Ajker Patrika

আলোছায়ায় সোফিয়ার রঙিন জগৎ

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
আলোছায়ায় সোফিয়ার  রঙিন জগৎ

২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যরাত। ১৭ জনের একটি দল সুন্দরবন থেকে বন্য প্রাণীর ছবি তুলে ফিরছে ঢাকার দিকে। মোংলার কাছে বাদ সাধল জাহাজের ইঞ্জিন। সারেং জানালেন, জাহাজ চলবে না। বিকল ইঞ্জিন সারাতে লাগবে কিছু যন্ত্রাংশ। জায়গাটা সুন্দরবন—জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক কাজ করছে না। এমন দমবন্ধ পরিবেশে রাত ক্রমে গভীর হলো। অবশ্য শেষ পর্যন্ত জাহাজ ফিরতে পেরেছিল অনেকটা দেরি করে।

এমন অনেক স্মৃতি জমে গেছে ফটোগ্রাফার সোফিয়া জামানের জীবনে। অথচ কোনো দিন যে ছবি তুলবেন, সেটা ভাবেননি। স্বামী মারা যাওয়ার পর ভীষণ একাকিত্ব ভর করে তাঁর ওপর। মন খারাপের সেই দিনগুলোতে তিনি ছবি তোলার কথা ভাবলেন। বাবা ছবি তুলতেন। সেই সূত্রে তাঁর ফটোগ্রাফির প্রতি টান ছিল আগে থেকেই। কে জানত, সেই টান আর একাকিত্ব ভোলার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া ফটোগ্রাফি দেশ-বিদেশে তাঁকে পরিচিতি এনে দেবে! ফুল, পাখি, প্রজাপতি, আকাশ, বন্য প্রাণী কিংবা প্রকৃতির ছবি তোলেন সোফিয়া জামান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন সোফিয়া। বাবার ব্যবসার সুবাদে অনেক বছর থেকেছেন সেই শহরে। এখন থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। তিন ছেলে নিয়ে তাঁর পরিবার।

নিকন ডি ৭১০০ দিয়ে শুরু
পরিবেশ ও প্রকৃতি সোফিয়াকে খুব টানে। এসবের ছবি তোলার শুরুটা হয়েছিল নিকন ডি ৭১০০ ক্যামেরায়। সেই ছবি তিনি পোস্ট দিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রচুর রিঅ্যাক্ট পেয়েছিলেন। এরপর দৃক গ্যালারির বিভিন্ন প্রদর্শনীতে ছবি জমা দেন। পুরস্কারও জুটে যায়। ফলে দিনে দিনে ছবি তোলার প্রতি সোফিয়ার আগ্রহ বাড়তে থাকে। 
ট্যুরে যেতে বিপত্তি
বলা হয়, বাধা না এলে নাকি মানুষ বুদ্ধিমান হয় না। সোফিয়ার বেলায়ও তাই হয়েছে। ছবি তুলতে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল পরিবারের। সোফিয়া এ সময় সন্ধান পান বাংলাদেশ ফিমেল ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি গ্রুপের। যোগ দিলেন তাদের সঙ্গে। এরপর চষে বেড়ালেন সারা দেশ। তারপর ধীরে ধীরে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মালয়েশিয়া,  সিঙ্গাপুর, ভারত।

যত চ্যালেঞ্জ
সংসারের সবকিছু সামলে ছেলেদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিন থেকে চার দিনের জন্য ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়েন সোফিয়া। পাহাড়, নদী কিংবা বন। অথবা নিছক কোনো গ্রামে চলে যান। একেক এলাকার চ্যালেঞ্জ একেক রকম। সেগুলো মোকাবিলা করার ধরনও ভিন্ন। পাহাড়ের চড়াই-উতরাই, বিষাধর সাপ কিংবা জোঁকের ভয়। কখনো হঠাৎ বন্য প্রাণীর তাড়া খাওয়া কিংবা ত্বকের ভেতরে টিক নামক ভয়ংকর পোকার ঢুকে যাওয়ার ভয়। আবার সাতছড়ির গভীর জঙ্গলে গ্রিন পিট ভাইপারের ছোবলের ভয়। ধীরে ধীরে সব মোকাবিলা করতে শিখেছেন সোফিয়া। প্রকৃতি তাঁকে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।

ভাইরাল ছবি
এর সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতুর ছবির কথা একটু বিশেষ।

সোফিয়া জামানএকদিন বিকেলে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে যমুনা নদীতে বেরিয়ে পড়েন সোফিয়া। সঙ্গে ট্রাইপড। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। হাতে সময়ও অল্প। ক্যামেরার সেটিংস ঠিক করে ছবি তুলে ফেললেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর সেই ছবি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই সঙ্গে পায়  বিভিন্ন পুরস্কার।

শখের তোলা লাখ টাকা
ভালো লাগা আর ভালোবাসাই সোফিয়ার ছবি তোলার মূল প্রেরণা। ছবি বিক্রি করে কোনো আয় তো নেই-ই, বরং জমানো টাকা খরচ করে তুলতে যান ছবি। এই অর্থ ব্যয়, শারীরিক কষ্ট—সব আনন্দের জন্য। ভালোবাসার জন্য।

ছবিতে বাজিমাত
দেশের প্রথম সারির প্রায় সব সংবাদপত্রে সোফিয়ার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। উইকিপিডিয়ায় উইকি লাভস মোমেন্টে ২০২২ সালে সোফিয়ার তোলা একটি ছবি চতুর্থ স্থান লাভ করে। সোফিয়া শুধু ছবি তোলেন না, নেপথ্যের গল্প লেখেন। ‘বাংলার পাখি’ নামে একটি পত্রিকার নিয়মিত লেখক তিনি।

একটা প্রদর্শনীর জন্য
যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে। কিন্তু একক প্রদর্শনী হয়নি এখনো। সেটার ইচ্ছা আছে ভীষণ। আর ইচ্ছা আছে, যত দিন সম্ভব হবে, মনের আনন্দে ছবি   তুলে যাওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রাথমিকে ১০ হাজার ২১৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ

গভীর রাতে পিনাকীর বাড়ির সামনে আগুন জ্বেলে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে চলে গেল দুই যুবক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ৩৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এমন দাবি জানায় নারী উদ্যোক্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।

সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) প্রেসিডেন্ট নাসরিন ফাতেমা আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই, নারীর সংখ্যা যেন বাড়ে। অ্যাটলিস্ট ১৫০টা সংসদীয় আসন যেন নারীদের দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আমরা সরকারকেও বলতে চাই যে, নারীরা যে নির্বাচনে আসছেন, তাঁদের ডেফিনেটলি সহায়তা দিতে হবে। আমেরিকাতেও দেখবেন, এ রকম নারীদের সহায়তা দেওয়া হয়। তো নারীদের একটু সাহায্য দেওয়া এবং তাঁরা যেন নির্বাচনটা করতে পারেন, সেই রকম একটা ব্যবস্থা যেন নারীদের জন্য থাকে। নারীরা যেন স্বাচ্ছন্দে ভোট দিতে পারেন, সেটা নিয়েও আমরা কথা বলেছি।’

ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘আমরা চাই যে, অ্যাটলিস্ট ৫০ শতাংশ, আপনার ৩০০টা সিট না, কিন্তু ১৫০টা সিট যেন নারীদের জন্য দেওয়া হয়। নারীরা যেন কনটেস্ট করতে পারেন। সেই জিনিসটা আমরা একটু নিশ্চিত করতে চেয়েছি।’

নির্বাচনী তহবিল নিয়ে ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘নারীদের পক্ষে একটু অসম্ভব, একটু কষ্টকর, একটু না অনেক কষ্টকর। কারণ, সহজে কিন্তু ফ্যামিলি থেকেও নারীদের জন্য ফান্ড পাওয়া যায় না, যেটা পুরুষেরা অহরহ পারেন। আমাদের কথা হলো, নারীদের গভর্নমেন্ট যদি একটু সহায়তা করে, তাহলে অনেক নারীই কিন্তু নির্বাচনে আসতে পারবেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘দলগুলোকেও আমরা বলতে চাই, কোথাও দেখা যায় যে, এটা ৫ শতাংশ, কোথাও দেখা যাচ্ছে ৭ শতাংশ—এভাবে মনোনয়ন দিচ্ছে। এভাবে না করে আমার মনে হয়, উনারা যদি বলেন যে এত পারসেন্ট দেবেন, সেভাবে যদি হয়, তাহলে জিনিসটা একটু ব্যালেন্স হবে।’

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ডব্লিউইএবির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেম্বার সাবেরা আহমেদ কলি, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহেরুন্নেসা খান, মেম্বার আইরিন তালুকদার, এস এম আনজুমানু ফেরদৌস ও ফাহিমা কাউসার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রাথমিকে ১০ হাজার ২১৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ

গভীর রাতে পিনাকীর বাড়ির সামনে আগুন জ্বেলে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে চলে গেল দুই যুবক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গণপরিবহনে হয়রানি, যেভাবে আইনি ব্যবস্থা নেবেন

ব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৩
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিকসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ হয় যৌন হয়রানির শিকার। এসব তথ্য চলতি বছরের এপ্রিলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউএন উইমেন্স ও সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হয়। গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে কীভাবে আইনি সহায়তা পেতে পারেন, সে বিষয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস।

গণপরিবহনে হয়রানি বা সহিংসতার শিকার হলে প্রথম কাজ হবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

যত দ্রুত সম্ভব ভিড় থেকে দূরে চলে যান, চিৎকার করে আশপাশের লোকদের সচেতন করুন এবং সরাসরি বিপদাপন্ন মনে হলে চালক, কন্ডাক্টর কিংবা শুভানুধ্যায়ীর সাহায্য চান। একই সময়ে মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও বা অডিও রেকর্ড রাখুন, ছবি তুলুন এবং পাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীর নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর নোট করে নিন। এগুলো পরে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে।

আইনগত দিক

গণপরিবহনে শারীরিক ভঙ্গি, ছোঁয়া কিংবা আপত্তিকর আচরণ পেনাল কোডের ধার্য শাস্তিযোগ্য অপরাধের মধ্যে পড়ে। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে অথবা শালীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে জেনেও উক্ত নারীকে আক্রমণ করে বা তার ওপর অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করে, সেটি ধারা ৩৫৪-এর মধ্যে পড়ে। আবার কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কোনো শব্দ ব্যবহার, অঙ্গভঙ্গি অথবা কোনো কাজ করলে তা ধারা ৫০৯ অনুসারে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

এই অপরাধগুলোর ভিত্তিতে মামলা করা যায়। দেশের সংবিধান নাগরিকদের সমতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। তাতে নারীদের পুরুষের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।

কীভাবে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে

ঘটনার পর দ্রুত নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি অথবা গুরুতর হলে এফআইআর/মোকদ্দমা করুন। এ ছাড়া অনলাইন জিডি সার্ভিসও আছে, যেখানে প্রাথমিক অভিযোগ দাখিল করা যায়। পরে পুলিশ আপনাকে তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে সাহায্য করবে। মেডিকেল পরীক্ষার কাগজ এবং মোবাইল ফোনে করা ভিডিও অথবা অডিও প্রমাণ সংরক্ষণ করুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট বা মেসেজের স্ক্রিনশট রাখুন। প্রয়োজনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীন কঠোর ধারাও বিবেচিত হতে পারে।

গণপরিবহনে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হলে পেনাল কোড ধারা ৩৫৪, ৫০৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সাংবিধানিক সমতা—এসব আইনি সূত্রের সাহায্যে যে কেউ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।

কটূক্তি বা মৌখিক হয়রানির শিকার হলে করণীয়

হয়রানির ঘটনা ঘটলে কড়া ভাষায় বিরক্তি জানান। আশপাশের মানুষকে ডাকা এবং ঘটনাটি রেকর্ড বা নোট করা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিকভাবে মামলা কিংবা অভিযোগ আনা গেলে ভুক্তভোগীকে অপমান করা

বা ন্যক্কারজনক ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। এখানে আইনি প্রক্রিয়া ও প্রমাণই নির্ণায়ক, ব্যক্তিগত কলঙ্ক বা সোশ্যাল মিডিয়ার চাপকে অতিরঞ্জিতভাবে গ্রহণ করবেন না। গবেষণা ও এনজিও সার্ভেতে দেখা গেছে, গণপরিবহনে কটূক্তি ব্যাপক। এ কারণেই ব্যক্তিগত ঘটনা আইনি ও সামাজিকভাবে গুরুত্ব পায়।

মানসিক সহায়তা ও সুরাহা

ন্যক্কারজনক কোনো ঘটনা ঘটে গেলে পরিবার, বন্ধু অথবা স্থানীয় নারী সাহায্য কেন্দ্র কিংবা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রমাণ জোগাড় না করে দ্রুত সামাজিক মিডিয়ায় নেটিভ স্টোরি ছড়িয়ে দেওয়ার আগে আইনগত পরামর্শ নিন। সমাজে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ বন্ধ করতে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।

এ ক্ষেত্রে নিন্দা নয়, সহায়তা বাড়ানোই সমাধান।

গণপরিবহনে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হলে পেনাল কোড ধারা ৩৫৪, ৫০৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সাংবিধানিক সমতা—এসব আইনি সূত্রের সাহায্যে যে কেউ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।

জীবিকার প্রয়োজনে কিংবা পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে নারীদের ঘর থেকে বের হতে হয়। এই প্রাত্যহিক কাজে গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়। এটি আইনের চোখে অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রাথমিকে ১০ হাজার ২১৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ

গভীর রাতে পিনাকীর বাড়ির সামনে আগুন জ্বেলে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে চলে গেল দুই যুবক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

অক্টোবরে সংঘটিত সহিংসতায় নারী হত্যার ঘটনা বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

অক্টোবর মাসে ২৩১ জন নারী এবং কন্যাশিশু ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কন্যা, ১৬ নারীসহ মোট ৬২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অক্টোবরে বেশিসংখ্যক নারী ও কন্যাশিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এ ঘটনার শিকার হওয়া ৫৩ জনের মধ্যে ৪৬ নারী ও ৭ জন কন্যাশিশু। ১৫টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপপরিষদ এ তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্যাতনের শিকার হওয়া ২৩১ নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ৩৪ কন্যাসহ ৪৪ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১০ কন্যাসহ ১৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ২ কন্যাসহ ৫ জন। এ ছাড়া ১০ কন্যাসহ ১৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া সহিংসতার ঘটনার মধ্যে ১০১ কন্যাশিশু, আর ১৩০ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে।

বিভিন্ন কারণে ৭ কন্যা এবং ৪৬ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছে। হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছে ১ কন্যা ও ২ জন নারী। ৯ কন্যা, ১৭ নারীসহ ২৬ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

২ কন্যা, ৫ নারীসহ ৭ জন আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে আত্মহত্যার প্ররোচনার শিকার হয়েছে ১ জন।

যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে ৬ কন্যা, ৬ নারীসহ মোট ১২ জন। এর মধ্যে ৫ কন্যাসহ ১১ জন যৌন নিপীড়নের শিকার এবং ১ কন্যা উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে।

অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়েছে ৪ জন নারী। সে কারণে মৃত্যু হয়েছে ১ জন নারীর। ১ জন নারী গৃহকর্মীকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে।

৭ কন্যা অপহরণের শিকার হয়েছে। পাচারের শিকার হয়েছে ৬ কন্যাসহ ১০ জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫ কন্যাসহ ১৯ জন। বাল্যবিবাহের চেষ্টা হয়েছে ২ জন কন্যার। যৌতুকের ঘটনা ঘটেছে ৭টি। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য নির্যাতনে ২ এবং যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার ৫ জন নারী। এ ছাড়া ৫ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রাথমিকে ১০ হাজার ২১৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ

গভীর রাতে পিনাকীর বাড়ির সামনে আগুন জ্বেলে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে চলে গেল দুই যুবক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গৃহযুদ্ধের আগুনে পুড়ছে সুদানের নারীজীবন

ফিচার ডেস্ক
সুদান সীমান্তের ভেতরে কমপক্ষে ৫৮ লাখ নারী ও কিশোরী বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ছবি: এএফপি
সুদান সীমান্তের ভেতরে কমপক্ষে ৫৮ লাখ নারী ও কিশোরী বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ছবি: এএফপি

গর্ত আর খানাখন্দে ভরা জীর্ণ সড়ক পেরিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে ছুটে চলেছে একটি ট্রাক। সীমান্ত পর্যন্ত তিন দিনের যাত্রা। প্রায় ৮০ জনের সঙ্গে সেই ট্রাকে চড়ে বসেছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর স্বামী। গন্তব্য নির্দিষ্ট হলেও তার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার! এই দীর্ঘ পথে পদে পদে বিপদ। প্রায় প্রতি ২০ মিনিট পর আরএসএফ চেকপয়েন্ট। ট্রাক থামিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছিল জোর করে। পথে খাবার আর পানির দাম আকাশছোঁয়া। অনেক প্রতিকূলতার পর সেই নারী ও তাঁর স্বামী দক্ষিণ সুদানের সীমান্ত শহর আবেই-এ পৌঁছান। বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সেখানেও টেকা কঠিন হয়ে পড়ে তাঁদের। অবশেষে, তাঁরা এন নাহুদ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবা হয়ে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় পৌঁছান।

গত ২৮ আগস্ট বিবিসি, সুদানের এমনই একটি গল্প শুনিয়েছে আমাদের। নিরাপত্তার কারণে প্রতিবেদনে ওই নারী এবং তাঁর স্বামীর নাম ব্যবহার করা হয়নি।

সুদানের সেনাবাহিনী এসএএফ, অন্যদিকে শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফ। সোনার খনি ও ক্ষমতার দখল নিয়ে এই দুই দলের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সে লড়াই গড়ায় গৃহযুদ্ধের দিকে। এর ফলে দুর্ভিক্ষ ও পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চরম অত্যাচার চলছে সেখানে। আরএসএফ সম্প্রতি আল-ফাশের শহরটি দখল করার পর সেখানকার বাসিন্দাদের নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।

এই গৃহযুদ্ধে নৃশংসতার মাত্রা ব্যাপক। পুড়িয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি, বিকৃত মৃতদেহ এবং গণকবরের প্রমাণ মিলেছে স্যাটেলাইট ও ভিডিওর মাধ্যমে। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এসব বিষয় যাচাই করা এবং মানবিক সহায়তা প্রচেষ্টাকে ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত করছে। নারী ও মেয়েদের হত্যা, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, জোর করে বিয়ে এবং অপহরণের ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। স্থানীয় মেডিকেল নেটওয়ার্ক ও সুদান ডক্টরস ইউনিয়নের তথ্য অনুসারে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নারী, কিশোরীসহ ২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ৩০ অক্টোবর সৌদি ম্যাটারনিটি হসপিটালে হামলার সময় প্রায় ৫০০ রোগী এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা স্বজনেরা নিহত হন বলে জানা যায়। এই হাসপাতালে অনেক নারী নিরাপত্তা ও চিকিৎসার জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলারও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর আক্রমণ নারীদের মাতৃ ও প্রজননস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে নারী ও মেয়েদের কাছে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছতে পারছে না। চলতি বছরের জুন মাসে একটি হাসপাতালে বিমান হামলায় ৫৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রসবকক্ষে থাকা নারীরাও ছিলেন। এ ছাড়া জেন্ডার ইন হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে সুদানের নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। স্বাস্থ্যসুবিধাগুলো ধ্বংস হওয়ার কারণে বেঁচে যাওয়া নারীরা ধর্ষণ-পরবর্তী স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত।

এপ্রিলে প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুদান সীমান্তের ভেতরে কমপক্ষে ৫৮ লাখ নারী ও কিশোরী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সুদান

এবং এর বাইরে বাস্তুচ্যুত হওয়া ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের অর্ধেকের বেশি নারী। দুই বছরের কম সময়ে, লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০২৪ সালে লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতার পরিষেবার

চাহিদা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বেড়েছিল ২৮৮ শতাংশ। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে সুদানে ২ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ

তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সুদান কান্ট্রি ডিরেক্টর এতিজাজ ইউসিফ এই সংকটকে পুরোপুরিভাবে মানবসৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন।

যুদ্ধ যে মাত্রারই হোক না কেন, তাতে নারীদের ভিকটিম হওয়ার হার থাকে সবচেয়ে বেশি। সুদানের নারীদের ওপর এখন চলছে ভয়াবহ নির্যাতন। কবে যে দেশটিতে সুদিন ফিরে আসবে, তার কোনো নিশ্চয়তা এই মুহূর্তে কোথাও থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র: ইউএন উইমেন, রিলিফওয়েব, বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রাথমিকে ১০ হাজার ২১৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ

গভীর রাতে পিনাকীর বাড়ির সামনে আগুন জ্বেলে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে চলে গেল দুই যুবক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত