Ajker Patrika

পেনাল্টির আগে কী ভাবনা কাজ করে এমবাপ্পেদের

হাসনাত শোয়েব, ঢাকা
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২১, ১১: ২২
পেনাল্টির আগে কী ভাবনা কাজ করে এমবাপ্পেদের

পেনাল্টি শুটআউট মানেই হচ্ছে একজন খেলোয়াড়ের ৫০ গজ দূরের মাঝমাঠ থেকে হেঁটে এসে অনেক বড় ঘটনা ঘটানো। এই হাঁটা তাই স্বাভাবিক কোনো হাঁটা নয়। একজন ফুটবলার সেখান থেকে হেঁটে আসেন, যেখানে ফুটবল থেমে যায়। ফুটবলের সমস্ত আবেগ, উত্তেজনা ও হুল্লোড় তখন যেন কবরের নিস্তব্ধতায় রূপ নেয়। এই হাঁটা আপনার শরীরকে সহ্যসীমার প্রান্তে ঠেলে দেয়। তখন আপনার মনই আপনার শত্রু! স্নায়ু যে আপনার বড় পরীক্ষা নেয়!

এবারের ইউরোতে কিলিয়ান এমবাপ্পের পেনাল্টি মিসের পর আবারও আলোচনায় এ প্রসঙ্গ। রবার্তো ব্যাজ্জিও থেকে গ্যারেথ সাউথগেট—অনেকেই পেনাল্টি মিস করে ‘খলনায়ক’ হয়েছেন। কিন্তু কীভাবে একটি পেনাল্টি মিস হচ্ছে, তারপর কী অনুভূতি হচ্ছে, সেটি বুঝতে হলে খেলোয়াড়ের এই ‘হেঁটে আসা’টা বুঝতে হবে। কোচ ও সতীর্থরা হয়তো তাঁকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কিন্তু পেনাল্টি নিতে এসে তিনি নিঃসঙ্গই হয়ে পড়েন।

শুধু সেই সময়েই ম্যাচের ফলের সঙ্গে খেলোয়াড়ের সম্পর্ক থাকে অবিচ্ছেদ্য। দলগত একটি খেলা মুহূর্তের মধ্যে গ্লাডিয়েটরের একার লড়াই হয়ে দাঁড়ায়। লড়াইটা গোলরক্ষকের সঙ্গে পেনাল্টি শট নেওয়া খেলোয়াড়টির। অবাক শোনাতে পারে, সে সময়ই একজন খেলোয়াড় পরিণত হন দার্শনিকে! কীভাবে? কয়েকজন কিংবদন্তি ফুটবলারের মুখেই শুনুন। ইংলিশ মিডফিল্ডার ক্রিস ওয়াডলে ওয়েস্ট জার্মানির বিপক্ষে পেনাল্টি মিস নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি অনুভব করছিলাম, যেন নৈঃশব্দ্যের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর শেষ প্রান্তের দিকে হেঁটে যাচ্ছি।’

২০০৬ বিশ্বকাপ ও ২০১২ ইউরোই কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টিতে গোল করেছিলেন ইতালিয়ান কিংবদন্তি আন্দ্রেয়া পিরলো। তিনি বলেছেন, ‘এটা যেন নিজের আতঙ্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে আসা, যার কোনো শেষ নেই।’ ইংলিশ কিংবদন্তি এলেন শিয়ারার, যিনি ১৯৯৬ ইউরোতে শেষ চারে জার্মানি এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে শেষ ষোলোয় পেনাল্টিতে গোল করেছিলেন। নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মাঝমাঠ থেকে এই হেঁটে যাওয়া, আমার কাছে সবচেয়ে দীর্ঘ ও কঠিন ৫০ গজ পথ।’ 
ইংল্যান্ডের হয়ে ঐতিহাসিক পেনাল্টি মিসটি বর্তমান ইংলিশদের কোচ সাউথগেটের। নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল এই হেঁটে যাওয়া সারা জীবনের জন্য।’ আরেক ইংলিশ কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ডের কাছে এই ৫০ গজ ছিল ৪০ মাইলের সমান! যিনি ২০০৬ বিশ্বকাপে পর্তুগালের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেছিলেন।

ফুটবল বিশ্লেষক বেন লেইটলেটন পেনাল্টি কিকের শিল্প ও মনস্তাত্ত্বিক দিক বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন তাঁর বই ‘টুয়েলভ ইয়ার্ডসে’। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘যদিও হেঁটে আসাটা ভীতিকর। কিন্তু এক মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটার সময় উদ্বেগ চূড়ায় ওঠে না, এটি চূড়া স্পর্শ করে হাঁটার আগে, মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার সময়।’

শিয়ারারের মতে, এটা শুধু খেলার বিষয় নয়। সারাক্ষণ মনে হতে থাকে, যদি মিস হয়ে যায় তবে...! অতিরিক্ত সময়ের শেষ ১০ মিনিটে এটা সবচেয়ে খারাপ হতে থাকে। একটা গা–ছমছমে ভয় মনে কাজ করতে থাকে। শেষ করা যাক পেনাল্টি মিসের ঘটনায় সবার ওপরে থাকা রবার্তো ব্যাজ্জিওর কথা দিয়ে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের আলোচিত পেনাল্টি মিস নিয়ে ব্যাজ্জিও বলেছেন, ‘এখনো সেই যন্ত্রণা একই রকম। এটা কখনো যাবে না।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

বাহাত্তরের সংবিধান, জুলাই সনদ, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা নিয়ে আইন উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাকে হত্যা

চাকরিতে কোটা: সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আসছে সমান সুযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত