Ajker Patrika

ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরেও আছে গৌরবের গল্প

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৪৪
ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরেও আছে গৌরবের গল্প

জনপ্রিয়তার নিক্তিতে এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে এগিয়ে ক্রিকেট আর ফুটবল। তবে এ দুইয়ের বাইরে অন্য খেলাতেও গত পাঁচ দশকে আছে বলার মতো অনেক অর্জন। আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেখে নেওয়া যাক সেসব অর্জন।

মুজিবর রহমান মল্লিক।মুজিবরের সোনার হাসি (১৯৮৪) 
নেপালের কাঠমান্ডু। সাউথ এশিয়ান (সাফ) গেমসের প্রথম আসর। ২০০ অ্যাথলেট নিয়ে যখন সোনা জিততে না পারার হতাশায় ডুবতে বসেছিল বাংলাদেশ, তখনই সতীর্থদের আলো দেখালেন এক অ্যাথলেট। ট্রিপল জাম্পে সোনা জিতলেন মুজিবর রহমান মল্লিক। এসএ গেমসে প্রথম সোনাজয়ীকে পেল বাংলাদেশ। 

শুধু একটি নয়, একই আসরে আরেকটি সোনাজয়ী ইভেন্টের অংশীদার ছিলেন মুজিবর রহমান। ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতেও সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। সাইদুর রহমান ডন, শাহ আলম ও আফতাব মোল্লার সঙ্গে চতুর্থ সঙ্গী ছিলেন মুজিবর রহমান। দেশে ফিরে ফুলেল সংবর্ধনা তো ছিলই, নিজের গ্রামের বাড়িতে দুই কিলোমিটারজুড়ে রাস্তা সাজিয়ে মুজিবরকে বরণ করে নিয়েছিল তাঁর গ্রামবাসী। 

শাহ আলমদ্রুতমানবের ট্র্যাজেডির বিদায় (১৯৯০) 
সাফল্যে তিনি এখনো দেশের সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টার। ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশের স্প্রিন্টারদের পেছনে হয়েছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার ‘দ্রুতমানব’। তা-ও একবার নয়, দুই দুইবার। শাহ আলমের কাছে আরও পাওয়ার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিজেই দিলেন নিজেকে ছুটি। 

ঢাকার মাঠে ১৯৮৫ সাফ গেমসের আসরে নতুন রেকর্ড ১০.৮০ সেকেন্ড সময়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতেছিলেন শাহ আলম। দুই বছর পর কলকাতা সাফ গেমসেও ধরে রাখলেন সোনা। সেটাও নিজের রেকর্ড ভেঙে। ১০.৭৯ সেকেন্ডে গড়লেন নতুন আরেক রেকর্ড। 

১৯৮৯ ইসলামাবাদ সাফ গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন শাহ আলম। তাতে পূরণ হয়নি হ্যাটট্রিক ‘দ্রুতমানব’ খেতাব জয়ের স্বপ্ন। সেই ব্যথা বুকে নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন ১৯৯০ বেইজিংয়ে এশিয়ান গেমসের জন্য। গেমসের আগেভাগে ছুটিতে গিয়েছিলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। ফেরার পথে ২৯ মে ট্রাকের ধাক্কায় নিভে যায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা অ্যাথলেটের প্রাণ। ঠিক ২০ বছর পর আরেক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মাদ্রাজ সাফ গেমসে ২০০ মিটারে সোনাজয়ী স্প্রিন্টার মাহবুব আলম। সেই দুর্ঘটনার ঘাতক ছিলও এক ট্রাক! 

শাহানা পারভীন।শাহানার সোনাজয়ী লক্ষ্যভেদ (১৯৯১) 
১৯৮৪ কাঠমান্ডু সাফ গেমসে বাংলাদেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছিলেন মুজিবর রহমান মল্লিক। এর পরের আসরগুলোতে নিয়মিত সোনা এলেও অপূর্ণতা ছিল একটা জায়গাতেই, কোনো নারী অ্যাথলেটের কাছ থেকেই সোনা পাচ্ছিল না দেশ। 

সেই আক্ষেপ মিটেছিল ১৯৯১ সালে। কলম্বো সাফ গেমসে। সেই আসরে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল শুটিং। আর তাতেই দেশকে সাফল্য এনে দেন কাজী শাহানা পারভীন। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশি নারীর সেটাই ছিল প্রথম সোনা জয়। অংশ নেন ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিকে। অলিম্পিকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম নারীও তিনি। ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সাফ গেমসেও তাঁর লক্ষ্যভেদে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। 

বিমল চন্দ্র তরফদার।বিমলের উত্থান-পতন (১৯৯৩) 
শাহ আলমের অকালপ্রয়াণে স্প্রিন্টে বাংলাদেশের আধিপত্য কমে যাবে কি না, এমন একটা সংশয় ছিলই। সেই সংশয় কেটে গেল ঢাকার মাঠে ১৯৯৩ সাফ গেমসে। ১০.৬১ সেকেন্ড সময়ে নতুন রেকর্ড গড়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনলেন ১৯ বছরের তরুণ বিমল চন্দ্র তরফদার। সোনা জিতলেও নিজের জীবনের অনিশ্চয়তায় ডুবতে বসেছিলেন বিমল। ১৯৯৮ আটলান্টা অলিম্পিকে অংশ নিতে গিয়ে আর দেশেই ফিরলেন না। পরিবার নিয়ে তিনি এখন নিউইয়র্কে থাকেন।

 আসিফ হোসেন খান কমনওয়েলথ জয়ী আসিফ (২০০২) 
বয়স মাত্র ১৫। বাংলাদেশ গেমসে শুটিংয়ে তৃতীয় হওয়া এক কিশোরকে নিয়ে ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে খেলতে গিয়েছিল। কেউ ভাবেওনি আসিফ হোসেন খান নামের সেই কিশোর গড়বে ইতিহাস! 

খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না বলেই হয়তো ইতিহাস গড়তে পেরেছিলেন আসিফ। কিশোর বয়স চাঞ্চল্য, চাপকে পাত্তা না দিয়েই ভারতের অভিনব বিন্দ্রাকে পেছনে ফেলে কমনওয়েলথ গেমসে শুটিংয়ে সোনা জিতেছিলেন আসিফ। ৬৯১ দশমিক ৯ স্কোরে গড়েন বিশ্ব রেকর্ড। 

কৈশোরের সেই সাফল্যের পর যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যান আসিফ। কমনওয়েলথের পর বড় সাফল্য বলতে ইসলামাবাদ সাফ গেমসে সোনা জয়। ২০০৬ সালে পুলিশের কাছে মার খাওয়ার পর শুটিং থেকে যেন পুরোপুরি মুছে গেল আসিফের নাম। যাকে হারিয়ে জিতেছিলেন কমনওয়েলথ গেমসের সোনা, সেই অভিনব বিন্দ্রা ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে জিতলেন সোনা। আক্ষেপের নাম হয়ে রইলেন আসিফ। 

গলফার সিদ্দিকুর রহমান।সিদ্দিকুরের ব্রুনাই জয় (২০১০) 
ধনীদের খেলা গলফের সম্পর্কে এই দেশের মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষের ধারণা খুব বেশি ছিল না বললেই চলে। বিশ্ব খেলাধুলার নিয়মিত যাঁরা খোঁজখবর রাখতেন তাঁরা হয়তো জানতেন যে এই গলফ খেলেই বিলিয়নিয়ার হয়েছেন টাইগার উডস নামের এক মার্কিন গলফার। এক টুর্নামেন্ট জিতলে ন্যূনতম আয় করা সম্ভব সেটাই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্যাডিবয় থেকে পেশাদার গলফার সিদ্দিকুর রহমান। 

২০১০ সালে ব্রুনাই ওপেন জিতে হইচই ফেলে দেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর সেই শিরোপায় দেশের মানুষের কাছে নতুন করে জন্ম নেয় গলফ নিয়ে আগ্রহ। প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ব্রুনাই এশিয়ান ট্যুর জিতেছিলেন সিদ্দিক। পুরস্কার হিসেবে পান ৫৪ হাজার ডলার। ২০১৩ সালে ভারতের দিল্লিতে হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন জেতেন। পুরস্কার পেয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে খেলেন গলফ বিশ্বকাপে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রিও অলিম্পিকে সরাসরি সুযোগ পাওয়ার কৃতিত্বটাও তাঁর দখলে। 

মাবিয়ামাবিয়া কাঁদলেন, কাঁদালেন (২০১৬) 
মাথার ওপর জাতীয় পতাকা। বাজছে জাতীয় সংগীত। সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে এক অ্যাথলেটের অঝোরে কান্না। ২০১৬ গুহাটি সাফ গেমসে মাবিয়া আক্তার সীমান্তের এই কান্না নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়।

কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে সাফল্যের হাসিতে না হেসে কেঁদেছিলেন মাবিয়া। ৬৩ কেজি শ্রেণিতে ভারোত্তলনে প্রথম নারী হিসেবে জিতেছিলেন সোনা। পদক, দেশ আর জাতীয় সংগীতের বাজনায় আবেগকে মানাতে পারছিলেন না মাবিয়া। সারা জীবনের দুঃখ, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের চিত্র হয়ে উঠেছিল মাবিয়ার সেই কান্না। 

রোমান সানারোমান সানার অলিম্পিকের টিকিট (২০১৯) 
অ্যাথলেটিকসে বড় কোনো সাফল্য নেই। ফুটবল যেন ডুবতে বসেছে। দেশের মানুষের সব চাওয়া তাই ক্রিকেটকে ঘিরেই। আড়ালে, নিভৃতে উঠে এসে হঠাৎই চমকে দিয়েছে আর্চারি নামের অজানা এক খেলা। ক্রিকেটের পর গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সাফল্য এসেছে এই আর্চারি থেকেই। বিশেষ করে বললে রোমান সানা নামের এক তিরন্দাজ থেকে।

রোমান যে আসছেন তার নমুনা পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েক বছর ধরেই। ২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এশিয়া কাপ স্টেজ-২ ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে রিকার্ভ এককে প্রথম সোনা জয়। ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে ঢাকায় প্রথম আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ইলিমিনেশন রাউন্ডের রিকার্ভ ডিভিশনের পুরুষ দলগত ইভেন্টে সানোয়ার হোসেন ও তামিমুল ইসলামকে নিয়ে এবং মিশ্র দলগত ইভেন্টে বিউটি রায়কে নিয়ে সোনা জয় তো ছিলই। ২০১৯ সালে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ পুরুষ এককে জেতেন রুপা। 

কিন্তু রোমানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সাফল্যটা আসে ২০১৯ সালের জুনে। নেদারল্যান্ডসে ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশি সরাসরি জায়গা পান টোকিও অলিম্পিকে। এই বছরের মে মাসে লোজানে ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের স্টেজ-২ এর রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টে দিয়া সিদ্দিকীকে নিয়ে জিতেছেন রুপাও।

পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্যাম্প ন্যুতে দীর্ঘদিন পর ফিরে মেসির আবেগঘন পোস্ট

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৪
দীর্ঘ দিন পর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ দিন পর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত

লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার পর কেটে গেছে চার বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু যে ক্লাবে তিনি প্রায় দুই দশক কাটিয়েছেন, তাঁর ‘মেসি’ হয়ে ওঠা যেখানে, সেই জায়গা কি এত সহজেই স্মৃতি থেকে ‘ডিলিট’ করা সম্ভব! দীর্ঘদিন পর ফিরে মেসি নস্টালজিক হয়ে পড়লেন।

৮৯৪ দিন পর ৭ নভেম্বর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরেছে বার্সেলোনা ফুটবল। যে ক্লাবের জার্সিতে মেসি অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন, তাঁর অনেক স্মৃতি ক্যাম্প ন্যুতে, সেখানে অনেকটা নিভৃতে ঘুরে গেলেন তিনি। মাঠে কিছু ছবি তুলে নিজের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে সেটা পোস্ট করেন মেসি। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লেখেন, ‘আমি গত রাতে ফিরে গিয়েছিলাম এমন এক জায়গায়, যেটাকে অনেক মিস করি। এই জায়গাটা ছিল আমার মন-প্রাণ। অনেক সুখ ছিল এখানে। আমি যে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ সেটা আপনারা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।’

২০২১ সালে কান্নাভেজা চোখে ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে গিয়েছিলেন মেসি। সেই দৃশ্য ফুটবলভক্তদের স্মৃতিতে এখনো তরতাজা। বার্সায় এরপর তাঁর ফেরার গুঞ্জন শোনা গেলেও সেটা গুঞ্জনই রয়ে গেছে। আর্জেন্টাইন তারকা ফরোয়ার্ড ফিরতে পারেননি বার্সায়। ইনস্টাগ্রামে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড বলেন, ‘একদিন আবার ফিরতে পারব। খেলোয়াড় হিসেবে বিদায় জানানোর জন্য নয়। বরং এমন কিছুর জন্য যেটা আগে কখনো পারিনি।’

বার্সা ছেড়ে মেসি ২০২১ সালে গিয়েছিলেন প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি)। কিন্তু দুই বছর থাকার পর পিএসজির পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড পাড়ি জমান ইন্টার মায়ামি। ঠিক তার এক মাস আগে (২০২৩-এর জুনে) সংস্কারের জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্প ন্যুতে। ৮৯৪ দিন পর ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক ক্যাম্প ন্যুতে ফেরার পর অনুশীলন করেছেন রবার্ট লেভানডফস্কি-লামিনে ইয়ামালরা। এদিকে মায়ামির জার্সিতে ২৮ মাসে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলে ৮৫ ম্যাচ খেলেছেন। ৭৬ গোল করেছেন ও অ্যাসিস্ট করেছেন ৩৮ গোলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুই মলাটে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ৫০ ম্যাচের ‘টিকিট’, দাম কত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশ করা হয়েছে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশ করা হয়েছে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’। ছবি: ফেসবুক

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর ২৫ বছর পূর্ণ করে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে হাঁটিহাঁটি পায়ে শুরু হয় টেস্টে বাংলাদেশের পথচলা। ২৫ বছরে ঐতিহাসিক কিছু মুহূর্ত নিয়ে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ নামে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। বইটি কেনা যাবে ৮০০ টাকায়।

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী চলা ক্রিকেট কনফারেন্স শেষ হলো আজ। ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে বাংলাদেশের আড়াই দশকের স্মরণীয় মুহূর্ত নিয়ে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ প্রকাশ করেছে ক্রিকেট স্মারক সংগ্রাহক জুনায়েদ পাইকার। ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে বাছাই করা ৫০টি ঐতিহাসিক ম্যাচ টিকিট নিয়ে সাজানো এই গ্রন্থে ফুটে উঠেছে আড়াই দশকের আবেগ, স্মৃতি ও গৌরব। জুনায়েদ বলেন, ‘এই টিকেট শুধু স্মারক নয়, আমাদের ক্রিকেটের পথচলা ও অগ্রগতির প্রতীক।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট জাদুঘর ফেসবুকে বইটির একটি বিজ্ঞাপনও করেছে। দুই মলাটের এই বইয়ের দাম ৮০০ টাকা। বইটি কীভাবে কেনা যাবে, সেটার লিংকও বাংলাদেশ ক্রিকেট জাদুঘর ফেসবুকে দিয়েছে।

‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ স্মারকগ্রন্থে বাংলাদেশের শততম টেস্ট জয়ও থাকবে বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন জুনায়েদ। ২০১৭ সালে কলম্বোর পি সারা ওভালে সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচসহ বাংলাদেশের স্মরণীয় কিছু সিরিজ জয়ও থাকবে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ স্মারকগ্রন্থে। বইয়ে নিজের শুভেচ্ছা বার্তায় বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘প্রতিটি টিকেটই একটি গল্প-মুহূর্ত, মাইলফলক ও আবেগের গল্প, যা আমাদের ক্রিকেট পরিচয়কে গড়ে তুলেছে।’

টেস্ট অভিষেকের রজতজয়ন্তী নিয়ে যখন ঢাকায় উৎসব, নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল অবস্থান করছে সিলেটে। আগামীকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট মিরপুরে শুরু হবে ১৯ নভেম্বর। এই টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিকুর রহিম শততম টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুটবল নিয়ে আসিফের ‘অপমানজনক’ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ বাফুফে সভাপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৯
আসিফ আকবরের কুরুচিকর মন্তব্যে খেপেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ছবি: ফাইল ছবি
আসিফ আকবরের কুরুচিকর মন্তব্যে খেপেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ছবি: ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মধ্যে ‘যুদ্ধ’ লেগে গেছে। যুদ্ধের কারণ আসিফ আকবরের ফুটবল নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য। আলোড়ন তোলা এই বক্তব্যের পর খেপেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল।

টেস্ট অভিষেকে বাংলাদেশের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে গতকাল ক্রিকেট কনফারেন্সের প্রথম দিনে বিসিবি পরিচালক আসিফ আকবর ফুটবল নিয়ে মারপিটের কথা বলেছিলেন। আজ ঢাকার একটি চার তারকা হোটেলে নারী ফুটবলের একটি প্রোগ্রামে তাবিথের কাছে সেই প্রসঙ্গ। উত্তরে সাংবাদিকদের বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘দেখুন আমরা যারা ফুটবল নিয়ে কাজ করি বা ফুটবলটাকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে জাগ্রত করার চেষ্টা করছি, যখনই আমরা ফুটবল নিয়ে কোন নেতিবাচক কমেন্ট আমরা শুনি, অবশ্যই আমরা ব্যথিত হই এবং আঘাতপ্রাপ্ত হই। তাও কদিন আগে আমাদের ক্রিকেট কনফারেন্সের সময় আমরা একটা বক্তব্য শুনেছিলাম যেটা ফুটবলের বিরুদ্ধে যায় এবং খেলোয়াড়দের ওপর অপমানজনক একটা মন্তব্য করা হয়েছে। তার প্রসঙ্গে আমি ব্যক্তিগত প্যাডে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিসিবি সভাপতির কাছে একটা চিঠি পাঠিয়েছি।’

আসিফের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বাফুফে একটা চিঠি এরই মধ্যে পাঠিয়েছে বিসিবির কাছে। চিঠির জবাবে বিসিবি একটা সমাধানের পথ খুঁজে দেবে বলে আশা তাবিথের। ঢাকার একটি চার তারকা হোটেলে নারী ফুটবলের একটি প্রোগ্রামে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘আশা করি, এই চিঠির উত্তরে আমরা অনেক ব্যাপারে স্পষ্ট জানতে পারব। যখন স্পষ্ট কিছু জানতে পারব বা বিসিবির অবস্থান আমরা জানতে পারব, সেখানে সমাধানের একটা পথ খুঁজে নেব। আমরা সবাই খেলোয়াড়। আমরা সবাই ক্রীড়াবিদ। আর আমাদের সকল ফেডারেশনের দায়িত্ব হলো ঐক্যবদ্ধ থাকা। তা আমরা চাইব না কোনো একটা ইস্যুতে বা কোনো কারোর ইস্যুতে সেটা আমাদের আমাদের বিভক্ত করে ফেলে। অতি শীঘ্রই আপনারা দেখবেন যে সকল ক্রীড়া ফেডারেশন এক হয়ে বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য আমরা কাজ করছি।’

দেশের ৬৪ জেলার ক্রিকেট কোচ, সংগঠক ও ক্রীড়া কর্মকর্তাদের নিয়ে গতকাল শুরু হয়েছে বিসিবির দুই দিনব্যাপী ক্রিকেট কনফারেন্স। গতকাল ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে ক্রিকেট কনফারেন্সের প্রথম দিনে বিসিবি পরিচালক ও সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর বলেছিলেন, ‘ফুটবলারদের জন্য (ক্রিকেট) খেলা যাচ্ছে না সারা দেশে। তারা উইকেট ভেঙে ফেলল, উইকেট নষ্ট করে ফেলেছে। আবার ২৪ তারিখ আবাহনী-মোহামেডান ফুটবল খেলা কুমিল্লা স্টেডিয়ামে। এই সমস্যাটা শুধু কুমিল্লার না। প্রতিটা জেলার স্টেডিয়াম দখল করে রেখেছে ফুটবল, প্রতিটা জেলার যেখানে ফুটবলের কাজ নেই, সেখানেও ফুটবল দখল করে রেখেছে এবং ফুটবলারদের ব্যবহার খুব খারাপ।’ তাঁর এমন মন্তব্যের পর নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশের ফুটবল অঙ্গনে। বিসিবির এই পরিচালক ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন ফুটবলাররা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নারী ফুটবলার তুলে আনতে ফিফার সঙ্গে মিলে বাফুফের উদ্যোগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফিফা কর্মকর্তাকে (ডানে) জার্সি তুলে দিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি: বাফুফে
ফিফা কর্মকর্তাকে (ডানে) জার্সি তুলে দিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি: বাফুফে

বিশ্বজুড়ে নারী ফুটবলের প্রসারের লক্ষ্যে ‘এমপাওয়ার হার’ নামে এক বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ফিফা। এশিয়ান অঞ্চলে নারী ফুটবলে উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান সাইমন আন্তোনির উপস্থিতিতে ২০২৫-২৮ চক্রের সেই পরিকল্পনায় যুক্ত হলো বাংলাদেশও। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য নারী ফুটবলারদের অংশগ্রহণ, বাণিজ্যিক উন্নয়ন বৃদ্ধি ও ভিত্তি তৈরি করা।

নারী কোচের বর্তমান সংখ্যা নিয়ে সাইমন বলেন, ‘আমরা একটা জরিপ করেছি। সেখানে দেখা গেছে নারী-পুরুষ লিগ মিলিয়ে নারী কোচের সংখ্যা মাত্র ২২ শতাংশ। আমরা এই চার বছরে অনেক নারী কোচ বাড়াতে চাই।’ বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ফিফার এই উদ্যোগের সঙ্গে বাফুফে সম্পৃক্ত হতে পেরে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি এই উদ্যোগের মাধ্যমে নারী ফুটবলে কার্যকর পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন, ‘নারী ফুটবলে আমাদের ক্লাব সংখ্যা কম। নারীদের ঘরোয়া লিগ বাড়ানো, তাদের আরও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টা করব। ফিফা আমাদের টেকনিক্যাল ও আর্থিকভাবে সহায়তা করবে।’

বাফুফে ২০২৫-২৮ সালে নারী ফুটবলে কী কী করতে চায় সেই পরিকল্পনা ডিসপ্লেও করেনি কিংবা পুরোপুরি প্রকাশও করেনি। মাঠের খেলা বৃদ্ধির পাশাপাশি নারী ফুটবলারদের সুরক্ষার বিষয়টিও বাফুফে সভাপতি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু নারী ফুটবলারদের খেলার মান উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ থাকব না। নারী হিসেবে তাদের সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতার পাশেও দাঁড়াব। অনেক সময় নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়। আমরা সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেব।’

আজকের অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো সেসা, মরক্কো দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স উপস্থিত ছিলেন। মরক্কো দূতাবাসের কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উন্নয়নে মরক্কো সব সময় পাশে থাকবে।’ আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা সাফল্য আনছে এটা আসলেই বেশ গর্বের বিষয়।’

বাংলাদেশের নারী ফুটবলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ঢাকা ব্যাংক। আজকের অনুষ্ঠানে ঢাকা ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, ‘ঢাকা ব্যাংক নারী ফুটবলের সঙ্গে থাকতে পেরে গর্বিত। আগামী দিনেও ঢাকা ব্যাংক নারী ফুটবলারদের সাথে থাকবে।’ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা ফিফা কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের পক্ষে জার্সি তুলে দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত