অনলাইন ডেস্ক
আজ থেকে প্রায় ২৯ বছর আগে, ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই, বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। এই দিনে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসলিন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা একটি ভেড়ার জন্ম দিয়েছিলেন, যার নাম ছিল ডলি। ডলি ছিল প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেটিকে একটি প্রাপ্তবয়স্ক দেহকোষ (somatic cell) থেকে সফলভাবে ক্লোন করা হয়েছিল। এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক ও নৈতিক বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। অবশ্য ক্লোনিং গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনাও হয় এই সাফল্যের মাধ্যমে।
ডলি ছিল একটি ফিন ডরসেট প্রজাতির মেষশাবক। এর জন্ম হয়েছিল একটি প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়ার স্তনগ্রন্থির কোষ থেকে। এর আগে ক্লোনিং প্রক্রিয়া শুধু ভ্রূণ কোষ থেকে সফল হয়েছিল। কিন্তু ডলির ক্ষেত্রে, বিজ্ঞানীরা একটি প্রাপ্তবয়স্ক পৃথককৃত কোষ ব্যবহার করে দেখিয়েছিলেন, শুধু দেহকোষ থেকেও একটি সম্পূর্ণ প্রাণী তৈরি করা সম্ভব।
রসলিন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ইয়ান উইলমুট এবং কেইথ ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বে একটি দল এই যুগান্তকারী কাজটি সম্পন্ন করেন। তাঁদের ব্যবহৃত পদ্ধতিটি ছিল ‘সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার’।
এই পদ্ধতিতে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ফিন ডরসেট ভেড়ার স্তনগ্রন্থি থেকে একটি কোষ নেওয়া হয়েছিল। এই কোষে ভেড়াটির সম্পূর্ণ জিনগত তথ্য ছিল। একটি স্কটিশ ব্ল্যাকফেস ভেড়ার ডিম্বাণু থেকে এর নিউক্লিয়াস (যেখানে জেনেটিক উপাদান থাকে) অপসারণ করা হয়েছিল। এরপর অপসারিত নিউক্লিয়াসযুক্ত ডিম্বাণুতে ফিন ডরসেট ভেড়ার স্তনগ্রন্থির কোষটি প্রবেশ করানো হয়। এই সম্মিলিত কোষটিকে একটি মৃদু বৈদ্যুতিক শক দিয়ে উদ্দীপিত করা হয়, যা এটিকে বিভাজন শুরু করতে উৎসাহিত করে। যখন কোষটি বিভাজিত হয়ে একটি ছোট ভ্রূণ তৈরি করে, তখন এটিকে একটি সারোগেট মায়ের (এখানে একটি স্কটিশ ব্ল্যাকফেস ভেড়া) গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।
১৪৮ দিন পর, ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই, ডলির জন্ম হয়।
ডলির এই জন্ম প্রক্রিয়া বিজ্ঞানের জন্য কয়েকটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল:
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, একটি সম্পূর্ণ পৃথককৃত প্রাপ্তবয়স্ক কোষ থেকে একটি সম্পূর্ণ এবং সুস্থ প্রাণী ক্লোন করা সম্ভব। ডলির সাফল্য স্টেম সেল গবেষণা, অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণের মতো ক্ষেত্রগুলোতে নতুন গবেষণার পথ খুলে দেয়। এ ছাড়া এই আবিষ্কারের ফলে এমন রোগের চিকিৎসার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যার জন্য কোষ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
তবে ডলির জন্ম বিশ্বজুড়ে ক্লোনিং নিয়ে তীব্র নৈতিক ও সামাজিক বিতর্কেরও জন্ম দেয়। মানব ক্লোনিংয়ের সম্ভাবনা, এর নৈতিকতা এবং এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
ডলি তার জীবনে ছয়টি মেষশাবকের জন্ম দিয়েছিল। তবে অন্যান্য ভেড়ার তুলনায় কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, এর মধ্যে অন্যতম আর্থ্রাইটিস। ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ফুসফুসের একটি রোগের কারণে ছয় বছর বয়সে ডলিকে শান্তিময় মৃত্যু (euthanized) দেওয়া হয়। যেখানে একটি ফিন ডরসেট ভেড়ার গড় আয়ু সাধারণত ১০ থেকে ১২ বছর হয়।
ডলির অকাল মৃত্যু সঙ্গে ক্লোনের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক ছিল। যদিও বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি সাধারণ বয়স্ক ভেড়ার রোগ।
আজও ডলির জন্ম মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে স্মরণ করা হয়। বিজ্ঞানের ক্ষমতা এবং এর সঙ্গে নৈতিক দায়িত্ব উভয়ই মানুষকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় ডলি।
মানব ক্লোনিংয়ের নৈতিক বিতর্ক:
ক্লোনিং, বিশেষ করে মানব ক্লোনিং নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক নৈতিক বিতর্ক রয়েছে। এর অপব্যবহার এবং এর দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও নৈতিক প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
এটিকে মানব মর্যাদার লঙ্ঘন বলে মনে করা হয়। কারণ অনেক সমালোচক মনে করেন, ক্লোনিং মানব জীবনকে একটি পণ্যে বা বস্তুতে পরিণত করবে। একটি মানুষকে নির্দিষ্ট জেনেটিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে তৈরি করা হলে তাকে কেবল একটি উদ্দেশ্য পূরণের মাধ্যম হিসেবে দেখা হতে পারে, যা তার অন্তর্নিহিত মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্যকে ক্ষুণ্ন করে।
এ ছাড়া ক্লোনড ব্যক্তির স্বকীয়তা ও পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদিও জিনগতভাবে একই, একজন ক্লোনড ব্যক্তি স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে উঠবে। তবুও তার "কপি" হওয়ার অনুভূতি তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কিছু ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ক্লোনিংকে প্রকৃতির বা সৃষ্টিকর্তার ভূমিকায় মানুষের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। জীবন সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করাকে অনৈতিক মনে করা হয়।
সর্বোপরি প্রাকৃতিক নিয়মে হস্তক্ষেপের দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ অবগত নই। ক্লোনড প্রাণীদের মধ্যে অস্বাভাবিকতা বা স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঘটনা এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই প্রযুক্তির অপব্যবহারও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যেমন ক্লোনিং প্রযুক্তিকে ‘ডিজাইনার বেবি’ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতে পারে, যেখানে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য (যেমন-বুদ্ধিমত্তা, শারীরিক সৌন্দর্য বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বেছে নিতে পারবে। এটি সামাজিক বৈষম্য এবং জেনেটিক বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে।
ক্লোনিং যদি শুধু বিত্তশালীদের জন্য সামর্থ্যের মধ্যে হয়, তাহলে এটি সমাজে নতুন ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে ‘উন্নত’ জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তিরা একটি বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে।
ক্লোনিংকে সামরিক উদ্দেশ্যে বা দমনমূলক শাসন ব্যবস্থায় ব্যবহার করার সম্ভাবনা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে, যেমন-‘আদর্শ সৈনিক’ তৈরি করা।
ক্লোন করা ব্যক্তির নিজস্ব মুক্ত ইচ্ছা বা জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে। যদি তাকে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়, তবে তার জীবনকে কতটা স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়ার অধিকার থাকবে?
ক্লোন করা ব্যক্তিকে গবেষণা, অঙ্গ সংগ্রহের উৎস বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার আশঙ্কা থাকে, যা তার মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন হবে।
ডলি ভেড়ার মতো অনেক ক্লোন করা প্রাণী স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা অকাল মৃত্যুর শিকার হয়েছে। মানব ক্লোনিংয়ের ক্ষেত্রে একই ধরনের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে, যা মানব প্রাণের ওপর গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ক্লোনিং প্রথাগত পারিবারিক সম্পর্কের ধারণাকেও জটিল করে তুলতে পারে। একজন ক্লোনড ব্যক্তি কি তার মূল ব্যক্তির সন্তান, ভাইবোন, নাকি অন্য কিছু? এই সম্পর্কগুলো সামাজিক ও আইনি জটিলতা তৈরি করতে পারে।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক প্রজনন মানব প্রজাতির জেনেটিক বৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অপরিহার্য। ক্লোনিং এই বৈচিত্র্যকে হ্রাস করতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে মানব প্রজাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এই সমস্ত কারণে ক্লোনিং, বিশেষ করে মানব ক্লোনিং, নিয়ে একটি জটিল এবং বহু-স্তরীয় নৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ দেশ বর্তমানে মানব ক্লোনিং অবৈধ। কিন্তু এর ওপর গবেষণা এবং এর সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে।
আজ থেকে প্রায় ২৯ বছর আগে, ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই, বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। এই দিনে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসলিন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা একটি ভেড়ার জন্ম দিয়েছিলেন, যার নাম ছিল ডলি। ডলি ছিল প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেটিকে একটি প্রাপ্তবয়স্ক দেহকোষ (somatic cell) থেকে সফলভাবে ক্লোন করা হয়েছিল। এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক ও নৈতিক বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। অবশ্য ক্লোনিং গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনাও হয় এই সাফল্যের মাধ্যমে।
ডলি ছিল একটি ফিন ডরসেট প্রজাতির মেষশাবক। এর জন্ম হয়েছিল একটি প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়ার স্তনগ্রন্থির কোষ থেকে। এর আগে ক্লোনিং প্রক্রিয়া শুধু ভ্রূণ কোষ থেকে সফল হয়েছিল। কিন্তু ডলির ক্ষেত্রে, বিজ্ঞানীরা একটি প্রাপ্তবয়স্ক পৃথককৃত কোষ ব্যবহার করে দেখিয়েছিলেন, শুধু দেহকোষ থেকেও একটি সম্পূর্ণ প্রাণী তৈরি করা সম্ভব।
রসলিন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ইয়ান উইলমুট এবং কেইথ ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বে একটি দল এই যুগান্তকারী কাজটি সম্পন্ন করেন। তাঁদের ব্যবহৃত পদ্ধতিটি ছিল ‘সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার’।
এই পদ্ধতিতে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ফিন ডরসেট ভেড়ার স্তনগ্রন্থি থেকে একটি কোষ নেওয়া হয়েছিল। এই কোষে ভেড়াটির সম্পূর্ণ জিনগত তথ্য ছিল। একটি স্কটিশ ব্ল্যাকফেস ভেড়ার ডিম্বাণু থেকে এর নিউক্লিয়াস (যেখানে জেনেটিক উপাদান থাকে) অপসারণ করা হয়েছিল। এরপর অপসারিত নিউক্লিয়াসযুক্ত ডিম্বাণুতে ফিন ডরসেট ভেড়ার স্তনগ্রন্থির কোষটি প্রবেশ করানো হয়। এই সম্মিলিত কোষটিকে একটি মৃদু বৈদ্যুতিক শক দিয়ে উদ্দীপিত করা হয়, যা এটিকে বিভাজন শুরু করতে উৎসাহিত করে। যখন কোষটি বিভাজিত হয়ে একটি ছোট ভ্রূণ তৈরি করে, তখন এটিকে একটি সারোগেট মায়ের (এখানে একটি স্কটিশ ব্ল্যাকফেস ভেড়া) গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।
১৪৮ দিন পর, ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই, ডলির জন্ম হয়।
ডলির এই জন্ম প্রক্রিয়া বিজ্ঞানের জন্য কয়েকটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল:
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, একটি সম্পূর্ণ পৃথককৃত প্রাপ্তবয়স্ক কোষ থেকে একটি সম্পূর্ণ এবং সুস্থ প্রাণী ক্লোন করা সম্ভব। ডলির সাফল্য স্টেম সেল গবেষণা, অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণের মতো ক্ষেত্রগুলোতে নতুন গবেষণার পথ খুলে দেয়। এ ছাড়া এই আবিষ্কারের ফলে এমন রোগের চিকিৎসার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যার জন্য কোষ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
তবে ডলির জন্ম বিশ্বজুড়ে ক্লোনিং নিয়ে তীব্র নৈতিক ও সামাজিক বিতর্কেরও জন্ম দেয়। মানব ক্লোনিংয়ের সম্ভাবনা, এর নৈতিকতা এবং এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
ডলি তার জীবনে ছয়টি মেষশাবকের জন্ম দিয়েছিল। তবে অন্যান্য ভেড়ার তুলনায় কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, এর মধ্যে অন্যতম আর্থ্রাইটিস। ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ফুসফুসের একটি রোগের কারণে ছয় বছর বয়সে ডলিকে শান্তিময় মৃত্যু (euthanized) দেওয়া হয়। যেখানে একটি ফিন ডরসেট ভেড়ার গড় আয়ু সাধারণত ১০ থেকে ১২ বছর হয়।
ডলির অকাল মৃত্যু সঙ্গে ক্লোনের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক ছিল। যদিও বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি সাধারণ বয়স্ক ভেড়ার রোগ।
আজও ডলির জন্ম মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে স্মরণ করা হয়। বিজ্ঞানের ক্ষমতা এবং এর সঙ্গে নৈতিক দায়িত্ব উভয়ই মানুষকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় ডলি।
মানব ক্লোনিংয়ের নৈতিক বিতর্ক:
ক্লোনিং, বিশেষ করে মানব ক্লোনিং নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক নৈতিক বিতর্ক রয়েছে। এর অপব্যবহার এবং এর দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও নৈতিক প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
এটিকে মানব মর্যাদার লঙ্ঘন বলে মনে করা হয়। কারণ অনেক সমালোচক মনে করেন, ক্লোনিং মানব জীবনকে একটি পণ্যে বা বস্তুতে পরিণত করবে। একটি মানুষকে নির্দিষ্ট জেনেটিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে তৈরি করা হলে তাকে কেবল একটি উদ্দেশ্য পূরণের মাধ্যম হিসেবে দেখা হতে পারে, যা তার অন্তর্নিহিত মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্যকে ক্ষুণ্ন করে।
এ ছাড়া ক্লোনড ব্যক্তির স্বকীয়তা ও পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদিও জিনগতভাবে একই, একজন ক্লোনড ব্যক্তি স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে উঠবে। তবুও তার "কপি" হওয়ার অনুভূতি তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কিছু ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ক্লোনিংকে প্রকৃতির বা সৃষ্টিকর্তার ভূমিকায় মানুষের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। জীবন সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করাকে অনৈতিক মনে করা হয়।
সর্বোপরি প্রাকৃতিক নিয়মে হস্তক্ষেপের দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ অবগত নই। ক্লোনড প্রাণীদের মধ্যে অস্বাভাবিকতা বা স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঘটনা এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই প্রযুক্তির অপব্যবহারও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যেমন ক্লোনিং প্রযুক্তিকে ‘ডিজাইনার বেবি’ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতে পারে, যেখানে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য (যেমন-বুদ্ধিমত্তা, শারীরিক সৌন্দর্য বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বেছে নিতে পারবে। এটি সামাজিক বৈষম্য এবং জেনেটিক বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে।
ক্লোনিং যদি শুধু বিত্তশালীদের জন্য সামর্থ্যের মধ্যে হয়, তাহলে এটি সমাজে নতুন ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে ‘উন্নত’ জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তিরা একটি বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে।
ক্লোনিংকে সামরিক উদ্দেশ্যে বা দমনমূলক শাসন ব্যবস্থায় ব্যবহার করার সম্ভাবনা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে, যেমন-‘আদর্শ সৈনিক’ তৈরি করা।
ক্লোন করা ব্যক্তির নিজস্ব মুক্ত ইচ্ছা বা জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে। যদি তাকে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়, তবে তার জীবনকে কতটা স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়ার অধিকার থাকবে?
ক্লোন করা ব্যক্তিকে গবেষণা, অঙ্গ সংগ্রহের উৎস বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার আশঙ্কা থাকে, যা তার মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন হবে।
ডলি ভেড়ার মতো অনেক ক্লোন করা প্রাণী স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা অকাল মৃত্যুর শিকার হয়েছে। মানব ক্লোনিংয়ের ক্ষেত্রে একই ধরনের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে, যা মানব প্রাণের ওপর গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ক্লোনিং প্রথাগত পারিবারিক সম্পর্কের ধারণাকেও জটিল করে তুলতে পারে। একজন ক্লোনড ব্যক্তি কি তার মূল ব্যক্তির সন্তান, ভাইবোন, নাকি অন্য কিছু? এই সম্পর্কগুলো সামাজিক ও আইনি জটিলতা তৈরি করতে পারে।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক প্রজনন মানব প্রজাতির জেনেটিক বৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অপরিহার্য। ক্লোনিং এই বৈচিত্র্যকে হ্রাস করতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে মানব প্রজাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এই সমস্ত কারণে ক্লোনিং, বিশেষ করে মানব ক্লোনিং, নিয়ে একটি জটিল এবং বহু-স্তরীয় নৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ দেশ বর্তমানে মানব ক্লোনিং অবৈধ। কিন্তু এর ওপর গবেষণা এবং এর সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে।
আমরা যখন ‘নাসা’ নিয়ে ভাবি, তখন আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে রকেট আর মহাকাশ অভিযান। এটিই স্বাভাবিক, কারণ মহাকাশ-সংক্রান্ত নাসার অন্যান্য অর্জনই সংবাদমাধ্যমে বেশি প্রকাশ পায়। তবে অনেকেই জানেন না, নাসার রকেট বা মহাকাশযানের পাশাপাশি নিজস্ব যুদ্ধবিমানের বহর রয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেচেক প্রজাতন্ত্রের দক্ষিণ মোরাভিয়া অঞ্চলের এক প্রাগৈতিহাসিক খনিতে ছয় হাজার বছর আগে শ্রমজীবী দুই বোনের জীবনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। নতুন গবেষণার ভিত্তিতে এই দুই নারীর ‘হাইপাররিয়েলিস্টিক’ বা ৩ডি মুখাবয়ব পুনর্গঠন করা হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগেবিশ্বজুড়ে অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য আলু। হাজার হাজার বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ অঞ্চলে এই শস্যের প্রথম চাষ শুরু হয়। এরপর ১৬শ শতাব্দী থেকে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এতদিন আলুর বিবর্তন ও উৎপত্তি ঘিরে ছিল রহস্য। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানালেন, আলুর উৎপত্তি হয়েছিল টমেটো ও আলুর মতো দেখতে
২ দিন আগেনিশ্বাস নেওয়ার জন্য মানুষের মতো শুধু ফুসফুসের ওপর নির্ভর করে না ব্যাঙ। এরা ত্বক দিয়েই তারা শ্বাস নিতে পারে এবং পানি পান করতে পারে। ব্যাঙসহ অন্যান্য উভচর প্রাণীদের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য পরিবেশের সঙ্গে তাদের গভীরভাবে সংযুক্ত করে রাখে।
২ দিন আগে