লিটন-তানজিদ তামিমের ওপেনিং জুটি নিয়ে নতুন আশা

মেহেদী হাসান মিরাজ নাচছেন, নাসুম আহমেদ গাইছেন। সাকিব আল হাসান যেন হুংকার ছাড়ছেন। আইসিসির ‘মিডিয়া ডে’তে গতকাল এমনই প্রাণোচ্ছল বাংলাদেশকে দেখা গেল। প্রযোজকের চিত্রনাট্যের সঙ্গে তাল মেলাতেই শুধু নয়, গুয়াহাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ই দলকে এমন প্রাণবন্ত করে তুলেছে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ওপেনিং জুটি।

এ বছর ওপেনিং জুটির ঔজ্জ্বল্য সেভাবে দেখা যাচ্ছিল না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিমের ১৩১ রানের জুটি চিন্তা কমার ইঙ্গিতই দিয়েছে। গতকাল হাবিবুল বাশার সুমন বলছিলেন, ভয়ডরহীন এমন একটা আস্থার ওপেনিং জুটিই চাইছেন তাঁরা। আজকের পত্রিকাকে বিসিবির এই নির্বাচক বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, অবশ্যই স্বস্তির একটা জুটি। যেহেতু প্রস্তুতি ম্যাচ, তবু দারুণ ব্যাটিং করেছে দুজনে। এই ব্যাটিং সামনের প্রস্তুতি ম্যাচ এবং মূল ম্যাচেও ধরে রাখা প্রয়োজন তাদের। এটাই চাওয়া।’

পাওয়ার প্লেতে বিশ্বসেরা বোলারদেরই মোকাবিলা করতে হয় ওপেনারদের। যেকোনো বোলিং আক্রমণকে নিজেদের দিনে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখবেন, ভালো শুরু এনে দেবেন, এটি তাঁদের কাছে চাওয়া। এখানেই বাংলাদেশের ওপেনাররা ধারাবাহিক হতাশ করছিলেন। এশিয়া কাপে মেক শিফট ওপেনার হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ ভালো করলেও তাঁর সঙ্গে মোহাম্মদ নাঈমের জুটি সেভাবে জমেনি।

সর্বশেষ নিজেদের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও বিশেষ ওপেনারদের ওপর ভরসা রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশ্বকাপের আগে নড়বড়ে তানজিদ তামিম ও ফর্ম হারিয়ে ফেলা লিটনের রানে ফেরা ছিল জরুরি। প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে তামিম-লিটনের ওপেনিং জুটির স্থায়িত্ব ছিল ১৯ রান। শেষ ম্যাচে তানজিদ তামিম ও জাকির হাসানের ওপেনিং জুটি ৬ রানেই শেষ। 

গত ১০ ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র এক ফিফটি লিটনের। দারুণ ফেরার ইঙ্গিত দিয়েও অনেক নাটকের পর বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি অভিজ্ঞ তামিম ইকবালের। তাঁর জায়গায় প্রথমবার বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেলেন তানজিদ তামিম। এ পর্যন্ত ৪ ওয়ানডে খেলা জুনিয়র তামিমও রানের দেখা পাচ্ছিলেন না।

এ বছর ২০ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ দল। এগুলোর মধ্যে ৫০ রানের ওপেনিং জুটি হয়েছে মাত্র ৩ ম্যাচে। ৮ ওয়ানডে ম্যাচে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছার আগেই ছেদ পড়ে ওপেনিং জুটিতে। পাঁচ ম্যাচে জুটির স্থায়িত্ব ছিল ১০ থেকে ২০ রানের মধ্যে। গত মার্চে সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও লিটনের ১০২ রান সর্বোচ্চ জুটি।

বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়ে নামার আগে ১২৪ বলে ১৩১ রানের জুটিতে যেন আস্থার আশা দেখালেন লিটন ও তানজিদ তামিম। লঙ্কানদের বিপক্ষে ১০ চারে লিটনের ৫৬ বলে ৬১ এবং জুনিয়র তামিমের ৮৮ বলে ৮৪ রান, ইনিংসে ছিল ১০ চার ও দুটি ছক্কাও। এমন টপ অর্ডারে এমন লম্বা জুটি ধারাবাহিক গড়তে পারলে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকার কথা নয়। 

ওপেনিং জুটি শক্ত ভিত এনে দিলে জয়টা কতটা দাপুটে ও সহজ হয়, প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে সেটি আবারও দেখা গেল। টানা ব্যর্থ হওয়া লিটন কিউইদের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডের পর হতাশায় ব্যাট ভেঙেছেন। তাঁকে ছন্দে ফেরাতে টিম ম্যানেজমেন্টও চেষ্টার কিছু বাকি রাখেনি। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার ওয়ানডে সংস্করণের সহকারী অধিনায়ক হলেও বিশ্বকাপে সেই দায়িত্ব তাঁকে দেয়নি বিসিবি। 

অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ক্রীড়াভিত্তিক টেলিভিশন টি-স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিটনকে নিয়ে বলেছেন, ‘এটা ওকে সহায়তা করবে। ওর ব্যাটিংয়ে আরও মনোযোগ দিতে সহায়তা করবে। এই মুহূর্তে ওর ব্যাটিংয়ের চেয়ে আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয় আমাদের কাছে।’