Ajker Patrika

‘দেশে প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উদ্যোক্তার অভাব’

২০১৮ সালে ‘হুয়াওয়ে সিডস ফর দ্য ফিউচার’ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী হন আজমাইন ইয়াক্কীন সৃজন। চীনে আয়োজিত প্রতিযোগিতাটির আঞ্চলিক পর্যায়েও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। বর্তমানে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ ছাড়া প্রযুক্তির উদ্ভাবন নিয়ে নিয়মিত কাজ করছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোস্তাফিজ মিঠু

মোস্তাফিজ মিঠু, ঢাকা
আজমাইন ইয়াক্কীন সৃজন
আজমাইন ইয়াক্কীন সৃজন

২০১৮ সালে আপনি হুয়াওয়ে সিডস ফর দ্য ফিউচার প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। এই প্রতিযোগিতা আপনার ক্যারিয়ারে কীভাবে ভূমিকা রেখেছে?

আমি প্রায়ই বলি, হুয়াওয়ে আমাকে শিক্ষকতা পেশার জন্য তৈরি করেছে। ২০১৮ সালে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে কিংবা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে চীনে যাওয়ার আগে আমার শিক্ষক হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এরপর হুয়াওয়ের হেডকোয়ার্টার্স ও হুয়াওয়ে ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সুযোগ পেলাম। সেখানকার ল্যাবে ফোর-জি ও ফাইভ-জির মতো আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে দেখি। তখন মনে হলো, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নিয়ে আমিও এ ধরনের গবেষণা করতে পারি। তখন বুঝলাম, শিক্ষকতা আমাকে নিজের ইচ্ছেমতো গবেষণার সুযোগ দেবে। আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার ৮ দিন পর বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। এরপর ২০২১ সালে রুয়েটে নিয়োগ পাই। আসলে সিডস ফর দ্য ফিউচারে না গেলে হয়তো আমার সম্ভাবনা ও আগ্রহের জায়গাটা ঠিকমতো বুঝতে পারতাম না।

শিক্ষাজীবনে একাডেমির বাইরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের অংশ নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

শিক্ষাজীবন বলতে সাধারণত গতানুগতিক পড়াশোনা বোঝায়। এর বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, এই জিনিসটা জানার জন্য বা বোঝার জন্য সব থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। সব থেকে বড় একটা বিষয় হলো, প্রেজেন্টেশন স্কিল বা কমিউনিকেশন স্কিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই দক্ষতা থাকে না বললেই চলে। যাঁরা নিজেদের চেষ্টায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বা ক্লাবের মাধ্যমে এটা শিখছেন, তাঁরা হয়তো লাভবান হচ্ছেন, কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের এটা নেই। এর মূল কারণ হচ্ছে, আমাদের গতানুগতিক ধারার সিলেবাসে এ ধরনের স্কিলগুলো শেখানোর ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া আরও কিছু স্কিল আছে, যেগুলো এ ধরনের প্রতিযোগিতাগুলোর মাধ্যমে আসলে ভালোভাবে রপ্ত করা যায়। যেমন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও টাইম ম্যানেজমেন্ট।

শিক্ষকতার পাশাপাশি আপনি প্রযুক্তি নিয়ে অন্য কোনো কাজ করছেন কি?

শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রযুক্তি নিয়েও আমি সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, জ্ঞান কখনোই সীমাবদ্ধ নয়। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকা উচিত। এই বিশ্বাস থেকেই আমি প্রতিষ্ঠা করেছি ‘ইয়াং লারনার্স রিসার্চ ল্যাব’, যেখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ১৫-১৬ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পেশাজীবীরাও গবেষণার হাতেখড়ি নিচ্ছেন।

আমি নিজেও গবেষণায় অত্যন্ত মনোযোগী। এখন পর্যন্ত তিনটি সরকারি প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছি এবং একটি চলমান আছে, যার কাজ প্রায় শেষের পথে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও কাজ করেছি। প্রতিযোগিতামূলক পরিসরে নিয়মিত আমি যুক্ত আছি। হুয়াওয়ে আইসিটি কমপিটিশনে গত বছর আমার শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক ফাইনালে অংশ নেয় এবং দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। এ বছর আমিও টিচিং কনটেস্টে অংশ নিই এবং বিশ্বপর্যায়ে গ্র্যান্ড প্রাইজ জয় করি। বর্তমানে এআই এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করছি। হুয়াওয়ের মাইন্ডস্পোর মডেলের ভিত্তিতে একটি ‘মেশিন লার্নিং অ্যান্ড ডিপ লার্নিং’ কোর্স ডিজাইন করেছি।

চীন থেকে দেশে ফিরে এসে বুঝতে পারি, আমরা প্রযুক্তি শিক্ষা থেকে কতটা পিছিয়ে রয়েছি। তবে আমাদের সম্ভাবনা রয়েছে বিশাল! আমার মনে হয়েছিল, উন্নত দেশেই শুধু নয়, বাংলাদেশেও প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে কাজ করার সম্ভাবনা অসীম।

‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ প্রতিযোগিতায় আপনার অভিজ্ঞতা কী?

২০১৮ সালে আমি ১৫ দিনের জন্য চীন সফরে গিয়েছিলাম এই প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে। প্রথম ৫ দিন আমরা ছিলাম বেইজিংয়ে, পরবর্তী ১০ দিন কাটে শেনজেনে। প্রতিটি দিন ছিল অভিজ্ঞতায় ভরপুর, মনে রাখার মতো, শেখার মতো, অনুভব করার মতো। এই প্রোগ্রামের সবচেয়ে বড় অর্জন আমার মনে হয়েছে বন্ধুত্ব। আমরা মোট দশজন বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলাম। এখনো সবাই সংযুক্ত, কথা বলি, দেখা করি। বেইজিংয়ে প্রথম দিনেই আমরা বাংলাদেশি অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গে দেখা করি। এরপর হুয়াওয়ের হেডকোয়ার্টার্সে কালচারাল প্রোগ্রামে আমি একটি ওপেনিং স্পিচ দিই। চায়নিজ কালচারের সঙ্গে পরিচিত হই। এই ভাষাগত-সাংস্কৃতিক সংযোগ খুবই মূল্যবান। চীন থেকে দেশে ফিরে এসে বুঝতে পারি, আমরা প্রযুক্তি শিক্ষা থেকে কতটা পিছিয়ে রয়েছি। অথচ আমাদের সম্ভাবনা রয়েছে বিশাল! আমার মনে হয়েছিল, উন্নত দেশেই শুধু নয়, বাংলাদেশেও প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে কাজ করার সম্ভাবনা অসীম। সেই দায়বোধ থেকেই আমি শিক্ষকতায় এসেছি।

আমাদের দেশে তরুণদের জন্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার কতটা সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং সমস্যাটা কোথায়?

বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ২০১৮ সালের তুলনায় আজ অনেক প্রতিষ্ঠান মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও গবেষণাভিত্তিক কাজের জন্য তরুণদের নিয়োগ দিচ্ছে। এখন শুধু প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং নয়, বরং প্রার্থীর গিটহাব প্রোফাইলে এআই সম্পর্কিত কোড আছে কি না, সেটাও গুরুত্ব পাচ্ছে। পাশাপাশি দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পেও তরুণদের যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তবে বড় সমস্যা, দেশে প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উদ্যোক্তার অভাব। অধিকাংশ সফটওয়্যার প্রকল্পেই আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা আউটসোর্সে অংশ নিয়ে কাজ করছেন, পুরো সমাধান তৈরির নেতৃত্বে নয়। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো আধুনিক রিসার্চ ল্যাবের অভাব। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই সেই পর্যায়ের ল্যাব নেই, যেখানে শিক্ষার্থীরা সত্যিকার অর্থে উদ্ভাবন করতে পারে। চীনের শেনজেন পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটিতে সফরের অভিজ্ঞতা আমার চিন্তাকে আরও গভীর করেছে। সেখানে দেখেছি, কীভাবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবেই ৫.৫জি কোর চিপ থেকে

শুরু করে বিভিন্ন প্রযুক্তি ডিজাইন ও উৎপাদনে যুক্ত। তবে আশার কথা হচ্ছে, হুয়াওয়ের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশের প্রযুক্তি শিক্ষায় বিনিয়োগ করছে। এমন উদ্যোগগুলো যদি আরও সম্প্রসারিত হয়, তাহলে গবেষণার পরিবেশ তৈরি হবে এবং প্রকৃত উদ্ভাবন দেশ থেকেই উঠে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে ডেটা সেন্টার ও এআই হাব তৈরিতে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে গুগল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ০২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে বিশাল এক ডেটা সেন্টার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হাব গড়ে তুলতে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ায় অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গুগলের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

রাজ্য সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, উপকূলীয় শহর বিশাখাপত্তনমে গুগল ১ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ডেটা সেন্টার ক্যাম্পাস নির্মাণ করবে। সেখানে এআই অবকাঠামো, বৃহৎ পরিসরের জ্বালানি উৎস এবং উন্নত ফাইবার-অপটিক নেটওয়ার্ক একত্রে থাকবে। আজ মঙ্গলবার এই প্রকল্পে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা।

বিশ্বজুড়ে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এআই পরিষেবার বাড়তি চাহিদা মেটাতে তারা নতুন নতুন ডেটা সেন্টার নির্মাণে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করছে।

অন্ধ্রপ্রদেশে গুগলের ১০ বিলিয়ন ডলারের ডেটা সেন্টার নির্মাণে কর-সংক্রান্ত সব বাধা দূর করতে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র একযোগে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিকস ও যোগাযোগমন্ত্রী নারা লোকেশ।

অন্ধ্রপ্রদেশের আইটি মন্ত্রী নারা লোকেশ বলেন, ‘যে সময়ে ডেটা নতুন তেলের মতো মূল্যবান, এ ধরনের উদ্যোগ রাজ্যের জন্য কৌশলগত সুবিধা বয়ে আনবে।’

মানিকন্ট্রোলকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে লোকেশ বলেন, ‘ডেটা সেন্টার তৈরিতে কোনো প্রকার “রেট্রোস্পেকটিভ ট্যাক্সেশন” বা অতীতের ভিত্তিতে কর আরোপের ঝুঁকি যাতে না থাকে, সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করেছি। যেহেতু এই কেন্দ্রগুলোতে তথ্য প্রক্রিয়াজাত করা হবে, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আমরা কর-সংক্রান্ত স্পষ্টতা পেয়েছি।’

মন্ত্রী জানান, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি প্রথমবার গুগল কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের নিয়ে বিশাখাপত্তনমে প্রস্তাবিত সাইটটি পরিদর্শনে যান। লোকেশের ভাষায়, ‘এটি হতে যাচ্ছে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ।’

মানিকন্ট্রোলের প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রস্তাবিত ‘রাইডেন ইনফোটেক’ (গুগলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান) প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ হবে ৮৭ হাজার ৫২০ কোটি রুপি বা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। এতে প্রায় এক-দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ২০২৮–২০৩২ মেয়াদে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্য মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জিএডিপি) প্রতিবছর ১০ হাজার ৫১৮ কোটি রুপি যোগ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

মন্ত্রী নারা লোকেশ বলেন, ‘অন্ধ্রপ্রদেশে এখন আমাদের আছে দ্বৈত ইঞ্জিনের “বুলেট ট্রেন”। যা দিয়ে আমরা শুধু সর্বোত্তম প্রণোদনাই দিতে পারছি না, বরং নীতিগত দিক থেকেও সহায়তা দিচ্ছি। কেন্দ্রের যা যা দরকার, সেগুলোতেও আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশে জুয়ার বিজ্ঞাপনে শীর্ষে ক্রিকইনফো, ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত ফয়েজ আহমদের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ২৭
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ফাইল ছবি
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ফাইল ছবি

জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো ডটকম এককভাবে বাংলাদেশের সাইবার স্পেসে সবচেয়ে বেশি জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ না করলে ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশে ব্লক করার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সোমবার দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে এই তথ্য জানান।

ফেসবুক পোস্টে ফয়েজ আহমদ জানান, অনলাইন জুয়া, এর প্রচার-প্রচারণা বিজ্ঞাপন ইত্যাদি বাংলাদেশের সাইবার সুরক্ষা আইন, ২০২৫-এ নিষিদ্ধ।

ফয়েজ আহমদ উল্লেখ করেন, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি (এনসিএসএ) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশের ক্রিকইনফোর বিজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখেছে, সেখানে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন শতভাগ অনুপস্থিত। শুধু বাংলাদেশে জুয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে আইন ভঙ্গ করছে ক্রিকইনফো।

বিশেষ সহকারী আরও লেখেন, অবৈধ বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের ওপর ক্রিকইনফো আইন পাসের আগে বা পরে কোনো অর্থই বাংলাদেশ সরকারকে আয়কর কিংবা ভ্যাট হিসেবে দেয়নি।

অবৈধ জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি (এনসিএসএ) ক্রিকইনফোকে ই-মেইল পাঠিয়েছে এবং পরে ডাকযোগে রেজিস্টার্ড চিঠি পাঠানো হবে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, যদি ক্রিকইনফো জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধ না করে। তবে বাংলাদেশে ক্রিকইনফো ব্লক করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত হবে কি না, এই বিষয়ে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি জনমত সংগ্রহ করবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মুক্ত জীবনের ডাক

জেন-জি প্রজন্মের ‘ডিলিট ডে’

ফিচার ডেস্ক
জেন-জি প্রজন্মের ‘ডিলিট ডে’

নিউইয়র্কের টম্পকিনস স্কয়ার পার্কে সম্প্রতি এক ভিন্নধর্মী আয়োজন হয়ে গেল। এর শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল ‘ডিলিট ডে’। তরুণ প্রজন্ম; বিশেষ করে জেন-জিদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল, নিজেদের জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব থেকে মুক্তি নেওয়া।

তবে আয়োজনটি অনলাইনে প্রচার করা হয়নি। অংশগ্রহণকারীরা বন্ধু কিংবা পরিচিতদের মুখে মুখে খবর পৌঁছে দিয়েছেন। পার্কের প্রবেশপথ সাজানো হয়েছিল চক দিয়ে লেখা বার্তায়। সেখানে লেখা ‘ডিলিট ইউর অ্যাপস অন দ্য গ্রাস’। কেউ নিজের মোবাইল ফোন থেকে ইনস্টাগ্রাম, টিকটক অথবা স্ন্যাপচ্যাট মুছে ফেলেছেন, কেউ আবার অন্যদের উৎসাহ দিয়েছেন একই কাজ করতে।

প্রায় ৮০ জন তরুণ অংশ নেন এই আয়োজনে। আয়োজকেরা বলছেন, এটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমবিরোধী প্রতিবাদ নয়। এর মধ্য দিয়ে মানুষকে ডিজিটাল-নির্ভরতা থেকে সাময়িক বিরতি নিতে উৎসাহ দেওয়াই উদ্দেশ্য।

এই আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন ২৫ বছর বয়সী তরুণ নিক প্ল্যান্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা স্ক্রিনে আসক্ত হয়ে পড়েছি। এখন এই অবস্থা থেকে সরে এসে সবাই মিলে ভিন্নভাবে সময় কাটাতে চাই।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে, বাস্তব জীবনে ফেরার চেষ্টা

‘ডিলিট ডে’-তে অংশ নেন বিভিন্ন তরুণ সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা মুখে মুখে প্রচার চালিয়েছেন, পোস্টার এবং লিফলেট বিলি করেছেন। কেউ কেউ রাস্তায় টেবিল বসিয়ে মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন।

আয়োজকদের একজন গ্যাব্রিয়েলা নগুয়েন। তিনি বলেন, ‘আমাদের চাওয়া, মানুষ যেন এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিরতি নেয়। কারণ, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত অনেক সময় কাটিয়ে দিয়েছি। নিজেরাই দেখেছি, এখানে কীভাবে মনোযোগ ও সময় নষ্ট হয়।’

photo-Buseness-insider-3

‘দ্য অ্যানক্সিয়াস জেনারেশন’বইয়ের প্রভাব

এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে ‘টাইম টু রিফিউজ’ নামের একটি বৈশ্বিক প্রচারণা। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন মনোবিজ্ঞানী ও লেখক জোনাথান হেইডট। তাঁর বই ‘দ্য অ্যানক্সিয়াস জেনারেশন’-এ বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। বইটি প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়।

‘ডিলিট ডে’ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ছবি ও পোস্ট নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করতে করতে তরুণেরা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। কোনো অনুষ্ঠানে গেলেই ভাবতে হয়, এটা ইনস্টাগ্রামে কেমন দেখাবে। এমন মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে আমাদের এই আয়োজন।

photo-Buseness-insider-4

বিকল্প যোগাযোগ

অংশগ্রহণকারীরা অ্যাপ মুছে ফেলার পর মোবাইল ফোন ব্যাগে রেখে একসঙ্গে সময় কাটান। কেউ নতুন বন্ধু বানান, কেউবা গল্প করেন। টেক প্রতিষ্ঠান লাইট সেখানে অংশগ্রহণকারীদের ‘লাইট ফোন’ উপহার দেয়। সে মোবাইল ফোন দিয়ে শুধু কল করা এবং মেসেজ দেওয়া যায়। তাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। সে কারণে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমও ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

‘ডিলিট ডে’-তে অংশগ্রহণকারী জুডি লিউ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ছাড়ার পর আমি ভাষা শেখা এবং নতুন শখে সময় দিচ্ছি।’ আরেকজন অংশগ্রহণকারী কণিকা মেহরা বলেন, ‘বাস্তব জীবনের আনন্দ যখন কেউ পায়, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না।’

সারা বিশ্বে নিয়মিত ‘ডিলিট ডে’ আয়োজন করার ইচ্ছা আছে আয়োজকদের। এরই মধ্যে ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাজ্য ও কেনিয়ায় পরবর্তী ইভেন্টের প্রস্তুতি চলছে।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যেভাবে মোবাইল ফোনের গ্যালারি নিরাপদ রাখবেন

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
যেভাবে মোবাইল ফোনের গ্যালারি নিরাপদ রাখবেন

ছবি তুলতে কে না ভালোবাসে! হাতের কাছে মোবাইল ফোন থাকলেই হলো, মুহূর্তে বন্দী করে ফেলা যায় প্রিয় দৃশ্য বা স্মৃতি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ভ্রমণের স্মৃতি কিংবা একান্ত মুহূর্ত—সবই জমা হয় মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে।

কিন্তু এখানেই লুকিয়ে থাকে এক অদৃশ্য বিপদ। এই গ্যালারিতে থাকা ব্যক্তিগত ছবি অজান্তেই হ্যাক হয়ে যেতে পারে। এতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়া থেকে ব্ল্যাকমেলের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এই ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।

এ জন্য যা করবেন—

অ্যাপ পারমিশনে সতর্ক থাকুন

গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্বস্ত অ্যাপ ছাড়া মোবাইল ফোনে ইনস্টল করতে গিয়ে গ্যালারিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না। তাতে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে।

অপরিচিত কারও সঙ্গে ছবি শেয়ার করবেন না

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বা কোনো অ্যাপের মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করা যাবে না। একবার শেয়ার করা ছবি আপনি আর নিয়ন্ত্রণ

করতে পারবেন না।

সন্দেহজনক লিংক থেকে দূরে থাকুন

ভাইরাল ভিডিও কিংবা কোনো লোভনীয় অফারসহ সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করবেন না। ক্লিক করার তীব্র আকর্ষণে ছবি হয়ে যেতে পারে বেহাত। সাইবার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এমন লিংকে ক্লিক করে অনেকে অজান্তে প্রবেশ করেন টেলিগ্রাম চ্যানেলে। এরপর সেখান থেকে আরেকটি লিংকে ক্লিক করলে সেই ব্যবহারকারীকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ক্লাউড স্টোরেজে। সেখানে অ্যাকসেস পেতে গেলে দিতে হয় গ্যালারিতে প্রবেশের অনুমতি বা এক্সেস। এর ফলে ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে।

অজানা কিংবা ফ্রি অ্যাপ ইনস্টল এড়িয়ে চলুন

ফ্রি এডিটিং অ্যাপ, গেম ইত্যাদির মতো অজানা অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন। প্লেস্টোর থেকে অ্যাপ ইনস্টল করা কম ঝুঁকিপূর্ণ। অ্যাপটি ইনস্টল করার আগে রিভিউসহ বিস্তারিত পড়ে নিন।

ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে

শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, স্টেশন কিংবা অন্যান্য পাবলিক স্থানের ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করবেন না। এর মাধ্যমে হ্যাকার আপনার ফোনে প্রবেশ করে গ্যালারি, স্টোরেজ এমনকি ব্যক্তিগত তথ্যেও হাত বসাতে পারে। তবে প্রয়োজন হলে ঘরের বাইরে মোবাইল ডেটা ব্যবহার করুন।

সন্দেহজনক মেসেজে ক্লিক নয়

লোভনীয় কোনো অফারের মেসেজে ক্লিক করবেন না। তাতে আপনার মোবাইল ফোনে ট্রোজান বা ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। এতে ট্রোজান আপনার অজান্তেই মোবাইল ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। এর মাধ্যমে আপনার গোপন তথ্য, গ্যালারি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে।

হ্যাক হলে করণীয়

  • প্রথমে পুলিশের সাইবার ইউনিটে অভিযোগ করুন।
  • কাছের বিশ্বাসযোগ্য মানুষদের পাশে রাখুন। তাঁরা মানসিকভাবে আপনাকে শক্তি দেবেন।
  • অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিষয়টি সবাইকে জানাবেন না।
  • নিজেকে দোষ দেবেন না। ভুল করে প্রতারণার শিকার হওয়া মানেই আপনি দোষী নন।
  • পরবর্তী সময়ে অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে আরও সতর্ক হোন।

অ্যাপ ভুয়া চেনার উপায়

  • ডাউনলোড হারের গতি খুব কম। এটি সাধারণত এক হাজারের নিচে।
  • রেটিং ৩.৫ এর কম।
  • অ্যাপ ইনস্টল করে স্টোরেজ, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ইত্যাদি ব্যবহারের অনুমতি চাইবে।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত