Ajker Patrika

‘এখন পাঁচ বছরেই ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার হয়ে যায়’

বোরহান জাবেদ
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২: ৫৫
‘এখন পাঁচ বছরেই ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার হয়ে যায়’

পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য আমির সোহেল। খেলা ছাড়ার পর ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন। বিপিএলে প্রায় নিয়মিত ধারাভাষ্য দেন, এবারও এসেছেন। পরশু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ধারাভাষ্যের ফাঁকে আমির কথা বলেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বোরহান জাবেদ।        

প্রশ্ন: বাংলাদেশে এলে সাধারণত কেমন লাগে? 
আমির সোহেল: নিজেকে বাংলাদেশি ক্রিকেটের অনেক বড় ভক্ত মনে করি। বাংলাদেশে আসতে পারা আমার জন্য সব সময়ই বড় উপলক্ষ। এখানে দারুণ লাগে। আমার অনেক বন্ধুবান্ধবও আছে, যারা খেলাটাকে ভালোবাসে। বলতে পারেন, তাদের টানে বাংলাদেশে আসাটা উপভোগ করি।  
 
প্রশ্ন: বাংলাদেশে আপনার অনেক স্মৃতি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে কোন স্মৃতি?  
আমির: ১৯৯৩ সালের সফরের কথা মনে পড়ছে। তখনো পাকিস্তান দলে আমার স্থায়ী জায়গা ছিল না। দলও একটু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। আমাকে আর সাঈদ আনোয়ারকে প্রথমবার ওপেনিংয়ে সুযোগ দেওয়া হলো। আমাদের ওপেনিং জুটি ক্লিক করা শুরু করেছিল বাংলাদেশ থেকেই। এবং সেটাই আমার প্রথম বাংলাদেশ সফর ছিল। 

প্রশ্ন: যত দূর শুনেছি, আপনারা তো এর আগেও ওপেনিং করেছিলেন। 
আমির: সেটা ১৯৯০ সালে। আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একেবারে শুরুর দিকে, অল্প সময়ের জন্য। ওই সময় এমন ছিল, ও দলে থাকে তো আমি থাকি না, আমি থাকি তো ও থাকে না। 

প্রশ্ন: সাঈদ আনোয়ারের প্রসঙ্গ যেহেতু উঠেছেই...। (প্রশ্ন শেষ না হতেই) 
আমির: সে ব্যতিক্রম ক্রিকেটার। খুবই পরিশ্রমী। তার মাথায় শুধু ক্রিকেটই ঘুরত, প্রতিনিয়ত নিজের খেলার উন্নতি চাইত। সে সব সময় ক্রিকেট নিয়েই কথা বলতে চাইত এবং নতুন কিছু শিখতে চাইত। সে সবাইকে ম্যাচ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ দিত। নিজের টেকনিক নিয়েও প্রচুর কাজ করত। যেদিন তার টেকনিক নিশ্ছিদ্র থাকত, সে খুবই বিপজ্জনক ব্যাটার হিসেবে আবির্ভূত হতো।  

প্রশ্ন: খেলোয়াড়ি জীবনে আপনাদের বন্ধুত্ব নিয়ে অনেক গল্প আছে। 
আমির: মাঠের বাইরে আমাদের অসাধারণ বন্ধুত্ব ছিল। আমাদের পছন্দ ছিল একই রকম, একই ধরনের মিউজিক, একই ধরনের পোশাক, দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়া, একসঙ্গে স্কোয়াশ খেলা, দুজনেই ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করতাম, একসঙ্গে অনেক সময় কাটাতাম এবং আমরা যেকোনো বিষয়ে খুবই খোলামেলা ছিলাম। আরেকটা ব্যাপার ছিল, ব্যাটিংয়ে নামার আগের দিন আমরা একসঙ্গে বসতাম এবং কিছু বিষয়ে আলোচনা করতাম, যেটা আমাদের দুজনের ব্যাটিং আরও সহজ করে দিত। 

প্রশ্ন: ওয়ানডেতে পাকিস্তানের হয়ে ওপেনারদের মধ্যে ৫০ পেরোনো ইনিংস সংখ্যায় এখনো প্রথম সাঈদ আনোয়ার (৩২) আর আপনি দুইয়ে (২৯)।  
আমির: তাই নাকি! এটা সম্ভব হয়েছিল একমাত্র আমাদের বোঝাপড়ার জন্য। আমাদের দুজনকে সেই আত্মবিশ্বাস দিয়েছিলেন তখনকার পাকিস্তান অধিনায়ক সেলিম মালিক। তাঁর কারণে আমরা নিজেদের মেলে ধরার সেই সুযোগটা পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন: আপনার প্রিয় বাঁহাতি ওপেনার কে? 
আমির: আমার প্রিয় বাঁহাতি ব্যাটারের নাম বলি, একজন হচ্ছেন প্রয়াত ওয়াসিম হাসান রাজা। তিনি আমার প্রিয় ক্রিকেটার, প্রিয় বাঁহাতি ব্যাটার ও আমার মেন্টর। তিনিই আমাকে অধিনায়ক করেছিলেন, যখন আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে লাহোর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে খেলছি। তিনিই আমাকে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করতে উৎসাহিত করেছিলেন। আমি কিন্তু মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমি যদি ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করি, পেস এবং সুইং সামলানোর আমার যে সামর্থ্য, তাতে পাকিস্তানের হয়ে খেলার সুযোগটা বেশি তৈরি হবে। অ্যালান বোর্ডারকেও অনেক ভালো লাগত। আরেকজন ডেভিড গাওয়ার।  

প্রশ্ন: এখনকার সময়ে ক্ল্যাসিক বাঁহাতি ওপেনার মিস করেন? 
আমির: এখনো কিছু আছে। (ডেভিড) ওয়ার্নার, তামিম (ইকবাল)...নিউজিল্যান্ড দলেও কয়েকজন আছে। নিউজিল্যান্ডের ওপেনাররা ক্যারিয়ারের শুরুর সময়ে আছে। এই সময়ের বাঁহাতি ব্যাটারের কথা বললে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নেকেও তালিকায় রাখতেই হবে। বাঁহাতি ব্যাটার হিসেবে (বাংলাদেশের) ওই ছেলেটা, আফিফ। সে অনেক বড় প্রতিভা। 

প্রশ্ন: আপনাদের সময়ে ভারত-পাকিস্তান যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, এখন সেটা আগের মতো দেখতে না পাওয়ার কারণ কী?
আমির: প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। সবাই এখনো এটা উপভোগ করছে। মেলবোর্নে (গত অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ) যে খেলাটা হলো, গ্যালারি পূর্ণ ছিল। মানুষ এখনো দেখতে চায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এটাতে রাজনীতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে।  

প্রশ্ন: তবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছুটা কম মনে হয় না? 
আমির: সত্যি বললে, ভারতীয় দল প্রতিনিয়ত নিজেদের ছাড়িয়ে গেছে। যেটা আমরা পারিনি। কিন্তু এখন আমাদের ভালো ফাস্ট বোলার আছে, ব্যাটার আছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও সমান হচ্ছে। 

প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে ধারাভাষ্য দিয়েছেন, পিএসএলেও দেন। বিপিএলেও দিচ্ছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হিসেবে বিপিএলকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? 
আমির: বিপিএলও ওই কাতারে আছে। এসব টুর্নামেন্টের সাফল্য স্থানীয় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে। যদি স্থানীয় খেলোয়াড়েরা ভালো করতে পারে কিংবা ফর্ম ফিরে পেতে পারে, এটাই সাফল্য। যতক্ষণ বিপিএল বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এই জিনিসটা দিতে পারবে, ততক্ষণ সফল বলা যাবে। এটা দুর্দান্ত একটা টুর্নামেন্ট। 

প্রশ্ন: এবার এখন পর্যন্ত স্থানীয়রা ভালোই করছে। 
আমির: এটা বেশ ইতিবাচক। বাণিজ্যিকভাবে এটা (বিপিএল) অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের কাতারেই। কারণ, এটা অনেক পৃষ্ঠপোষক পায়। এখন ক্রিকেটে তীব্র প্রতিযোগিতা, সামনে এটা আরও বাড়বে। বিপিএলও সফল হবে। 

প্রশ্ন: আইপিএলের পর অন্য অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আগে বিপিএল শুরু হয়েছিল। আপনার কি মনে হয় এটা আইপিএল, পিএসএলের মতো ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে? 
আমির: এটা ব্র্যান্ড। এবার এটার কততম সংস্করণ চলছে? নবম। এর পরও সন্দেহ আছে? একটা টুর্নামেন্টের যদি নবম সংস্করণ চলে, তার মানে এটা ব্র্যান্ড।

প্রশ্ন: আপনার সময় আর এই সময়ের ক্রিকেটের কেমন পার্থক্য দেখেন? 
আমির: ক্রিকেট দিনে দিনে উদ্ভাসিত হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে দুঃসাহস জিনিসটা যোগ হয়েছে। সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। ২০০০ সালে ক্রিকেটাররা দেশের খেলার বাইরে হয় কাউন্টি খেলতে যেত, না হয় শিল্ড ক্রিকেট। তাও সবাই না। এখন সেটা নেই। বিশ্বব্যাপী এত ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। কোথাও না কোথাও খেলার সুযোগ আসেই। তখন যদি একজন ক্রিকেটার দেশের হয়ে কমপক্ষে ১০ বছর খেলতে পারত, তার একটা ক্যারিয়ার হতো, কিছু (টাকা-পয়সা) হতো। এখন পাঁচ বছর খেললে সেটা হওয়ার সুযোগ আছে। এটা অনেক বড় পার্থক্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

‘কথিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের’ বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিষয়ে ভারত অবহিত নয়: মুখপাত্র

কলকাতার নিউটাউনে বসে আয়েশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি, ৪৮ শিক্ষক বরখাস্ত

ভিসা ছাড়া পাকিস্তান সফরের চুক্তি হতে পারে শিগগির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত