Ajker Patrika

লেজার দিয়ে মশা মারবে চীনের তৈরি নতুন ডিভাইস

অনলাইন ডেস্ক
এই যন্ত্র মাত্র ৩ মিলিসেকেন্ডে মশার অবস্থান, দিক এবং দেহের আকার নির্ধারণ করতে পারে। ছবি: ইন্ডিগোগো
এই যন্ত্র মাত্র ৩ মিলিসেকেন্ডে মশার অবস্থান, দিক এবং দেহের আকার নির্ধারণ করতে পারে। ছবি: ইন্ডিগোগো

ভোরে ঘুমের ঘোরে মশার ভোঁ ভোঁ শব্দ বা সন্ধ্যার পর জানালা খুলতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশার হামলা—এ অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই কম-বেশি রয়েছে। মশার কামড় শুধু বিরক্তিকর নয়, এটি ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগ ছড়ায়। এত দিন মশা তাড়াতে ব্যবহার করেছি ধূপ, স্প্রে ও বৈদ্যুতিক র‍্যাকেট। তবে এবার চীন এমন একটি ডিভাইস তৈরি করেছে, যা লেজারের মাধ্যমে উড়ন্ত মশা শনাক্ত করে মেরে ফেলতে পারে।

এই ডিভাইসের নাম ‘ফোটন ম্যাট্রিক্স’, যা একধরনের অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট সিস্টেমের মতো। বর্তমানে ডিভাইসটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। ডিভাইসটি বাজারজাত করার লক্ষ্য নিয়ে ইন্ডিগোগো প্ল্যাটফর্মে তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই যন্ত্র মাত্র তিন মিলি সেকেন্ডে মশার অবস্থান, দিক এবং দেহের আকার নির্ধারণ করতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে।

এটি কাজ করে লাইডার (LiDAR) প্রযুক্তির মাধ্যমে, যা লেজার আলোর পালস বা স্পন্দন ছুড়ে কোনো বস্তুর অবস্থান নির্ধারণ করে। মশা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি গ্যালভোনোমিটার লেজার তাৎক্ষণিকভাবে মশাটিকে নিধন করে।

তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা হলো—এই যন্ত্র প্রতি সেকেন্ডে এক মিটার গতির বেশি গতিতে উড়তে থাকা কোনো পোকা শনাক্ত করতে পারে না। ফলে মাছি বা এর চেয়ে দ্রুতগামী পোকা মারার জন্য এটি উপযোগী নয়।

দুটি মডেলে আসছে ফোটন ম্যাট্রিক্স। বেসিক সংস্করণে ৯০ ডিগ্রি কভারেজে সর্বোচ্চ ৩ মিটার পর্যন্ত মশা স্ক্যান ও নিধন করা যায়। প্রো সংস্করণে এই পরিসর বেড়ে হয় ৬ মিটার।

দুই মডেলই প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ৩০টি মশা নিধন করতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে। এমনকি সম্পূর্ণ অন্ধকার ঘরেও এটি কাজ করে।

মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এতে মিলিমিটার-ওয়েভ রাডার ব্যবহার করা হয়েছে, যা মানুষ বা পোষা প্রাণীর উপস্থিতি শনাক্ত করলে লেজার চালানো বন্ধ করে দেয়।

ডিভাইসটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাধারণ ওয়াল সকেট অথবা রিচার্জেবল পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করতে পারে। পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে একবার চার্জে ডিভাইসটি ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত চালানো সম্ভব। তবে মডেল অনুযায়ী এই সময় ভিন্ন হয়।

২০০৭ সালে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের একটি ব্রেইনস্টর্মিং সেশনে মশা নিধনের জন্য লেজার-ভিত্তিক ব্যবস্থা তৈরির ধারণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘স্টার ওয়ারস’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রকল্পের স্থপতিদের একজন ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী লোয়েল উড।

পরবর্তীতে, মোবাইল ফোন ও লেজার প্রিন্টারের কিছু যন্ত্রাংশ দিয়ে বিভিন্ন প্রোটোটাইপ তৈরি হয়। এ ধরনের একটি ডিভাইস পেটেন্ট করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেলেকচুয়াল ভেঞ্চারস। ২০১৭ সালে টেড সম্মেলনে ডিভাইসটি প্রদর্শিত হলেও তখনো সেটি মানুষের চোখের জন্য নিরাপদ ছিল না।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপটিক্যাল ট্র্যাকিং, লাইডার ও লেজার টার্গেটিং সিস্টেমে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। ফোটন ম্যাট্রিক্স নির্মাতারা দাবি করছেন, এতে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা সার্টিফিকেশন সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে তারা কোন মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করেছে—সেটি চীনা না আন্তর্জাতিক, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এ ছাড়া, এটি তাদের প্রথম ইন্ডিগোগো প্রকল্প, তাই সম্ভাব্য গ্রাহকদের কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

যদি প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবে প্রি-অর্ডারে বেসিক সংস্করণটি ৪৬৮ ডলারে এবং প্রো সংস্করণটি ৬২৯ ডলারে পাওয়া যাবে। খুচরা বাজারে এদের দাম যথাক্রমে ৬৯৭ ও ৮৯৭ ডলার হতে পারে।

তথ্যসূত্র: নিউ অ্যাটলাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত