Ajker Patrika

জিও লোকেশন তথ্য, ভিডিও যাচাইয়ের অনন্য এক কৌশল

রিদওয়ানুল ইসলাম, ঢাকা
জিও লোকেশন  তথ্য, ভিডিও যাচাইয়ের অনন্য এক কৌশল

২০১৮ সালের জুলাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভয়ংকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, নিরীহ দুই আফ্রিকান নারী ও তাঁদের দুই সন্তান ক্যামেরুনের সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তির হাতে মর্মান্তিকভাবে খুন হন। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরই দেশটির সরকার ঘটনাটিকে ‘ভুয়া সংবাদ’ বলে দাবি করে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির আফ্রিকা আই মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গ্রুপ বেলিং ক্যাট নেটওয়ার্ককে সঙ্গে নিয়ে ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে। 

ঘটনার স্থান শনাক্তে তারা ব্যবহার করে স্যাটেলাইট ছবি, ভিডিওতে থাকা বিভিন্ন স্থাপনার অবস্থান ও ছায়া বিশ্লেষণসহ নানা কৌশল। বিবিসি আফ্রিকা আই পুরো অনুসন্ধানটি নিয়ে ‘অ্যানাটমি অব এ কিলিং’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রকাশ করে। এ অনুসন্ধানে ব্যবহৃত

একটি কৌশল জিও লোকেশন। 
সহজ কথায়, জিও লোকেশন হচ্ছে কোনো ছবি বা ভিডিও থেকে সূত্র খুঁজে বের করে ওই ছবি বা ভিডিও কোথায় ধারণ করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া। বর্তমান তথ্যের অবাধ প্রবাহে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া নানা ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে ফ্যাক্টচেকার ও সাংবাদিকেরা এই কৌশল ব্যবহার করেন।

জিও লোকেশন কীভাবে কাজ করে
জিও লোকেশন ব্যবহারের কৌশলের মধ্যে আছে ভিডিও বা ছবিতে থাকা স্থাপনার মিল খোঁজা, সড়ক, দোকান, বাড়িঘর বা দালানকোঠার নির্মাণশৈলী, এসব স্থাপনায় থাকা নামফলক, স্ট্রিট সাইন, ভিডিওতে থাকা মানুষের ভাষা, যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর লক্ষ করা ইত্যাদি। এসব থেকে পাওয়া সূত্রকে পুঁজি করে ফ্যাক্টচেকাররা গুগল ম্যাপ, বিং ম্যাপ, ম্যাপিলারি, ইয়ানডেক্স, ওপেন স্ট্রিট ম্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মে পাওয়া স্যাটেলাইট মানচিত্র কিংবা রাস্তার সূত্র ধরে খুঁজে বের করেন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার স্থান। তবে সাধারণত গুগল ম্যাপের ব্যবহারই বেশি হয় এতে। একটি উদাহরণ দিয়ে দেখা যাক।

বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে আগস্টের শুরুতে, মাথায় গুলিবিদ্ধ এক যুবককে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাওয়ার পাঁচ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি ভাইরাল হলেও এর সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য তখন পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ভিডিওটি কবে ধারণ করা কিংবা কোন স্থানের তা নিয়ে শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা। পাঁচ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে বনশ্রী আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুলের ভর্তি কার্যক্রমের একটি ব্যানার দেখা যায়। ব্যানারটিতে লেখা ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি চলছে। এইটুকু তথ্য থেকে ধারণা করা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের। ভিডিওটি থেকেই পাওয়া যায় ঘটনাটি সংঘটনের জায়গার খোঁজ। 

ভিডিওটিতে মাদ্রাসা মারকাজুল মুমিনীন নামে আরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যানার পাওয়া যায়। সঙ্গে দেখা যায় ব্রাজিলের পতাকার আদলে রং করা টিনের তৈরি ঘর। মাদ্রাসাটির নাম ধরে গুগল ম্যাপে স্ট্রিট ভিউ অপশন দিয়ে খুঁজতেই পাওয়া যায় প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর বনশ্রীর জি ব্লকে অবস্থিত। গুগল ম্যাপে মাদ্রাসার ব্যানারটির পাশেই রয়েছে ব্রাজিলের পতাকার আদলে রং করা টিনের সেই স্থাপনা। অর্থাৎ ঘটনাটির স্থানও নিশ্চিত হওয়া যায় ভিডিওটি থেকেই।

ঝুঁকি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
জিও লোকেশন অনুসন্ধানে গুগল ম্যাপ ব্যবহারে কিছু ঝুঁকি রয়েছে। আজ যে জায়গা ফাঁকা, কিছুদিন পরে সেখানে কোনো স্থাপনা গড়ে উঠতে পারে। ফলে গুগল ম্যাপে ওই স্থানের হালনাগাদ ছবি, ম্যাপ না থাকলে জিও লোকেশন ব্যবহার করে স্থান সম্পর্কে তথ্য উদ্ধার করা কিছুটা কঠিন। যেমন, গত ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় ভাইরাল হয় একটি ভিডিও। তাতে পুলিশের পোশাক পরা কয়েকজন কয়েকটি মরদেহ ভ্যান গাড়িতে তুলছে। তথ্য, ছবি, ভিডিও যাচাই ও বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করা একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জানায়, ঘটনাস্থলটি আশুলিয়া থানার নিকটবর্তী একটি গলি। কিন্তু গুগল ম্যাপে ওই গলির হালনাগাদকৃত ছবি (সবশেষ হালনাগাদ, ২০২১ সালে) না থাকায় ম্যাপে জায়গাটির বর্তমান অবস্থার সঙ্গে পুরোপুরি মিল পাওয়া যায়নি। জিও লোকেশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখা জরুরি বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

র‍্যাবকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার ঠেকাতে হচ্ছে নতুন আইন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত