত দ্রুত হলো যে, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। একে তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। বয়সের দিক থেকে এটা খুবই কম—মাত্র শুরু। হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া এবং তার মারা যাওয়ার সময়টাও ভীষণ কম। এত কম সময়ে আসলে কিছু করে ওঠা কঠিন, অন্তত আমাদের এই ঢাকা শহরে। কিন্তু এই কঠিন বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।
ফাহিরের মৃত্যু আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতার পরিচয়। এমন নয় যে তার বয়সী মানুষ মারা যাচ্ছে না। যাচ্ছে। কিন্তু কেন মারা যাচ্ছে, সে বিষয়গুলো কোনোভাবে সামনে আনা যাচ্ছে না। বিশ্ব যখন আরও এগিয়ে যেতে ব্যস্ত, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যখন আমরা সাফল্যের চূড়ায় উঠছি, তখন আমাদের খেয়ালই থাকছে না, তরুণদের মৃত্যুর গ্রাফ ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, একুশ শতকের এই চরম উন্নয়নের দিনে পৃথিবীতে তরুণদের হৃদ্যন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে দিনদিন। বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। বিষণ্নতা মহামারির রূপ নিয়েছে। সন্তর্পণে ছোবল বসাচ্ছে ডায়াবেটিসের মতো অনেক নীরব ঘাতক। সম্পর্ক ছিন্ন করে নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়ার হার বাড়ছে। সেগুলো উন্নত বা অনুন্নত বিশ্ব নয়, পৃথিবীব্যাপী ঘটে চলেছে। ফাহিরের মৃত্যুতে তাই শোকগাথা নয়।
ফাহিরের মতো তরুণদের আমরা জীবনযাপনের সহজপাঠটা সহজে দিতে পারছি না। আমরা তাদের শেখাতে পারিনি, প্রতিযোগিতায় না গিয়ে পছন্দের কাজটা করো। প্রতিযোগিতা তোমাকে মৃত্যুর দিকেই নিয়ে যাবে। তাদের আমরা বোঝাতে পারছি না, জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে সময় লাগে। তাদের আমরা জানাতে পারছি না, শারীরিকভাবে তো বটেই, মানসিকভাবেও ভালো থাকাটা জরুরি, অন্তত যখন তারা জীবিকার পাগলা ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়েছে। এসবের ফলে ফাহিরের বয়সী ‘চিল ডুডেরা’ জীবনের দৌড়ে ‘ধরা’ খেয়ে যাচ্ছে।
ফাহির ছবি তুলতে ভালোবাসত, সিনেমা দেখতে ভালোবাসত, পড়তেও ভালোবাসত। হইচই করে মাতিয়ে তুলতে পারত তার চারপাশ। কিন্তু কোন বীভৎস কীট তাকে ধীরে ধীরে ভেতর থেকে ধসিয়ে দিয়েছিল, সে খবর আমরা জানি না। সেও জানায়নি। ফলে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার ধকল সে সইতে পারেনি বেশিক্ষণ। এটা ফাহিরের দোষ নয়। এটা আমাদের সমাজের সামগ্রিক প্রবণতা। লাখ লাখ তরুণ এই একই অবস্থায় জীবন যাপন করে চলেছেন বিষয়টি না জেনেই। লেখাপড়া শেষ করে জীবন ও জীবিকার তাগিদে নিরন্তর ছুটে চলা, নির্ভরযোগ্য বন্ধু না থাকা, স্বপ্ন ও বাস্তবতার ফারাক সইতে না পারা, পরিবারের বিবিধ চাপ ইত্যাদি বিষয় একা একা বইতে হচ্ছে জীবনের দৌড়ে শামিল হওয়া তরুণদের। কেউ সেগুলো সামলে চলতে পারছেন, কেউ পারছেন না। যারা পারছেন, তাঁরা হয়তো কোনোমতে টিকে থাকছেন। যাঁরা পারছেন না, তাঁরা ‘অকস্মাৎ হৃদ্যন্ত্রের’ ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন, নইলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালাচ্ছেন, নিদেনপক্ষে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। মানসিক অসুস্থতার বিষটি কেউ আমলেই নিচ্ছেন না। সম্প্রতি আমাদের আরও একজন সহকর্মী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অফিসের ত্বরিত সিদ্ধান্ত আর চিকিৎসকদের আন্তরিক সহযোগিতায় তিনি সুস্থ হয়েছেন। তিনিও ফাহিরের বয়সী। এ দুই ঘটনা আমাদের ভাবায়।
ভালো থেকো চিল ডুড। তোমার জন্য প্রার্থনা।
গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে সবাই আমরা নীরব ছিলাম। ভীষণ নীরব। অফিসের সামনে মাইক্রোবাসে উঠে নিঃশব্দে নেমে গিয়েছিলাম যে যার গন্তব্যে। সম্ভবত সবাই আমরা ফাহিরের কথা ভাবছিলাম। ২৪ বছর বয়সী সাংবাদিক মো. ফখরুল ইসলাম ভূঞা, যে আমাদের কাছে পরিচিত ছিল ফাহির ফখরুল নামে। তাকে আরও সংক্ষেপে ফাহির নামে ডাকতাম আমরা।
ফাহিরকে নিয়ে ‘আপনি’ সম্বোধনেও লিখতে পারি। হয়তো সেটাই রীতি। কিন্তু ‘চিল ডুড’ ফাহিরকে আপনি বলে সম্বোধন করলে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। সেটা করা কঠিন বৈকি। তাই ফাহির ‘তুমি’ হিসেবেই থাক।
ফাহিরের মৃত্যু সব অর্থে এত দ্রুত হলো যে, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। একে তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। বয়সের দিক থেকে এটা খুবই কম—মাত্র শুরু। হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া এবং তার মারা যাওয়ার সময়টাও ভীষণ কম। এত কম সময়ে আসলে কিছু করে ওঠা কঠিন, অন্তত আমাদের এই ঢাকা শহরে। কিন্তু এই কঠিন বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।
ফাহিরের মৃত্যু আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতার পরিচয়। এমন নয় যে তার বয়সী মানুষ মারা যাচ্ছে না। যাচ্ছে। কিন্তু কেন মারা যাচ্ছে, সে বিষয়গুলো কোনোভাবে সামনে আনা যাচ্ছে না। বিশ্ব যখন আরও এগিয়ে যেতে ব্যস্ত, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যখন আমরা সাফল্যের চূড়ায় উঠছি, তখন আমাদের খেয়ালই থাকছে না, তরুণদের মৃত্যুর গ্রাফ ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, একুশ শতকের এই চরম উন্নয়নের দিনে পৃথিবীতে তরুণদের হৃদ্যন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে দিনদিন। বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। বিষণ্নতা মহামারির রূপ নিয়েছে। সন্তর্পণে ছোবল বসাচ্ছে ডায়াবেটিসের মতো অনেক নীরব ঘাতক। সম্পর্ক ছিন্ন করে নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়ার হার বাড়ছে। সেগুলো উন্নত বা অনুন্নত বিশ্ব নয়, পৃথিবীব্যাপী ঘটে চলেছে। ফাহিরের মৃত্যুতে তাই শোকগাথা নয়।
ফাহিরের মতো তরুণদের আমরা জীবনযাপনের সহজপাঠটা সহজে দিতে পারছি না। আমরা তাদের শেখাতে পারিনি, প্রতিযোগিতায় না গিয়ে পছন্দের কাজটা করো। প্রতিযোগিতা তোমাকে মৃত্যুর দিকেই নিয়ে যাবে। তাদের আমরা বোঝাতে পারছি না, জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে সময় লাগে। তাদের আমরা জানাতে পারছি না, শারীরিকভাবে তো বটেই, মানসিকভাবেও ভালো থাকাটা জরুরি, অন্তত যখন তারা জীবিকার পাগলা ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়েছে। এসবের ফলে ফাহিরের বয়সী ‘চিল ডুডেরা’ জীবনের দৌড়ে ‘ধরা’ খেয়ে যাচ্ছে।
ফাহির ছবি তুলতে ভালোবাসত, সিনেমা দেখতে ভালোবাসত, পড়তেও ভালোবাসত। হইচই করে মাতিয়ে তুলতে পারত তার চারপাশ। কিন্তু কোন বীভৎস কীট তাকে ধীরে ধীরে ভেতর থেকে ধসিয়ে দিয়েছিল, সে খবর আমরা জানি না। সেও জানায়নি। ফলে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার ধকল সে সইতে পারেনি বেশিক্ষণ। এটা ফাহিরের দোষ নয়। এটা আমাদের সমাজের সামগ্রিক প্রবণতা। লাখ লাখ তরুণ এই একই অবস্থায় জীবন যাপন করে চলেছেন বিষয়টি না জেনেই। লেখাপড়া শেষ করে জীবন ও জীবিকার তাগিদে নিরন্তর ছুটে চলা, নির্ভরযোগ্য বন্ধু না থাকা, স্বপ্ন ও বাস্তবতার ফারাক সইতে না পারা, পরিবারের বিবিধ চাপ ইত্যাদি বিষয় একা একা বইতে হচ্ছে জীবনের দৌড়ে শামিল হওয়া তরুণদের। কেউ সেগুলো সামলে চলতে পারছেন, কেউ পারছেন না। যারা পারছেন, তাঁরা হয়তো কোনোমতে টিকে থাকছেন। যাঁরা পারছেন না, তাঁরা ‘অকস্মাৎ হৃদ্যন্ত্রের’ ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন, নইলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালাচ্ছেন, নিদেনপক্ষে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। মানসিক অসুস্থতার বিষটি কেউ আমলেই নিচ্ছেন না। সম্প্রতি আমাদের আরও একজন সহকর্মী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অফিসের ত্বরিত সিদ্ধান্ত আর চিকিৎসকদের আন্তরিক সহযোগিতায় তিনি সুস্থ হয়েছেন। তিনিও ফাহিরের বয়সী। এ দুই ঘটনা আমাদের ভাবায়।
ভালো থেকো চিল ডুড। তোমার জন্য প্রার্থনা।
১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে ইগ্নেসিয়াস লয়োলা নামে এক স্প্যানিশ ব্যক্তি জেসুইটা বা যিশুর সম্প্রদায় গঠন করেন। এই সম্প্রদায়ের খ্রিষ্টানরা খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে পৃথিবীর নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। পিয়েরে ডু জারিক নামের এক ফরাসি ঐতিহাসিকের মতে, ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ফনসেকা নামের একজন খ্রিষ্টান...
২ দিন আগেদুর্ঘটনা ও জ্যাম এড়াতে শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক বাতি স্থাপন করা হয়। লাল বাতি জ্বলার সময় গাড়িগুলো থামে। হলুদ বাতি দেখলে অপেক্ষা করে। আর সবুজ বাতি জ্বললেই গাড়ি অবাধে এগিয়ে চলে। এই সিগন্যাল সারা বিশ্বেই স্বীকৃত।
৮ দিন আগেপঞ্চদশ শতকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন সুফিসাধক হজরত বদরউদ্দিন শাহ্ মাদার। তিনি ফরিদপুর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বরিশাল যাওয়ার পথে জল-জঙ্গলপূর্ণ একটি স্থানে এসে উপস্থিত হন। এরপর পদ্মার শাখা আড়িয়াল খাঁ নদের দক্ষিণ তীরে নিজের আস্তানা গড়ে তোলেন।
১৯ দিন আগেলালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায় মজদের আড়া নামে একটি পতিত জঙ্গল ছিল। স্থানীয় ভাষায় ‘আড়া’ মানে জঙ্গলময় স্থান। ১৯৮৫ সালে স্থানীয়রা আড়াটি পরিষ্কার করে চাষাবাদের উদ্যোগ নেয়। ওই সময় মাটি খুঁড়ে সমতল করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ফুলেল নকশার প্রচুর প্রাচীন ইট।
২৩ দিন আগে