রানা আব্বাস, ঢাকা
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) গত শনিবার রাজস্থান-দিল্লির ম্যাচে টিভি ক্যামেরা (ড্রোন ক্যামেরাই হবে) আবুধাবি স্টেডিয়ামের বাইরের দৃশ্য দেখাচ্ছিল। চোখে পড়ল ঊষর মরভূমিতে চোখজুড়ানো টুকরো টুকরো সবুজ ভূমি।
মরুর রাজ্যে ক্রিকেটের বীজ বুনে দেওয়া হয়েছিল আশির দশকের শুরুতে। বিপুল আর্থিক বিনিয়োগ, প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার আর উন্নত ব্যবস্থাপনায় এই ধূসর ভূমে সবুজ বৃক্ষের মতোই প্রাণবন্ত হয়েছে ক্রিকেট। আরব আমিরাত পরিণত হয়েছে ক্রিকেটের রাজধানী, অন্যভাবে বললে ক্রিকেট-হৃৎপিণ্ডে!
একটা সময় আমিরাতের ক্রিকেট-যজ্ঞের কেন্দ্র ছিল শারজা। আর তার বেশির ভাগই ছিল পাকিস্তানকেন্দ্রিক। গত দুই দশকে তার অংশীদার হয়েছে পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। আরব আমিরাত যেন ক্রিকেটের জটিল সব সমীকরণ মেলানোর গ্রহণযোগ্য এক সূত্র।
২০১৮ এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল ভারত। সে সময় ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক বৈরিতা চরমে ওঠায় টুর্নামেন্টের পাশে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে যায়। রাজনৈতিক ঝামেলায় একটা অর্থকরী টুর্নামেন্ট ভেস্তে গেলে সবারই ক্ষতি—এ ভাবনায় একটা সমঝোতায় আসে এশীয় ক্রিকেটের পরাশক্তিরা। সমাধান হয় আমিরাত। ভারতের ব্যবস্থাপনায় সে টুর্নামেন্ট হয় দুবাই-আবুধাবিতে।
আশি-নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান শারজায় ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছে একটা সফরকারী দল হিসেবে। গত দুই দশকে আমিরাতে তাদের খেলতে হচ্ছে ‘হোমগ্রাউন্ড’ বানিয়ে। নিরাপত্তার ইস্যুতে পাকিস্তানে ওপরের সারির টেস্ট খেলুড়ে দলগুলো সহজেই যেতে চায় না। আফগানিস্তান দল এখনো নিজের দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারে না। তাদের বড় সহায় এই মরুর দেশ। পাকিস্তান-আফগানিস্তান কেন, ‘বিপদে’ পড়ে ভারতও ঠাঁই নিয়েছে আমিরাতে। গত বছর করোনায় যখন আইপিএল নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা, তখন সমাধান হয়ে এসেছে দুবাই-আবুধাবি। আইপিএল না হওয়া মানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি। সেই ক্ষতি ঠেকাতে গত বছর আইপিএলের তাঁবু পড়েছে মরুতেই।
এ বছর নিজের মাঠেই আইপিএল আয়োজন করেছিল ভারত। কিন্তু করোনার কাছে হার মেনে মাঝপথে টুর্নামেন্ট থেমে গেল। এই সংকট থেকে উতরে যাওয়ার বটিকা আবার সেই দুবাই-আবুধাবি। আইপিএলই নয়; বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আয়োজকদের কাছে আকর্ষণীয় নাম আমিরাত। আর এবার প্রথমবারের মতো আইসিসির বড় টুর্নামেন্ট (কোনো বিশ্বকাপ) হতে যাচ্ছে এখানে। আগামী মাসে মরুতেই হবে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চ—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
জাভেদ মিয়াঁদাদ অবশ্য বলতে পারেন, আশির দশকেই আমিরাতে বড় বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছে। শারজার প্রতি ‘বড়ে মিয়া’র কী আত্মিক সম্পর্ক, ২০০৩ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘কাটিং এজে’ই পরিষ্কার। বইয়ে ‘শারজা’ নামে একটা অধ্যায়ই রেখেছেন মিয়াঁদাদ। সেটির শুরুতে লিখেছেন, ‘কে ভেবেছিল মধ্যপ্রাচ্যের একটি মরুর শহরে একদিন সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজন হবে! একটি ক্রিকেটের কেন্দ্র হিসেবে শারজার আবির্ভাব খেলাটার জন্যই ভালো হয়েছে। বিশেষ করে এশিয়ার ক্রিকেটে।’ বইয়ের আরেক জায়গায় লিখেছেন, ‘ক্রিকেটের অনেক ভালো কিছুর শুরু এই শারজায়।
নতুন এক ঠিকানায় বিশ্বমানের ক্রিকেট রপ্তানি হয়েছে, আধুনিক ক্রিকেটে সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক বিস্তার ছিল এটি। ক্রিকেট যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে, তেমনি নিরপেক্ষ ভেন্যু হওয়ায় ভারত-পাকিস্তানের দর্শকেরা দুই দেশের চিরবৈরিতা দূরে রেখে এক জায়গায় বসে সঠিক চেতনায় খেলাটা উপভোগ করেছে।’
মরুর দেশের প্রতি মিয়াঁদাদের ভালো লাগা আরও একটি কারণে। খেলোয়াড়ি জীবনের দুর্দান্ত কিছু কীর্তি তাঁর এখানেই। বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল শারজায় অনুষ্ঠিত ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলেশিয়া কাপের সেই ফাইনাল। ২৪৬ রান তাড়া করতে নামা পাকিস্তানকে মিয়াঁদাদ অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন চেতন শর্মাকে শেষ বলে ছক্কা মেরে। যেটি আজও ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা রোমাঞ্চকর ম্যাচ হিসেবে বিবেচিত।
শুধু মিয়াঁদাদই নন; ক্রিকেটের অনেক কিংবদন্তিই গৌরবের চিহ্ন এঁকেছেন মরুতে। ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে কোকাকোলা কাপটা বিখ্যাত হয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শচীন টেন্ডুলকারের টানা দুটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সৌজন্যে। দর্শকেরা শুধু দেখেন ক্রিকেটারদের ক্রিকেটশৈলীই। তবে মরুর কন্ডিশনে একজন খেলোয়াড়কে কতটা কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় তা টেন্ডুলকার নিজেই বলেছেন তাঁর আত্মজীবনী ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’-তে। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা কোকাকোলা কাপ ফাইনালের আগে নাকি তাঁর শরীরই চলছিল না। লিখেছেন, ‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর শক্ত হয়ে গেল। বাথরুমে হেঁটে যাওয়াটাও কঠিন হলো। পানিশূন্যতায় এটা হতে পারে। আমি যথেষ্ট পানি খেয়েছিলাম। ক্যারিয়ারের যে হাতে গোনা কয়েকবার সকালে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সমস্যা হয়েছে, এটি ছিল তার একটি।’
এই চ্যালেঞ্জ উতরে পরের দিন শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের ফাইনালে টেন্ডুলকার খেলেছিলেন ম্যাচ জেতানো ১৩৪ রানের ইনিংস। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন মার্সিডিজ এসএল ৬০০। টেন্ডুলকারের মার্সিডিজ পুরস্কারের কথা বলা বিশেষ কারণে। শারজার হাত ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দামি সব পুরস্কারের প্রচলন। মিয়াঁদাদ যেমন বলেছেন, ‘...শারজা প্রথম ভেন্যু, যেখানে ক্রিকেটারদের বড় অঙ্কের প্রাইজমানি দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে।’
অবশ্য এই টাকাপয়সা নিয়ে একটা মজার স্মৃতি আছে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের। পঞ্চম এশিয়া কাপ খেলতে ১৯৯৫ সালে মরুর দেশে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিস্তৃত দিগন্তে পাখা মেলা শুরু হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ, হাসিবুল হোসেন, জাভেদ ওমরদের; যাঁরা প্রত্যেকে পরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল নাম হিসেবে।
ওই এশিয়া কাপের কথা তুললেই বাংলাদেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির নির্বাচক হাবিবুলের স্মৃতিতে ভেসে আসে মজার একটা ঘটনা, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে স্লো ওভার রেটের কারণে ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড আমাদের হুমকি দিলেন ম্যাচ ফি কেটে নেওয়ার। আমরা ঘাবড়েই গেলাম! পেতামই মাত্র ৫০ ডলার ম্যাচ ফি। সেটিও হারানোর শঙ্কায়। পকেট-টকেট হাতড়ে লয়েডকে আমরা বললাম, যা আছে নিয়ে যান।’
‘আর্থিক ক্ষতি’র মুখে পড়তে গিয়ে কোনোভাবে রক্ষা পেয়েছিলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা। তবে বিপুল আর্থিক লাভের কথা ভেবেই আইসিসি তাদের সদর দপ্তর ইংল্যান্ড থেকে সরিয়ে দুবাইয়ে এনেছে। গত দুই দশকে আক্ষরিক অর্থেই সংযুক্ত আরব আমিরাত পরিণত হয়েছে ক্রিকেটের রাজধানীতে। একটা সময় যে দেশে ক্রিকেট ছিল শুধুই শারজাকেন্দ্রিক, সেটি এখন আরও বিস্তৃত।
অবশ্য শুধু ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডেই নয়, মরুর দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ আছে ক্রিকেটের অন্ধকার জগতেরও! ফিক্সিং কিংবা ম্যাচ গড়াপেটার আলোচনা উঠলেই অবধারিতভাবে চলে আসে ‘দুবাই’ নামটাও।
আমজাদ হোসেনের নাটকের সংলাপ, ‘টাকা দাও দুবাই যামু’ ভীষণ জনপ্রিয় ছিল আশির দশকে। সেই সংলাপটা এখন একটু ঘুরিয়ে বলা যায়, ‘দুবাই যামু, ক্রিকেট দেখতে’। মজাটা হচ্ছে, গত চার দশকে যে দেশে ক্রিকেটের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড যতটা বিস্তৃত হয়েছে, তার তুলনায় ক্রিকেট খেলাটা সেই তিমিরেই থেকে গেল।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) গত শনিবার রাজস্থান-দিল্লির ম্যাচে টিভি ক্যামেরা (ড্রোন ক্যামেরাই হবে) আবুধাবি স্টেডিয়ামের বাইরের দৃশ্য দেখাচ্ছিল। চোখে পড়ল ঊষর মরভূমিতে চোখজুড়ানো টুকরো টুকরো সবুজ ভূমি।
মরুর রাজ্যে ক্রিকেটের বীজ বুনে দেওয়া হয়েছিল আশির দশকের শুরুতে। বিপুল আর্থিক বিনিয়োগ, প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার আর উন্নত ব্যবস্থাপনায় এই ধূসর ভূমে সবুজ বৃক্ষের মতোই প্রাণবন্ত হয়েছে ক্রিকেট। আরব আমিরাত পরিণত হয়েছে ক্রিকেটের রাজধানী, অন্যভাবে বললে ক্রিকেট-হৃৎপিণ্ডে!
একটা সময় আমিরাতের ক্রিকেট-যজ্ঞের কেন্দ্র ছিল শারজা। আর তার বেশির ভাগই ছিল পাকিস্তানকেন্দ্রিক। গত দুই দশকে তার অংশীদার হয়েছে পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। আরব আমিরাত যেন ক্রিকেটের জটিল সব সমীকরণ মেলানোর গ্রহণযোগ্য এক সূত্র।
২০১৮ এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল ভারত। সে সময় ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক বৈরিতা চরমে ওঠায় টুর্নামেন্টের পাশে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে যায়। রাজনৈতিক ঝামেলায় একটা অর্থকরী টুর্নামেন্ট ভেস্তে গেলে সবারই ক্ষতি—এ ভাবনায় একটা সমঝোতায় আসে এশীয় ক্রিকেটের পরাশক্তিরা। সমাধান হয় আমিরাত। ভারতের ব্যবস্থাপনায় সে টুর্নামেন্ট হয় দুবাই-আবুধাবিতে।
আশি-নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান শারজায় ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছে একটা সফরকারী দল হিসেবে। গত দুই দশকে আমিরাতে তাদের খেলতে হচ্ছে ‘হোমগ্রাউন্ড’ বানিয়ে। নিরাপত্তার ইস্যুতে পাকিস্তানে ওপরের সারির টেস্ট খেলুড়ে দলগুলো সহজেই যেতে চায় না। আফগানিস্তান দল এখনো নিজের দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারে না। তাদের বড় সহায় এই মরুর দেশ। পাকিস্তান-আফগানিস্তান কেন, ‘বিপদে’ পড়ে ভারতও ঠাঁই নিয়েছে আমিরাতে। গত বছর করোনায় যখন আইপিএল নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা, তখন সমাধান হয়ে এসেছে দুবাই-আবুধাবি। আইপিএল না হওয়া মানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি। সেই ক্ষতি ঠেকাতে গত বছর আইপিএলের তাঁবু পড়েছে মরুতেই।
এ বছর নিজের মাঠেই আইপিএল আয়োজন করেছিল ভারত। কিন্তু করোনার কাছে হার মেনে মাঝপথে টুর্নামেন্ট থেমে গেল। এই সংকট থেকে উতরে যাওয়ার বটিকা আবার সেই দুবাই-আবুধাবি। আইপিএলই নয়; বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আয়োজকদের কাছে আকর্ষণীয় নাম আমিরাত। আর এবার প্রথমবারের মতো আইসিসির বড় টুর্নামেন্ট (কোনো বিশ্বকাপ) হতে যাচ্ছে এখানে। আগামী মাসে মরুতেই হবে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চ—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
জাভেদ মিয়াঁদাদ অবশ্য বলতে পারেন, আশির দশকেই আমিরাতে বড় বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছে। শারজার প্রতি ‘বড়ে মিয়া’র কী আত্মিক সম্পর্ক, ২০০৩ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘কাটিং এজে’ই পরিষ্কার। বইয়ে ‘শারজা’ নামে একটা অধ্যায়ই রেখেছেন মিয়াঁদাদ। সেটির শুরুতে লিখেছেন, ‘কে ভেবেছিল মধ্যপ্রাচ্যের একটি মরুর শহরে একদিন সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজন হবে! একটি ক্রিকেটের কেন্দ্র হিসেবে শারজার আবির্ভাব খেলাটার জন্যই ভালো হয়েছে। বিশেষ করে এশিয়ার ক্রিকেটে।’ বইয়ের আরেক জায়গায় লিখেছেন, ‘ক্রিকেটের অনেক ভালো কিছুর শুরু এই শারজায়।
নতুন এক ঠিকানায় বিশ্বমানের ক্রিকেট রপ্তানি হয়েছে, আধুনিক ক্রিকেটে সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক বিস্তার ছিল এটি। ক্রিকেট যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে, তেমনি নিরপেক্ষ ভেন্যু হওয়ায় ভারত-পাকিস্তানের দর্শকেরা দুই দেশের চিরবৈরিতা দূরে রেখে এক জায়গায় বসে সঠিক চেতনায় খেলাটা উপভোগ করেছে।’
মরুর দেশের প্রতি মিয়াঁদাদের ভালো লাগা আরও একটি কারণে। খেলোয়াড়ি জীবনের দুর্দান্ত কিছু কীর্তি তাঁর এখানেই। বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল শারজায় অনুষ্ঠিত ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলেশিয়া কাপের সেই ফাইনাল। ২৪৬ রান তাড়া করতে নামা পাকিস্তানকে মিয়াঁদাদ অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন চেতন শর্মাকে শেষ বলে ছক্কা মেরে। যেটি আজও ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা রোমাঞ্চকর ম্যাচ হিসেবে বিবেচিত।
শুধু মিয়াঁদাদই নন; ক্রিকেটের অনেক কিংবদন্তিই গৌরবের চিহ্ন এঁকেছেন মরুতে। ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে কোকাকোলা কাপটা বিখ্যাত হয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শচীন টেন্ডুলকারের টানা দুটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সৌজন্যে। দর্শকেরা শুধু দেখেন ক্রিকেটারদের ক্রিকেটশৈলীই। তবে মরুর কন্ডিশনে একজন খেলোয়াড়কে কতটা কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় তা টেন্ডুলকার নিজেই বলেছেন তাঁর আত্মজীবনী ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’-তে। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা কোকাকোলা কাপ ফাইনালের আগে নাকি তাঁর শরীরই চলছিল না। লিখেছেন, ‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর শক্ত হয়ে গেল। বাথরুমে হেঁটে যাওয়াটাও কঠিন হলো। পানিশূন্যতায় এটা হতে পারে। আমি যথেষ্ট পানি খেয়েছিলাম। ক্যারিয়ারের যে হাতে গোনা কয়েকবার সকালে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সমস্যা হয়েছে, এটি ছিল তার একটি।’
এই চ্যালেঞ্জ উতরে পরের দিন শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের ফাইনালে টেন্ডুলকার খেলেছিলেন ম্যাচ জেতানো ১৩৪ রানের ইনিংস। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন মার্সিডিজ এসএল ৬০০। টেন্ডুলকারের মার্সিডিজ পুরস্কারের কথা বলা বিশেষ কারণে। শারজার হাত ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দামি সব পুরস্কারের প্রচলন। মিয়াঁদাদ যেমন বলেছেন, ‘...শারজা প্রথম ভেন্যু, যেখানে ক্রিকেটারদের বড় অঙ্কের প্রাইজমানি দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে।’
অবশ্য এই টাকাপয়সা নিয়ে একটা মজার স্মৃতি আছে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের। পঞ্চম এশিয়া কাপ খেলতে ১৯৯৫ সালে মরুর দেশে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিস্তৃত দিগন্তে পাখা মেলা শুরু হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ, হাসিবুল হোসেন, জাভেদ ওমরদের; যাঁরা প্রত্যেকে পরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল নাম হিসেবে।
ওই এশিয়া কাপের কথা তুললেই বাংলাদেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির নির্বাচক হাবিবুলের স্মৃতিতে ভেসে আসে মজার একটা ঘটনা, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে স্লো ওভার রেটের কারণে ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড আমাদের হুমকি দিলেন ম্যাচ ফি কেটে নেওয়ার। আমরা ঘাবড়েই গেলাম! পেতামই মাত্র ৫০ ডলার ম্যাচ ফি। সেটিও হারানোর শঙ্কায়। পকেট-টকেট হাতড়ে লয়েডকে আমরা বললাম, যা আছে নিয়ে যান।’
‘আর্থিক ক্ষতি’র মুখে পড়তে গিয়ে কোনোভাবে রক্ষা পেয়েছিলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা। তবে বিপুল আর্থিক লাভের কথা ভেবেই আইসিসি তাদের সদর দপ্তর ইংল্যান্ড থেকে সরিয়ে দুবাইয়ে এনেছে। গত দুই দশকে আক্ষরিক অর্থেই সংযুক্ত আরব আমিরাত পরিণত হয়েছে ক্রিকেটের রাজধানীতে। একটা সময় যে দেশে ক্রিকেট ছিল শুধুই শারজাকেন্দ্রিক, সেটি এখন আরও বিস্তৃত।
অবশ্য শুধু ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডেই নয়, মরুর দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ আছে ক্রিকেটের অন্ধকার জগতেরও! ফিক্সিং কিংবা ম্যাচ গড়াপেটার আলোচনা উঠলেই অবধারিতভাবে চলে আসে ‘দুবাই’ নামটাও।
আমজাদ হোসেনের নাটকের সংলাপ, ‘টাকা দাও দুবাই যামু’ ভীষণ জনপ্রিয় ছিল আশির দশকে। সেই সংলাপটা এখন একটু ঘুরিয়ে বলা যায়, ‘দুবাই যামু, ক্রিকেট দেখতে’। মজাটা হচ্ছে, গত চার দশকে যে দেশে ক্রিকেটের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড যতটা বিস্তৃত হয়েছে, তার তুলনায় ক্রিকেট খেলাটা সেই তিমিরেই থেকে গেল।
হারারে থেকে চট্টগ্রাম—দূরত্ব প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার। মাঝে কেটে গেছে প্রায় চার বছর। ২০২১ সালে হারারেতে সাদমান ইসলাম টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে এরপর ২৬ ইনিংসে পাননি সেঞ্চুরির দেখা। অবশেষে আজ সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই সাদমান তুলে নিলেন
৭ মিনিট আগেচেহারার মধ্যে তাঁর শিশুসুলভ সারল্য। বলা হচ্ছে বৈভব সূর্যবংশীর কথা। অথচ, সূর্যবংশীর ব্যাটিং দেখে কে বলবেন, তাঁর বয়স ১৪। চারের চেয়ে ছক্কা মারতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। মনে হয় যেন তিনি ভিডিও গেমস খেলছেন।
২৬ মিনিট আগেযে জিতবে, তার হাতেই উঠবে ডিপিএল শিরোপা—মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ এই সমীকরণ নিয়েই খেলতে নেমেছে আবাহনী-মোহামেডান। আবাহনী নামছে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। চ্যাম্পিয়ন হতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের বিপক্ষে ২৪১ রান করতে হবে আবাহনী।
১ ঘণ্টা আগেরিয়াল মাদ্রিদকে ভড়কে দিয়ে ২০২৪-২৫ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের টিকিট কাটল আর্সেনাল। আজ রাতে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে আর্সেনাল খেলবে পিএসজির বিপক্ষে। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হবে আর্সেনাল-পিএসজি। ডিপিএলে সুপার লিগে খেলছে আবাহনী-মোহামেডান। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় টেস্টের
২ ঘণ্টা আগে