Ajker Patrika

‘দুবাই যামু, ক্রিকেট দেখতে’

রানা আব্বাস, ঢাকা
‘দুবাই যামু, ক্রিকেট দেখতে’

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) গত শনিবার রাজস্থান-দিল্লির ম্যাচে টিভি ক্যামেরা (ড্রোন ক্যামেরাই হবে) আবুধাবি স্টেডিয়ামের বাইরের দৃশ্য দেখাচ্ছিল। চোখে পড়ল ঊষর মরভূমিতে চোখজুড়ানো টুকরো টুকরো সবুজ ভূমি।

মরুর রাজ্যে ক্রিকেটের বীজ বুনে দেওয়া হয়েছিল আশির দশকের শুরুতে। বিপুল আর্থিক বিনিয়োগ, প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার আর উন্নত ব্যবস্থাপনায় এই ধূসর ভূমে সবুজ বৃক্ষের মতোই প্রাণবন্ত হয়েছে ক্রিকেট। আরব আমিরাত পরিণত হয়েছে ক্রিকেটের রাজধানী, অন্যভাবে বললে ক্রিকেট-হৃৎপিণ্ডে!

একটা সময় আমিরাতের ক্রিকেট-যজ্ঞের কেন্দ্র ছিল শারজা। আর তার বেশির ভাগই ছিল পাকিস্তানকেন্দ্রিক। গত দুই দশকে তার অংশীদার হয়েছে পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। আরব আমিরাত যেন ক্রিকেটের জটিল সব সমীকরণ মেলানোর গ্রহণযোগ্য এক সূত্র।

২০১৮ এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল ভারত। সে সময় ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক বৈরিতা চরমে ওঠায় টুর্নামেন্টের পাশে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে যায়। রাজনৈতিক ঝামেলায় একটা অর্থকরী টুর্নামেন্ট ভেস্তে গেলে সবারই ক্ষতি—এ ভাবনায় একটা সমঝোতায় আসে এশীয় ক্রিকেটের পরাশক্তিরা। সমাধান হয় আমিরাত। ভারতের ব্যবস্থাপনায় সে টুর্নামেন্ট হয় দুবাই-আবুধাবিতে।

আশি-নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান শারজায় ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছে একটা সফরকারী দল হিসেবে। গত দুই দশকে আমিরাতে তাদের খেলতে হচ্ছে ‘হোমগ্রাউন্ড’ বানিয়ে। নিরাপত্তার ইস্যুতে পাকিস্তানে ওপরের সারির টেস্ট খেলুড়ে দলগুলো সহজেই যেতে চায় না। আফগানিস্তান দল এখনো নিজের দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারে না। তাদের বড় সহায় এই মরুর দেশ। পাকিস্তান-আফগানিস্তান কেন, ‘বিপদে’ পড়ে ভারতও ঠাঁই নিয়েছে আমিরাতে। গত বছর করোনায় যখন আইপিএল নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা, তখন সমাধান হয়ে এসেছে দুবাই-আবুধাবি। আইপিএল না হওয়া মানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি। সেই ক্ষতি ঠেকাতে গত বছর আইপিএলের তাঁবু পড়েছে মরুতেই।

এ বছর নিজের মাঠেই আইপিএল আয়োজন করেছিল ভারত। কিন্তু করোনার কাছে হার মেনে মাঝপথে টুর্নামেন্ট থেমে গেল। এই সংকট থেকে উতরে যাওয়ার বটিকা আবার সেই দুবাই-আবুধাবি। আইপিএলই নয়; বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আয়োজকদের কাছে আকর্ষণীয় নাম আমিরাত। আর এবার প্রথমবারের মতো আইসিসির বড় টুর্নামেন্ট (কোনো বিশ্বকাপ) হতে যাচ্ছে এখানে। আগামী মাসে মরুতেই হবে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চ—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

জাভেদ মিয়াঁদাদ অবশ্য বলতে পারেন, আশির দশকেই আমিরাতে বড় বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছে। শারজার প্রতি ‘বড়ে মিয়া’র কী আত্মিক সম্পর্ক, ২০০৩ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘কাটিং এজে’ই পরিষ্কার। বইয়ে ‘শারজা’ নামে একটা অধ্যায়ই রেখেছেন মিয়াঁদাদ। সেটির শুরুতে লিখেছেন, ‘কে ভেবেছিল মধ্যপ্রাচ্যের একটি মরুর শহরে একদিন সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজন হবে! একটি ক্রিকেটের কেন্দ্র হিসেবে শারজার আবির্ভাব খেলাটার জন্যই ভালো হয়েছে। বিশেষ করে এশিয়ার ক্রিকেটে।’ বইয়ের আরেক জায়গায় লিখেছেন, ‘ক্রিকেটের অনেক ভালো কিছুর শুরু এই শারজায়।

নতুন এক ঠিকানায় বিশ্বমানের ক্রিকেট রপ্তানি হয়েছে, আধুনিক ক্রিকেটে সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক বিস্তার ছিল এটি। ক্রিকেট যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে, তেমনি নিরপেক্ষ ভেন্যু হওয়ায় ভারত-পাকিস্তানের দর্শকেরা দুই দেশের চিরবৈরিতা দূরে রেখে এক জায়গায় বসে সঠিক চেতনায় খেলাটা উপভোগ করেছে।’

মরুর দেশের প্রতি মিয়াঁদাদের ভালো লাগা আরও একটি কারণে। খেলোয়াড়ি জীবনের দুর্দান্ত কিছু কীর্তি তাঁর এখানেই। বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল শারজায় অনুষ্ঠিত ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলেশিয়া কাপের সেই ফাইনাল। ২৪৬ রান তাড়া করতে নামা পাকিস্তানকে মিয়াঁদাদ অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন চেতন শর্মাকে শেষ বলে ছক্কা মেরে। যেটি আজও ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা রোমাঞ্চকর ম্যাচ হিসেবে বিবেচিত।

শুধু মিয়াঁদাদই নন; ক্রিকেটের অনেক কিংবদন্তিই গৌরবের চিহ্ন এঁকেছেন মরুতে। ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে কোকাকোলা কাপটা বিখ্যাত হয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শচীন টেন্ডুলকারের টানা দুটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সৌজন্যে। দর্শকেরা শুধু দেখেন ক্রিকেটারদের ক্রিকেটশৈলীই। তবে মরুর কন্ডিশনে একজন খেলোয়াড়কে কতটা কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় তা টেন্ডুলকার নিজেই বলেছেন তাঁর আত্মজীবনী ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’-তে। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা কোকাকোলা কাপ ফাইনালের আগে নাকি তাঁর শরীরই চলছিল না। লিখেছেন, ‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর শক্ত হয়ে গেল। বাথরুমে হেঁটে যাওয়াটাও কঠিন হলো। পানিশূন্যতায় এটা হতে পারে। আমি যথেষ্ট পানি খেয়েছিলাম। ক্যারিয়ারের যে হাতে গোনা কয়েকবার সকালে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সমস্যা হয়েছে, এটি ছিল তার একটি।’

এই চ্যালেঞ্জ উতরে পরের দিন শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের ফাইনালে টেন্ডুলকার খেলেছিলেন ম্যাচ জেতানো ১৩৪ রানের ইনিংস। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন মার্সিডিজ এসএল ৬০০। টেন্ডুলকারের মার্সিডিজ পুরস্কারের কথা বলা বিশেষ কারণে। শারজার হাত ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দামি সব পুরস্কারের প্রচলন। মিয়াঁদাদ যেমন বলেছেন, ‘...শারজা প্রথম ভেন্যু, যেখানে ক্রিকেটারদের বড় অঙ্কের প্রাইজমানি দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে।’

অবশ্য এই টাকাপয়সা নিয়ে একটা মজার স্মৃতি আছে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের। পঞ্চম এশিয়া কাপ খেলতে ১৯৯৫ সালে মরুর দেশে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিস্তৃত দিগন্তে পাখা মেলা শুরু হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ, হাসিবুল হোসেন, জাভেদ ওমরদের; যাঁরা প্রত্যেকে পরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল নাম হিসেবে।

ওই এশিয়া কাপের কথা তুললেই বাংলাদেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির নির্বাচক হাবিবুলের স্মৃতিতে ভেসে আসে মজার একটা ঘটনা, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে স্লো ওভার রেটের কারণে ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড আমাদের হুমকি দিলেন ম্যাচ ফি কেটে নেওয়ার। আমরা ঘাবড়েই গেলাম! পেতামই মাত্র ৫০ ডলার ম্যাচ ফি। সেটিও হারানোর শঙ্কায়। পকেট-টকেট হাতড়ে লয়েডকে আমরা বললাম, যা আছে নিয়ে যান।’

‘আর্থিক ক্ষতি’র মুখে পড়তে গিয়ে কোনোভাবে রক্ষা পেয়েছিলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা। তবে বিপুল আর্থিক লাভের কথা ভেবেই আইসিসি তাদের সদর দপ্তর ইংল্যান্ড থেকে সরিয়ে দুবাইয়ে এনেছে। গত দুই দশকে আক্ষরিক অর্থেই সংযুক্ত আরব আমিরাত পরিণত হয়েছে ক্রিকেটের রাজধানীতে। একটা সময় যে দেশে ক্রিকেট ছিল শুধুই শারজাকেন্দ্রিক, সেটি এখন আরও বিস্তৃত।

অবশ্য শুধু ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডেই নয়, মরুর দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ আছে ক্রিকেটের অন্ধকার জগতেরও! ফিক্সিং কিংবা ম্যাচ গড়াপেটার আলোচনা উঠলেই অবধারিতভাবে চলে আসে ‘দুবাই’ নামটাও। 
আমজাদ হোসেনের নাটকের সংলাপ, ‘টাকা দাও দুবাই যামু’ ভীষণ জনপ্রিয় ছিল আশির দশকে। সেই সংলাপটা এখন একটু ঘুরিয়ে বলা যায়, ‘দুবাই যামু, ক্রিকেট দেখতে’। মজাটা হচ্ছে, গত চার দশকে যে দেশে ক্রিকেটের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড যতটা বিস্তৃত হয়েছে, তার তুলনায় ক্রিকেট খেলাটা সেই তিমিরেই থেকে গেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্যাম্প ন্যুতে দীর্ঘদিন পর ফিরে মেসির আবেগঘন পোস্ট

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৪
দীর্ঘ দিন পর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ দিন পর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত

লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার পর কেটে গেছে চার বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু যে ক্লাবে তিনি প্রায় দুই দশক কাটিয়েছেন, তাঁর ‘মেসি’ হয়ে ওঠা যেখানে, সেই জায়গা কি এত সহজেই স্মৃতি থেকে ‘ডিলিট’ করা সম্ভব! দীর্ঘদিন পর ফিরে মেসি নস্টালজিক হয়ে পড়লেন।

৮৯৪ দিন পর ৭ নভেম্বর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরেছে বার্সেলোনা ফুটবল। যে ক্লাবের জার্সিতে মেসি অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন, তাঁর অনেক স্মৃতি ক্যাম্প ন্যুতে, সেখানে অনেকটা নিভৃতে ঘুরে গেলেন তিনি। মাঠে কিছু ছবি তুলে নিজের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে সেটা পোস্ট করেন মেসি। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লেখেন, ‘আমি গত রাতে ফিরে গিয়েছিলাম এমন এক জায়গায়, যেটাকে অনেক মিস করি। এই জায়গাটা ছিল আমার মন-প্রাণ। অনেক সুখ ছিল এখানে। আমি যে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ সেটা আপনারা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।’

২০২১ সালে কান্নাভেজা চোখে ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে গিয়েছিলেন মেসি। সেই দৃশ্য ফুটবলভক্তদের স্মৃতিতে এখনো তরতাজা। বার্সায় এরপর তাঁর ফেরার গুঞ্জন শোনা গেলেও সেটা গুঞ্জনই রয়ে গেছে। আর্জেন্টাইন তারকা ফরোয়ার্ড ফিরতে পারেননি বার্সায়। ইনস্টাগ্রামে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড বলেন, ‘একদিন আবার ফিরতে পারব। খেলোয়াড় হিসেবে বিদায় জানানোর জন্য নয়। বরং এমন কিছুর জন্য যেটা আগে কখনো পারিনি।’

বার্সা ছেড়ে মেসি ২০২১ সালে গিয়েছিলেন প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি)। কিন্তু দুই বছর থাকার পর পিএসজির পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড পাড়ি জমান ইন্টার মায়ামি। ঠিক তার এক মাস আগে (২০২৩-এর জুনে) সংস্কারের জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্প ন্যুতে। ৮৯৪ দিন পর ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক ক্যাম্প ন্যুতে ফেরার পর অনুশীলন করেছেন রবার্ট লেভানডফস্কি-লামিনে ইয়ামালরা। এদিকে মায়ামির জার্সিতে ২৮ মাসে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলে ৮৫ ম্যাচ খেলেছেন। ৭৬ গোল করেছেন ও অ্যাসিস্ট করেছেন ৩৮ গোলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুই মলাটে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ৫০ ম্যাচের ‘টিকিট’, দাম কত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশ করা হয়েছে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশ করা হয়েছে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’। ছবি: ফেসবুক

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর ২৫ বছর পূর্ণ করে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে হাঁটিহাঁটি পায়ে শুরু হয় টেস্টে বাংলাদেশের পথচলা। ২৫ বছরে ঐতিহাসিক কিছু মুহূর্ত নিয়ে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ নামে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। বইটি কেনা যাবে ৮০০ টাকায়।

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী চলা ক্রিকেট কনফারেন্স শেষ হলো আজ। ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে বাংলাদেশের আড়াই দশকের স্মরণীয় মুহূর্ত নিয়ে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ প্রকাশ করেছে ক্রিকেট স্মারক সংগ্রাহক জুনায়েদ পাইকার। ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে বাছাই করা ৫০টি ঐতিহাসিক ম্যাচ টিকিট নিয়ে সাজানো এই গ্রন্থে ফুটে উঠেছে আড়াই দশকের আবেগ, স্মৃতি ও গৌরব। জুনায়েদ বলেন, ‘এই টিকেট শুধু স্মারক নয়, আমাদের ক্রিকেটের পথচলা ও অগ্রগতির প্রতীক।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট জাদুঘর ফেসবুকে বইটির একটি বিজ্ঞাপনও করেছে। দুই মলাটের এই বইয়ের দাম ৮০০ টাকা। বইটি কীভাবে কেনা যাবে, সেটার লিংকও বাংলাদেশ ক্রিকেট জাদুঘর ফেসবুকে দিয়েছে।

‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ স্মারকগ্রন্থে বাংলাদেশের শততম টেস্ট জয়ও থাকবে বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন জুনায়েদ। ২০১৭ সালে কলম্বোর পি সারা ওভালে সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচসহ বাংলাদেশের স্মরণীয় কিছু সিরিজ জয়ও থাকবে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ স্মারকগ্রন্থে। বইয়ে নিজের শুভেচ্ছা বার্তায় বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘প্রতিটি টিকেটই একটি গল্প-মুহূর্ত, মাইলফলক ও আবেগের গল্প, যা আমাদের ক্রিকেট পরিচয়কে গড়ে তুলেছে।’

টেস্ট অভিষেকের রজতজয়ন্তী নিয়ে যখন ঢাকায় উৎসব, নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল অবস্থান করছে সিলেটে। আগামীকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট মিরপুরে শুরু হবে ১৯ নভেম্বর। এই টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিকুর রহিম শততম টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুটবল নিয়ে আসিফের ‘অপমানজনক’ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ বাফুফে সভাপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৯
আসিফ আকবরের কুরুচিকর মন্তব্যে খেপেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ছবি: ফাইল ছবি
আসিফ আকবরের কুরুচিকর মন্তব্যে খেপেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ছবি: ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মধ্যে ‘যুদ্ধ’ লেগে গেছে। যুদ্ধের কারণ আসিফ আকবরের ফুটবল নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য। আলোড়ন তোলা এই বক্তব্যের পর খেপেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল।

টেস্ট অভিষেকে বাংলাদেশের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে গতকাল ক্রিকেট কনফারেন্সের প্রথম দিনে বিসিবি পরিচালক আসিফ আকবর ফুটবল নিয়ে মারপিটের কথা বলেছিলেন। আজ ঢাকার একটি চার তারকা হোটেলে নারী ফুটবলের একটি প্রোগ্রামে তাবিথের কাছে সেই প্রসঙ্গ। উত্তরে সাংবাদিকদের বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘দেখুন আমরা যারা ফুটবল নিয়ে কাজ করি বা ফুটবলটাকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে জাগ্রত করার চেষ্টা করছি, যখনই আমরা ফুটবল নিয়ে কোন নেতিবাচক কমেন্ট আমরা শুনি, অবশ্যই আমরা ব্যথিত হই এবং আঘাতপ্রাপ্ত হই। তাও কদিন আগে আমাদের ক্রিকেট কনফারেন্সের সময় আমরা একটা বক্তব্য শুনেছিলাম যেটা ফুটবলের বিরুদ্ধে যায় এবং খেলোয়াড়দের ওপর অপমানজনক একটা মন্তব্য করা হয়েছে। তার প্রসঙ্গে আমি ব্যক্তিগত প্যাডে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিসিবি সভাপতির কাছে একটা চিঠি পাঠিয়েছি।’

আসিফের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বাফুফে একটা চিঠি এরই মধ্যে পাঠিয়েছে বিসিবির কাছে। চিঠির জবাবে বিসিবি একটা সমাধানের পথ খুঁজে দেবে বলে আশা তাবিথের। ঢাকার একটি চার তারকা হোটেলে নারী ফুটবলের একটি প্রোগ্রামে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘আশা করি, এই চিঠির উত্তরে আমরা অনেক ব্যাপারে স্পষ্ট জানতে পারব। যখন স্পষ্ট কিছু জানতে পারব বা বিসিবির অবস্থান আমরা জানতে পারব, সেখানে সমাধানের একটা পথ খুঁজে নেব। আমরা সবাই খেলোয়াড়। আমরা সবাই ক্রীড়াবিদ। আর আমাদের সকল ফেডারেশনের দায়িত্ব হলো ঐক্যবদ্ধ থাকা। তা আমরা চাইব না কোনো একটা ইস্যুতে বা কোনো কারোর ইস্যুতে সেটা আমাদের আমাদের বিভক্ত করে ফেলে। অতি শীঘ্রই আপনারা দেখবেন যে সকল ক্রীড়া ফেডারেশন এক হয়ে বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য আমরা কাজ করছি।’

দেশের ৬৪ জেলার ক্রিকেট কোচ, সংগঠক ও ক্রীড়া কর্মকর্তাদের নিয়ে গতকাল শুরু হয়েছে বিসিবির দুই দিনব্যাপী ক্রিকেট কনফারেন্স। গতকাল ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে ক্রিকেট কনফারেন্সের প্রথম দিনে বিসিবি পরিচালক ও সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর বলেছিলেন, ‘ফুটবলারদের জন্য (ক্রিকেট) খেলা যাচ্ছে না সারা দেশে। তারা উইকেট ভেঙে ফেলল, উইকেট নষ্ট করে ফেলেছে। আবার ২৪ তারিখ আবাহনী-মোহামেডান ফুটবল খেলা কুমিল্লা স্টেডিয়ামে। এই সমস্যাটা শুধু কুমিল্লার না। প্রতিটা জেলার স্টেডিয়াম দখল করে রেখেছে ফুটবল, প্রতিটা জেলার যেখানে ফুটবলের কাজ নেই, সেখানেও ফুটবল দখল করে রেখেছে এবং ফুটবলারদের ব্যবহার খুব খারাপ।’ তাঁর এমন মন্তব্যের পর নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশের ফুটবল অঙ্গনে। বিসিবির এই পরিচালক ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন ফুটবলাররা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নারী ফুটবলার তুলে আনতে ফিফার সঙ্গে মিলে বাফুফের উদ্যোগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফিফা কর্মকর্তাকে (ডানে) জার্সি তুলে দিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি: বাফুফে
ফিফা কর্মকর্তাকে (ডানে) জার্সি তুলে দিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি: বাফুফে

বিশ্বজুড়ে নারী ফুটবলের প্রসারের লক্ষ্যে ‘এমপাওয়ার হার’ নামে এক বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ফিফা। এশিয়ান অঞ্চলে নারী ফুটবলে উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান সাইমন আন্তোনির উপস্থিতিতে ২০২৫-২৮ চক্রের সেই পরিকল্পনায় যুক্ত হলো বাংলাদেশও। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য নারী ফুটবলারদের অংশগ্রহণ, বাণিজ্যিক উন্নয়ন বৃদ্ধি ও ভিত্তি তৈরি করা।

নারী কোচের বর্তমান সংখ্যা নিয়ে সাইমন বলেন, ‘আমরা একটা জরিপ করেছি। সেখানে দেখা গেছে নারী-পুরুষ লিগ মিলিয়ে নারী কোচের সংখ্যা মাত্র ২২ শতাংশ। আমরা এই চার বছরে অনেক নারী কোচ বাড়াতে চাই।’ বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ফিফার এই উদ্যোগের সঙ্গে বাফুফে সম্পৃক্ত হতে পেরে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি এই উদ্যোগের মাধ্যমে নারী ফুটবলে কার্যকর পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন, ‘নারী ফুটবলে আমাদের ক্লাব সংখ্যা কম। নারীদের ঘরোয়া লিগ বাড়ানো, তাদের আরও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টা করব। ফিফা আমাদের টেকনিক্যাল ও আর্থিকভাবে সহায়তা করবে।’

বাফুফে ২০২৫-২৮ সালে নারী ফুটবলে কী কী করতে চায় সেই পরিকল্পনা ডিসপ্লেও করেনি কিংবা পুরোপুরি প্রকাশও করেনি। মাঠের খেলা বৃদ্ধির পাশাপাশি নারী ফুটবলারদের সুরক্ষার বিষয়টিও বাফুফে সভাপতি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু নারী ফুটবলারদের খেলার মান উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ থাকব না। নারী হিসেবে তাদের সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতার পাশেও দাঁড়াব। অনেক সময় নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়। আমরা সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেব।’

আজকের অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো সেসা, মরক্কো দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স উপস্থিত ছিলেন। মরক্কো দূতাবাসের কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উন্নয়নে মরক্কো সব সময় পাশে থাকবে।’ আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা সাফল্য আনছে এটা আসলেই বেশ গর্বের বিষয়।’

বাংলাদেশের নারী ফুটবলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ঢাকা ব্যাংক। আজকের অনুষ্ঠানে ঢাকা ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, ‘ঢাকা ব্যাংক নারী ফুটবলের সঙ্গে থাকতে পেরে গর্বিত। আগামী দিনেও ঢাকা ব্যাংক নারী ফুটবলারদের সাথে থাকবে।’ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা ফিফা কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের পক্ষে জার্সি তুলে দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত