Ajker Patrika

আমরা ডাচ ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হতে চেয়েছি

বোরহান জাবেদ, চট্টগ্রাম
আমরা ডাচ ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হতে চেয়েছি

ম্যাক্স প্যাট্রিক ও’ডাউড প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছেন। বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জসার্সের হয়ে নেদারল্যান্ডসের ২৮ বছর বয়সী ওপেনার শুধু লম্বা সোনালি চুলেই নয়, নজর কেড়েছেন ব্যাট হাতেও। পরশু চট্টগ্রামে টিম হোটেলে ম্যাক্স ও’ডাউড কথা বললেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বোরহান জাবেদ।

প্রশ্ন: বিপিএল কেমন উপভোগ করছেন? 
ম্যাক্স ও’ডাউড: প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছি, দারুণ লাগছে। এখানকার মানুষজন অসাধারণ, আমার সতীর্থরাও। ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের দর্শক, সংবাদমাধ্যমের অভূতপূর্ব আবেগের সাক্ষী হচ্ছি। আমার কখনোই এমন অভিজ্ঞতা হয়নি, নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলার সময়ও না।

প্রশ্ন: আপনার ক্যারিয়ার তো অনেক ঘটনাবহুল...। 
ও’ডাউড: আমার বাবা কিউই, মা ডাচ। ৫-১৩ বছর পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসে ছিলাম। সেখানে অনূর্ধ্ব-৯,১০, ১১ ক্রিকেট খেলেছি। তারপর নিউজিল্যান্ডে যাই। অকল্যান্ডের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৫,১৬, ১৭,১৯ এবং ‘এ’ দলের হয়ে খেলেছি। এখানে আসার আগে অকল্যান্ড মূল দলের হয়ে খেলেছি। নিউজিল্যান্ডের গ্রীষ্মে সেখানে থাকি, নেদারল্যান্ডসের গ্রীষ্মে মায়ের দেশে ফিরে আসি। নেদারল্যান্ডসের খেলা হলে আমি তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকি। হ্যাঁ, আমার ক্যারিয়ার অনেক ঘটনাবহুল। আমার নিজেকে নিজে তৈরি করতে হয়েছে। আমি ভালো ক্রিকেটার হয়েছি গত ৪-৫ বছরে। যখন ছোট ছিলাম, নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলা আমার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি যেই অবস্থানে আছি, কৃতিত্ব নেদারল্যান্ডসের। তারা আমাকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলা আমার জন্য গর্বের। আমি তাদের হয়ে খেলতে ভালোবাসি, এটা আমি সব সময় করে যেতে চাই।

প্রশ্ন: স্বেচ্ছায় নেদারল্যান্ডসকে বেছে নেওয়া নাকি অনেকটা বাধ্য হয়ে?
ও’ডাউড: প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত আমার ক্যারিয়ারের উন্নতি খুব ভালো ছিল না। ২৩ বছর বয়সে নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলা শুরু করি। সব সময় সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলতে চেয়েছি। দল কোন দিকে মনোযোগ দিতে চেয়েছে, সেটার চেয়ে নিজে ভালো ক্রিকেটার হতে চেয়েছি। যখন দলের ইচ্ছে অগ্রাধিকার দিয়ে ভালো ক্রিকেটার হতে চেয়েছি, তখন ব্যাপারগুলো পরিবর্তন হতে থাকে। প্রচুর রান করা শুরু করি। এটা আসলে বেছে নেওয়া ছিল না, স্রেফ ঘটে গেছে। 

প্রশ্ন: টেস্ট খেলতে না পারার আক্ষেপ কাজ করে? 
ও’ডাউড: সত্যি কথা বলতে, এটা নিয়ে চিন্তিত নই। আমি বর্তমানে যেখানে আছি, এটা নিয়েই ভালো আছি। আমি রান করতে চাই, সেটা হতে পারে চট্টগ্রাম, অকল্যান্ড অথবা নেদারল্যান্ডসের হয়ে। বাকি যেটা ঘটবে, সেটা তখন দেখা যাবে। 

প্রশ্ন: টার্ফে ১০ ওভারের ক্রিকেটই কি আপনার হিটিং স্কিল বাড়িয়েছে? 
ও’ডাউড: একদম। ইউরোপীয় ক্রিকেট লিগে খেলেছি, মজার লিগ। এটা অপেশাদার একটা লিগ, যেখানে পুরো ইউরোপের ক্লাব ক্রিকেটাররা খেলে। আমার এটার প্রথম মৌসুমে খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল। ওখানে যারা খেলে, তাদের অনেকে টাকাও পায় না। আমি, ডাচ ক্যাপ্টেন স্কট এডওয়ার্ডসও খেলেছিল ওই লিগে। আমরা পেশাদার হিসেবে খেলি। টি-১০ ক্রিকেট পাওয়ার আর গতির বিষয়। ওখানে খেলে আমার উন্নতি হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ওই লিগে খেলে আমার আত্মবিশ্বাস বেশ বেড়েছে। 
 
প্রশ্ন: বিপিএলে আপনার আরও কয়েকজন ডাচ সতীর্থ খেলছেন। 
ও’ডাউড: বিপিএলে আমি, কলিন অ্যাকারম্যান, পল ফন মিকেরেন খেলছি। ফ্রেড ক্ল্যাসেন, টিম প্রিঙ্গল দুবাইয়ে টি-টেন খেলে গেছে। এটা দারুণ। এই ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের আগে হয়নি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে মেশা, ড্রেসিংরুম শেয়ার করা, দারুণ এক অভিজ্ঞতা। দারুণ একটি (২০২২) বিশ্বকাপ গিয়েছিল আমাদের। ছেলেরা অনেক জায়গায় খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা সবাই এটাই চেয়েছিলাম। আমরা ডাচ ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হতে চেয়েছি। আমরা কতটা ভালো আর কতটা খেলতে পারি, সেটা বিশ্বের সামনে দেখাতে চেয়েছিলাম। সেই সুযোগটা এখানে পাচ্ছি। আশা করি ছেলেরা সামনে আরও সুযোগ পাবে। ডাচ ক্রিকেটও ক্রিকেটের ক্যালেন্ডারে ভালোভাবে জায়গা করে নিতে পারবে। 

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। এখনো কি মনে হয় আপনি রানআউট না হলে ভিন্ন ফল হতে পারত? 
ও’ডাউড: একটু ভেবে...হাসি। ম্যাচটা আসলেই অনেক ক্লোজ ছিল। আমাদের জন্য বিশ্বকাপে সম্ভবত সবচেয়ে হতাশার ম্যাচ। এই ম্যাচটা আমরা সবচেয়ে খারাপ খেলেছি এবং আমরা ৮ (আসলে ৯) রানে হেরেছি। পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারানোর পরই আমরা ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিলাম, এর দুটো রানআউট। তারপর যতটা সম্ভব ম্যাচে থাকার চেষ্টা করেছে। বলতে পারেন আমি, বাস (বাস ডি লিড), টম কুপার—কেউ একজন থাকলে হয়তো ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারত। কিন্তু আমরা জানি, বাংলাদেশ কতটা ভালো দল। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারত। পরে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে খেলা হবে আশা করি আমরা সেরাটা দেখাতে পারব। 

প্রশ্ন: ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর নেদারল্যান্ডসের পরবর্তী লক্ষ্য কী? 
ও’ডাউড: এর মধ্যে আমরা বিশ্বকাপের কিছু ফল পেয়েছি। আমরা কয়েকজন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলছি। আরও যারা নেদারল্যান্ডসে আছে, তারা অনেক প্রতিভাবান। আমরা বড় মঞ্চে সুযোগের অপেক্ষায় আছি। মার্চে জিম্বাবুয়েতে খেলতে যাব। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলব। এরপর আমরা ২০২৪ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেব। 
 
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের পর ডাচ ক্রিকেট নিয়ে মানুষের আগ্রহ কি বেড়েছে? 
ও’ডাউড: ক্রিকেটের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী না। খুবই অল্প সংখ্যায় খেলোয়াড় ওখানে। ফুটবল ও হকি ওখানকার প্রধান খেলা। ভালো খেলার মাধ্যমে আমরা কিছু চেষ্টা করছি। আশা করছি ধীরে ধীরে মানুষ আগ্রহী হবে। আরও কিছু পৃষ্ঠপোষক পাওয়ার আশা করছি। 

প্রশ্ন: বাংলাদেশে এই পার্থক্যটা কেমন দেখছেন? 
ও’ডাউড: একেবারেই ভিন্ন। ক্রিকেট নিয়ে মানুষের আবেগ, এটার সঙ্গে কিছু তুলনা হয় না। সংবাদকর্মীরা সব সময় খেলোয়াড়দের পিছে ছুটছে, খবর হচ্ছে, মাঠে দর্শক—এটা অবিশ্বাস্য। উপমহাদেশে ক্রিকেটের আবেগ অবিশ্বাস্য। মানুষ খেলাটা ধর্মের মতো ভালোবাসে। কিন্তু নেদারল্যান্ডস এটার সিকিভাগও নেই। ক্রিকেট নিয়ে মানুষের ধারণা খুব একটা নেই। সেখানে আমি কোনো বাধা ছাড়াই বাইরে ঘুরি। কিন্তু এখানে মনে হয় বাইরে হাঁটার সময় মানুষ আমাকে চিনতে পারবে। সেলফি তুলতে চাইবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ছাত্রদল কর্মী ইপ্সিতার, ধর্ষণের অভিযোগ আসে ৯৯৯ থেকে

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

নূরুল হুদাকে হেনস্তা: বিচারের দাবিতে ৩৪ বীর মুক্তিযোদ্ধার বিবৃতি

চ্যাটজিপিটিকে যেভাবে প্রশ্ন করবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত