Ajker Patrika

হারার আগে হাল না ছাড়াটাই হামজাদের প্রাপ্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৩৭
হংকংয়ের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচ খেলতে গতকাল দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশ দল। উড়াল দেওয়ার আগে সতীর্থদের সঙ্গে এভাবেই ক্যামেরায় ধরা দিলেন হামজা। ছবি: বাফুফে
হংকংয়ের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচ খেলতে গতকাল দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশ দল। উড়াল দেওয়ার আগে সতীর্থদের সঙ্গে এভাবেই ক্যামেরায় ধরা দিলেন হামজা। ছবি: বাফুফে

শেষ মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গের হতাশা বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে বেশ পরিচিত। হংকংয়ের বিপক্ষে পরশু ৪-৩ গোলের হার সেই চেনা বেদনারই পুনরাবৃত্তি।

হতাশাকে আড়াল করলে প্রাপ্তির খোঁজ করলে সবার আগে উঠে আসবে ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা। দ্বিতীয়ার্ধে ৩-১ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরে আসে দারুণভাবে; দেশের ফুটবল ইতিহাসে যা বিরলই বলা যায়। র‍্যাঙ্কিংয়ের ৩৮ ধাপ এগিয়ে থাকা হংকংয়ের বিপক্ষে এভাবে মনোবল ধরে রাখাটা চাট্টিখানি কথা নয় নিশ্চয়ই।

হামজা চৌধুরী, শমিত শোমরা আসার পর ভঙ্গুর মানসিকতা অবশেষে ইস্পাতদৃঢ় হতে শুরু করেছে বলা যায়। তা নিয়ে সাবেকরাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। হতাশাকে পেছনে ফেলে বরং ইতিবাচকতা নিয়ে সামনে এগোনোর বার্তা দিলেন তাঁরা। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপে জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলি বলেন, ‘৩-১ থেকে আমরা ৩-৩ করেছি। বাংলাদেশ ফুটবলের ক্ষেত্রে সেটা অবিশ্বাস্য ছিল। মেন্টাল স্ট্রেংথ বাড়িয়ে দিয়েছে।’

বাংলাদেশের সাবেক কোচ গোলাম সারোয়ার টিপুও খানিকটা বিস্মিত এমন বদল দেখে, ‘গোল করবে কি না, তা তো আগে থাকে বলা যায় না। পিছিয়ে যাওয়ার পরও খেলার ধরন দেখে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের চেষ্টা ছিল ম্যাচে ফেরার। তবে আমাদের খেলোয়াড়দের বন্ডিংটা ভালো লেগেছে। আমাদের সোনালি যুগেও সেটা ছিল না।’

ঘরের মাঠে সুবিধা কাজে লাগাতে না পারায় সাবেক স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলামের মনে কাজ করছে আক্ষেপ। তাঁর ভাষ্য, ‘ঘরের মাঠের সুবিধাটা নেওয়া উচিত ছিল। আমাদের ছেলেরা দুর্দান্ত খেলেছে। ছোট ছোট ভুলের কারণে আমাদের হারতে হলো। খেলার শেষ মুহূর্তে গা ছাড়া ভাব চলে আসে; তখনই গোলটা হজম করি। এখানে সতর্ক থাকা উচিত ছিল। পরের ম্যাচে যতটা সম্ভব রক্ষণাত্মক থাকতে হবে। অবশ্যই আমরা সুযোগ পাব। একটা সুযোগ পেলে সেটাই কাজে লাগাতে হবে।’

হারের ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে সমর্থকেরা দায়ী করছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকে। শুরুর একাদশে শমিত শোম, ফাহামিদুল ইসলাম, জায়ান আহমেদ ও নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে কেন রাখা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। কারণ, দ্বিতীয়ার্ধে তাঁরা বদলি হিসেবে নামার পরই পরিবর্তন আসে খেলার গতিপথে।

বাংলাদেশও ৩-১ থেকে ব্যবধান করে ফেলে ৩-৩। তা অবশ্য পরে ধরে রাখতে পারেনি। তাতে কোচেরই দায় দেখছেন এমিলি, ‘এগিয়ে যাওয়ার পর কীভাবে খেলতে হবে, সেখানে আমার মনে কৌশলগত কিছু ভুল ছিল। ভুলগুলো খেলোয়াড়েরা করেছে, তার চেয়ে বড় কথা কোচের নির্দেশনা কী ছিল। গোল দেওয়ার পর কীভাবে খেলবে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার ছিল না খেলোয়াড়েরা। সেই বার্তাটা ভালোভাবে দিতে পারেনি কোচ। শমিত ও জায়ান যদি দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে পারে, তাহলে তাদের শুরুতে নামানো হলো না কেন?’

সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক কোচের পক্ষেই রায় দিয়েছেন, ‘কোচ সব সময়ই চায় তার সেরা ইলেভেন খেলাতে। কিন্তু টিম হেরে গেলে দোষটা এসে পড়ে কোচের ঘাড়ে। আসলে সঠিক সময়ে খেলোয়াড়েরা ক্লিক করতে না পারলেই সমস্যা হয়।’

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের পরের ম্যাচটিও হংকংয়ের বিপক্ষে। প্রতিপক্ষের মাঠে খেলা হলেও পরশু ঘুরে দাঁড়ানোটাই বলে দেয়, এই বাংলাদেশ হারার আগে হেরে যাবে না।

ফেসবুক পোস্টে হামজাও লিখলেন তা-ই, ‘ফুটবলের উত্থান-পতন থাকবে। দল নিয়ে আমি গর্বিত, কিন্তু আমাদের এখন পরের ধাপে যেতে হবে। মঙ্গলবার আমাদের সেই ভুলগুলো ঠিক করার আরেকটা সুযোগ আছে! ভালোবাসা আর সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত