Ajker Patrika

নায়ক-খলনায়ক নেই এবারের বিশ্বকাপে

আরমান হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৩
নায়ক-খলনায়ক নেই এবারের বিশ্বকাপে

‘নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আমার জন্যই বিশ্বকাপ জিততে পারল না ইংল্যান্ড। এই মুহূর্তে কী ঘটে গেল, সেটি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না! আমার আসলে কী করা উচিত? লড়াইয়ের ওই সময়টায় উইকেটে লুটিয়ে পড়েছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল আজ আমি নিঃস্ব।’ বেন স্টোকস তাঁর আত্মজীবনী ‘অন ফায়ার’-এর শুরুটা এভাবেই করেছেন।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার তখন ৬ বলে ১৯ রান। ইংলিশ অধিনায়ক এউইন মরগান বল তুলে দিলেন তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সেনানী স্টোকসের হাতে। স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা কার্লোস ব্রাথওয়েট যেন তাঁর ‘লাইফ টাইম ইনিংস’টা জমিয়ে রেখেছিলেন এই ওভারের জন্যই। ৬, ৬, ৬, ৬—চার ছক্কায় ইডেন গার্ডেনস তো বটেই, ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানের সঙ্গে যেন ক্যালিপসো সুরে নেচে উঠল পুরো ক্রিকেট-বিশ্ব। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে ইয়ান বিশপ চিৎকার দিয়ে উঠলেন—রিমেম্বার দ্য নেম...। এই ‘রিমেম্বার দ্য নেম’ হয়ে গেল আইকোনিক এক বাক্য, যা আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের কানে বাজে।

ব্রাথওয়েটের হাতে বেদম প্রহারে স্টোকস তখন হতাশার সাগরে নিমজ্জিত। ট্রফি হাতছাড়া তো হয়েছেই, ইংলিশ অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ারটাই যেন হুমকিতে পড়ে গেল! স্টোকসের মনের অবস্থা তখন কী, তা তাঁর আত্মজীবনের শুরুতেই লিখেছেন। পাঁচ বছর পর আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়ছে। ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল ইডেনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে যে নায়ক-খলনায়ক দেখেছিল ক্রিকেট, সেই স্টোকস–ব্রাথওয়েট দুজনের কেউই এবার নেই!

২০১৬ সালে দলকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাতে না পারা স্টোকস অবশ্য পরের চার বছরে নিজেকে ইংলিশ ক্রিকেট ইতিহাসেই অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ (২০১৯) জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টেও লিখেছিলেন আরেক রূপকথা। হুট করেই গত জুলাইয়ে মানসিক অবসাদের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন স্টোকস। গত বছরের ডিসেম্বরে বাবাকে হারিয়েও বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন তিনি। ছিল আঙুলের চোটও। সব মিলিয়েই এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা যাবে না সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারকে।

ব্রাথওয়েটের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকার কারণ অবশ্য তিনি নিজেই। ছন্দ হারিয়ে নিয়মিত দলেই জায়গা পান না। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন প্রায় দুই বছর আগে। টি- টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তাঁর মনে রাখার মতো ইনিংস ওই একটিই। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের হাতের মুঠো থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নেওয়া ১০ বলে অপরাজিত ৩৪। 

ব্রাথওয়েটের যে ইনিংসটা দেখে বিশপ বলেছিলেন, ‘মনে রেখো নামটা’—সেটি বোধ হয় বেশি হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন স্টোকসই। নিজের লেখা আত্মজীবনীর প্রথম অধ্যায়েই ইংলিশ অলরাউন্ডার লিখেছেন, ‘কার্লোস ব্রাথওয়েট আমাকে টানা চার-ছক্কা হাঁকিয়েছে। মানুষ সারা জীবন এটিই মনে রাখবে। আমি এটা মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু হারটা মেনে নিতে পারিনি। সেদিন ইডেন গার্ডেনসে ৫০ হাজার দর্শক ছিল। আর টিভি পর্দায় সারা বিশ্বের নজর ছিল আমার ওপর।’

পাঁচ বছর আগে ইংলিশদের কাছে খলনায়ক বনে যাওয়া স্টোকস ঠিকই নায়ক হয়েছেন তিন বছর পর লর্ডসে বিশ্বকাপ ট্রফিটা জিতে। আর ইডেনের সেই নায়ক ব্র্যাথওয়েট এখন বেপথু এক তারকা। ক্রিকেটপ্রেমীদের অবশ্য আফসোস হতে পারে, এবার মরুর দেশে টি-টোয়েন্টিতে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চে যদি আরেকটি লড়াই দেখা যেত দুই তারকার!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত