মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিক ঘটনা সম্পর্কে মানুষের ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন যিনি, তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন। পৃথিবীতে তাঁর মতো ‘জিনিয়াস’ দ্বিতীয় আর আসবেন কি না সন্দেহ। অনেকে মনে করেন, আইনস্টাইন যা ভেবেছেন, তাঁর মস্তিষ্কের মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তা এক কথায় মানুষের পক্ষে অকল্পনীয়। তিনি আসলে ‘জিনিয়াস’ হয়েই জন্মেছিলেন। তাঁর মতো সৌভাগ্যবান আর কেউ পৃথিবীতে নেই!
আসলে বাস্তবতা হলো, আইনস্টাইন আকাশ থেকে পড়েননি, ভিনগ্রহের কোনো অতি বুদ্ধিমান প্রাণীর মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মাননি। এত অর্জন ও বৈপ্লবিক ভাবনার দুয়ার খুলে মানুষকে মহাবিশ্ব দেখার সুযোগ করে দেওয়ার পেছনে রয়েছে আইনস্টাইনের অবিশ্বাস্য অধ্যবসায় আর পরিশ্রম।
আইনস্টাইনের সহকর্মীদের সবাই জানতেন, তিনি ছিলেন বইয়ের পোকা। তাঁর একটি বৃহৎ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল। গোগ্রাসে গিলতেন সেসব বই। তিনি স্বীকারও করেছেন, কিছু বই তাঁর চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর পছন্দের বইগুলোর বেশিরভাগই ছিল দর্শন ও প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্পর্কিত।
পিটার এল গ্যালিসন, জেরাল্ড হোলটন এবং সিলভান এস শোয়েবার সম্পাদিত ‘আইনস্টাইন ফর দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ বইয়ে আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরির একটা বর্ণনা পাওয়া যায়। লেখকেরা বলেছেন, সমসাময়িক প্রভাবশালী সব বইয়ের বিশাল সংগ্রহ ছিল আইনস্টাইনের। এর মধ্যে বোল্টজম্যান, বুচনার, ফ্রেডরিক হেবেল, হেইন, হেলমহোল্টজ এবং ভন হাম্বোল্টের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। আর দার্শনিকদের মধ্যে ছিলেন ইমানুয়েল কান্ট, গটহোল্ড লেসিং, নিটশে এবং শোপেনহাওয়ারের মতো লোকদের বই।
প্রচুর পড়তেন আইনস্টাইন। কিন্তু তাঁর প্রিয় বই কোনটি? আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মতো ঘোর লাগা ধারণার জন্ম যার হাতে, সেই ব্যক্তির প্রিয় বই কী হতে পারে সেই উত্তর দেওয়া সম্ভবত খুব সহজ নয়। এরপরও তাঁর বন্ধু, সহকর্মী, জীবনীকারদের মাধ্যমে আমরা যতটুকু জানতে পারি সেখান থেকে কয়েকটি বইয়ের একটি তালিকা করা যেতে পারে:
আইনস্টাইন নিজেই স্বীকার করেছেন, তাঁর বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বিকাশ আর্নেস্ট মাকের দ্বারা প্রভাবিত। মাক উনিশ শতকের একজন অস্ট্রিয়ান দার্শনিক এবং পদার্থবিদ। মাক তাঁর ‘অ্যানালাইসিস অব সেনসেশন’ বা ‘সংবেদন বিশ্লেষণ’ বইতে মানুষের ইন্দ্রিয়ের জটিল প্রকৃতি এবং অহমের পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে লিখেছেন।
মাকের কাজে নিউটনের স্থান ও কাল তত্ত্বের সমালোচনাও রয়েছে। এ সম্পর্কিত আইনস্টাইনের নিজস্ব ধারণার অনুপ্রেরণার বড় উৎস ছিলেন এই ব্যক্তি। প্রকৃতপক্ষে, মাকের ধারণার ভিত্তিতে তৈরি একটি হাইপোথিসিস ‘মাকের নীতি’-এর মতে, জড়তা দুটি দেহের মধ্যে একটি মিথস্ক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হয়, আইনস্টাইন এই ধারণাকে কাজের কথা বলেই মনে করতেন।
১৯১৫ সালের একটি চিঠিতে আইনস্টাইন মরিৎজ শ্লিককে লিখেছিলেন, অনেক লেখক তাঁর আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বিকাশে কীভাবে প্রভাবিত করেছে:
‘আপনি সঠিকভাবেই বুঝেছেন, চিন্তার এই প্রবণতা (পজিটিভিজম বা দৃষ্টবাদ/প্রত্যক্ষবাদ) আমার তত্ত্ব বিকাশ প্রচেষ্টার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে ই. মাক এবং এখনো আরও অনেক বেশি করে হিউম, বোঝাপড়ার বিষয়ে যার লেখালেখি আমি আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কারের কিছুদিন আগে উৎসাহ এবং মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। এই সব দার্শনিক অধ্যয়নগুলো ছাড়া সম্ভবত আমি আপেক্ষিকতা নিয়ে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারতাম না।’
আর্নেস্ট মাক এবং ডেভিড হিউমের কাজ তাঁর চিন্তাভাবনাকে অনুপ্রাণিত, প্রভাবিত করেছিল, সে কথা চিঠিতে উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে আইনস্টাইন মাকের কাজ এবং বিশেষ করে প্রত্যক্ষবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই মতবাদ একটি যুক্তি-কেন্দ্রিক দর্শন যা ধর্মতত্ত্ব এবং অধিবিদ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রতিটি যৌক্তিক দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করা সম্ভব এবং এই ‘প্রত্যক্ষ’ জ্ঞান প্রাকৃতিক ঘটনা এবং তাদের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে।
লিওপোল্ড ইনফেল্ড, যিনি আইনস্টাইনের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, তিনি তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য কোয়েস্ট’-এ লিখেছেন, আইনস্টাইন সারভান্তেসের বিখ্যাত ক্ল্যাসিক ডন কিহোতের গল্প দারুণ পছন্দ করতেন। তিনি লিখেছেন:
‘আইনস্টাইন বিছানায় শুয়ে আছেন, শরীরে কোনো কাপড় নেই। পাশের টেবিলেই পড়ে আছে ডন কিহোতে। এই বইটি আইনস্টাইন সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতেন। মূলত মস্তিষ্ককে একটু বিরতি দিতে এই বই তিনি পড়তেন...।’
বারুচ স্পিনোজা ছিলেন সতেরো শতকের একজন ডাচ ইহুদি দার্শনিক। তাঁর লেখালেখি ইউরোপীয় আলোকায়ন এবং সমসাময়িক বাইবেলের সমালোচনার ভিত্তি তৈরি করেছিল। স্পিনোজার ‘এথিকস’ হলো পশ্চিমা চিন্তাধারার মৌলিক কাজগুলোর অন্যতম। সামগ্রিক বিশ্বতত্ত্ব এবং বাস্তবতার একটি চিত্র বর্ণনার পাশাপাশি একটি নৈতিক জীবনযাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। স্পিনোজার বইটিতে ঈশ্বরকে ‘প্রাকৃতিক নিয়ম’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, বলা হয়েছে, মানুষই ঈশ্বরের নানা রূপ। স্পিনোজার ভাবনায়, যা কিছু ঘটে তা ঈশ্বরের প্রকৃতিকে অনুসরণ করে।
স্পিনোজার ভাষ্য মতে, ঈশ্বরই হচ্ছে মহাবিশ্বের বা প্রকৃতির ‘একমাত্র’ সাবস্ট্যান্স। তিনি লিখেছেন: ‘যা কিছু অস্তিত্বশীল, তা ঈশ্বরের মধ্যেই, ঈশ্বরের ধারণা ছাড়া অন্য কোনো ধারণাকেই গ্রহণ করা সম্ভব নয় এবং গ্রহণ করা হবেও না।’ কিন্তু আজও দার্শনিকেরা এই বাক্যের অর্থ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। সাবস্ট্যান্স বা অন্তঃসার বলতে অন্তর্নিহিত সারবস্তুকে বোঝায়। স্পিনোজার ভেবেছিলেন সবকিছুর সারবস্তু একটাই। তাঁর মতে: “‘সাবস্ট্যান্স’ বলতে আমি বুঝি যা নিজেতেই ব্যাপ্ত এবং যার ধারণা স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্যভাবে বললে, যা থেকে অন্য কোনো ধারণার সাহায্য ছাড়াই একটি ধারণার জন্ম হতে পারে।”
স্পিনোজার এই ‘প্যান্থেইজিম’ বা সর্বেশ্বরবাদ অর্থাৎ ঈশ্বর ও প্রকৃতিকে অভেদ কল্পনা ছিল বিশ্ব সম্পর্কে আইনস্টাইনের নিজস্ব আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। যেমনটি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কি না—এর উত্তরে তিনি রাব্বি হারবার্ট এস গোল্ডস্টেইনকে বলেছিলেন:
‘আমি স্পিনোজার ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, যিনি নিজেকে সমস্ত কিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রকাশ করেন। এমন একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না যিনি ভাগ্য এবং মানবজাতির কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তিত।’
আইনস্টাইনের স্বীকারোক্তি অনুসারে, আঠারো শতকের স্কটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউমের একটি বই, যেটি বিজ্ঞান এবং মানব প্রকৃতির মধ্যে যোগসূত্র বোঝার একটি প্রচেষ্টা, সেটি তাঁর ওপর দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। বৈজ্ঞানিকভাবে নৈতিক দর্শনের বর্ণনায় হিউমের কৃতিত্ব আইনস্টাইনকে অনুপ্রাণিত করেছিল। বইটির মূল আহ্বান—আধিবিদ্যক অনুমান থেকে পর্যবেক্ষণ যোগ্য তথ্যের দিকে দৃষ্টি ফেরানো। হিউমের মতে এটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতাও ছিল— শুধু পর্যবেক্ষণ প্রকৃতির নিয়মকে উপলব্ধি করাতে পারে না। এই অন্তর্দৃষ্টি আইনস্টাইনের কাউন্টার-ইনটুইটিভ (বিরোধমূলক) ধারণাগুলো বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
আইনস্টাইনের লাইব্রেরিতে বৃহৎ সংগ্রহের সবচেয়ে বড় অংশটি ছিল জার্মান লেখক জোহান ফন গ্যেটে। গ্যেটের ৩৬ ভলিউমের একটি সংকলন ছিল আইনস্টাইনের সংগ্রহে। এ ছাড়া এর পাশাপাশি ১২টি খণ্ডের একটি সংগ্রহ এবং দুই খণ্ডের ‘অপটিকস’ (গ্যেটে এবং শিলারের মধ্যে চিঠি বিনিময়) এবং ‘ফাউস্ত’-এর আরেকটি ভলিউম।
আইনস্টাইন তাঁর ঘরে গ্যেটের একটি আবক্ষ মূর্তি রেখেছিলেন। তাঁর জার্মান-ভাষী সহকারীদের কাছে প্রায়ই এই লেখকের উদ্ধৃতি দিতেন তিনি। ১৯৩২ সালে লিওপোল্ড ক্যাসপারকে লেখা একটি চিঠিতে আইনস্টাইন লিখেছিলেন, ‘গ্যেটে এমন একজন কবি যার সমকক্ষ কেউ নেই। সর্বকালের সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী ব্যক্তিদের একজন তিনি। এমনকি তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ ধারণাগুলোও উচ্চ মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য এবং তাঁর ত্রুটিগুলোও যে কোনো মহান ব্যক্তিরই মতো।’
মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিক ঘটনা সম্পর্কে মানুষের ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন যিনি, তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন। পৃথিবীতে তাঁর মতো ‘জিনিয়াস’ দ্বিতীয় আর আসবেন কি না সন্দেহ। অনেকে মনে করেন, আইনস্টাইন যা ভেবেছেন, তাঁর মস্তিষ্কের মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তা এক কথায় মানুষের পক্ষে অকল্পনীয়। তিনি আসলে ‘জিনিয়াস’ হয়েই জন্মেছিলেন। তাঁর মতো সৌভাগ্যবান আর কেউ পৃথিবীতে নেই!
আসলে বাস্তবতা হলো, আইনস্টাইন আকাশ থেকে পড়েননি, ভিনগ্রহের কোনো অতি বুদ্ধিমান প্রাণীর মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মাননি। এত অর্জন ও বৈপ্লবিক ভাবনার দুয়ার খুলে মানুষকে মহাবিশ্ব দেখার সুযোগ করে দেওয়ার পেছনে রয়েছে আইনস্টাইনের অবিশ্বাস্য অধ্যবসায় আর পরিশ্রম।
আইনস্টাইনের সহকর্মীদের সবাই জানতেন, তিনি ছিলেন বইয়ের পোকা। তাঁর একটি বৃহৎ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল। গোগ্রাসে গিলতেন সেসব বই। তিনি স্বীকারও করেছেন, কিছু বই তাঁর চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর পছন্দের বইগুলোর বেশিরভাগই ছিল দর্শন ও প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্পর্কিত।
পিটার এল গ্যালিসন, জেরাল্ড হোলটন এবং সিলভান এস শোয়েবার সম্পাদিত ‘আইনস্টাইন ফর দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ বইয়ে আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরির একটা বর্ণনা পাওয়া যায়। লেখকেরা বলেছেন, সমসাময়িক প্রভাবশালী সব বইয়ের বিশাল সংগ্রহ ছিল আইনস্টাইনের। এর মধ্যে বোল্টজম্যান, বুচনার, ফ্রেডরিক হেবেল, হেইন, হেলমহোল্টজ এবং ভন হাম্বোল্টের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। আর দার্শনিকদের মধ্যে ছিলেন ইমানুয়েল কান্ট, গটহোল্ড লেসিং, নিটশে এবং শোপেনহাওয়ারের মতো লোকদের বই।
প্রচুর পড়তেন আইনস্টাইন। কিন্তু তাঁর প্রিয় বই কোনটি? আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মতো ঘোর লাগা ধারণার জন্ম যার হাতে, সেই ব্যক্তির প্রিয় বই কী হতে পারে সেই উত্তর দেওয়া সম্ভবত খুব সহজ নয়। এরপরও তাঁর বন্ধু, সহকর্মী, জীবনীকারদের মাধ্যমে আমরা যতটুকু জানতে পারি সেখান থেকে কয়েকটি বইয়ের একটি তালিকা করা যেতে পারে:
আইনস্টাইন নিজেই স্বীকার করেছেন, তাঁর বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বিকাশ আর্নেস্ট মাকের দ্বারা প্রভাবিত। মাক উনিশ শতকের একজন অস্ট্রিয়ান দার্শনিক এবং পদার্থবিদ। মাক তাঁর ‘অ্যানালাইসিস অব সেনসেশন’ বা ‘সংবেদন বিশ্লেষণ’ বইতে মানুষের ইন্দ্রিয়ের জটিল প্রকৃতি এবং অহমের পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে লিখেছেন।
মাকের কাজে নিউটনের স্থান ও কাল তত্ত্বের সমালোচনাও রয়েছে। এ সম্পর্কিত আইনস্টাইনের নিজস্ব ধারণার অনুপ্রেরণার বড় উৎস ছিলেন এই ব্যক্তি। প্রকৃতপক্ষে, মাকের ধারণার ভিত্তিতে তৈরি একটি হাইপোথিসিস ‘মাকের নীতি’-এর মতে, জড়তা দুটি দেহের মধ্যে একটি মিথস্ক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হয়, আইনস্টাইন এই ধারণাকে কাজের কথা বলেই মনে করতেন।
১৯১৫ সালের একটি চিঠিতে আইনস্টাইন মরিৎজ শ্লিককে লিখেছিলেন, অনেক লেখক তাঁর আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বিকাশে কীভাবে প্রভাবিত করেছে:
‘আপনি সঠিকভাবেই বুঝেছেন, চিন্তার এই প্রবণতা (পজিটিভিজম বা দৃষ্টবাদ/প্রত্যক্ষবাদ) আমার তত্ত্ব বিকাশ প্রচেষ্টার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে ই. মাক এবং এখনো আরও অনেক বেশি করে হিউম, বোঝাপড়ার বিষয়ে যার লেখালেখি আমি আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কারের কিছুদিন আগে উৎসাহ এবং মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। এই সব দার্শনিক অধ্যয়নগুলো ছাড়া সম্ভবত আমি আপেক্ষিকতা নিয়ে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারতাম না।’
আর্নেস্ট মাক এবং ডেভিড হিউমের কাজ তাঁর চিন্তাভাবনাকে অনুপ্রাণিত, প্রভাবিত করেছিল, সে কথা চিঠিতে উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে আইনস্টাইন মাকের কাজ এবং বিশেষ করে প্রত্যক্ষবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই মতবাদ একটি যুক্তি-কেন্দ্রিক দর্শন যা ধর্মতত্ত্ব এবং অধিবিদ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রতিটি যৌক্তিক দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করা সম্ভব এবং এই ‘প্রত্যক্ষ’ জ্ঞান প্রাকৃতিক ঘটনা এবং তাদের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে।
লিওপোল্ড ইনফেল্ড, যিনি আইনস্টাইনের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, তিনি তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য কোয়েস্ট’-এ লিখেছেন, আইনস্টাইন সারভান্তেসের বিখ্যাত ক্ল্যাসিক ডন কিহোতের গল্প দারুণ পছন্দ করতেন। তিনি লিখেছেন:
‘আইনস্টাইন বিছানায় শুয়ে আছেন, শরীরে কোনো কাপড় নেই। পাশের টেবিলেই পড়ে আছে ডন কিহোতে। এই বইটি আইনস্টাইন সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতেন। মূলত মস্তিষ্ককে একটু বিরতি দিতে এই বই তিনি পড়তেন...।’
বারুচ স্পিনোজা ছিলেন সতেরো শতকের একজন ডাচ ইহুদি দার্শনিক। তাঁর লেখালেখি ইউরোপীয় আলোকায়ন এবং সমসাময়িক বাইবেলের সমালোচনার ভিত্তি তৈরি করেছিল। স্পিনোজার ‘এথিকস’ হলো পশ্চিমা চিন্তাধারার মৌলিক কাজগুলোর অন্যতম। সামগ্রিক বিশ্বতত্ত্ব এবং বাস্তবতার একটি চিত্র বর্ণনার পাশাপাশি একটি নৈতিক জীবনযাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। স্পিনোজার বইটিতে ঈশ্বরকে ‘প্রাকৃতিক নিয়ম’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, বলা হয়েছে, মানুষই ঈশ্বরের নানা রূপ। স্পিনোজার ভাবনায়, যা কিছু ঘটে তা ঈশ্বরের প্রকৃতিকে অনুসরণ করে।
স্পিনোজার ভাষ্য মতে, ঈশ্বরই হচ্ছে মহাবিশ্বের বা প্রকৃতির ‘একমাত্র’ সাবস্ট্যান্স। তিনি লিখেছেন: ‘যা কিছু অস্তিত্বশীল, তা ঈশ্বরের মধ্যেই, ঈশ্বরের ধারণা ছাড়া অন্য কোনো ধারণাকেই গ্রহণ করা সম্ভব নয় এবং গ্রহণ করা হবেও না।’ কিন্তু আজও দার্শনিকেরা এই বাক্যের অর্থ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। সাবস্ট্যান্স বা অন্তঃসার বলতে অন্তর্নিহিত সারবস্তুকে বোঝায়। স্পিনোজার ভেবেছিলেন সবকিছুর সারবস্তু একটাই। তাঁর মতে: “‘সাবস্ট্যান্স’ বলতে আমি বুঝি যা নিজেতেই ব্যাপ্ত এবং যার ধারণা স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্যভাবে বললে, যা থেকে অন্য কোনো ধারণার সাহায্য ছাড়াই একটি ধারণার জন্ম হতে পারে।”
স্পিনোজার এই ‘প্যান্থেইজিম’ বা সর্বেশ্বরবাদ অর্থাৎ ঈশ্বর ও প্রকৃতিকে অভেদ কল্পনা ছিল বিশ্ব সম্পর্কে আইনস্টাইনের নিজস্ব আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। যেমনটি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কি না—এর উত্তরে তিনি রাব্বি হারবার্ট এস গোল্ডস্টেইনকে বলেছিলেন:
‘আমি স্পিনোজার ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, যিনি নিজেকে সমস্ত কিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রকাশ করেন। এমন একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না যিনি ভাগ্য এবং মানবজাতির কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তিত।’
আইনস্টাইনের স্বীকারোক্তি অনুসারে, আঠারো শতকের স্কটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউমের একটি বই, যেটি বিজ্ঞান এবং মানব প্রকৃতির মধ্যে যোগসূত্র বোঝার একটি প্রচেষ্টা, সেটি তাঁর ওপর দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। বৈজ্ঞানিকভাবে নৈতিক দর্শনের বর্ণনায় হিউমের কৃতিত্ব আইনস্টাইনকে অনুপ্রাণিত করেছিল। বইটির মূল আহ্বান—আধিবিদ্যক অনুমান থেকে পর্যবেক্ষণ যোগ্য তথ্যের দিকে দৃষ্টি ফেরানো। হিউমের মতে এটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতাও ছিল— শুধু পর্যবেক্ষণ প্রকৃতির নিয়মকে উপলব্ধি করাতে পারে না। এই অন্তর্দৃষ্টি আইনস্টাইনের কাউন্টার-ইনটুইটিভ (বিরোধমূলক) ধারণাগুলো বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
আইনস্টাইনের লাইব্রেরিতে বৃহৎ সংগ্রহের সবচেয়ে বড় অংশটি ছিল জার্মান লেখক জোহান ফন গ্যেটে। গ্যেটের ৩৬ ভলিউমের একটি সংকলন ছিল আইনস্টাইনের সংগ্রহে। এ ছাড়া এর পাশাপাশি ১২টি খণ্ডের একটি সংগ্রহ এবং দুই খণ্ডের ‘অপটিকস’ (গ্যেটে এবং শিলারের মধ্যে চিঠি বিনিময়) এবং ‘ফাউস্ত’-এর আরেকটি ভলিউম।
আইনস্টাইন তাঁর ঘরে গ্যেটের একটি আবক্ষ মূর্তি রেখেছিলেন। তাঁর জার্মান-ভাষী সহকারীদের কাছে প্রায়ই এই লেখকের উদ্ধৃতি দিতেন তিনি। ১৯৩২ সালে লিওপোল্ড ক্যাসপারকে লেখা একটি চিঠিতে আইনস্টাইন লিখেছিলেন, ‘গ্যেটে এমন একজন কবি যার সমকক্ষ কেউ নেই। সর্বকালের সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী ব্যক্তিদের একজন তিনি। এমনকি তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ ধারণাগুলোও উচ্চ মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য এবং তাঁর ত্রুটিগুলোও যে কোনো মহান ব্যক্তিরই মতো।’
সময়টা ১৮৫৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের সকাল। এক সুসজ্জিত ব্যক্তি সান ফ্রান্সিসকোর ‘দ্য সান ফ্রান্সিসকো ইভনিং বুলেটিনের’ কার্যালয়ে প্রবেশ করে একটি ঘোষণাপত্র জমা দেন, যেখানে নিজেকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সম্রাট’ বলে ঘোষণা করেন। ওই ব্যক্তি ছিলেন জোশুয়া নর্টন।
৮ দিন আগেআজ ফোর টুয়েন্টি (৪২০) দিবস। সংখ্যাটা পড়েই ভাবছেন প্রতারকদের দিবস আজ? না না। এই ফোর টুয়েন্টি সেই ফোর টুয়েন্টি নয়। পশ্চিমা বিশ্বে এই সংখ্যা গাঁজা সংস্কৃতির কোড ভাষা।
১০ দিন আগেসাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপ ও এশিয়ায় বিপুল পরিমাণে পাচার হচ্ছে বড় আকারের লাখ লাখ পিঁপড়া। ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোতে এসব পিঁপড়া পোষা প্রাণী হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। আফ্রিকার দেশ কেনিয়া থেকে সম্প্রতি হাজার হাজার জীবন্ত পিঁপড়া পাচারকালে ৪ চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে।
১৫ দিন আগেগত বছর একটি রাতের অনুষ্ঠানে এক ভ্লগারের ক্যামেরায় অপ্রত্যাশিত এবং অশালীন মন্তব্য করে রাতারাতি ভাইরাল হন হেইলি ওয়েলচ। দ্রুতই ‘হক তুয়াহ’ নামে খ্যাতি পান তিনি। সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন এই তরুণী। তিনি জানিয়েছেন, নিজের নামে চালু করা বিতর্কিত ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে...
১৬ দিন আগে