Ajker Patrika

ঐতিহ্য ধরে রাখছেন নারী উদ্যোক্তারা

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
ঐতিহ্য ধরে রাখছেন নারী উদ্যোক্তারা

যুগে যুগে মানুষের প্রয়োজনগুলো বদলে গেছে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে। গ্রামের নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাই একটা সময় গামছা মুড়ে পুকুর থেকে ঘরে ফিরে পোশাক বদলে নিতেন। একটা সময় মাটি কিংবা কাঁসার পাত্রে খেতেন সবাই। জামদানি শুধু ব্যবহৃত হতো শাড়ি হিসেবে; কিন্তু কালে কালে বদলে গেছে এসবের ব্যবহারও। মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তনের সঙ্গে এ জিনিসগুলোর প্রচলন কমে এসেছে। অনেকে বলেন, দেশীয় ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকের ধারণা, হারিয়ে যাচ্ছে না; বরং বারবার ফিরে ফিরে আসছে ভিন্নভাবে, ভিন্নরূপে।

করোনা অতিমারির পর একটা ব্যাপার কিছুটা হলেও এগিয়ে গেছে। সেটা হলো, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি। এসব উদ্যোক্তা প্রথমে ঘরে বানানো জিনিস দিয়েই বিপণনের কাজ শুরু করেন। এরপর করোনার সংকট কেটে যাওয়ার পর সে বিপণন থামেনি, বরং বেড়েছে।

সরকারি ও বেসরকারি গবেষণার বিভিন্ন তথ্যমতে, দেশে প্রায় তিন দশক আগে তথ্যপ্রযুক্তির যাত্রা শুরু হলেও পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নারীর অবস্থান ছিল ১ শতাংশের নিচে। করোনার পর এ ক্ষেত্রে ঘটেছে বিপ্লব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, এক দশকের ব্যবধানে নারী উদ্যোক্তা দ্বিগুণের বেশি হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ট্রেড সার্ভে-২০২০-এর জরিপে বলা হয়েছে, ২০০২-০৩ অর্থবছরে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিল মাত্র ২১ হাজার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সে সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় দুই লাখের ঘর। গত দুই বছরে তা আরও বেড়েছে।

জামদানি নকশায় তৈরি হচ্ছে ব্যাগ।এখন অনেক নারী উদ্যোক্তা ঐতিহ্যবাহী পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের কাজ করছেন। তাঁদের হাত ধরে সে পণ্যগুলো চলে যাচ্ছে ক্রেতাদের কাছে। এর মধ্যে কিছু পণ্যের বিপণন হচ্ছে সরাসরি। যেমন মাটি ও কাঁসার তৈজসপত্র কিংবা ঘর সাজানোর বিভিন্ন অনুষঙ্গ। আর কিছু পণ্য নারীদের হাত ধরে নতুন করে সামনে আসছে বা জীবন পেয়েছে। যেমন পোশাক অথবা ফ্যাশন অনুষঙ্গের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী শিল্পধারার নকশা ব্যবহার এবং বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যমের পুনর্জাগরণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এখন অনেক উদ্যোক্তা গামছা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গয়না, ব্লাউজ, শাড়ি তৈরি করছেন। আবার জামদানি দিয়ে বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরিতেও রয়েছে নারীদের ব্যাপক অবদান।

মানিকগঞ্জের নূরজাহান ব্যবসা করেন বেতের সামগ্রী নিয়ে। তিনি জানান, বিয়ের পর করোনার সময়ে পরিবারের আর্থিক সংকট দূর করতেই তাঁর উদ্যোক্তা-জীবন শুরু। কী করবেন ভাবতে ভাবতে, একসময় বাবার কাছেই বেতের জিনিস বানানো শেখা শুরু করেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে তিনি এ কাজে দক্ষতা অর্জন করেন। প্রথমদিকে বাবার তৈরি জিনিস নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। ধীরে ধীরে নিজেও তৈরি করা শুরু করেন বেতের বিভিন্ন পণ্য। এভাবে নূরজাহান ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়েছেন নিজের উদ্যোগকে।

জামদানি ও পাট দিয়ে তৈরি গয়নাবাংলাদেশের জিআই পণ্য জামদানি বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা দেশে। জামদানি প্রিন্টের থ্রিপিস তো আছেই। এখন এর পাশাপাশি জামদানি কাপড় দিয়ে ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিস তৈরি করছেন অনেকে। উদ্যোক্তা আদিবা তাহসিন চৌধুরী জানান, তাঁর পেজের অন্যতম জনপ্রিয় পণ্য হলো জামদানি মোটিফের ব্যাগ। ঐতিহ্যবাহী জামদানি মোটিফ দিয়ে ব্যাগের নকশা করা শুরু করলেও এখন বেশির ভাগ ব্যাগ তৈরি হয় ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী। বিশেষ করে ব্রাইডাল জামদানির সঙ্গে রং আর মোটিফ 
মিলিয়ে ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। বিষয়টি এমনভাবে করা হচ্ছে, যেন মনে হয় সেটি শাড়িরই অংশ।

অথচ এ ব্যাগগুলো তৈরি হয় কাঠের ওপর জামদানি কাপড় দিয়ে। অর্থাৎ উদ্যোক্তারা শুধু পণ্য তৈরি করছেন না, সেই পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা তৈরিরও চেষ্টা করছেন।

চশমায় ঐতিহ্যবাহী রিকশাচিত্রশুধু জামদানি নয়, পোশাক, ফ্যাশন কিংবা গৃহসজ্জার অনুষঙ্গে ঐতিহ্যবাহী রিকশাচিত্রকে ফুটিয়ে তুলে সেগুলোকে বিপণনযোগ্য করে তুলছেন অনেক নারী উদ্যোক্তা। পোশাক ও ফ্যাশন অনুষঙ্গে রিকশাচিত্রের মোটিফ নিয়ে কাজ করেন মনসুরা স্পৃহা। তিনি জানান, ঐতিহ্যবাহী কোনো মাধ্যম নিয়ে কাজ করার চিন্তা থেকে রিকশাচিত্রকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বেশির ভাগই কাজ শুরু করেছেন নিজেদের উপার্জনের জন্য। কাজ করতে গিয়ে অনেকে লড়েছেন নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। শিখেছেন নতুন নতুন প্রযুক্তি, নিশ্চিত করেছেন পণ্যের গুণগত মান। শুধু ‘কিছু একটা’ করার আগ্রহ থেকেই যাঁরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন, তাঁদের কাছে নিজেদের পণ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে খুব আগ্রহ নিয়েই তাঁরা পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। এ ব্যাপারে সময়ের সঙ্গে আরও শাণিত হচ্ছেন তাঁরা। ঐতিহ্যকে নিজেদের মতো করে ধারণ করে তা নতুন প্রজন্মের কাছে রুচির সঙ্গে তুলে ধরার কাজ করে যাচ্ছেন এই উদ্যোক্তারা। তাঁদের পরিধি ধীরে ধীরে বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে এর ক্রেতাসংখ্যাও। সেই সঙ্গে কিছু মাত্রায় বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যমগুলোও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত