Ajker Patrika

মরুর বুকে বিশাল ‘চোখটি’ এল কীভাবে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৩, ১২: ৫৮
মরুর বুকে বিশাল ‘চোখটি’ এল কীভাবে

বিশাল সাহারা মরুর মাঝখানে ছড়িয়ে আছে প্রায় ৩০ মাইল ব্যাসের ভৌগোলিক এক বিস্ময়। রিচাট স্ট্রাকচার নামে পরিচিত জায়গাটির মাঝখান দিয়ে হেঁটে গেলে এটাকে তেমন আশ্চর্য কিছু বলে মনে নাও হতে পারে আপনার। বিষয়টা মূলত ধরা পড়ে নভোচারীদের চোখে। ওপর থেকে তাঁদের কাছে একে মনে হয় বিশাল এক গোলাকার চোখের মতো।

রিচাট স্ট্রাকচারের অবস্থান সাহারা মরুভূমির মৌরতানিয়ার অংশে। দেশটির শহর ওয়াদেন থেকে খুব দূরে নয় এটি। আগের দিনের নভোচারীরা এটা দেখেই বুঝে যেতেন তাঁরা সাহারা মরুভূমির ওপর আছেন। ওপর থেকে এমন গোলাকার একটা চোখ বা বুলস আইয়ের মতো দেখানোয় অনেকেই একে ডাকেন আই অব আফ্রিকা বা আফ্রিকার চোখ বলে। কেউ আবার পরিচয় করিয়ে দেন ‘সাহারার চোখ’ হিসেবে।

সাহারা মরুভূমির মৌরতানিয়ার অংশে রিচাট স্ট্রাকচারের অবস্থানএবার আশ্চর্য এই প্রাকৃতিক কাঠামোটির জন্ম কীভাবে তা জেনে নেওয়া যাক। একসময় ভাবা হতো এটি মৃত কোনো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা বিশাল কোনো বস্তু যেমন—উল্কা পতনের ফলে সৃষ্টি হওয়া বড় গর্ত। তবে এখন বিশ্বাস করা হয়, ভৌগোলিক কোনো ডোম বা গম্বুজ আকারের প্রাকৃতিক এক বিশাল পাথরখণ্ডের ক্ষয়ের ফলেই এর সৃষ্টি। আর ভূত্বকের নিচের গলিত উত্তপ্ত তরল খনিজের চাপে এই ক্ষয় হয়েছে। 

আরেকটু সহজভাবে বললে, এ সময় মরুর সমতলে ফোসকার মতো পড়ে। এদিকে বিশাল পাথরের স্তরগুলোয় ফাটল ধরে। পরে ধীরে ধীরে এগুলো ভেঙে ও ক্ষয় হতে হতে একপর্যায়ে মোটামুটি সমতল হয়। কিন্তু এর মধ্যে একের পর এক রিং বা আংটির অবয়ব ফুটে ওঠে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কত সময় লেগেছে শুনে চোখ কপালে উঠবে আপনার, আনুমানিক ১০ কোটি বছর।

একসময় ভাবা হতো এটি মৃত কোনো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা বিশাল কোনো বস্তু যেমন—উল্কা পতনের ফলে সৃষ্টি হওয়া বড় গর্তসাহারার চোখ মরুর দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। তাই খুব বেশি মানুষের আনাগোনা এখানে ছিল না এটাই স্বাভাবিক। তার পরও এই পথে যাতায়াত করা মানুষের কেউ কেউ এখানকার ভূপ্রকৃতিতে কিছুটা অস্বাভাবিকতা আবিষ্কার করেননি যে তা নয়। তবে এটা যে এতটা আশ্চর্যজনক এক জিনিস তা কল্পনাও করতে পারেননি।  তার পরই নভোচারীরা ওপর থেকে এর অদ্ভুত চেহারা আবিষ্কার করেন এবং বিষয়টি অন্যদের নজরে আনেন। ব্যস, এটি গোটা পৃথিবীতেই আশ্চর্য এক ভৌগোলিক বৈচিত্র্য হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেল।

এখন নিশ্চয় এর নাম রিচাট স্ট্রাকচার হলো কীভাবে তা জানতে চান। স্থানীয় ভাষায় নিচাট অর্থ ‘পালক’। আরবিতে আবার এটি পরিচিত তাগেনস নামে, স্থানীয় কুয়া থেকে পানি আনার জন্য যে চামড়ার থলে ব্যবহার করা হয়, সেটির গোলাকার মুখকে বোঝানো হয় শব্দটি দিয়ে। বুঝতেই পারছেন, এর গোলাকার আকৃতিই একে এমন নাম পাইয়ে দিয়েছে।

সাহারার চোখের ব্যাস প্রায় ৩০ মাইলস্বাভাবিকভাবেই নভোচারীদের মাধ্যমে রিচাট স্ট্রাকচারের আশ্চর্য চেহারার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ার পর একে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জিওলজিকেল সায়েন্স (আইইউজিএস) ১০০ ভৌগোলিক হেরিটেজ এলাকার যে তালিকা করে, তার একটি নির্বাচিত হয় এটি। তবে আরও অনেক ভৌগোলিক বিস্ময়ের মতোই কাছ থেকে নয় বরং দূর থেকেই একে বেশি দৃষ্টিনন্দন দেখায়। 

নভোচারীরা মহাশূন্য থেকে ‘সাহারার চোখে’র দিকে তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁদের চোখে এটি ধরা দেয় বিশাল কোনো গুলগুলে চোখ কিংবা অজ্ঞাত ভিনগ্রহবাসীর উড়ন্ত চাকি বা ফ্লাইং সসার অবতরণের জায়গা হিসেবে।

ওয়াদেন শহর থেকে জায়গাটির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারএই লেখাটা পড়ার পর আপনার যদি সেখানে যেতে ইচ্ছা করে, তবে পথটা বাতলে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এ জন্য প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরতানিয়ায়। রাজধানী শহর নোয়াকচট থেকে চলে যাবেন ওয়াদেন শহরে। সেখান থেকে ‘সাহারার চোখের’ দূরত্ব বেশি নয়, মোটে ৩০ কিলোমিটার। তবে মনে রাখবেন, বালুর রাজ্যে পথ চিনতে অবশ্যই একজন স্থানীয় গাইডের সহযোগিতা লাগবে। সেখানে পৌঁছালেও স্বাভাবিকভাবেই কাছ থেকে জায়গাটির আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন না। তবে সঙ্গে ড্রোন থাকলে যে ভালো কিছু ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণা করা সম্ভব হবে তাতে সন্দেহ নেই। 

অনেকে একে আই অব আফ্রিকা নামেও ডাকেনসূত্র: এটলাস অবসকিউরা, আনইউজুয়াল প্লেসেস, জেএমই সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত