Ajker Patrika

এনামুল হক বিজয়ের সাক্ষাৎকার

নেতিবাচক কথা, গালি ভালোবাসা হিসেবেই দেখি

২০১৪ সালে ৫০ সেঞ্চুরির স্বপ্ন একটি কাগজে লিখে রেখেছিলেন এনামুল হক বিজয়। ২০২৫ সালে এসে সেঞ্চুরির ‘ফিফটি’ই করেননি, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করার পুরস্কার হিসেবে দুই বছর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ দলে জায়গা পেয়েছেন বিজয়। গত পরশু মিরপুরে স্বীকৃত ক্রিকেটে তাঁর ৫১তম সেঞ্চুরির দিনে আজকের পত্রিকার সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন, তখনো চট্টগ্রাম টেস্টের বাংলাদেশ দল ঘোষণা হয়নি। বিজয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ রিয়াদ

আহমেদ রিয়াদ, ঢাকা
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৩: ০৫
তিন বছর পর টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়। ছবি: এএফপি
তিন বছর পর টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়। ছবি: এএফপি

প্রশ্ন: লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ইতিহাসেই এক মৌসুমে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করেছিলেন ২০২২ সালে। এবার করলেন দেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরির ‘ফিফটি’। সামনে কোন রেকর্ডটা করার স্বপ্ন দেখছেন?

এনামুল হক বিজয়: সত্যি বলতে কখনো রেকর্ডের পেছনে ছুটিনি। তবে যখন দেখি সামনে কোনো রেকর্ড ধরা দেওয়ার মতো, তখন স্বপ্নটা আপনা-আপনি চলে আসে। এখন পর্যন্ত আমার সেঞ্চুরি সংখ্যা ৫১। আমার কাছে এটা একটা বড় অর্জনই মনে হয়। সামনে একটা বিশেষ অর্জনের খুব কাছাকাছি আছি; তবে সেটা এখনই বলতে চাই না। আমি চাই না সেটা মানুষের নজরে পড়ে যাক। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, স্বপ্ন বা লক্ষ্য বললে সেটা ঘিরে একটা চাপ তৈরি হয়, অনেক সময় নজরেও পড়ে যায় (হাসি)। আমি যেমন খেলি, তেমনই খেলে যেতে চাই। যেমন এবার যখন ৪৭টা সেঞ্চুরি হয়েছিল, তখন বলেছিলাম ৫০টি করতে চাই। ঠিক তেমনি যখন পরের সেই স্বপ্নের খুব কাছাকাছি চলে যাব, তখনই আপনাদের জানাব।

প্রশ্ন: ১১ বছর আগে কোন ভাবনায় ওই নোটটা লিখেছিলেন যে ২০২৫ সালে ৫০টা সেঞ্চুরি করতে চান, আর সেটি পূরণ হবে, এটাও কি ভেবেছিলেন?

বিজয়: নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেই খেলে গেছি। জানতাম, আমি খারাপ ক্রিকেটার না। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই ২০১৪ সালে একদিন নিজের খাতায় লিখে রেখেছিলাম—২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি সেঞ্চুরি করতে চাই। যখন একটার পর একটা সেঞ্চুরি হচ্ছিল, তখন মনে হতো আমি হয়তো সেই সঠিক পথেই এগোচ্ছি। ভাবতাম, ধীরে ধীরে ঠিকই হয়তো পৌঁছে যাব লক্ষ্যে।

প্রশ্ন: ৫০টি সেঞ্চুরি করে বলেছেন, এর অর্ধেকটা জাতীয় দলে করতে পারলেও আরও বেশি তৃপ্তি দিত। জাতীয় দলের শুরুতে ধারাবাহিক সেঞ্চুরি করেছেন। পরে আর সেটা ধরে রাখা যায়নি, জায়গাও ধরে রাখা যায়নি। ঘাটতি কোথায় ছিল মনে হয়?

বিজয়: অনেক সময় ট্যালেন্ট বা স্কিলই সব নয়, মানসিক প্রস্তুতি আর চাপ সামলানোর ক্ষমতাটা বড় হয়ে ওঠে। ক্যারিয়ারের শুরুতে কিছু সাফল্য পেয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু হয়তো তখন পরিণত ছিলাম না সেভাবে। সেই অভিজ্ঞতার ঘাটতি হয়তো পরে কিছু কঠিন সময় ডেকে এনেছিল। তবে যতটুকু পথ পেরিয়েছি, মনে করি আমি সঠিক ছিলাম। নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল বলেই টিকে থাকতে পেরেছি। এখনো পারফর্ম করতে পারছি।

প্রশ্ন: হঠাৎ হঠাৎ জাতীয় দলে ফেরেন। কিন্তু সেসব সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি। এর পেছনের কারণ কী মনে হয়?

বিজয়: আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে গেছি। কখনো বুঝতে পারিনি, একাদশে থাকছি না কেন; আবার হঠাৎ দলে ডাকও পাচ্ছি। আমি কারও বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই না। জাতীয় দলে রাখা, না-রাখা সম্পূর্ণ বিসিবির বিষয়। শুধু এটুকু বলতে পারি, নিজের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখিনি। আমি সঠিক ছিলাম। নিজেকে পূর্ণ প্রস্তুত মনে হয়েছে। বিসিবির সবাইকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমার পক্ষে বা বিপক্ষে যে অবস্থানেই থাকুন না কেন। আমি কখনো কাউকে দোষ দিতে চাইনি। জাতীয় দলে পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টাও তাঁদের সিদ্ধান্ত। আমাকে নিয়ে তাঁরা কী ভেবেছেন, সেটি তাঁরাই ভালো জানেন। তবে আমার মনে হয়েছে, যতটুকু সুযোগ পেয়েছি, সেটিকে যথাসাধ্য কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। যদি আরও ধারাবাহিক সুযোগ পেতাম, হয়তো ছবিটা ভিন্ন হতে পারত।

অনুশীলনে ব্যস্ত এনামুল হক বিজয়। ছবি: বিসিবি
অনুশীলনে ব্যস্ত এনামুল হক বিজয়। ছবি: বিসিবি

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স জাতীয় দলে জায়গা পেতে সব সময় যথেষ্ট হয় না?

বিজয়: সত্যি বলতে, কখনো কখনো মনে হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক রান করেও জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া সহজ নয়। তবে অভিযোগ করার পাত্র আমি নই। এটাও মানি, ঘরোয়া আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ এক নয়। জাতীয় দলের নির্বাচকেরা নিশ্চয়ই সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন। নিজেকে প্রস্তুত রাখাটাই আমার কাজ। সুযোগ পেলে সেটাকে কাজে লাগানোই লক্ষ্য।

প্রশ্ন: ধারাবাহিক রান পেলেও অনেক সময় আপনার ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘স্বার্থপর ক্রিকেট’ খেলার অপবাদও শুনতে হয়েছে। এটা আপনাকে কতটা পীড়া দেয়?

বিজয়: ব্যথা তো অবশ্যই লাগে। কেউই নিজের জন্য খেলতে নামে না, আমিও না। আমি সব সময় দলের জন্য খেলি। ইনিংস বড় করতে গেলে অনেক সময় পরিস্থিতি বুঝে একটু ধীরে খেলার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বাইরের অনেকে হয়তো শুধু স্কোরবোর্ড দেখে বিচার করেন। মাঠের ভেতরের বাস্তবতা বা পরিকল্পনা বোঝেন না। ‘সেলফিশ’ অপবাদ শুনে মন খারাপ হয়, কষ্টও পাই। তবে সেই কষ্টকে আমি শক্তিতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করি। প্রতিবারই প্রমাণ করতে চাই, আমি কখনো দলের চেয়ে নিজেকে বড় করে দেখিনি।

প্রশ্ন: আপনার নামের সঙ্গে প্রায়ই কিছু নেতিবাচক শব্দ বা প্রশ্ন আসে, এটা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

বিজয়: আমি সব সময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করি। নেতিবাচক মন্তব্য বা সমালোচনা থাকবেই, বিশেষ করে আপনি যদি আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন। অনেকেই আমাকে ভালোবাসেন, আবার কেউ কেউ হয়তো পছন্দ করেন না। কিন্তু আমি অবাক হই, যখন দেখি কেউ আমাকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলছেন কিংবা গালিও দিচ্ছেন। আমি এটাকে নেতিবাচকভাবে নিই না। বরং ভাবি, তারা চায় আমি আরও ভালো খেলি। হয়তো আমি তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারিনি, তাই তারা হতাশ হয়ে এমন মন্তব্য করে। আমি সেটাকে একধরনের ভালোবাসা হিসেবেই দেখি।

প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক রান করেও আপনি মাঝে মাঝে দলে উপেক্ষিত হয়েছেন। নিজেকে বারবার প্রমাণ করতে গিয়ে কখনো কি হতাশা বা ক্লান্তি স্পর্শ করেছে?

বিজয়: ক্লান্তি মানুষকে পিছিয়ে দেয়। আমি সব সময় চেষ্টা করি মানসিকভাবে শান্ত থাকতে। যদি বারবার উপেক্ষিত হওয়ার কষ্টে ভেঙে পড়তাম, যদি নিজেকে ক্লান্ত ভাবতাম কিংবা এলিয়ে দিতাম—তাহলে কি এই ৫০টির বেশি সেঞ্চুরি করতে পারতাম? নিশ্চয়ই না। আমার আসলে কোনো ক্লান্তি নেই। আমি বিশ্বাস করি, যেদিন ক্রিকেট থেকে অবসর নেব, সেদিনই আমার ক্লান্তি শুরু হবে। তার আগে কোনো অবকাশ নেই। যতক্ষণ খেলার মধ্যে আছি, আমার কাজ একটাই—পারফর্ম করা। পেশাদার হিসেবে ক্লান্তির জায়গা দেখি না। ক্রিকেটাররা পরিশ্রম করতেই মাঠে নামে।

প্রশ্ন: আপনি যদি এখনকার ১৮-১৯ বছর বয়সী বিজয় হতেন, ক্যারিয়ারের কোন সিদ্ধান্তটা আপনি ভিন্নভাবে নিতেন বলে মনে হয়?

বিজয়: আলহামদুলিল্লাহ, এখন পর্যন্ত আমি যা পেয়েছি, তাতেই খুশি। যা কিছু অর্জন করেছি, সবই আল্লাহর রহমত। ভবিষ্যতেও তিনি যা দেবেন, তাকেও একইভাবে গ্রহণ করব। আমি কখনো অতৃপ্ত নই। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, যা পাই, সেটাই আমার জন্য নির্ধারিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

উদ্দীপনের ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সচিব মিহির কান্তির বিরুদ্ধে ৬ মামলা

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইন উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত