Ajker Patrika

বিচিত্র /দুর্গম দ্বীপটির জনসংখ্যা ২০, পাখি বাস করে ১০ লাখ

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ২৮
গ্রিমসে দ্বীপটি আইসল্যান্ডের উত্তর উপকূল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি দেশের সবচেয়ে উত্তরের বসতি। ছবি: সংগৃহীত
গ্রিমসে দ্বীপটি আইসল্যান্ডের উত্তর উপকূল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি দেশের সবচেয়ে উত্তরের বসতি। ছবি: সংগৃহীত

আইসল্যান্ডের উত্তরের উপকূল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের দুর্গম এক দ্বীপ গ্রিমসে। ছোট্ট দ্বীপটি ইউরোপের দুর্গমতম বসতিগুলোর একটি হিসেবে আলাদা নাম আছে। তেমনি নানা প্রজাতির সামুদ্রিক পাখির আবাসস্থল হিসেবেও বিখ্যাত গ্রিমসে।

এমনকি আগস্টের শেষের একটি রোদেলা দিনেও দ্বীপটির বাতাস এতটাই প্রবল থাকে যে, আপনার মনে হতে পারে ঝোড়ো হাওয়া হয়তো উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

এই দ্বীপে হাঁটার সময় হাতে একটা লাঠি রাখা উত্তম। ভাববেন না উঁচু-নিচু এবড়োখেবড়ো ভূমিতে ভারসাম্য রক্ষার জন্য এর প্রয়োজন, বরং আর্কটিক টার্ন নামের একধরনের সামুদ্রিক পাখির বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে এটা কাজ করে। এই পাখিদের বাসার কাছাকাছি চলে এলে পর্যটকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার দুর্নাম আছে।

দ্বীপটির নাটকীয় ব্যাসাল্ট পাহাড়ের চারপাশে ধীরে ধীরে হাঁটতে গিয়ে হয়তো দেখবেন কিছু পাফিন পাখি, যারা তখনো সমুদ্রের দিকে উড়ে যায়নি। এই পাখিরা এপ্রিল মাসে দ্বীপে ফিরে এসে তাদের বাসা তৈরি করে।

মাত্র সাড়ে ছয় বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ আইসল্যান্ডের সবচেয়ে উত্তরের জনবসতি। আর এটি পড়েছে আর্কটিক সার্কেল বা বৃত্তের মধ্যে। কঠোর প্রকৃতি এবং এর দূরবর্তী অবস্থান এই দ্বীপকে আইসল্যান্ডের অন্যতম রহস্যময় ও আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।

দ্বীপটির এয়ারস্ট্রিপটি পাখিদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। ছবি: বিবিসি
দ্বীপটির এয়ারস্ট্রিপটি পাখিদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। ছবি: বিবিসি

১৯৩১ সালের আগে গ্রিমসেতে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় ছিল একটি ছোট বোট। বছরে মাত্র দুবার চিঠি নিয়ে দ্বীপে আসত এটি। এখন, আকুরেইরি শহর থেকে ২০ মিনিটের বিমান বা দালভিক গ্রাম থেকে তিন ঘণ্টায় ফেরিতে পর্যটকেরা দ্বীপে পৌঁছাতে পারেন।

বিশেষ করে যাঁরা ইউরোপের দূরবর্তী বসতিগুলো দেখতে চান এবং এখানে বসবাসকারী সামুদ্রিক পাখি ও বন্যপ্রাণীর সঙ্গ উপভোগ করতে চান, সেই সব পর্যটকের জন্য এটি রীতিমতো আদর্শ এক গন্তব্য। পাফিন, কালো পায়ের একধরনের গাঙচিল, রেজরবিল এবং গিলেমট প্রজাতির পাখিরা এই দ্বীপে থাকে। এ ছাড়া, আইসল্যান্ডিক ঘোড়া এবং ভেড়ার পাল দ্বীপে অবাধে ঘোরাফেরা করে।

গ্রিমসেতে বর্তমানে মাত্র ২০ জন স্থায়ী বাসিন্দা রয়েছে। অনুমান করা হয় এখানে এখানে ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখির বাস। অর্থাৎ, দ্বীপের পাখির সংখ্যা মানব জনসংখ্যার ৫০ হাজার গুণ।

স্থানীয় গাইড এবং আর্কটিক ট্রিপ নামের একটি ট্যুর কোম্পানির মালিক হাতলা ইঙ্গলফসদত্তির বলেন, ‘আপনি বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু আমরা এখানে মাত্র ২০ জন মানুষ বসবাস করি।’

দ্বীপটিতে একটি বাতিঘর আছে। ছবি: সংগৃহীত
দ্বীপটিতে একটি বাতিঘর আছে। ছবি: সংগৃহীত

তিনি ২০১৯ সালে গ্রিমসেতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখানকার মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি তাঁকে এখানেই থাকতে অনুপ্রাণিত করে।

‘ট্যুরে আসা মানুষ প্রায়ই জানতে চান, আমি কি একঘেয়ে হয়ে যাই না? কিন্তু আমার করার মতো অনেক কাজ থাকে। আমরা মূল ভূখণ্ডে বসবাসকারী মানুষের মতোই জীবনযাপন করি। আমরা কাজ করি, জিমে যাই, ব্যায়াম করি। তবে প্রকৃতিই আমাকে এখানে ধরে রেখেছে।’

গ্রিমসের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। দ্বীপটি একমাত্র ডিজেলচালিত জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ পায়। দ্বীপে কোনো হাসপাতাল, ডাক্তার বা পুলিশ স্টেশন নেই। তিন সপ্তাহ পর পর একজন চিকিৎসক দ্বীপের বাসিন্দাদের পরীক্ষা করতে আসেন। জরুরি পরিস্থিতিতে কোস্ট গার্ড এবং অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থানীয়দের সাহায্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ছোট একটি বসতি রয়েছে, যেখানে কিছু বাড়ি রয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলোই পর্যটকদের জন্য অতিথিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই বসতিকে সান্দভিক নামে ডাকা হয়। এখানে একটি স্কুল ভবন রয়েছে, যা বর্তমানে একটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি, একটি হস্তশিল্প গ্যালারি এবং একটি ক্যাফে রয়েছে, যেখানে আইসল্যান্ডিক হাতে তৈরি জিনিসপত্র, উলের পোশাক এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী বিক্রি হয়।

বছরজুড়ে দ্বীপটিতে মাত্র ২০ জন মানুষ বসবাস করেন, তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক খুব গাঢ়। ছবি: সংগৃহীত
বছরজুড়ে দ্বীপটিতে মাত্র ২০ জন মানুষ বসবাস করেন, তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক খুব গাঢ়। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া এখানে প্রতিদিন এক ঘণ্টার জন্য খোলা থাকে একটি ছোট মুদি দোকান। দ্বীপে একটি রেস্টুরেন্ট ও বার, একটি সুইমিং পুল, একটি লাইব্রেরি, একটি চার্চ এবং একটি বিমানবন্দরও রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, এই বিমানবন্দর পাখিদের জন্যও একটি জনপ্রিয় অবতরণ স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১০ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত পাফিন পাখিরা দ্বীপে বাসা বাঁধতে আসে। এই সময়েই পর্যটকেরা দ্বীপে পাখি পর্যবেক্ষণে আসেন। এ ছাড়া দ্বীপের একটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হলো অরবিস এৎ গ্লোবাস নামের একটি বিশাল কংক্রিটের ভাস্কর্য, যা আর্কটিক বৃত্ত এবং গ্রিমসের সংযোগস্থলকে চিহ্নিত করে।

পর্যটক এবং আইসল্যান্ডিক ঘোড়াগুলো দ্বীপের ‘অরবিস এৎ গ্লোবাস’ নামে পরিচিত কংক্রিটের বলটি ভারি পছন্দ। ছবি: বিবিসি
পর্যটক এবং আইসল্যান্ডিক ঘোড়াগুলো দ্বীপের ‘অরবিস এৎ গ্লোবাস’ নামে পরিচিত কংক্রিটের বলটি ভারি পছন্দ। ছবি: বিবিসি

গ্রিমসের এত উত্তরের অবস্থান মানে এই যে দ্বীপবাসীরা নর্দার্ন লাইটের দেখা পান, যেখানে দ্বীপটি ডিসেম্বরের শুরু থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত কয়েক মাসের জন্য সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে থাকে। শীতের এই দীর্ঘ রাতগুলোতে নিয়মিতই দেখা মেলে নর্দার্ন লাইটের। ইঙ্গলফসদত্তির বলেন, ‘আমার ক্ষেত্রে, অন্ধকার আমাকে বিরক্ত করে না। কিছু মানুষের জন্য এটি একটি নির্দিষ্ট সীমার পর বিরক্তিকর হতে পারে, কিন্তু আমরা জানি যে আবার আলো ফিরে আসবে।’

আগামী গ্রীষ্মের মধ্যেই কিছু নতুন উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে লেখক ও অন্যান্য সৃজনশীল ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ আবাসস্থল তৈরি করার কথা রয়েছে। দ্বীপের কিছু বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দীর্ঘমেয়াদি থাকার জন্য উপযোগী করে তোলা হবে।

স্থানীয়রা দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা এবং এর ছোট কিন্তু উষ্ণ কমিউনিটির চেতনা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গ্রিমসে যেমন প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য, পাখিদের গান এবং আকাশে উত্তর প্রভা দেখা যায়, তেমনি দ্বীপের বাসিন্দাদের আন্তরিকতা এবং বন্ধন এই জায়গাকে সত্যিই বিশেষ করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জরায়ুর বাইরে বেড়ে উঠল শিশু, অলৌকিক জন্ম দেখল ক্যালিফোর্নিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১১
২০২৫ সালের আগস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই হাসপাতালে সুজ লোপেজের মেয়ে কাইলা সুজ, তাঁর কোলে রিউ ও অ্যান্ড্রু লোপেজ (ছবিতে বাম দিক থেকে)। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০২৫ সালের আগস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই হাসপাতালে সুজ লোপেজের মেয়ে কাইলা সুজ, তাঁর কোলে রিউ ও অ্যান্ড্রু লোপেজ (ছবিতে বাম দিক থেকে)। ছবি: এপির সৌজন্যে

ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎসকেরা।

লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টারের প্রসূতি ও প্রসব বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর ড. জন ওজিমেক এপিকে বলেন, ‘প্রতি ৩০ হাজার গর্ভাবস্থার মধ্যে মাত্র একটি জরায়ুর বাইরে পেটের ভেতরে (Abdominal Pregnancy) ঘটে। আর পূর্ণ মেয়াদে সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়ার ঘটনা ১ কোটিতে একজনের ক্ষেত্রেও দেখা যায় না। এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য।’

৪১ বছর বয়সী সুজ লোপেজ পেশায় একজন নার্স। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগ পর্যন্ত তিনি জানতেনই না যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা।

সুজ দীর্ঘদিন ধরে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। যখন তাঁর পেট বড় হতে শুরু করে, তিনি ভেবেছিলেন, এটি ২১ পাউন্ড ওজনের সেই সিস্টেরই বৃদ্ধি।

সাধারণ গর্ভাবস্থার কোনো লক্ষণ; যেমন সকালবেলায় অসুস্থতা বোধ করা (Morning Sickness) বা শিশুর নড়াচড়া—কিছুই তিনি অনুভব করেননি। অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়াকেও তিনি স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন।

অবশেষে পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হলে তিনি সিস্ট অপসারণের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেখানে সিটি স্ক্যান করার আগে বাধ্যতামূলক গর্ভাবস্থা পরীক্ষায় ফল ‘পজিটিভ’ আসে।

হাসপাতালে আলট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই স্ক্যানে দেখা যায়, সুজের জরায়ু সম্পূর্ণ খালি। অথচ একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ তাঁর লিভারের কাছে পেটের এক কোণে অ্যামনিওটিক থ্যাকের ভেতরে বেড়ে উঠছে। ড. ওজিমেক জানান, ভ্রূণটি লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সরাসরি আক্রান্ত করেনি, বরং পেলভিসের পাশের দেয়ালে গেঁথে ছিল। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও লিভারের তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল।

গত ১৮ আগস্ট এক জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৮ পাউন্ড (৩.৬ কেজি) ওজনের রিউকে পৃথিবীতে আনা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় সুজের সেই বিশাল সিস্টটিও অপসারণ করা হয়। অত্যধিক রক্তক্ষরণ হলেও চিকিৎসকদের দক্ষতায় সুজ এবং তাঁর সন্তান দুজনেই সুস্থভাবে ফিরে আসেন।

সুজের স্বামী অ্যান্ড্রু লোপেজ বলেন, ‘বাইরে শান্ত থাকলেও আমি ভেতরে-ভেতরে প্রার্থনা করছিলাম। যেকোনো মুহূর্তে স্ত্রী বা সন্তানকে হারানোর ভয় আমাকে তাড়া করছিল।’

বর্তমানে রিউ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং প্রাণচঞ্চল। নিজের ১৮ বছর বয়সী বড় বোন কাইলার সঙ্গে তার খুনসুটি লেগেই থাকে। সামনেই রিউয়ের প্রথম বড়দিন। সুজ লোপেজ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি এখন অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করি। ঈশ্বর আমাদের জীবনের সেরা উপহারটি দিয়েছেন।’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই কেস এতই বিরল যে তাঁরা এটি একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অন্য নারীর ছবিতে লাইক দেওয়া বৈবাহিক বিশ্বাসভঙ্গের শামিল: তুরস্কের আদালত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

তুরস্কের একটি আদালত এক চাঞ্চল্যকর রায়ে জানিয়েছেন, স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীদের অনলাইন পোস্টে স্বামীর বারবার ‘লাইক’ দেওয়া বৈবাহিক বিশ্বাস নষ্ট করতে পারে এবং তা বিবাহবিচ্ছেদের ভিত্তি হিসেবে গণ্য হতে পারে। মধ্যতুরস্কের কায়সেরি শহরের একটি মামলায় এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এসেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম হাবারলারের বরাত দিয়ে হংকং থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইচবি নামে এক নারী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মৌখিক অপমান এবং আর্থিক ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগ আনেন। ওই নারী আরও উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর সময় কাটাতেন এবং সেখানে নিয়মিত অন্য নারীদের ছবিতে, এমনকি প্রলুব্ধকর ছবিতেও ‘লাইক’ দিতেন। মাঝেমধ্যে তিনি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করতেন।

এইচবি যুক্তি দেন, এই আচরণ তাঁর স্বামীর দাম্পত্য আনুগত্যের পরিপন্থী। তিনি বিবাহবিচ্ছেদের পাশাপাশি খোরপোশ ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেন। স্বামী এসবি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনিও পাল্টা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন এবং দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী তাঁর বাবাকে অপমান করেছেন এবং অতিরিক্ত ঈর্ষাপরায়ণ। স্ত্রীর এসব অভিযোগ তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

আদালত এই মামলায় স্বামীকেই বেশি দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন। তাঁকে প্রতি মাসে ৭৫০ লিরা বা ২০ মার্কিন ডলার খোরপোশ এবং ৮০ হাজার লিরা ২ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এসবি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দাবি করেন, এই পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু আদালত তাঁর সেই আবেদন নাকচ করে দেন।

বিচারকেরা জানান, অন্য নারীদের ছবিতে ওই ব্যক্তির ‘লাইক’ দেওয়ার বিষয়টি বৈবাহিক বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে। তাঁরা মন্তব্য করেন, ‘অনলাইনে এই আপাত নিরীহ মিথস্ক্রিয়াগুলো মূলত মানসিক নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে।’

তুর্কি আইনজীবী ইমামোগ্লু স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল যে অনলাইন কর্মকাণ্ড এখন বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে স্ক্রিনশট, মেসেজ এবং সব ধরনের ডিজিটাল কার্যক্রম উভয় পক্ষের দোষ নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া হবে। নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সময় বিষয়টি মাথায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।’

এই মামলা অনলাইনে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘যদি একটি লাইক আপনার সম্পর্ক ধ্বংস করতে পারে, তবে আপনাদের বিয়ে কখনোই মজবুত ছিল না।’ অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এখন পরিচয় লুকিয়ে লাইক দেওয়ার ফিচার চালু করার সময় এসেছে।’ তবে তৃতীয় একজন ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘যদি অনলাইনে প্রতিটি লাইক বা ভিউকে অবিশ্বস্ততা হিসেবে দেখা হয়, তবে মানুষ সারাক্ষণ ভয়ে থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হওয়া উচিত মতপ্রকাশের মুক্ত জায়গা।’

তুরস্কের আদালতে অদ্ভুত কারণে বিবাহবিচ্ছেদের রায় দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে এক ব্যক্তিকে তাঁর সাবেক স্ত্রীকে ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে ‘মোটু’ নামে সেভ করার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা অসম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগ্দত্তা ‘বেশি খায়’, বিয়ে ভেঙে দিয়ে ক্ষতিপূরণ চাইলেন প্রেমিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৫
প্রতীকী ছবি। ছবি: ফ্রিপিক
প্রতীকী ছবি। ছবি: ফ্রিপিক

এক চীনা ব্যক্তি তাঁর প্রাক্তন বাগ্দত্তার বিরুদ্ধে মামলা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ওই ব্যক্তির দাবি, তাঁর বাগ্‌দত্তা ‘খুব বেশি খাবার খেতেন।’ তাই সম্পর্কের পেছনে ব্যয় করা সব টাকা তাঁকে ফেরত দিতে হবে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জংলান নিউজের বরাত দিয়ে হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ৯ ডিসেম্বর এই যুগলকে নিয়ে আদালতের একটি শুনানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। হে পদবির ওই ব্যক্তি তাঁর বান্ধবী ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলায় হে দাবি করেন, তাঁর পরিবার কনেপক্ষকে অগ্রিম যৌতুক (ব্রাইড প্রাইস) হিসেবে যে ২০ হাজার ইউয়ান বা ২ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিল, তা তিনি ফেরত পেতে চান।

শুধু তা-ই নয়, সম্পর্কের সময় ওয়াংয়ের পেছনে খরচ হওয়া আরও ৩০ হাজার ইউয়ানও (৪ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার) দাবি করেন হে। এই খরচের তালিকায় তাঁর কেনা কালো টাইটস এবং অন্তর্বাসও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের একই গ্রামের বাসিন্দা হে এবং ওয়াং। এক ঘটকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় এবং পরে বাগ্‌দান সম্পন্ন হয়। বাগ্‌দানের পর তাঁরা উত্তর চীনের হেবেই প্রদেশে হের পরিবারের মালিকানাধীন একটি রেস্তোরাঁ চালাতে যান।

উল্লেখ্য, মালাতাং চীনের একটি জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড, যা মাংস, সবজি ও নুডলসের ঝাল ঝোলে তৈরি করা হয়। ওয়াং সেখানে ছয় মাস কাজ করেন। তবে হের অভিযোগ, ওয়াং ‘সহজ কাজগুলো’ করতেন। হেইলংজিয়াং টিভিকে হে বলেন, ‘সে প্রতিদিন আমাদের মালাতাং খেত। আমাদের বিক্রির জন্য যা থাকত, তা-ও তার খাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।’ তিনি আরও যোগ করেন, তাঁর পরিবারও ওয়াংয়ের ওপর অসন্তুষ্ট ছিল। কারণ, তাদের মনে হয়েছে মেয়েটি বদলে গেছে।

আদালতে হে সেসব জিনিসের তালিকা পেশ করেন, যা তিনি ওয়াংয়ের জন্য কিনেছিলেন। জবাবে ওয়াং বলেন, ‘ও বড্ড বেশি হিসাবি। আমি তো ওর বান্ধবী ছিলাম।’ আদালতে তিনি হেকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি আমাকে যে টাইটস আর অন্তর্বাস কিনে দিয়েছিলে, সেগুলো কি তুমি নিজেও উপভোগ করনি?’

আদালত ৩০ হাজার ইউয়ান ফেরত দেওয়ার দাবিটি খারিজ করে দেন। বিচারক জানান, এগুলো ব্যক্তিগত জিনিস, যা উভয় পক্ষকেই আবেগীয় তৃপ্তি দিয়েছে। তবে অগ্রিম দেওয়া ২০ হাজার ইউয়ান যৌতুকের অর্ধেক টাকা ওয়াংকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের এই রায়ে উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

চীনে যৌতুক বা ‘ব্রাইড প্রাইস’ একটি প্রাচীন প্রথা। বিয়ের সময় বরের পরিবার কনের পরিবারকে উপহার হিসেবে এই টাকা দেয়, যা মূলত মেয়েটিকে পরিবারে স্বাগত জানানোর একটি আন্তরিক প্রথা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রথা নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ একে সেকেলে এবং নারীকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করার নামান্তর মনে করেন। আবার অনেকে একে বিয়ের পর নারীর ত্যাগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেখেন।

২০২১ সালে কার্যকর হওয়া চীনের সিভিল কোড অনুযায়ী, যদি বিয়ে সম্পন্ন না হয় কিংবা বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস না করেন, তবে যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি আদালত সমর্থন করতে পারেন।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ইন্টারনেটে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ও যদি এতই হিসাবি হয়, তবে কেন মেয়েটিকে বেতন দিল না?’ অন্য একজন লিখেছেন, ‘ওর বউ নয়, একজন আয়া দরকার ছিল।’ তৃতীয় আরেকজন লিখেছেন, ‘মেয়েটিকে অভিনন্দন যে সে এমন এক সংকীর্ণমনা মানুষের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

সকালে দোকানের শাটার খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশল্যান্ডের একটি সরকারি মদের দোকানের কর্মীদের। দোকানের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত ভাঙা কাচের টুকরা। মেঝে ভেসে গেছে দামি বিলেতি মদে! প্রাথমিকভাবে সবাই বড় কোনো চুরির আশঙ্কা করলেও কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি; বরং দোকানের বাথরুমের কমোড আর ডাস্টবিনের চিপায় উদ্ধার হলো আসল ‘অপরাধী’। সেখানে অঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল এক বুনো র‍্যাকুন!

ঘটনার সূত্রপাত হয় থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে। দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে এই ‘মুখোশধারী ডাকাত’ সিলিংয়ের টাইলস ভেঙে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পশুপালন দপ্তরের কর্মকর্তা সামান্থা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ভেতরে ঢুকেই র‍্যাকুনটি পুরোদস্তুর তাণ্ডব শুরু করে। তবে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল নিচের দিকের তাকগুলোতে সাজিয়ে রাখা স্কচ হুইস্কির বোতলগুলো। বেশ কয়েকটি বোতল ভেঙে, প্রচুর পরিমাণে স্কচ সাবাড় করে র‍্যাকুনটি মাতাল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেশার ঘোরে সে বাথরুমে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জ্ঞান হারায়।

খবর পেয়ে সামান্থা মার্টিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে র‍্যাকুনটিকে উদ্ধার করেন। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘পশু সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার জীবনে এটা আর দশটা দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন!’

পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাকুনটি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিল যে সেটিকে ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ হ্যানোভার কাউন্টি অ্যানিমেল প্রটেকশন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশি কাস্টডিতে নয়, বরং তার নেশা কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা।

বেশ কয়েক ঘণ্টা একটানা ঘুমের পর যখন র‍্যাকুনটি হ্যাংওভার কাটে। শারীরিক কোনো চোট পাওয়া যায়নি। এটি নিশ্চিত হয়েই তাকে সসম্মানে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির তাণ্ডব দেখা গেলেও র‍্যাকুনটি ঠিক কতটা স্কচ হজম করেছিল, তা অজানাই রয়ে গেছে। দোকানের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মজার পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, র‍্যাকুনটিকে নিরাপদে ‘সোবার রাইড’, অর্থাৎ নেশামুক্ত অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত