Ajker Patrika

মেটাভার্স ও ডিজিটাল জগৎ: ২০২৫ সালে নতুন দিগন্ত এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন

পল্লব শাহরিয়ার
মেটাভার্স ও ডিজিটাল জগৎ: ২০২৫ সালে নতুন 
দিগন্ত এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন

দ্রুত বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। প্রযুক্তির হাত ধরে আমাদের প্রতিদিনের জীবন যেন এক নতুন পথ খুঁজে পাচ্ছে। যেসব ধারণা একসময় কল্পনার জগতে ছিল—ঘরে বসে অফিস, বই না খুলেই পড়াশোনা, দোকানে না গিয়েও পণ্য ঘুরে দেখা, দূরে থেকেও মানুষের সঙ্গে একই জায়গায় থাকার অনুভূতি, সেগুলো এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তব। ২০২৫ সালে এসে এই পরিবর্তনগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভার্চুয়াল মহাবিশ্ব আর ডিজিটাল জগৎ এখন শুধু প্রযুক্তির খেলা নয়, আমাদের অভ্যাস, স্বপ্ন, কাজ, সম্পর্ক—সবকিছুর ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে।

এই নতুন সময়ে আমরা একদিকে সুবিধা আর স্বাধীনতা পাচ্ছি, অন্যদিকে শিখছি নতুন নিয়ম, নতুন দায়িত্ব। মানুষ যখন ভবিষ্যতের কথা ভাবে, তখন অনেকেই ভেবে নেয়, এসব যেন খুব দূরের গল্প। কিন্তু সত্য হলো, ভবিষ্যৎ এখন আমাদের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। তার ছায়া আমরা প্রতিদিন দেখছি, অনুভব করছি। আর সেই আলোছায়া মিলেই তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যতের ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল জীবনের নতুন ছবি।

অফিস যেন ঘরেই

প্রথাগত অফিস ব্যবস্থা অনেকটাই বদলে গেছে। করোনা মহামারির সময় অফিসে না গিয়েও কাজের ধারা শুরু হয়েছিল, মেটাভার্স তাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে গেছে। কর্মীরা এখন শারীরিকভাবে অফিসে না গিয়েও, তাঁদের ডিজিটাল অবয়ব বা প্রতিরূপ (অ্যাভাটার) ব্যবহার করে ভার্চুয়াল কর্মক্ষেত্রে যোগদান করছেন। এই ভার্চুয়াল অফিসগুলোতে বাস্তব অফিসের মতোই সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা, সভা করা এবং দলগতভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর ফলে ভৌগোলিক দূরত্ব কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না এবং কাজের দক্ষতাও বেড়েছে। বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এখন ভার্চুয়াল সভা আয়োজনকে সাধারণ অভ্যাসে পরিণত করেছে।

পড়াশোনায় নতুন মজা

শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার্থীরা এখন আর শুধু বই বা ফ্ল্যাট স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে শেখে না। ভার্চুয়াল শ্রেণিকক্ষগুলো বাস্তব পরিবেশের মতো করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) পরিবেশে বিষয়বস্তু শিখতে পারছে। যেমন, জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা মানবদেহের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো বাস্তবে দেখার মতো করে পরীক্ষা করতে পারছে অথবা ইতিহাসের শিক্ষার্থীরা প্রাচীন রোমে ভ্রমণ করে সেখানকার জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে পারছে। এ ধরনের নিমগ্ন (ইমারসিভ) অভিজ্ঞতা শেখার প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এ ছাড়া, বিপজ্জনক কাজ বা জটিল যন্ত্রাংশ পরিচালনার প্রশিক্ষণে মেটাভার্স ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে বাস্তব ঝুঁকি ছাড়াই প্রশিক্ষণ সম্ভব।

ভার্চুয়াল বাজারের ভিড়

আগে অনলাইন কেনাকাটা ছিল ছবি ও লেখা দিয়ে সীমাবদ্ধ। এখন ক্রেতা ভার্চুয়াল দোকানে হেঁটে ঘুরে দেখছেন, পণ্য হাতে নেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন। এতে বিশেষ করে পোশাক, আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জার জিনিস বিক্রি করার ধরন বদলেছে। এসএমই বা মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরাও নিজেদের ভার্চুয়াল দোকান খুলছেন। এতে শুরুর খরচ কমতে পারে, কিন্তু প্রযুক্তি চালু রাখার, ডিজিটাল প্রদর্শনী সাজানোর ও গ্রাহক সেবা দেওয়ার সময় ও দক্ষতা দরকার। ডেলিভারি ও পণ্য ফেরত নীতি—এসবই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ভার্চুয়ালি দেখা ভালো হলেও বাস্তবে পণ্য কেমন এবং অপছন্দের পণ্য পছন্দ না হলে তা ফেরত নেওয়ার নিয়ম ভালো না হলে ভোক্তা ক্ষুব্ধ হবে। বিশ্বাস তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দেখাচ্ছে কাস্টমার রিভিউ, বিস্তারিত ভিডিও, লাইভ প্রদর্শনী। একই সঙ্গে প্রতারণা রোধে অধিকতর পরিচয় যাচাই, নিরাপদ পেমেন্ট ব্যবস্থা আর গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণে আইন-নীতিও জোরদার করা হচ্ছে।

বাড়িতে প্রযুক্তির ছোঁয়া

ঘরগুলোয় এখন আলো, তাপমাত্রা, সুরক্ষা ব্যবস্থা—সবই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। রান্নাঘরের যন্ত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেসিপি পরিচালনা হয়। এতে জীবন সহজ হয়েছে, বিশেষ করে ব্যস্ত পরিবারগুলোর জন্য সুবিধা অনেক। বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত মানুষেরা এখন এসব সুবিধার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে।

তথ্য নিয়ে সতর্কতা

ডিজিটাল-নির্ভরতা বাড়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্যের নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৫ সালে বহু তথ্য ফাঁস ও সাইবার আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। ফলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দেশের ক্ষতি হয়েছে। সে জন্য আইনপ্রণেতা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যবহারকারী—এই তিন অংশের দায়িত্ব বেড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে নিরাপদ থাকার জন্য নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, দ্বিস্তরের শনাক্তকরণ এবং অনলাইন লেনদেনের সতর্কতা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই তথ্য সংরক্ষণ ও অবহিতকরণ নীতিমালা দিতে হয়। সরকারি পর্যায়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, তথ্য অধিকার আইন ও ভোক্তা সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।

ডিজিটাল লেনদেন

নগদ কমে ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে। এতে লেনদেন দ্রুত ও সহজ এবং অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ। গ্রামের বাজার থেকে করপোরেট, বিনিময়—সবকিছুই ডিজিটাল। ফলে অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়ছে এবং অনেক মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতায় চলে এসেছে। তবে প্রতারণা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, আর্থিক অধিকার রক্ষা—এসব চ্যালেঞ্জ থেকে রেহাই পেতে নয়; লেনদেনের সঠিক হিসাব রাখা, নাগরিকদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো, অবাঞ্ছিত ট্রানজেকশন থামাতে তৎপর নজরদারি করতে হবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষার নীতিও সময়োপযোগী করা জরুরি।

চিকিৎসায় প্রযুক্তির হাতে-গড়া পরিবর্তন

দূরবর্তী চিকিৎসা পরামর্শ, স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও ভার্চুয়াল পরীক্ষালয়—এসব এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রোগীর বসার জায়গা থেকে চিকিৎসক রোগের লক্ষণ দেখে পরামর্শ দিচ্ছেন; প্রচুর রোগীর নিয়মিত ডেটা নেটে জমা রেখে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তিকে চিকিৎসার সহায়ক হিসেবে গ্রহণ করে রোগীর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবন সহজ করে দিচ্ছে, তেমনি এটি আমাদের জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রযুক্তির মধ্যেই আমাদের বসবাস। এটা যেমন একদিকে ভালো, তেমনি অন্যদিকে এ বিষয়ে সতর্কতাও জরুরি। আমাদের বুঝে বাছাই করতে হবে কোনটা আমাদের জন্য ভালো আর কোনটা খারাপ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ