Ajker Patrika

বিশ্বে প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন কার্যকর ইউরোপে, যা আছে এতে

আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ২০: ৩৭
বিশ্বে প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন কার্যকর ইউরোপে, যা আছে এতে

বিশ্বে প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আইন কার্যকর করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এআই-এর বিকাশ ও ব্যবহারে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করবে যুগান্তকারী এই আইন। এর ফলে ইউরোপে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্টগুলো। 

এআইকে নিয়ে আলাদাভাবে তৈরি আইনটি গত মে মাসে অনুমোদন দেয় ইইউ সদস্য রাষ্ট্র, আইনপ্রণেতা ও ইউরোপীয় কমিশন। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) আইনটি কার্যকর করেছে (ইইউ)। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আইন কী, যা আছে এতে

এআই-এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনগুলোর অন্যতম এই আইন। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ২০২০ সালে প্রথম আইনটির কার্যকরের প্রস্তাব দেয় ইউরোপীয় কমিশন। 

প্রাথমিকভাবে আইনটির লক্ষ্য থাকবে বড় বড় মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি। এসব কোম্পানিই সবচেয়ে উন্নত এআই সিস্টেমের প্রধান নির্মাতা ও ডেভেলপার। তবে এই আইনের আওতায় অন্যান্য ব্যবসায়িক কোম্পানিও পড়বে, এমনকি অপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে এআই-এর ব্যাপক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রক কাঠামো নির্ধারণ করেছে আইনটি। সেই সঙ্গে প্রযুক্তিটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঝুঁকিভিত্তিক (ঝুঁকি চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা) পদ্ধতি প্রয়োগ করবে। 

ব্রাসেলসের আইন সংস্থা লিঙ্কলেটার্সের ট্যানগুই ভ্যান ওভারস্ট্রেটেন বলেছেন, ‘এই ধরনের আইন বিশ্বে এটিই প্রথম। এটি ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যারা এআই সিস্টেম ডেভেলপ করছে ও নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এগুলো শুধু ব্যবহার করছে, তাদের উপর বিশেষ প্রভাব পড়বে।’ 

এআই নিয়ন্ত্রণে একটি ঝুঁকিভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগ করবে আইনটি। এর অর্থ হল— সমাজের জন্য ঝুঁকির স্তরের ওপর নির্ভর করে প্রযুক্তির বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হবে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনগুলোর একটি অংশ হলো এআই আইন। ছবি: সিম্পল লার্ন 

উদাহরণস্বরূপ, এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলো ‘উচ্চ-ঝুঁকি’ হিসেবে বিবেচিত হলে এআই আইনের অধীনে কঠোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হবে। এই ধরনের বাধ্যবাধকতাগুলোর মধ্যে আছে— পর্যাপ্ত ঝুঁকি মূল্যায়ন ও প্রশমন ব্যবস্থা, পক্ষপাতের ঝুঁকি কমানোর জন্য উচ্চ-মানের প্রশিক্ষণ ডেটাসেট তৈরি, কর্মকাণ্ডের নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করা ও সম্মতি মূল্যায়নের জন্য বিশদ ডকুমেন্টেশন বাধ্যতামূলক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। 

‘উচ্চ-ঝুঁকি’এর এআই সিস্টেমের মধ্যে আছে- স্বয়ংক্রিয় যানবাহন, মেডিকেল ডিভাইস, লোন নেওয়ার সিস্টেম, শিক্ষাগত গ্রেডিং সিস্টেম ও দূরবর্তী বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ সিস্টেম। 

ঝুঁকির স্তরের পরিপ্রেক্ষিতে এআইয়ের কোনো অ্যাপ্লিকেশনকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে গণ্য করা হলে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর এর প্রভাব

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দিতে পারে এমন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব ও ব্যাপক পরিমাণে বিনিয়োগ করছে মাইক্রোসফট, গুগল, আমাজন, অ্যাপল ও মেটার মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি টেক জায়ান্টগুলো। 

এআই প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রশিক্ষণের জন্য বিশাল কম্পিউটিং অবকাঠামো প্রয়োজন। এজন্য মাইক্রোসফটের আজুর, আমাজন ওয়েব সার্ভিস ও গুগল ক্লাউডের মতো ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রথমেই নতুন আইনের অধীনে এই ধরনের বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। 

সফটওয়্যার ফার্ম এপিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লি থম্পসন বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে এআই আইনের প্রভাব পড়বে। ইইউতে কোনো কার্যক্রমের প্রভাব যে কোনো কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ যেখানেই থাকুন না কেন এআই আইন আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে।’ 

চার্লি থম্পসন আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ক্রিয়াকলাপ ও ইইউ নাগরিকের ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনটি আরও প্রযুক্তি কোম্পানিকে যাচাই-বাছাই করবে। 

আইনি কড়াকড়ি নিয়ে উদ্বেগের কারণে মেটা ইতিমধ্যে ইউরোপে এআই মডেলের কার্যক্রম সীমিত করেছে। তবে ইইউ এর নতুন আইনের কারণে এই পদক্ষেপ নেয়নি মেটা। 

এই মাসের শুরুতে মেটা বলে, এটি ইইউতে তার এলএলএএমএ মডেলগুলো চালু করবে না। ইউরোপের সাধারণ ডেটা সুরক্ষা প্রবিধান বা জিডিপিআর মেনে চলছে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার থাকায় মেটা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

জিডিপিআর লঙ্ঘন করতে পারে এমন উদ্বেগের কারণে এআই মডেল প্রশিক্ষণে কোম্পানিটি ইইউ-এর ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের পোস্টগুলো ব্যবহার বন্ধ করেছে। 

ইইউতে জেনারেটিভ এআইকে যেভাবে দেখছে 

এআই আইনে জেনারেটিভ এআইকে ‘জেনারেল পারপাস এআই সিস্টেম-জিপিএআইএ’ বা সাধারণ উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই লেবেলের আওতায় এমন টুলগুলোকে বোঝায় যা বিস্তৃত পরিসরে মানুষের মতো বা মানুষের চেয়ে ভালো কাজ করতে পারে। সাধারণ-উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা মডেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ওপেনএআইয়ের জিপিটি, গুগলের জেমিনি ও এনথ্রপিকের ক্লড। তবে এসব মডেলের মধ্যেই আইনটি সীমাবদ্ধ নয়। 

এসব সিস্টেমের জন্য কঠোর নীতিমালা আরোপ করে এই আইন। যেমন— ইইউ এর কপিরাইট আইনকে সম্মান করা, মডেলগুলোকে কীভাবে প্রশিক্ষিত করা হয় সে সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, প্রযুক্তিগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করা ও পর্যাপ্ত সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যদিও সমস্ত এআই মডেলকে সমানভাবে বিবেচনা করা হয় না। 

এআই প্রযুক্তির ডেভেলপাররা বলেন, ‘জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে ও উপযোগী এআই অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন ওপেন সোর্স মডেলগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে ইইউকে। যেগুলো খুব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে না।’ 

এই ধরনের ওপেনসোর্স মডেল হলো মেটার এএলএএমএ, স্ট্যাবিলিটি এআই এর স্টাবল ডিফিউশন ও মিস্ট্রালের ৭ বি। 

ওপেন সোর্স জেনারেটিভ এআই মডেলের জন্য কিছু ছাড় দেওয়া হবে। তবে এই ছাড় পাওয়ার জন্য ওপেন সোর্স প্রদানকারীদের মডেলগুলোর আর্কিটেকচার সর্বজনীনভাবে অ্যাকসেসের সুবিধা দিতে হবে। মডেলগুলোর ‘অ্যাকসেস, ব্যবহার, পরিবর্তন ও বিতরণ’ এর সুবিধা দিতে হবে। 

এআই আইন অনুসারে, যেসব ওপেন সোর্স মডেলগুলো ‘সিস্টেমিক’ ঝুঁকি তৈরি করে, সেগুলো ছাড়ের জন্য গণনা করা হবে না। 

এআই আইন ভঙ্গ করলে যা হবে 

ইইউয়ের এআই আইন ভঙ্গ করলে কোম্পানিগুলোর ৭.৫ মিলিয়ন (৭৫ লাখ) ইউরো থেকে ৩৫ মিলিয়ন (৩ কোটি ৫০ লাখ) ইউরো বা বিশ্বব্যাপী বার্ষিক আয়ের ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ থেকে জরিমানা হতে পারে। আইনের কতটুকু লঙ্ঘন করা হয়েছে তার উপর কোম্পানির জরিমানা নির্ভর করবে। 

এই জরিমানা জিডিপিআর বা ইউরোপের ডিজিটাল প্রাইভেসি আইনের চেয়ে বেশি। জিডিপিআর আইন লঙ্ঘন করলে কোম্পানিগুলো ২ কোটি ডলার বা বিশ্বব্যাপী বার্ষিক আয়ের ৪ শতাংশ জরিমানা হতে পারে। 

সাধারণ-উদ্দেশ্য এআই সিস্টেমসহ এআই মডেলগুলোর তত্ত্বাবধান ইউরোপীয় এআই অফিসের অধীনে পড়বে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করে ইউরোপীয় কমিশন। 

ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি সংস্থার সম্পদ ব্যবস্থাপনার গ্লোবাল হেড জামিল জিভা বলেন, ‘আইনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে কোম্পানিগুলোকে উল্লেখযোগ্য জরিমানা আরোপ করতে হবে।’ 

অবশেষে এআই আইন কার্যকর হলেও আইনটির বেশির ভাগ বিধান কমপক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর হবে না। এআই আইন কার্যকর হওয়ার ১২ মাস পরে সাধারণ-উদ্দেশ্য সিস্টেমের ওপর বিধিনিষেধ শুরু হবে। 

জেনারেটিভ এআই সিস্টেমগুলো বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী। তবে ইইউতে ওপেনেআইয়ের চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি ও গুগলের জেমিনিকে নতুন আইন মেনে চলার জন্য ৩৬ মাসের সময় বা ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ দেওয়া হয়েছে। 

তথ্যসূত্র: সিএনবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ, মতামত দিতে পারবে সবাই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ, মতামত দিতে পারবে সবাই

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে। বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশের খসড়া দেখতে পারবে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত জানাতে পারবে।

আজ বুধবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশে ইন্টারনেট বন্ধের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বিদ্যমান আইন ও নীতিতে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা আরও সুদৃঢ় হবে বলে মনে করছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তবে ইন্টারনেট সেবাদাতাসহ টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি পক্ষের এই অধ্যাদেশ নিয়ে ভিন্নমত করেছে।

অধ্যাদেশের ওপর মতামত পাঠানো যাবে:

ই-মেইল: [email protected] - এই ইমেইলের মাধ্যমে। এ ছাড়া চিঠি পাঠিয়েও মতামত জানানো যাবে। ঠিকানা: সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

নেটওয়ার্ক সল্যুশন থেকে প্রযুক্তি, বিভিন্ন খাতে হুয়াওয়ে কাজ করছে

তানভীর আহমেদ।

হুয়াওয়ে বলতে সাধারণ মানুষ একটি মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে জানে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের বাজারে তাদের নতুন কোনো মোবাইল ফোন যদিও আসেনি। তবু দেশে গ্রাহক সমাধান, টেলিকম নেটওয়ার্ক, নবায়নযোগ্য শক্তি, শিক্ষা ও সামাজিক উদ্যোগে হুয়াওয়ে বেশ বড় পরিসরে কাজ করে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ এশিয়ার হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং তানভীর আহমেদের মুখোমুখি হয়েছে আজকের পত্রিকা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোস্তাফিজ মিঠু

মোস্তাফিজ মিঠু

বাংলাদেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকেরা স্মার্টফোন দিয়ে হুয়াওয়েকে চেনে। যদিও এটি হুয়াওয়ের একটি অংশমাত্র। পুরো প্রতিষ্ঠান নিয়ে শুরুতে সংক্ষেপে জানতে চাইব।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে হুয়াওয়ের জনপ্রিয়তা আসে মোবাইল ফোন দিয়েই। আমাদের হ্যান্ডসেটগুলো বরাবরই জনপ্রিয়। ডিভাইসের ডিজাইন, টেক্সচার, ক্যামেরা কোয়ালিটি—সবকিছুই গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় ছিল। আমি বহু মানুষকে এখনো হুয়াওয়ের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেখছি। কিন্তু হুয়াওয়ের যাত্রাটা আসলে মোবাইল ফোন দিয়ে শুরু হয়নি। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশি মুদ্রায় মাত্র তিন লাখের মতো টাকা দিয়ে চীনে হুয়াওয়ের যাত্রা শুরু করেন। আমাদের মূল ব্যবসা টেলিকম নেটওয়ার্ক সল্যুশন। টেলিকম প্রযুক্তি আর প্রজন্ম নিয়ে আমরা কাজ করি। এই যে টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জি, ফাইভ-জি বা সিক্স-জি—এমন প্রতিটি টেলিকম জেনারেশন উদ্ভাবনে আমরা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখি এবং এই প্রযুক্তিগুলো সরবরাহ করি। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে আমাদের সরঞ্জাম প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে মোবাইল টাওয়ারগুলোয় জিএসএম সল্যুশন ব্যবহার করা হয়।

এখন তো বাংলাদেশের বাজারে হুয়াওয়ের মোবাইল ফোন নেই। বর্তমানে আপনারা কোন সেবাগুলো নিয়ে কাজ করছেন?

নেটওয়ার্ক সল্যুশন থেকে প্রযুক্তি, বিভিন্ন খাতে হুয়াওয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশকে আমরা ইন্টেলিজেন্ট ক্যামেরা সল্যুশন দিয়েছি; যার মাধ্যমে পুলিশ কন্ট্রোল রুম মনিটর করতে পারছে, কোনো নির্দিষ্ট রুটে কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটল কি না, কোনো আইন কেউ ভাঙল কি না ইত্যাদি বিষয়। আমরা শুধু হার্ডওয়্যারই দিই না। এর সঙ্গে সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, ডেটা সেন্টার, ক্লাউড সল্যুশনসহ কাস্টমাইজড সমাধান দিয়ে থাকি। যেমন বিকাশকে আমরা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সরবরাহ করছি। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেটওয়ার্কিং ল্যাব গড়ে তুলেছি। মেডিকেল সেক্টরে ডেটাবেইস ও ডেটা ম্যানেজমেন্ট দিয়ে থাকি; যাতে হাসপাতাল এবং সংশ্লিষ্ট সেবা আরও দক্ষভাবে পরিচালিত হয়।

আপনারা দেশের সৌরবিদ্যুৎ খাতেরও একটি সহযোগী। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন।

নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে প্রযুক্তি সরবরাহ করাও আমাদের বড় একটি ব্যবসায়িক দিক। ২০২০ সালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশের তৎকালীন সবচেয়ে বড় সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপিত হয়। আমরা সেই প্রকল্পে পিভি ইনভার্টার প্রযুক্তি ও সমাধান দিয়েছি। সেখানে এখন প্রতিদিন প্রায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠানকে রুফটপ সোলার সল্যুশন, পিভি ইনভার্টার এবং এনার্জি স্টোরেজ সল্যুশন সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যদিকে আমরা ইউআইইউ ও সিইআরের সঙ্গে ইউআইইউতে সম্মিলিতভাবে একটি সোলার পাওয়ার ল্যাব চালু করেছি। সেখানে শিক্ষানবিশ ও পেশাদারেরা সোলার এনার্জি উৎপাদন, প্রকল্পের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে টেলিকম অপারেটরদের যে টাওয়ারগুলো রয়েছে, সেগুলোকে সৌরবিদ্যুৎনির্ভর করে তুলতে আমরা অনেক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয় ও তরুণদের জন্য আপনাদের কয়েকটি উদ্যোগ রয়েছে। সেগুলোর উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাই।

সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেরই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। আমরা এ ক্ষেত্রে তরুণদের উন্নয়নের বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিই। আমাদের মাধ্যমে যেন তারা একটি গাইডলাইন বা প্ল্যাটফর্ম পায়। এ রকম আমাদের বেশ কিছু আয়োজন আছে। সেগুলোর মধ্যে ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ বেশ জনপ্রিয় একটি উদ্যোগ। প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ থেকে ১২ জনের একটি ব্যাচ বেছে নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য চীনে পাঠানো হয়। এখানে নারী-পুরুষের সমতা বজায় রাখার চেষ্টা করি। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা ডিজাইন থিংকিং, ডিপ-থিংকিং মেথডোলজি, টিমওয়ার্ক, সেলফ প্রেজেন্টেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে উৎকর্ষ অর্জন করেন। এগুলো ভবিষ্যতে তাদের ক্যারিয়ারে কাজে লাগে। সাবেক অংশগ্রহণকারীরা গ্লোবাল এবং রিজিওনাল রাউন্ডে অংশ নেয়। অন্যদিকে আমরা নিয়মিত ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট প্রোগ্রাম করি। ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটরা এতে অংশ নেন।

computer-network-digital-connection-technology-concept

বাংলাদেশে এখন ফাইভ-জি চলে এসেছে। এর সঙ্গেও হুয়াওয়ের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। আপনাদের ভূমিকার বিষয়টি পাঠকদের জানাতে চাই।

সম্প্রতি বাংলাদেশে দুটি টেলিকম প্রতিষ্ঠান ফাইভ-জি ঘোষণার পর মূলত এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে; যাদের সল্যুশন দিচ্ছে হুয়াওয়ে। যদিও এই আলোচনার শুরু ২০১৮ সালে। বাংলাদেশে প্রথম ফাইভ-জি ট্রায়াল পরিচালনা করে হুয়াওয়ে। তখন আমাদের

সঙ্গে ছিল রবি। ২০২০ সালে আমরা এক প্রদর্শনীতে ফাইভ-জি নিয়ে জনসমক্ষে এর অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেছিলাম। সম্প্রতি দুই টেলিকম অপারেটর বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি বাজারে নিয়ে আসে। এখন যেকোনো অপারেটরকেই ফাইভ-জি প্রযুক্তির সাপোর্ট দিতে হুয়াওয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এআইকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগাচ্ছে। আপনারা কোন ধরনের কাজে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন?

এখন আসলে এআইয়ের সময়। আমাদের বিভিন্ন সমাধানের উচ্চক্ষমতা নিশ্চিত করতে সেগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী এআই রয়েছে। যেমন সোলার পাওয়ার সিস্টেমে পিভি

ইনভার্টার ও উৎপাদন ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজমেন্টের অ্যালগরিদমগুলো এআইভিত্তিক। এতে উৎপাদন, ম্যানেজমেন্ট ও ডিস্ট্রিবিউশন আরও দক্ষভাবে পরিচালনা করা যায়। হুয়াওয়ে ক্লাউডেও অনেক রকম এআইয়ের ইন্টিগ্রেশন রয়েছে, যা এর ব্যবহারকারীদের বাড়তি সুবিধা ও নিরাপত্তা দেয়।

বাংলাদেশে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? নতুন বছরে বিশেষ কিছু আসছে?

বাংলাদেশের প্রযুক্তি অবকাঠামো, বিশেষত ক্লাউড, নবায়নযোগ্য শক্তি, এআই ও শিক্ষা খাতে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে কাজ করার। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, স্টার্টআপ ও শিল্প খাতের সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়িয়ে বিভিন্ন সল্যুশন নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। লক্ষ্য হচ্ছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং কর্মসংস্থান বাড়ানো। আমরা প্রথম থেকে বাংলাদেশের আইসিটির অগ্রযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে চেয়েছি। আমাদের মূল ভিশন হলো ‘বিল্ডিং আ ফুললি কানেক্টেড, ইন্টেলিজেন্ট বাংলাদেশ’। এই উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘পিক্সন্যাপিং’ থেকে বাঁচার কৌশল আবিষ্কার করলেন গবেষকেরা

টি এইচ মাহির 
‘পিক্সন্যাপিং’ থেকে বাঁচার কৌশল আবিষ্কার করলেন গবেষকেরা

সম্প্রতি অ্যান্ড্রয়েড ফোনসেটগুলোতে একধরনের সাইবার আক্রমণের হুমকি দেখা দিয়েছে। হ্যাকারদের এক বিশেষ ধরনের আক্রমণের শিকার হয়েছে কিছু মোবাইল ফোনসেট। ব্যক্তিগত তথ্যসহ টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন কোড পর্যন্ত চুরি করছে হ্যাকাররা। নতুন এই কৌশল ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলো থেকে ৩০ সেকেন্ডের কম সময়ে তারা তথ্য চুরি করতে সক্ষম।

‘পিক্সন্যাপিং’ নামে নতুন ধরনের এই হ্যাকিং কীভাবে হচ্ছে, তা আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ও কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাইওয়ানের ৩২তম এসিএম কম্পিউটার ও যোগাযোগ সুরক্ষা সম্মেলনে এই গবেষণা প্রকাশ করেন তাঁরা।

অনুমতি ছাড়া তথ্য চুরি সম্ভব

পিক্সন্যাপিং নামে এই নতুন হ্যাকিং কৌশলে একধরনের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ দিয়ে তথ্য চুরি করা হয়। অ্যাপটির জন্য মোবাইল ফোনসেটের কোনো সিস্টেমের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। এই ক্ষতিকর অ্যাপ ডিভাইসে থাকা অন্যান্য অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট ভিজিটের তথ্য পড়তে পারে। পাশাপাশি জিমেইল ও গুগল অথেনটিকেটরের মতো নন-ব্রাউজার অ্যাপ থেকেও তথ্য চুরি করতে পারে। গবেষকেরা পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনসেটকে গবেষণায় ব্যবহার করেছেন। গুগল পিক্সেল সিরিজের ৬, ৭, ৮, ৯ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৫, এই ডিভাইসগুলোতে ঝুঁকি খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। অন্যান্য ফোনসেট এখনো আক্রমণের শিকার হয়নি। কিন্তু হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেননি গবেষকেরা। গুগল ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিলেও গবেষকেরা বলছেন, হ্যাকাররা পরিবর্তিত কৌশল ব্যবহার করতে পারে।

লিংক পাঠানোর কৌশল

হ্যাকাররা এই আক্রমণ করার সময় প্রথমে একটি ক্ষতিকর অ্যাপ ব্যবহার করে। এই অ্যাপ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য মাধ্যমে লিংক পাঠিয়ে এই অ্যাপ ডাউনলোড করানো হতে পারে। ভুক্তভোগী এসব লিংকে ক্লিক করলে ফোনসেটে অ্যাপ ইনস্টল হয়ে যাবে। কখনো নকল অ্যাপ স্টোর, বিজ্ঞাপন, কিউআর কোডের মাধ্যমেও ফোনসেট ব্যবহারকারীদের প্রলুব্ধ করা হতে পারে। মোবাইল ফোনসেটে হ্যাকারদের অ্যাপ ইনস্টল হলে তার পিক্সেলের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে তথ্য চুরি করা হয়।

পিক্সন্যাপিং হলো একটি চতুর কৌশল, যেখানে একটি ক্ষতিকর অ্যাপ ফোনসেটের গ্রাফিকস সিস্টেম থেকে ক্ষুদ্র সংকেতগুলো পর্যবেক্ষণ করে এবং ধাপে ধাপে অন্য অ্যাপগুলো স্ক্রিনে কী করছে তা বের করে।

এটি টু ফ্যাক্টর কোড বা মেসেজ প্রিভিউর

মতো সংক্ষিপ্ত এবং সংবেদনশীল জিনিসগুলো দেখতে পারে। এটি সিস্টেমের কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই কাজ করে। এই সাইবার আক্রমণ অনেকটা ২০২৩ সালের জিপিইউ ডট জিপ আক্রমণের মতো।

পিক্সন্যাপিং নামে নতুন এই সাইবার আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনসেট যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অ্যান্ড্রয়েডের নতুন প্যাচ, আপডেট বা সিকিউরিটি আপডেট এলে তা ইনস্টল করা উচিত। বেনামি অ্যাপ স্টোর এবং ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে। ফোনসেট ডাউনলোড করা সব অ্যাপের সিস্টেম পারমিশন যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং অ্যাপগুলোতে একাধিক সিকিউরিটি ব্যবহার করতে হবে। যেমন পিন বা ফিঙ্গারপ্রিন্টের পাশাপাশি আলাদা একটি অ্যাপ লক ব্যবহার করা যায়। যদি সম্ভব হয়, তাহলে ফিজিক্যাল কি ব্যবহার করতে হবে।

সূত্র: দ্য হ্যাকার নিউজ, দ্য রেজিস্ট্রার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্যানভার এআই এখন আরও উন্নত

ফিচার ডেস্ক
ক্যানভার এআই এখন আরও উন্নত

গ্রাফিক ডিজাইনে যাঁরা পারদর্শী নন, তাঁদের কাছে ক্যানভা নতুন এক দুয়ার খুলে দিয়েছে। যে কেউ এখন এটি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত অথবা পেশাদার কাজ করতে পারেন। সময়ের সঙ্গে আরও উন্নত হয়েছে এই ডিজাইন প্ল্যাটফর্ম। এবার তাতে যোগ হলো তাদের নিজস্ব এআই-চালিত মডেল।

নতুন এই মডেল ডিজাইনের লেয়ার ও ফরম্যাট বুঝে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি এনেছে নতুন কিছু ফিচার, স্প্রেডশিট টুলস, মিনি অ্যাপ তৈরির সুবিধা।

ডিজাইন মডেলে বড় পরিবর্তন

ক্যানভা জানিয়েছে, তাদের নতুন ডিজাইন মডেলটি নিজেরাই তৈরি করেছে। এটি সাধারণ বা সমতল ছবি তৈরি করা ছাড়াও লেয়ার, অবজেক্টসহ ডিজাইন করতে পারে। এর ফলে যাঁরা অ্যাপটি ব্যবহার করবেন, তাঁরা চাইলে সহজে নিজের মতো সম্পাদনা করতে পারবেন। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট, প্রেজেন্টেশন, হোয়াইট বোর্ড বা ওয়েবসাইট—সব জায়গায় কাজ করবে। ক্যানভার প্রোডাক্টের প্রধান রবার্ট কাওয়ালস্কি বলেছেন, ‘আগে আমরা শুধু সাধারণ ছবি তৈরি করতাম। তবে এখন ব্যবহারকারীরা চান প্রম্পট দিয়ে ছবি বা ডিজাইন তৈরি করতে এবং সেটি তাঁদের নিজের মতো সম্পাদনা করতে; যাতে ডিজাইন আরও প্রয়োজন অনুযায়ী হয়।’

আরও উন্নত ক্যানভা এআই

ক্যানভায় এর আগেও এআই-সুবিধা চালু ছিল। যাকে বলা হতো ক্যানভা এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট। এখানে শুধু লেখা প্রম্পট দিয়ে ছবি বা ডিজাইন তৈরি করা যেত। কিন্তু নতুন আপডেটে ব্যবহারকারীরা আরও উন্নত উপায়ে ছবি তৈরি করতে পারবেন।

  • টেক্সট বা মিডিয়া সাজেশন: কেউ যদি কোনো ডিজাইনে লেখা, ছবি কিংবা অন্য উপাদান যোগ করতে চান, সেই পরামর্শ নিতে পারবেন নতুন এই মডেল থেকে। যেমন কেউ যদি জানতে চান, ‘এই পোস্টে কোন ছবি ভালো লাগবে? বা শিরোনামের জন্য কোন ফন্ট ভালো হবে?’ সেটা জানিয়ে দেবে ক্যানভার এআই।
  • থ্রিডি অবজেক্ট তৈরি: আগে শুধু ছবি কিংবা গ্রাফিকস ব্যবহার করা যেত ক্যানভায়। নতুন আপডেটে এআইকে বলে থ্রিডি অবজেক্টও বানানো যাবে। এটি ডিজাইনে আরও বাস্তবসম্মত ও প্রাণবন্ত দেখাবে।
  • আর্ট স্টাইল অনুকরণ: এআই এখন আর্ট বা ডিজাইন স্টাইল কপি করতে পারবে। যেমন চাইলে একটি ডিজাইনকে পিকাসোর স্টাইল বা ওয়াটার কালার লুক দেওয়া যাবে।

canva

স্প্রেডশিট ও অ্যাপ সংযুক্তির নতুন সুবিধা

ক্যানভা তাদের স্প্রেডশিট ও মিনি অ্যাপ ফিচার এনেছে একসঙ্গে। এর ফলে স্প্রেডশিটে রাখা তথ্য ব্যবহার করে সহজে চার্ট, গ্রাফ বা অন্যান্য ভিজ্যুয়াল উইজেট তৈরি করা যাবে। এটি ডিজাইন কিংবা প্রেজেন্টেশনে ব্যবহার করা যাবে। ফলে ডেটা উপস্থাপনা অনেক সহজ ও দ্রুত হবে।

ক্যানভা বলছে, এই নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তারা শুধু একটি সাধারণ ডিজাইন প্ল্যাটফর্ম নয়, এআই-চালিত সম্পূর্ণ ডিজাইন ইকোসিস্টেমে পরিণত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাডোবির মতো পেশাদার টুলসের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্যানভা।

সূত্র: টেকক্রাঞ্চ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত