Ajker Patrika

নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান ছাড়তে বাধ্য হওয়া টেক সিইওরা

মোস্তাফিজ মিঠু, ঢাকা
স্টিভ জবস, স্যাম অল্টম্যান, ট্রাভিস কালানিক ও মার্টিন ইবারহার্ড
স্টিভ জবস, স্যাম অল্টম্যান, ট্রাভিস কালানিক ও মার্টিন ইবারহার্ড

চাকরি চলে যাওয়ার মতো ঘটনা কি শুধু কর্মীদের সঙ্গেই ঘটে? সাধারণত এমনটাই হয়। কিন্তু বিশ্বের এমন অনেক টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠাতা রয়েছেন, যাঁরা নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকেও চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন।

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মূলে থাকেন প্রতিষ্ঠাতারা। তাঁদের স্বপ্ন, দূরদৃষ্টি ও নেতৃত্বেই একটি প্রতিষ্ঠান শিকড় গজিয়ে বড় হয়। তবে ইতিহাস বলছে, টেক দুনিয়ায় একাধিকবার প্রতিষ্ঠাতাদেরই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ আসন থেকে সরে যেতে হয়েছে। বোর্ড অব ডাইরেক্টরস বা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বের সংকট কিংবা নৈতিকতার প্রশ্নে তাঁরা বিদায় নিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ নাটকীয়ভাবে ফিরে এসে ইতিহাসও গড়েছেন।

স্টিভ জবস

১৯৮৫ সালে অ্যাপলের বোর্ড অব ডাইরেক্টরসের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন স্টিভ জবস। ব্যক্তিগত কম্পিউটার জগতে বিপ্লব ঘটানো এবং অ্যাপলকে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডে রূপ দেওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তৎকালীন জল্পনায় বলা হয়, জবসের আক্রমণাত্মক ব্যবস্থাপনা এবং মানবিকতার অভাব ছিল তাঁর বরখাস্ত হওয়ার প্রধান কারণ।

পরে স্টিভ জবস নিজেই স্বীকার করেন, সে সময় তিনি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলেন। অ্যাপল থেকে ছিটকে পড়ার পর তিনি নতুন প্রতিষ্ঠান নেক্সট কম্পিউটার গড়ে তোলেন। ভাগ্যের পরিহাস, পরে অ্যাপলের অংশ হয়ে যায় এই নেক্সট। ১৯৯৭ সালে জবস আবারও অ্যাপলে ফিরলেন সিইও হিসেবে। দ্বিতীয় দফায় তাঁর নেতৃত্বে অ্যাপল শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, বিশ্বের সবচেয়ে সফল ও প্রভাবশালী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আইম্যাক, আইপড, আইফোনের মতো উদ্ভাবন অ্যাপলকে ইতিহাসের সবচেয়ে মূল্যবান ব্র্যান্ডে রূপ দেয়। ২০১১ সালে অসুস্থতার কারণে জবস সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং দায়িত্ব দেন তাঁর বিশ্বস্ত সহকর্মী টিম কুককে। এর কিছুদিন পরই একধরনের অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে তিনি পৃথিবীকে বিদায় জানান।

স্যাম অল্টম্যান

২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর এক অনলাইন মিটিংয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে ওপেনএআইয়ের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যানকে হঠাৎ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। অভিযোগ ওঠে, তিনি বোর্ডকে সব তথ্য সঠিক জানাচ্ছিলেন না। এ কারণে বোর্ড তাঁকে সিইও পদ থেকে বরখাস্ত করে।

এরপর ঘটে নাটকীয় মোড়। ওপেনএআইয়ের ৬০০ কর্মী একটি চিঠি প্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, যদি স্যাম ফিরে না আসেন, তাঁরা সবাই চাকরি ছেড়ে দেবেন। এমনকি স্যামের সঙ্গী প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগ ব্রোকম্যানও এই তালিকায় রয়েছেন। অন্যদিকে খবর ছড়িয়ে যায়, মাইক্রোসফটে যোগ দিচ্ছেন স্যাম এবং গ্রেগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবকিছুই পাল্টে যায়। স্যামের চলে যাওয়ায় ওপেনএআই তখন প্রায় ফাঁকা। এমন অবস্থায় পুরোনো বোর্ডের সবাই পদত্যাগ করেন এবং নতুন বোর্ড গঠনের সঙ্গে যুক্ত হন প্রযুক্তিবিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই নতুন বোর্ডের প্রথম সিদ্ধান্তে স্যামকে সিইও পদে রাখা হয়। সেই সঙ্গে ফিরে আসেন ৬০০ কর্মীও।

ট্রাভিস কালানিক

উবারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ট্রাভিস কালানিক ২০১৭ সালে বিনিয়োগকারীদের প্রবল চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। যৌন হয়রানি ও বৈষম্যের অভিযোগ, পুরুষতান্ত্রিক চর্চা নিয়ে সমালোচনা শুরু হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বেশ সংকটে ছিল। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন কালানিক নিজেও। সেই সময়ে এক চালকের সঙ্গে তাঁর রূঢ় আচরণের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আরও তোপের মুখে পড়ে উবার।

বিনিয়োগকারীরা শেষ পর্যন্ত কালানিকের অবিলম্বে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানান। ফলে উবারের সফল প্রতিষ্ঠাতা হলেও তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। এরপর ট্রাভিস কালানিক আর কখনো উবারের নেতৃত্বে ফেরেননি। সিইও পদ ছাড়ার পর কিছুদিন তিনি বোর্ডে থাকলেও ২০১৯ সালের শেষ দিকে উবারের সব শেয়ার বিক্রি করে সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠান থেকে সরে যান। এরপর তিনি মন দেন নতুন উদ্যোগে। ক্লাউডকিচেনস নামে ফুড-ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করেন। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে রেস্টুরেন্টগুলো আলাদা রান্নাঘর ভাড়া নিয়ে কেবল অনলাইনের খাবার বিক্রি করে।

মার্টিন ইবারহার্ড

টেসলার সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্টিন ইবারহার্ড এবং প্রথম সিইও। ২০০৭ সালে তাঁকে সিইও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পেছনে কারণ ছিল উৎপাদনে দেরি হওয়া, বাজেটের অতিরিক্ত খরচ এবং বোর্ডের সঙ্গে মতবিরোধ। ইলন মাস্ক তখন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তিনি ইবারহার্ডকে তাঁর অপারেশনাল দুর্বলতার জন্য দায়ী করেন। পরে ২০০৮ সালে মাস্ক নিজেই সিএও পদে বসেন। পদত্যাগের পর ইবারহার্ড টেসলার বিরুদ্ধে মানহানি এবং চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে মামলা করেন। তাঁর দাবি, মাস্ক তাঁর অবদানকে ছোট করেছেন। ২০০৯ সালে এই মামলার নিষ্পত্তি হয়। মামলার নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ইলন মাস্ক এবং টেসলার অন্য নির্বাহীদের সঙ্গে ইবারহার্ডকে টেসলার সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যদিও তাঁকে সিইও পদ থেকে সরানো হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠান থেকেও তিনি বেরিয়ে গেছেন, তবু টেসলা প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি আজীবন থাকবে। টেসলা থেকে বের হওয়ার পর প্রায় দুই বছর ইবারহার্ড চাকরি খুঁজে পাননি এবং অর্থনৈতিকভাবে সংকটে ছিলেন। বর্তমানে ইবারহার্ড বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

ক্যারিয়ারের উত্থান-পতনের ঘটনা একজন কর্মী থেকে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তি—সবারই আছে। তবে নেতৃত্বের দক্ষতা যাঁর থাকে, তিনি থেমে থাকেন না। স্টিভ জবস বা স্যাম অল্টম্যানের মতো কেউ কেউ ফিরে এসে আবারও ইতিহাস গড়েন।

সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কথিত গোয়েন্দা এনায়েতকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা, প্রাডো গাড়িও দেন তাঁকে

জনপ্রশাসনের ১৭ কর্মকর্তাকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে বদলি

৯ পুলিশ পরিদর্শক বাধ্যতামূলক অবসরে

এনসিপির সেই নেত্রীকে দল থেকে অব্যাহতি

গণবিক্ষোভ আতঙ্কে মোদি সরকার, ১৯৭৪-পরবর্তী সব আন্দোলন নিয়ে গবেষণার নির্দেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত