Ajker Patrika

নারী শ্রমশক্তির ভূগোল

জেনে নিন কোন দেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
খুব গরিব অথবা খুব ধনী দেশগুলোতে নারীদের কর্মসংস্থানের হার বেশি। কিন্তু মাঝারি আয়ের দেশে তা তুলনামূলক কম। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি করা।
খুব গরিব অথবা খুব ধনী দেশগুলোতে নারীদের কর্মসংস্থানের হার বেশি। কিন্তু মাঝারি আয়ের দেশে তা তুলনামূলক কম। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি করা।

পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। ফলে এই পৃথিবীর উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ কোনো বিশেষ সুবিধা বা কোটার বিষয় নয়। এটি তাদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু এই জায়গায় পৃথিবীর সব দেশ সমান নয়। কোনো কোনো দেশে নারীদের সমাজের অংশই মনে করা হয় না। এই জায়গাতেই তৈরি হয়েছে এক বিরাট বৈষম্য।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এ বছর একটি জরিপে প্রকাশ করেছে নারীদের কর্মসংস্থানের হার বেশি এমন ৩০টি দেশের তালিকা। জরিপটি ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী নারীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের কেউ কাজ করছেন আবার কাজ খুঁজছেন। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খুব গরিব অথবা খুব ধনী দেশগুলোতে নারীদের কর্মসংস্থানের হার বেশি। কিন্তু মাঝারি আয়ের দেশে তা তুলনামূলক কম। যেমন আইসল্যান্ড উচ্চ আয়ের দেশ আর মাদাগাস্কার নিম্ন আয়ের দেশ। দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের দেশ হয়েও নারীদের কর্মসংস্থান হারের দিক থেকে দেশ দুটি প্রায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে।

স্বাবলম্বী নারীদের মহাদেশ আফ্রিকা

আফ্রিকান দেশগুলোতে নারীদের কর্মসংস্থানের হার তুলনামূলক বেশি। দেশগুলোর নারী শ্রমশক্তি মূলত কৃষিনির্ভর। মাদাগাস্কার, তানজানিয়া, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে নারীরা চা-বাগান, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও হস্তশিল্পের বিপণনে সক্রিয়। যদিও এসব কাজের অনেকটাই আনুষ্ঠানিক খাতের বাইরে। তারপরও পরিবার ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

স্বাবলম্বী নারীদের গড়ে এগিয়ে আছে আফ্রিকা মহাদেশ। সেখানকার বিভিন্ন দেশের নারীরা মূলত কৃষি, চা-বাগান, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও হস্তশিল্পের বিপণনে সক্রিয়। ছবি: ওয়ান ডট ওআরজি
স্বাবলম্বী নারীদের গড়ে এগিয়ে আছে আফ্রিকা মহাদেশ। সেখানকার বিভিন্ন দেশের নারীরা মূলত কৃষি, চা-বাগান, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও হস্তশিল্পের বিপণনে সক্রিয়। ছবি: ওয়ান ডট ওআরজি

মাদাগাস্কারে ৮৪ শতাংশ নারী বিভিন্ন কাজ করে। তাদের মধ্যে বেশি নারী চায়ের খামারে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। বুরুন্ডি মূলত কৃষিভিত্তিক সমাজ। সেখানে ৮১ শতাংশ নারী কাজ করে; বিশেষ করে ফসল উৎপাদনের কাজে জড়িত। তানজানিয়ার ৮২ শতাংশ নারী কাজ করে। তারা মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিকাজে নিয়োজিত। নাইজেরিয়াতেও কর্মজীবী নারীর সংখ্যা তানজানিয়ার মতো। তবে সেই দেশে নারীরা হস্তশিল্প, পটারি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মোজাম্বিকে ৭৮ শতাংশ নারী কর্মজীবী। নানা ধরনের ইভেন্টে নারী মডেল ও উদ্যোক্তার উপস্থিতি দেখা যায় দেশটিতে। উগান্ডায় ৭৮ শতাংশ নারী কর্মজীবী। সেখানে ক্ষুদ্র পোশাক ব্যবসায় নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। বেনিনে ৭৬ শতাংশ নারী কর্মজীবী। যারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও হস্তশিল্পের কাজের সঙ্গে জড়িত। ইরিত্রিয়ায় কর্মজীবী নারী ৭৫ শতাংশ। তারাও বেশির ভাগ কৃষিকাজে নিয়োজিত। যদিও এগুলো অধিকাংশ আনুষ্ঠানিক চাকরি নয়, তবে পরিবার ও অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে নারীরা এসব কাজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছে।

উচ্চ ও নিম্ন আয়ের চরম চিত্র এশিয়ায়

প্রচারণা যাই থাক, উত্তর কোরিয়ায় নারী শ্রমশক্তির হার সর্বোচ্চ। দেশটির ৮৭ শতাংশ নারী কর্মজীবী। ছবি: এশিয়া সোসাইটি ডট ওআরজি
প্রচারণা যাই থাক, উত্তর কোরিয়ায় নারী শ্রমশক্তির হার সর্বোচ্চ। দেশটির ৮৭ শতাংশ নারী কর্মজীবী। ছবি: এশিয়া সোসাইটি ডট ওআরজি

এশিয়ার চিত্র কিছুটা জটিল। এই মহাদেশে উত্তর কোরিয়ায় নারী শ্রমশক্তির হার সর্বোচ্চ। দেশটির ৮৭ শতাংশ নারী কর্মজীবী। কম্বোডিয়া বা কাজাখস্তানের মতো দেশে নারীরা যুক্ত পোশাক ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে। অন্যদিকে, জাপানের মতো উন্নত অর্থনীতিতে নারীরা ধীরে ধীরে প্রযুক্তিনির্ভর কাজে এগিয়ে যাচ্ছে।

এশিয়ার উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোতে নারীদের ভূমিকা আলাদা। উন্নত এশীয় দেশগুলোতে নারীরা প্রযুক্তিনির্ভর কাজ করলেও দরিদ্র দেশে তারা পোশাক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও হস্তশিল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত। যেমন উত্তর কোরিয়ায় নারী শ্রমশক্তির হার সর্বোচ্চ। তারপরেই আছে কম্বোডিয়ার মতো দেশ। সেখানে ৭৯ শতাংশ নারী কর্মজীবী। সেই নারীরা প্রধানত পোশাক কারখানায় কাজ করে। জাপানের ৭৭ শতাংশ কর্মজীবী নারীর বেশির ভাগই প্রযুক্তি ও উৎপাদন শিল্পে অংশগ্রহণে আগ্রহী। কাজাখস্তানে কর্মজীবী নারীর হার ৭৬ শতাংশ। দেশটিতে নারীরা মূলত খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

সমতা ও সচেতনতায় এগিয়ে ইউরোপ

ইউরোপকে বলা হয় 'নারীদের মহাদেশ'। ইউরোপের নারীরা গবেষণা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন ও প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ছবি: ইপিপি গ্রুপ ডট ইউ
ইউরোপকে বলা হয় 'নারীদের মহাদেশ'। ইউরোপের নারীরা গবেষণা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন ও প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ছবি: ইপিপি গ্রুপ ডট ইউ

ইউরোপীয় দেশগুলো নারীদের কর্মসংস্থানের দিক থেকে উদাহরণ হওয়ার মতো। আইসল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোতে কর্মক্ষেত্রে সমতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউরোপের নারীরা গবেষণা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন ও প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সে মহাদেশের নারীরা বেশির ভাগ আনুষ্ঠানিক খাতে যুক্ত। ইউরোপীয় দেশগুলোতে নারীদের কাজের পরিবেশ তুলনামূলকভাবে উন্নত ও সমতাভিত্তিক।

আইসল্যান্ডে ৮৪ শতাংশ কর্মজীবী নারীর বেশির ভাগ মৎস্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে জড়িত। সুইডেনে কর্মজীবী নারীর হার ৮২ শতাংশ। তাদের বেশির ভাগ গবেষণা ও প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। একই অবস্থানে আছে নেদারল্যান্ডস। সেখানে খেলাধুলা ও প্রযুক্তি খাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে নারীরা। ফিনল্যান্ড ৮০ শতাংশ নারী কর্মজীবীর দেশ। সেখানে বেশির ভাগ নারী হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ক্যাটারিং সেক্টরে কাজ করে। ডেনমার্কে পাবলিক সেক্টরে নারীর সংখ্যা বেশি। নরওয়েতে সংস্কৃতি ও হেরিটেজ সংরক্ষণে নারী কর্মীদের ভূমিকা বেশি। লিথুয়ানিয়ার বেশির ভাগ নারী বিউটি ও হেলথ সেক্টরে সক্রিয়। জার্মানিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজসেবায় নারীরা অগ্রণী। পর্তুগাল, বেলারুশ, সাইপ্রাস, এস্তোনিয়ার মতো দেশে নারীরা নিয়োজিত কৃষি, উৎপাদন ও হস্তশিল্পের কাজে।

কর্মক্ষম ও দক্ষ নারীশক্তিতে অস্ট্রেলিয়া, ওশেনিয়া

এই অঞ্চলের দেশগুলোতে কৃষিনির্ভর খাত ও উদ্যোগে নারীদের সম্পৃক্ততার হার বেড়েছে। তারা পেশাদার ও দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের ৮৪ শতাংশ নারী কর্মজীবী। সেখানে হস্তশিল্পে নারীদের সক্রিয়তা বেশি। অস্ট্রেলিয়ার ৭৭ শতাংশ নারী কর্মীর বেশির ভাগ কৃষিকাজে প্রশিক্ষিত। নিউজিল্যান্ড খামার ব্যবস্থাপনায় নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে কৃষিনির্ভর উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তারা পেশাদার ও দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। সেখানে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের মিলনে গড়ে উঠছে নারীশক্তি। সেই অঞ্চলে নারীরা কৃষি, খামার ব্যবস্থাপনা ও হস্তশিল্পে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে যুক্ত। তারা শুধু শ্রমিক নয়, উদ্যোক্তাও বটে।

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার শহুরে জীবনে নারীর উপস্থিতি

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার নারীরা তুলনামূলকভাবে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বেশি সক্রিয়। যদিও এই অংশগ্রহণের হার ইউরোপ বা আফ্রিকার তুলনায় কম। তবু বাহামাসের মতো দেশে নারীরা হসপিটালিটি এবং উৎপাদন খাতে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছে। সেখানে ৭৬ শতাংশ নারী কর্মজীবী।

সূত্র: ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট, আইএলও

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাসায় নিয়ে গায়েব করেন উপদেষ্টা— আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ

চীনা যুদ্ধবিমান থেকে এলএস-৬ বোমা ফেলে কেন নিজ দেশে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালাল পাকিস্তান

ফিলিস্তিনকে আজই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ, বিরোধিতা ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের

ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনকে মারতে উদ্যত হওয়া সেই চিকিৎসক বরখাস্ত

সখীপুরে বনপ্রহরীদের ওপর হামলা: ইউপি সদস্য, বিএনপি নেতাসহ ৭ জনের নামে মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত