আজকের পত্রিকা ডেস্ক

২০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৪ সাল। যুক্তরাজ্যের সাময়িক পত্রিকা ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’ সেদিন প্রথম পাতায় বিরাট করে এক আবিষ্কারের খবর ছাপে। লেখা হয়, গ্রিসের ‘টিরিনস্’ ও ‘মাইসিনে’র মতো প্রাচীন শহর খুঁজে পাওয়া গেছে ভারতে। এটি ছিল প্রায় ৫ হাজার বছর আগেকার দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর মহেঞ্জোদারো আর হরপ্পা আবিষ্কারের কাহিনি। সারা বিশ্বে হইহই রইরই পড়ে গেল সেই খবরে।
এর আগে পর্যন্ত কারও ধারণা ছিল না যে ভারতেও থাকতে পারে হাজার হাজার বছরের পুরোনো কোনো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। লন্ডন নিউজে এই প্রতিবেদন লিখেছিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া) তৎকালীন প্রধান, প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার জন মার্শাল। খবরের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল প্রচুর ছবি ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।
তবে মি. মার্শাল তাঁর প্রতিবেদনে এটা উল্লেখ করেননি যে সিন্ধু সভ্যতার ওই দুই প্রাচীন শহর আবিষ্কারের কৃতিত্ব আসলে ছিল দুই ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদের। তাঁদের একজন আবার বাঙালি— নাম রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাখালদাস ছিলেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মী ও প্রশিক্ষিত প্রত্নতত্ত্ববিদ, যিনি মহেঞ্জোদারো খুঁজে পেয়েছিলেন। অন্যজন দয়ারাম সাহানি, আবিষ্কার করেছিলেন হরপ্পা।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।

১৯০০ সালের শুরুর দিকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে খুঁজে পেয়েছিলেন মহেঞ্জোদারো—সিন্ধি ভাষায় যার অর্থ ‘মৃত মানুষের টিলা’। এটি ছিল ব্রোঞ্জ যুগের সিন্ধু ভ্যালি (হরপ্পা) সভ্যতার সবচেয়ে বড় নগর। একসময় যা বিস্তৃত ছিল উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দুর্দান্ত এক অভিযাত্রী ও প্রত্নলিপি বিশেষজ্ঞ। তিনি ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র (এএসআই) হয়ে কাজ করতেন। ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে প্রাচীন নিদর্শন, শিলালিপি আর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বেড়াতেন তিনি।
মহেঞ্জোদারো আবিষ্কার ইতিহাসে বড় অর্জন হলেও এ নিয়ে নানা বিতর্কে ঢাকা পড়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন। তাঁর স্বাধীনচেতা স্বভাব আর ঔপনিবেশিক নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করার কারণে প্রায়ই সমস্যায় পড়তেন তিনি। এতে তাঁর অবদান আড়াল হয়ে যায়—এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাস থেকেও হারিয়ে যেতে বসে।
মজার বিষয় হলো, মহেঞ্জোদারো নিয়ে তাঁর প্রতিবেদনগুলো কখনোই প্রকাশ করেনি এএসআই। পরবর্তী সময়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ পি কে মিশ্র অভিযোগ করেন, তৎকালীন এএসআইয়ের প্রধান জন মার্শাল ইচ্ছাকৃতভাবে এই গবেষণা আড়াল করেন এবং আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিজের নামে তুলে নেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মিশ্র বলেন, ‘বিশ্ব জানে মহেঞ্জোদারো আবিষ্কারের কৃতিত্ব মার্শালের। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন ইতিহাসের এক ক্ষুদ্র পাদটীকা করে রাখা হয়েছে।’

বিতর্কিত অধ্যায়
ইতিহাসবিদ নয়নজ্যোতি লাহিড়ীর ‘Finding Forgotten Cities: How the Indus Civilization Was Discovered’ বইয়ে বলা হয়েছে, রাখালদাস ছিলেন স্পষ্টভাষী, কৌশল ও কূটনীতির ঘাটতি ছিল তাঁর। তাঁর ব্যবহারে প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে প্রায়ই বিবাদ বাধত।
বইটিতে বলা হয়, একবার তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি জাদুঘর থেকে শিলালিপি ও চিত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আবার অন্য একবার কোনো অনুমতি ছাড়াই বাংলার এক জাদুঘর থেকে মূর্তি সরিয়ে নিজের কর্মস্থলে নিতে চেয়েছিলেন।
এ ছাড়া আরেক ঘটনায় অনুমোদন ছাড়াই তিনি পুরোনো একটি চিত্রকর্ম কিনে ফেলেন, যার দাম নিয়েও পরে প্রশ্ন ওঠে। লাহিড়ী লেখেন, রাখালদাস অনেক প্রতিভার অধিকারী হলেও প্রায়ই সবার সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে বসতেন।
শৈশব ও অভিযাত্রার গল্প
১৮৮৫ সালে বাংলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর শৈশব কেটেছিল বহরমপুর শহরে। এই শহরের মধ্যযুগীয় নানা স্মৃতিস্তম্ভ তাঁকে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর ভ্রমণপ্রীতি ছিল প্রবল। একবার ‘ভারতে শক জাতির ইতিহাস’বিষয়ক প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে নিজেই চলে যান পাশের রাজ্যের জাদুঘরে। সেখানে ঘুরে দেখেন ওই সময়কার শিলালিপি আর ভাস্কর্য।
ইয়ামা পাণ্ডের ‘The Life and Works of Rakhaldas Banerji’ বইয়ে বলা হয়েছে, তিনি ১৯১০ সালে এএসআইয়ে খনন সহকারী হিসেবে যোগ দেন। এরপর দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৯১৭ সালে পশ্চিম ভারতের সুপারিনটেনডিং আর্কিওলজিস্ট হন। এই দায়িত্বে থেকেই ১৯১৯ সালে প্রথম মহেঞ্জোদারো পরিদর্শনে যান।
পরবর্তী কয়েক বছরে সেখানে খননকাজ চালিয়ে আবিষ্কার করেন প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ, মুদ্রা, সিল, মৃৎপাত্র ও সূক্ষ্ম হাতিয়ার।
১৯২২ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে মহেঞ্জোদারো নগরের একাধিক স্তরের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো স্তরটি ছিল আজ থেকে প্রায় ৫৩০০ বছর আগে গড়ে ওঠা। তখনো ইতিহাসবিদেরা জানতেন না, সিন্ধু সভ্যতা এত বিস্তৃত ছিল। আজ জানা যায়, সিন্ধু উপত্যকা ধরে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এই সভ্যতা।
রাখালদাসের খননকাজে পাওয়া তিনটি সিলে হরপ্পা থেকে পাওয়া সিলের মতোই প্রতীক ও লিপি ছিল। এতে প্রমাণ হয়, মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা একই সভ্যতার অংশ।

চাকরিতে বদলি, বিতর্ক ও অপবাদ
১৯২৪ সালে মহেঞ্জোদারো প্রকল্পের অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর রাখালদাসকে বদলি করা হয় পূর্ব ভারতে। ইয়ামা পাণ্ডের বইয়ে বলা হয়, এরপর আর মহেঞ্জোদারোর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না।
তবে নয়নজ্যোতি লাহিড়ী লেখেন, বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেই বদলির অনুরোধ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যয়ের হিসাব ছিল অনিয়মিত।
জানা যায়, খনন তহবিলের টাকা দিয়ে অফিসের আসবাবপত্র কিনেছিলেন। এ ছাড়া ভ্রমণের ব্যয় ছিল অস্বাভাবিক। ঊর্ধ্বতনদের কাছে এই খরচের সাফাই দিতে পারেননি। ফলে শাস্তির মুখে পড়ে নিজেই বদলির অনুরোধ জানান। পরে তিনি কলকাতাকেন্দ্রিক নানা প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চুরিকাণ্ড ও পদত্যাগ
১৯২৫ সালে মধ্যপ্রদেশের এক বিখ্যাত হিন্দু মন্দির পরিদর্শনে যান রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন দুই সহকারী ও দুজন শ্রমিক। সেখান থেকে একটি বৌদ্ধ দেবীর পাথরের মূর্তি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়।
অভিযোগ ওঠে, মূর্তি চুরির সঙ্গে তিনিই জড়িত। যদিও তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। মূর্তিটি পরে কলকাতায় উদ্ধার হয়। তবুও জন মার্শালের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯২৭ সালে এএসআই ছাড়ার পর আর্থিক সংকটে পড়েন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভালো খাবার, ঘোড়ার গাড়ি আর বন্ধুদের পেছনে ঢালতেন প্রচুর টাকা। নিজের ভবিষ্যতের জন্য কিছুই রাখেননি।’
১৯২৮ সালে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৩০ সালে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান এই প্রত্নতত্ত্ববিদ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

২০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৪ সাল। যুক্তরাজ্যের সাময়িক পত্রিকা ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’ সেদিন প্রথম পাতায় বিরাট করে এক আবিষ্কারের খবর ছাপে। লেখা হয়, গ্রিসের ‘টিরিনস্’ ও ‘মাইসিনে’র মতো প্রাচীন শহর খুঁজে পাওয়া গেছে ভারতে। এটি ছিল প্রায় ৫ হাজার বছর আগেকার দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর মহেঞ্জোদারো আর হরপ্পা আবিষ্কারের কাহিনি। সারা বিশ্বে হইহই রইরই পড়ে গেল সেই খবরে।
এর আগে পর্যন্ত কারও ধারণা ছিল না যে ভারতেও থাকতে পারে হাজার হাজার বছরের পুরোনো কোনো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। লন্ডন নিউজে এই প্রতিবেদন লিখেছিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া) তৎকালীন প্রধান, প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার জন মার্শাল। খবরের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল প্রচুর ছবি ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।
তবে মি. মার্শাল তাঁর প্রতিবেদনে এটা উল্লেখ করেননি যে সিন্ধু সভ্যতার ওই দুই প্রাচীন শহর আবিষ্কারের কৃতিত্ব আসলে ছিল দুই ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদের। তাঁদের একজন আবার বাঙালি— নাম রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাখালদাস ছিলেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মী ও প্রশিক্ষিত প্রত্নতত্ত্ববিদ, যিনি মহেঞ্জোদারো খুঁজে পেয়েছিলেন। অন্যজন দয়ারাম সাহানি, আবিষ্কার করেছিলেন হরপ্পা।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।

১৯০০ সালের শুরুর দিকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে খুঁজে পেয়েছিলেন মহেঞ্জোদারো—সিন্ধি ভাষায় যার অর্থ ‘মৃত মানুষের টিলা’। এটি ছিল ব্রোঞ্জ যুগের সিন্ধু ভ্যালি (হরপ্পা) সভ্যতার সবচেয়ে বড় নগর। একসময় যা বিস্তৃত ছিল উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দুর্দান্ত এক অভিযাত্রী ও প্রত্নলিপি বিশেষজ্ঞ। তিনি ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র (এএসআই) হয়ে কাজ করতেন। ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে প্রাচীন নিদর্শন, শিলালিপি আর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বেড়াতেন তিনি।
মহেঞ্জোদারো আবিষ্কার ইতিহাসে বড় অর্জন হলেও এ নিয়ে নানা বিতর্কে ঢাকা পড়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন। তাঁর স্বাধীনচেতা স্বভাব আর ঔপনিবেশিক নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করার কারণে প্রায়ই সমস্যায় পড়তেন তিনি। এতে তাঁর অবদান আড়াল হয়ে যায়—এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাস থেকেও হারিয়ে যেতে বসে।
মজার বিষয় হলো, মহেঞ্জোদারো নিয়ে তাঁর প্রতিবেদনগুলো কখনোই প্রকাশ করেনি এএসআই। পরবর্তী সময়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ পি কে মিশ্র অভিযোগ করেন, তৎকালীন এএসআইয়ের প্রধান জন মার্শাল ইচ্ছাকৃতভাবে এই গবেষণা আড়াল করেন এবং আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিজের নামে তুলে নেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মিশ্র বলেন, ‘বিশ্ব জানে মহেঞ্জোদারো আবিষ্কারের কৃতিত্ব মার্শালের। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন ইতিহাসের এক ক্ষুদ্র পাদটীকা করে রাখা হয়েছে।’

বিতর্কিত অধ্যায়
ইতিহাসবিদ নয়নজ্যোতি লাহিড়ীর ‘Finding Forgotten Cities: How the Indus Civilization Was Discovered’ বইয়ে বলা হয়েছে, রাখালদাস ছিলেন স্পষ্টভাষী, কৌশল ও কূটনীতির ঘাটতি ছিল তাঁর। তাঁর ব্যবহারে প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে প্রায়ই বিবাদ বাধত।
বইটিতে বলা হয়, একবার তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি জাদুঘর থেকে শিলালিপি ও চিত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আবার অন্য একবার কোনো অনুমতি ছাড়াই বাংলার এক জাদুঘর থেকে মূর্তি সরিয়ে নিজের কর্মস্থলে নিতে চেয়েছিলেন।
এ ছাড়া আরেক ঘটনায় অনুমোদন ছাড়াই তিনি পুরোনো একটি চিত্রকর্ম কিনে ফেলেন, যার দাম নিয়েও পরে প্রশ্ন ওঠে। লাহিড়ী লেখেন, রাখালদাস অনেক প্রতিভার অধিকারী হলেও প্রায়ই সবার সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে বসতেন।
শৈশব ও অভিযাত্রার গল্প
১৮৮৫ সালে বাংলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর শৈশব কেটেছিল বহরমপুর শহরে। এই শহরের মধ্যযুগীয় নানা স্মৃতিস্তম্ভ তাঁকে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর ভ্রমণপ্রীতি ছিল প্রবল। একবার ‘ভারতে শক জাতির ইতিহাস’বিষয়ক প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে নিজেই চলে যান পাশের রাজ্যের জাদুঘরে। সেখানে ঘুরে দেখেন ওই সময়কার শিলালিপি আর ভাস্কর্য।
ইয়ামা পাণ্ডের ‘The Life and Works of Rakhaldas Banerji’ বইয়ে বলা হয়েছে, তিনি ১৯১০ সালে এএসআইয়ে খনন সহকারী হিসেবে যোগ দেন। এরপর দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৯১৭ সালে পশ্চিম ভারতের সুপারিনটেনডিং আর্কিওলজিস্ট হন। এই দায়িত্বে থেকেই ১৯১৯ সালে প্রথম মহেঞ্জোদারো পরিদর্শনে যান।
পরবর্তী কয়েক বছরে সেখানে খননকাজ চালিয়ে আবিষ্কার করেন প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ, মুদ্রা, সিল, মৃৎপাত্র ও সূক্ষ্ম হাতিয়ার।
১৯২২ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে মহেঞ্জোদারো নগরের একাধিক স্তরের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো স্তরটি ছিল আজ থেকে প্রায় ৫৩০০ বছর আগে গড়ে ওঠা। তখনো ইতিহাসবিদেরা জানতেন না, সিন্ধু সভ্যতা এত বিস্তৃত ছিল। আজ জানা যায়, সিন্ধু উপত্যকা ধরে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এই সভ্যতা।
রাখালদাসের খননকাজে পাওয়া তিনটি সিলে হরপ্পা থেকে পাওয়া সিলের মতোই প্রতীক ও লিপি ছিল। এতে প্রমাণ হয়, মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা একই সভ্যতার অংশ।

চাকরিতে বদলি, বিতর্ক ও অপবাদ
১৯২৪ সালে মহেঞ্জোদারো প্রকল্পের অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর রাখালদাসকে বদলি করা হয় পূর্ব ভারতে। ইয়ামা পাণ্ডের বইয়ে বলা হয়, এরপর আর মহেঞ্জোদারোর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না।
তবে নয়নজ্যোতি লাহিড়ী লেখেন, বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেই বদলির অনুরোধ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যয়ের হিসাব ছিল অনিয়মিত।
জানা যায়, খনন তহবিলের টাকা দিয়ে অফিসের আসবাবপত্র কিনেছিলেন। এ ছাড়া ভ্রমণের ব্যয় ছিল অস্বাভাবিক। ঊর্ধ্বতনদের কাছে এই খরচের সাফাই দিতে পারেননি। ফলে শাস্তির মুখে পড়ে নিজেই বদলির অনুরোধ জানান। পরে তিনি কলকাতাকেন্দ্রিক নানা প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চুরিকাণ্ড ও পদত্যাগ
১৯২৫ সালে মধ্যপ্রদেশের এক বিখ্যাত হিন্দু মন্দির পরিদর্শনে যান রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন দুই সহকারী ও দুজন শ্রমিক। সেখান থেকে একটি বৌদ্ধ দেবীর পাথরের মূর্তি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়।
অভিযোগ ওঠে, মূর্তি চুরির সঙ্গে তিনিই জড়িত। যদিও তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। মূর্তিটি পরে কলকাতায় উদ্ধার হয়। তবুও জন মার্শালের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯২৭ সালে এএসআই ছাড়ার পর আর্থিক সংকটে পড়েন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভালো খাবার, ঘোড়ার গাড়ি আর বন্ধুদের পেছনে ঢালতেন প্রচুর টাকা। নিজের ভবিষ্যতের জন্য কিছুই রাখেননি।’
১৯২৮ সালে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৩০ সালে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান এই প্রত্নতত্ত্ববিদ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

২০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৪ সাল। যুক্তরাজ্যের সাময়িক পত্রিকা ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’ সেদিন প্রথম পাতায় বিরাট করে এক আবিষ্কারের খবর ছাপে। লেখা হয়, গ্রিসের ‘টিরিনস্’ ও ‘মাইসিনে’র মতো প্রাচীন শহর খুঁজে পাওয়া গেছে ভারতে। এটি ছিল প্রায় ৫ হাজার বছর আগেকার দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর মহেঞ্জোদারো আর হরপ্পা আবিষ্কারের কাহিনি। সারা বিশ্বে হইহই রইরই পড়ে গেল সেই খবরে।
এর আগে পর্যন্ত কারও ধারণা ছিল না যে ভারতেও থাকতে পারে হাজার হাজার বছরের পুরোনো কোনো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। লন্ডন নিউজে এই প্রতিবেদন লিখেছিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া) তৎকালীন প্রধান, প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার জন মার্শাল। খবরের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল প্রচুর ছবি ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।
তবে মি. মার্শাল তাঁর প্রতিবেদনে এটা উল্লেখ করেননি যে সিন্ধু সভ্যতার ওই দুই প্রাচীন শহর আবিষ্কারের কৃতিত্ব আসলে ছিল দুই ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদের। তাঁদের একজন আবার বাঙালি— নাম রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাখালদাস ছিলেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মী ও প্রশিক্ষিত প্রত্নতত্ত্ববিদ, যিনি মহেঞ্জোদারো খুঁজে পেয়েছিলেন। অন্যজন দয়ারাম সাহানি, আবিষ্কার করেছিলেন হরপ্পা।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।

১৯০০ সালের শুরুর দিকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে খুঁজে পেয়েছিলেন মহেঞ্জোদারো—সিন্ধি ভাষায় যার অর্থ ‘মৃত মানুষের টিলা’। এটি ছিল ব্রোঞ্জ যুগের সিন্ধু ভ্যালি (হরপ্পা) সভ্যতার সবচেয়ে বড় নগর। একসময় যা বিস্তৃত ছিল উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দুর্দান্ত এক অভিযাত্রী ও প্রত্নলিপি বিশেষজ্ঞ। তিনি ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র (এএসআই) হয়ে কাজ করতেন। ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে প্রাচীন নিদর্শন, শিলালিপি আর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বেড়াতেন তিনি।
মহেঞ্জোদারো আবিষ্কার ইতিহাসে বড় অর্জন হলেও এ নিয়ে নানা বিতর্কে ঢাকা পড়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন। তাঁর স্বাধীনচেতা স্বভাব আর ঔপনিবেশিক নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করার কারণে প্রায়ই সমস্যায় পড়তেন তিনি। এতে তাঁর অবদান আড়াল হয়ে যায়—এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাস থেকেও হারিয়ে যেতে বসে।
মজার বিষয় হলো, মহেঞ্জোদারো নিয়ে তাঁর প্রতিবেদনগুলো কখনোই প্রকাশ করেনি এএসআই। পরবর্তী সময়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ পি কে মিশ্র অভিযোগ করেন, তৎকালীন এএসআইয়ের প্রধান জন মার্শাল ইচ্ছাকৃতভাবে এই গবেষণা আড়াল করেন এবং আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিজের নামে তুলে নেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মিশ্র বলেন, ‘বিশ্ব জানে মহেঞ্জোদারো আবিষ্কারের কৃতিত্ব মার্শালের। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন ইতিহাসের এক ক্ষুদ্র পাদটীকা করে রাখা হয়েছে।’

বিতর্কিত অধ্যায়
ইতিহাসবিদ নয়নজ্যোতি লাহিড়ীর ‘Finding Forgotten Cities: How the Indus Civilization Was Discovered’ বইয়ে বলা হয়েছে, রাখালদাস ছিলেন স্পষ্টভাষী, কৌশল ও কূটনীতির ঘাটতি ছিল তাঁর। তাঁর ব্যবহারে প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে প্রায়ই বিবাদ বাধত।
বইটিতে বলা হয়, একবার তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি জাদুঘর থেকে শিলালিপি ও চিত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আবার অন্য একবার কোনো অনুমতি ছাড়াই বাংলার এক জাদুঘর থেকে মূর্তি সরিয়ে নিজের কর্মস্থলে নিতে চেয়েছিলেন।
এ ছাড়া আরেক ঘটনায় অনুমোদন ছাড়াই তিনি পুরোনো একটি চিত্রকর্ম কিনে ফেলেন, যার দাম নিয়েও পরে প্রশ্ন ওঠে। লাহিড়ী লেখেন, রাখালদাস অনেক প্রতিভার অধিকারী হলেও প্রায়ই সবার সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে বসতেন।
শৈশব ও অভিযাত্রার গল্প
১৮৮৫ সালে বাংলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর শৈশব কেটেছিল বহরমপুর শহরে। এই শহরের মধ্যযুগীয় নানা স্মৃতিস্তম্ভ তাঁকে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর ভ্রমণপ্রীতি ছিল প্রবল। একবার ‘ভারতে শক জাতির ইতিহাস’বিষয়ক প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে নিজেই চলে যান পাশের রাজ্যের জাদুঘরে। সেখানে ঘুরে দেখেন ওই সময়কার শিলালিপি আর ভাস্কর্য।
ইয়ামা পাণ্ডের ‘The Life and Works of Rakhaldas Banerji’ বইয়ে বলা হয়েছে, তিনি ১৯১০ সালে এএসআইয়ে খনন সহকারী হিসেবে যোগ দেন। এরপর দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৯১৭ সালে পশ্চিম ভারতের সুপারিনটেনডিং আর্কিওলজিস্ট হন। এই দায়িত্বে থেকেই ১৯১৯ সালে প্রথম মহেঞ্জোদারো পরিদর্শনে যান।
পরবর্তী কয়েক বছরে সেখানে খননকাজ চালিয়ে আবিষ্কার করেন প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ, মুদ্রা, সিল, মৃৎপাত্র ও সূক্ষ্ম হাতিয়ার।
১৯২২ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে মহেঞ্জোদারো নগরের একাধিক স্তরের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো স্তরটি ছিল আজ থেকে প্রায় ৫৩০০ বছর আগে গড়ে ওঠা। তখনো ইতিহাসবিদেরা জানতেন না, সিন্ধু সভ্যতা এত বিস্তৃত ছিল। আজ জানা যায়, সিন্ধু উপত্যকা ধরে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এই সভ্যতা।
রাখালদাসের খননকাজে পাওয়া তিনটি সিলে হরপ্পা থেকে পাওয়া সিলের মতোই প্রতীক ও লিপি ছিল। এতে প্রমাণ হয়, মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা একই সভ্যতার অংশ।

চাকরিতে বদলি, বিতর্ক ও অপবাদ
১৯২৪ সালে মহেঞ্জোদারো প্রকল্পের অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর রাখালদাসকে বদলি করা হয় পূর্ব ভারতে। ইয়ামা পাণ্ডের বইয়ে বলা হয়, এরপর আর মহেঞ্জোদারোর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না।
তবে নয়নজ্যোতি লাহিড়ী লেখেন, বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেই বদলির অনুরোধ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যয়ের হিসাব ছিল অনিয়মিত।
জানা যায়, খনন তহবিলের টাকা দিয়ে অফিসের আসবাবপত্র কিনেছিলেন। এ ছাড়া ভ্রমণের ব্যয় ছিল অস্বাভাবিক। ঊর্ধ্বতনদের কাছে এই খরচের সাফাই দিতে পারেননি। ফলে শাস্তির মুখে পড়ে নিজেই বদলির অনুরোধ জানান। পরে তিনি কলকাতাকেন্দ্রিক নানা প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চুরিকাণ্ড ও পদত্যাগ
১৯২৫ সালে মধ্যপ্রদেশের এক বিখ্যাত হিন্দু মন্দির পরিদর্শনে যান রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন দুই সহকারী ও দুজন শ্রমিক। সেখান থেকে একটি বৌদ্ধ দেবীর পাথরের মূর্তি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়।
অভিযোগ ওঠে, মূর্তি চুরির সঙ্গে তিনিই জড়িত। যদিও তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। মূর্তিটি পরে কলকাতায় উদ্ধার হয়। তবুও জন মার্শালের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯২৭ সালে এএসআই ছাড়ার পর আর্থিক সংকটে পড়েন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভালো খাবার, ঘোড়ার গাড়ি আর বন্ধুদের পেছনে ঢালতেন প্রচুর টাকা। নিজের ভবিষ্যতের জন্য কিছুই রাখেননি।’
১৯২৮ সালে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৩০ সালে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান এই প্রত্নতত্ত্ববিদ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

২০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৪ সাল। যুক্তরাজ্যের সাময়িক পত্রিকা ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’ সেদিন প্রথম পাতায় বিরাট করে এক আবিষ্কারের খবর ছাপে। লেখা হয়, গ্রিসের ‘টিরিনস্’ ও ‘মাইসিনে’র মতো প্রাচীন শহর খুঁজে পাওয়া গেছে ভারতে। এটি ছিল প্রায় ৫ হাজার বছর আগেকার দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর মহেঞ্জোদারো আর হরপ্পা আবিষ্কারের কাহিনি। সারা বিশ্বে হইহই রইরই পড়ে গেল সেই খবরে।
এর আগে পর্যন্ত কারও ধারণা ছিল না যে ভারতেও থাকতে পারে হাজার হাজার বছরের পুরোনো কোনো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। লন্ডন নিউজে এই প্রতিবেদন লিখেছিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া) তৎকালীন প্রধান, প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার জন মার্শাল। খবরের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল প্রচুর ছবি ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।
তবে মি. মার্শাল তাঁর প্রতিবেদনে এটা উল্লেখ করেননি যে সিন্ধু সভ্যতার ওই দুই প্রাচীন শহর আবিষ্কারের কৃতিত্ব আসলে ছিল দুই ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদের। তাঁদের একজন আবার বাঙালি— নাম রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাখালদাস ছিলেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মী ও প্রশিক্ষিত প্রত্নতত্ত্ববিদ, যিনি মহেঞ্জোদারো খুঁজে পেয়েছিলেন। অন্যজন দয়ারাম সাহানি, আবিষ্কার করেছিলেন হরপ্পা।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।

১৯০০ সালের শুরুর দিকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে খুঁজে পেয়েছিলেন মহেঞ্জোদারো—সিন্ধি ভাষায় যার অর্থ ‘মৃত মানুষের টিলা’। এটি ছিল ব্রোঞ্জ যুগের সিন্ধু ভ্যালি (হরপ্পা) সভ্যতার সবচেয়ে বড় নগর। একসময় যা বিস্তৃত ছিল উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দুর্দান্ত এক অভিযাত্রী ও প্রত্নলিপি বিশেষজ্ঞ। তিনি ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র (এএসআই) হয়ে কাজ করতেন। ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে প্রাচীন নিদর্শন, শিলালিপি আর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বেড়াতেন তিনি।
মহেঞ্জোদারো আবিষ্কার ইতিহাসে বড় অর্জন হলেও এ নিয়ে নানা বিতর্কে ঢাকা পড়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন। তাঁর স্বাধীনচেতা স্বভাব আর ঔপনিবেশিক নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করার কারণে প্রায়ই সমস্যায় পড়তেন তিনি। এতে তাঁর অবদান আড়াল হয়ে যায়—এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাস থেকেও হারিয়ে যেতে বসে।
মজার বিষয় হলো, মহেঞ্জোদারো নিয়ে তাঁর প্রতিবেদনগুলো কখনোই প্রকাশ করেনি এএসআই। পরবর্তী সময়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ পি কে মিশ্র অভিযোগ করেন, তৎকালীন এএসআইয়ের প্রধান জন মার্শাল ইচ্ছাকৃতভাবে এই গবেষণা আড়াল করেন এবং আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিজের নামে তুলে নেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মিশ্র বলেন, ‘বিশ্ব জানে মহেঞ্জোদারো আবিষ্কারের কৃতিত্ব মার্শালের। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন ইতিহাসের এক ক্ষুদ্র পাদটীকা করে রাখা হয়েছে।’

বিতর্কিত অধ্যায়
ইতিহাসবিদ নয়নজ্যোতি লাহিড়ীর ‘Finding Forgotten Cities: How the Indus Civilization Was Discovered’ বইয়ে বলা হয়েছে, রাখালদাস ছিলেন স্পষ্টভাষী, কৌশল ও কূটনীতির ঘাটতি ছিল তাঁর। তাঁর ব্যবহারে প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে প্রায়ই বিবাদ বাধত।
বইটিতে বলা হয়, একবার তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি জাদুঘর থেকে শিলালিপি ও চিত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আবার অন্য একবার কোনো অনুমতি ছাড়াই বাংলার এক জাদুঘর থেকে মূর্তি সরিয়ে নিজের কর্মস্থলে নিতে চেয়েছিলেন।
এ ছাড়া আরেক ঘটনায় অনুমোদন ছাড়াই তিনি পুরোনো একটি চিত্রকর্ম কিনে ফেলেন, যার দাম নিয়েও পরে প্রশ্ন ওঠে। লাহিড়ী লেখেন, রাখালদাস অনেক প্রতিভার অধিকারী হলেও প্রায়ই সবার সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে বসতেন।
শৈশব ও অভিযাত্রার গল্প
১৮৮৫ সালে বাংলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর শৈশব কেটেছিল বহরমপুর শহরে। এই শহরের মধ্যযুগীয় নানা স্মৃতিস্তম্ভ তাঁকে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর ভ্রমণপ্রীতি ছিল প্রবল। একবার ‘ভারতে শক জাতির ইতিহাস’বিষয়ক প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে নিজেই চলে যান পাশের রাজ্যের জাদুঘরে। সেখানে ঘুরে দেখেন ওই সময়কার শিলালিপি আর ভাস্কর্য।
ইয়ামা পাণ্ডের ‘The Life and Works of Rakhaldas Banerji’ বইয়ে বলা হয়েছে, তিনি ১৯১০ সালে এএসআইয়ে খনন সহকারী হিসেবে যোগ দেন। এরপর দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৯১৭ সালে পশ্চিম ভারতের সুপারিনটেনডিং আর্কিওলজিস্ট হন। এই দায়িত্বে থেকেই ১৯১৯ সালে প্রথম মহেঞ্জোদারো পরিদর্শনে যান।
পরবর্তী কয়েক বছরে সেখানে খননকাজ চালিয়ে আবিষ্কার করেন প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ, মুদ্রা, সিল, মৃৎপাত্র ও সূক্ষ্ম হাতিয়ার।
১৯২২ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে মহেঞ্জোদারো নগরের একাধিক স্তরের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো স্তরটি ছিল আজ থেকে প্রায় ৫৩০০ বছর আগে গড়ে ওঠা। তখনো ইতিহাসবিদেরা জানতেন না, সিন্ধু সভ্যতা এত বিস্তৃত ছিল। আজ জানা যায়, সিন্ধু উপত্যকা ধরে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এই সভ্যতা।
রাখালদাসের খননকাজে পাওয়া তিনটি সিলে হরপ্পা থেকে পাওয়া সিলের মতোই প্রতীক ও লিপি ছিল। এতে প্রমাণ হয়, মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা একই সভ্যতার অংশ।

চাকরিতে বদলি, বিতর্ক ও অপবাদ
১৯২৪ সালে মহেঞ্জোদারো প্রকল্পের অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর রাখালদাসকে বদলি করা হয় পূর্ব ভারতে। ইয়ামা পাণ্ডের বইয়ে বলা হয়, এরপর আর মহেঞ্জোদারোর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না।
তবে নয়নজ্যোতি লাহিড়ী লেখেন, বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেই বদলির অনুরোধ করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যয়ের হিসাব ছিল অনিয়মিত।
জানা যায়, খনন তহবিলের টাকা দিয়ে অফিসের আসবাবপত্র কিনেছিলেন। এ ছাড়া ভ্রমণের ব্যয় ছিল অস্বাভাবিক। ঊর্ধ্বতনদের কাছে এই খরচের সাফাই দিতে পারেননি। ফলে শাস্তির মুখে পড়ে নিজেই বদলির অনুরোধ জানান। পরে তিনি কলকাতাকেন্দ্রিক নানা প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চুরিকাণ্ড ও পদত্যাগ
১৯২৫ সালে মধ্যপ্রদেশের এক বিখ্যাত হিন্দু মন্দির পরিদর্শনে যান রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন দুই সহকারী ও দুজন শ্রমিক। সেখান থেকে একটি বৌদ্ধ দেবীর পাথরের মূর্তি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়।
অভিযোগ ওঠে, মূর্তি চুরির সঙ্গে তিনিই জড়িত। যদিও তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। মূর্তিটি পরে কলকাতায় উদ্ধার হয়। তবুও জন মার্শালের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯২৭ সালে এএসআই ছাড়ার পর আর্থিক সংকটে পড়েন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভালো খাবার, ঘোড়ার গাড়ি আর বন্ধুদের পেছনে ঢালতেন প্রচুর টাকা। নিজের ভবিষ্যতের জন্য কিছুই রাখেননি।’
১৯২৮ সালে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৩০ সালে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান এই প্রত্নতত্ত্ববিদ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নোবেলজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ডিএনএর (DNA) যুগান্তকারী ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারকদের অন্যতম তিনি। তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
২ দিন আগে
বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রে দাবি করেছেন, তাঁর আবিষ্কার মানুষের সঙ্গে কুকুরের বন্ধুত্বের ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে পারে। তাঁর মতে, কুকুরের গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে, যা প্রচলিত ধারণার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে!
২ দিন আগে
বারবিকিউ পার্টি চলছে এখন মহাকাশেও! তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে চীনের ছয়জন নভোচারী এই আয়োজন করেছেন। চীনের অ্যাস্ট্রোনট সেন্টার (এসিসি) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শেনঝো–২০ ও শেনঝো–২১ মিশনের নভোচারীরা একটি নতুন ধরনের ওভেন ব্যবহার করে রান্না করছেন, যা মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে ব্যবহারের উপযোগী
৫ দিন আগে
টাইটানের মতো চরম, প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণের উৎপত্তির আগে রসায়ন কীভাবে কাজ করতে পারত, এই গবেষণা সেই বিষয়েও নতুন অন্তর্দৃষ্টি যোগ করবে।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নোবেলজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ডিএনএর (DNA) যুগান্তকারী ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারকদের অন্যতম তিনি। তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ওয়াটসন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে মিলে ১৯৫৩ সালে ডিএনএর কাঠামোগত রহস্য উন্মোচন করেন। এই আবিষ্কারকে ‘বিশ শতকের অন্যতম সেরা অগ্রগতি’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই আবিষ্কার আণবিক জীববিজ্ঞানের দ্রুত বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছিল।
ডিএনএ ডাবল হেলিক্স হলো ডিএনএর দুটি সর্পিল বা প্যাঁচানো মইয়ের মতো কাঠামো, যা পরস্পরকে পেঁচিয়ে থাকে। এই কাঠামোতে দুটি শৃঙ্খল থাকে, সেটি আবার হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে সংযুক্ত। এই শৃঙ্খলগুলো অ্যাডেনিন (A) ও থাইমিন (T) এবং সাইটোসিন (C) ও গুয়ানিনের (G) মতো নাইট্রোজেনাস বেস জোড়া দিয়ে গঠিত।
জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক এবং মরিস উইলকিন্স—এই তিনজন বিজ্ঞানী ১৯৬২ সালে ডিএনএর ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। এই আবিষ্কারের সময় তাঁরা বলেছিলেন, ‘আমরা জীবনের রহস্য আবিষ্কার করেছি।’
যদিও এই আবিষ্কারের পেছনে কিংস কলেজের গবেষক রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের তোলা এক্স-রে চিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। সেটি তাঁর সম্মতি ছাড়াই ওয়াটসন ও ক্রিক ব্যবহার করেছিলেন। মরিস উইলকিন্স ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে ডিএনএ অণুর কাঠামো নির্ণয়ের কাজ করেছিলেন।
এমন যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক সাফল্যের পরও পরবর্তীকালে বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে জেমস ওয়াটসনের খ্যাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৭ সালে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি ‘আফ্রিকার সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে হতাশ’। কারণ, ‘আমাদের সব সামাজিক নীতি এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি যে তাদের (আফ্রিকানদের) বুদ্ধিমত্তা আমাদের মতোই—যদিও সব পরীক্ষামূলক ফলাফলে তেমনটি দেখা যায় না।’ এই মন্তব্যের জেরে নিউইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির চ্যান্সেলরের পদ হারান তিনি।
২০১৯ সালে ওয়াটসন পুনরায় একই ধরনের মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি আরও একবার বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তার মধ্যে যোগসূত্র টেনেছিলেন। এর ফলস্বরূপ, ল্যাবরেটরি তাঁর চ্যান্সেলর ইমেরিটাসসহ সমস্ত সম্মানসূচক পদ কেড়ে নেয়। ল্যাবরেটরি সেই সময় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ‘ড. ওয়াটসনের বক্তব্য নিন্দনীয় এবং বিজ্ঞানের দ্বারা অসমর্থিত।’
২০১৪ সালে বৈজ্ঞানিক মহলে একঘরে হওয়ার অনুভূতির কথা বলে ওয়াটসন তাঁর নোবেল পদকটি ৪৮ লাখ ডলারে (প্রায় ৩৬ কোটি টাকা) নিলামে বিক্রি করে দেন। যদিও পদকটি ক্রয় করা এক রুশ বিলিয়নিয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি আবার তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
১৯২৮ সালের এপ্রিলে শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন জেমস ওয়াটসন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পান। ডিএনএ নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কেমব্রিজে যান, যেখানে ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। ডিএনএর গঠন আবিষ্কারের পর তিনি হার্ভার্ডে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬৮ সালে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির দায়িত্ব নেন। এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করার কৃতিত্ব তাঁর।

নোবেলজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ডিএনএর (DNA) যুগান্তকারী ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারকদের অন্যতম তিনি। তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ওয়াটসন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে মিলে ১৯৫৩ সালে ডিএনএর কাঠামোগত রহস্য উন্মোচন করেন। এই আবিষ্কারকে ‘বিশ শতকের অন্যতম সেরা অগ্রগতি’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই আবিষ্কার আণবিক জীববিজ্ঞানের দ্রুত বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছিল।
ডিএনএ ডাবল হেলিক্স হলো ডিএনএর দুটি সর্পিল বা প্যাঁচানো মইয়ের মতো কাঠামো, যা পরস্পরকে পেঁচিয়ে থাকে। এই কাঠামোতে দুটি শৃঙ্খল থাকে, সেটি আবার হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে সংযুক্ত। এই শৃঙ্খলগুলো অ্যাডেনিন (A) ও থাইমিন (T) এবং সাইটোসিন (C) ও গুয়ানিনের (G) মতো নাইট্রোজেনাস বেস জোড়া দিয়ে গঠিত।
জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক এবং মরিস উইলকিন্স—এই তিনজন বিজ্ঞানী ১৯৬২ সালে ডিএনএর ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। এই আবিষ্কারের সময় তাঁরা বলেছিলেন, ‘আমরা জীবনের রহস্য আবিষ্কার করেছি।’
যদিও এই আবিষ্কারের পেছনে কিংস কলেজের গবেষক রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের তোলা এক্স-রে চিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। সেটি তাঁর সম্মতি ছাড়াই ওয়াটসন ও ক্রিক ব্যবহার করেছিলেন। মরিস উইলকিন্স ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে ডিএনএ অণুর কাঠামো নির্ণয়ের কাজ করেছিলেন।
এমন যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক সাফল্যের পরও পরবর্তীকালে বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে জেমস ওয়াটসনের খ্যাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৭ সালে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি ‘আফ্রিকার সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে হতাশ’। কারণ, ‘আমাদের সব সামাজিক নীতি এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি যে তাদের (আফ্রিকানদের) বুদ্ধিমত্তা আমাদের মতোই—যদিও সব পরীক্ষামূলক ফলাফলে তেমনটি দেখা যায় না।’ এই মন্তব্যের জেরে নিউইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির চ্যান্সেলরের পদ হারান তিনি।
২০১৯ সালে ওয়াটসন পুনরায় একই ধরনের মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি আরও একবার বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তার মধ্যে যোগসূত্র টেনেছিলেন। এর ফলস্বরূপ, ল্যাবরেটরি তাঁর চ্যান্সেলর ইমেরিটাসসহ সমস্ত সম্মানসূচক পদ কেড়ে নেয়। ল্যাবরেটরি সেই সময় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ‘ড. ওয়াটসনের বক্তব্য নিন্দনীয় এবং বিজ্ঞানের দ্বারা অসমর্থিত।’
২০১৪ সালে বৈজ্ঞানিক মহলে একঘরে হওয়ার অনুভূতির কথা বলে ওয়াটসন তাঁর নোবেল পদকটি ৪৮ লাখ ডলারে (প্রায় ৩৬ কোটি টাকা) নিলামে বিক্রি করে দেন। যদিও পদকটি ক্রয় করা এক রুশ বিলিয়নিয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি আবার তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
১৯২৮ সালের এপ্রিলে শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন জেমস ওয়াটসন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পান। ডিএনএ নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কেমব্রিজে যান, যেখানে ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। ডিএনএর গঠন আবিষ্কারের পর তিনি হার্ভার্ডে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬৮ সালে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির দায়িত্ব নেন। এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করার কৃতিত্ব তাঁর।

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।
১৯ এপ্রিল ২০২৫
বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রে দাবি করেছেন, তাঁর আবিষ্কার মানুষের সঙ্গে কুকুরের বন্ধুত্বের ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে পারে। তাঁর মতে, কুকুরের গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে, যা প্রচলিত ধারণার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে!
২ দিন আগে
বারবিকিউ পার্টি চলছে এখন মহাকাশেও! তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে চীনের ছয়জন নভোচারী এই আয়োজন করেছেন। চীনের অ্যাস্ট্রোনট সেন্টার (এসিসি) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শেনঝো–২০ ও শেনঝো–২১ মিশনের নভোচারীরা একটি নতুন ধরনের ওভেন ব্যবহার করে রান্না করছেন, যা মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে ব্যবহারের উপযোগী
৫ দিন আগে
টাইটানের মতো চরম, প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণের উৎপত্তির আগে রসায়ন কীভাবে কাজ করতে পারত, এই গবেষণা সেই বিষয়েও নতুন অন্তর্দৃষ্টি যোগ করবে।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রে দাবি করেছেন, তাঁর আবিষ্কার মানুষের সঙ্গে কুকুরের বন্ধুত্বের ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে পারে। তাঁর মতে, কুকুরের গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে, যা প্রচলিত ধারণার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে!
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, গেরমোঁপ্রে ছোটবেলা থেকেই বরফযুগের প্রাণীদের নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি বেলজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল সায়েন্সেসে কাজ করার সময় গ্রামের একটি গুহা থেকে পাওয়া প্রাগৈতিহাসিক কিছু প্রাণীর হাড় পরীক্ষা করছিলেন।
এই কাজ করতে গিয়ে একটি মাথার খুলির দিকে মনোযোগী হন গেরমোঁপ্রে। দীর্ঘদিন ধরে খুলিটিকে বরফযুগের কোনো নেকড়ের বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গেরমোঁপ্রে বুঝতে পারেন—এটির নাক বা মুখের অংশটি ছোট ও চওড়া এবং এগুলো গৃহপালিত প্রাণীর বৈশিষ্ট্য।
পরে রেডিওকার্বন পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই খুলির বয়স প্রায় ৩৫ হাজার বছর। আর বৈশিষ্টগুলোই বলে দিচ্ছে, এটি সেই সময়ের কোনো নেকড়ে নয়, বরং মানুষের সান্নিধ্যে থাকা প্রাচীন কোনো কুকুর হতে পারে।
গেরমোঁপ্রে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, কেউ বিশ্বাস করবে না।’ তবে তাঁর এই গবেষণা প্রকাশের পর থেকে বিজ্ঞানমহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি আসলে অস্বাভাবিক আকৃতির একটি নেকড়ের মাথার খুলি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি সত্যিই গৃহপালিত কুকুরের সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন।
গেরমোঁপ্রে মনে করেন, এটি এমন এক যুগের চিহ্ন, যখন মানুষ প্রথমবারের মতো প্রাণীদের সঙ্গে সহাবস্থান শুরু করেছিল। তিনি বিশ্বাস করেন, কুকুর গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া মানুষের উদ্যোগেই ঘটেছিল। প্রাচীন মানুষেরা নেকড়ে শাবক লালন করত, আক্রমণাত্মকদের বেছে হত্যা করত আর শান্তগুলোকে নিজেদের সঙ্গী বানাত। এভাবেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় প্যালিওলিথিক কুকুর।
বরফযুগের বেলজিয়াম ছিল খোলা তৃণভূমি—চারপাশে ম্যামথ, ঘোড়া, রেইনডিয়ার আর বন্য সিংহ-ভালুকের ভিড়। এমন বিপজ্জনক পৃথিবীতে কুকুর ছিল মানুষের সহচর, রক্ষক ও পথপ্রদর্শক।
গেরমোঁপ্রের মতে, এই প্রাচীন খুলি শুধু একটি প্রাণীর নয়, মানবসভ্যতার প্রথম বন্ধুত্বের প্রতীকও বটে—যখন মানুষ আর কুকুর একে অন্যের ভরসা হয়ে উঠেছিল বরফে ঢাকা নীরব পৃথিবীর প্রান্তরে।

বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রে দাবি করেছেন, তাঁর আবিষ্কার মানুষের সঙ্গে কুকুরের বন্ধুত্বের ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে পারে। তাঁর মতে, কুকুরের গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে, যা প্রচলিত ধারণার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে!
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, গেরমোঁপ্রে ছোটবেলা থেকেই বরফযুগের প্রাণীদের নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি বেলজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল সায়েন্সেসে কাজ করার সময় গ্রামের একটি গুহা থেকে পাওয়া প্রাগৈতিহাসিক কিছু প্রাণীর হাড় পরীক্ষা করছিলেন।
এই কাজ করতে গিয়ে একটি মাথার খুলির দিকে মনোযোগী হন গেরমোঁপ্রে। দীর্ঘদিন ধরে খুলিটিকে বরফযুগের কোনো নেকড়ের বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গেরমোঁপ্রে বুঝতে পারেন—এটির নাক বা মুখের অংশটি ছোট ও চওড়া এবং এগুলো গৃহপালিত প্রাণীর বৈশিষ্ট্য।
পরে রেডিওকার্বন পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই খুলির বয়স প্রায় ৩৫ হাজার বছর। আর বৈশিষ্টগুলোই বলে দিচ্ছে, এটি সেই সময়ের কোনো নেকড়ে নয়, বরং মানুষের সান্নিধ্যে থাকা প্রাচীন কোনো কুকুর হতে পারে।
গেরমোঁপ্রে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, কেউ বিশ্বাস করবে না।’ তবে তাঁর এই গবেষণা প্রকাশের পর থেকে বিজ্ঞানমহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি আসলে অস্বাভাবিক আকৃতির একটি নেকড়ের মাথার খুলি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি সত্যিই গৃহপালিত কুকুরের সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন।
গেরমোঁপ্রে মনে করেন, এটি এমন এক যুগের চিহ্ন, যখন মানুষ প্রথমবারের মতো প্রাণীদের সঙ্গে সহাবস্থান শুরু করেছিল। তিনি বিশ্বাস করেন, কুকুর গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া মানুষের উদ্যোগেই ঘটেছিল। প্রাচীন মানুষেরা নেকড়ে শাবক লালন করত, আক্রমণাত্মকদের বেছে হত্যা করত আর শান্তগুলোকে নিজেদের সঙ্গী বানাত। এভাবেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় প্যালিওলিথিক কুকুর।
বরফযুগের বেলজিয়াম ছিল খোলা তৃণভূমি—চারপাশে ম্যামথ, ঘোড়া, রেইনডিয়ার আর বন্য সিংহ-ভালুকের ভিড়। এমন বিপজ্জনক পৃথিবীতে কুকুর ছিল মানুষের সহচর, রক্ষক ও পথপ্রদর্শক।
গেরমোঁপ্রের মতে, এই প্রাচীন খুলি শুধু একটি প্রাণীর নয়, মানবসভ্যতার প্রথম বন্ধুত্বের প্রতীকও বটে—যখন মানুষ আর কুকুর একে অন্যের ভরসা হয়ে উঠেছিল বরফে ঢাকা নীরব পৃথিবীর প্রান্তরে।

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।
১৯ এপ্রিল ২০২৫
নোবেলজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ডিএনএর (DNA) যুগান্তকারী ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারকদের অন্যতম তিনি। তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
২ দিন আগে
বারবিকিউ পার্টি চলছে এখন মহাকাশেও! তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে চীনের ছয়জন নভোচারী এই আয়োজন করেছেন। চীনের অ্যাস্ট্রোনট সেন্টার (এসিসি) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শেনঝো–২০ ও শেনঝো–২১ মিশনের নভোচারীরা একটি নতুন ধরনের ওভেন ব্যবহার করে রান্না করছেন, যা মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে ব্যবহারের উপযোগী
৫ দিন আগে
টাইটানের মতো চরম, প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণের উৎপত্তির আগে রসায়ন কীভাবে কাজ করতে পারত, এই গবেষণা সেই বিষয়েও নতুন অন্তর্দৃষ্টি যোগ করবে।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বারবিকিউ পার্টি চলছে এখন মহাকাশেও! তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে চীনের ছয়জন নভোচারী এই আয়োজন করেছেন। চীনের অ্যাস্ট্রোনট সেন্টার (এসিসি) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শেনঝো–২০ ও শেনঝো–২১ মিশনের নভোচারীরা একটি নতুন ধরনের ওভেন ব্যবহার করে রান্না করছেন, যা মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে ব্যবহারের উপযোগী প্রথম ওভেন হিসেবে ইতিহাস গড়েছে।
স্পেস ডট কম-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ওভেন ব্যবহার করে নভোচারীরা ২৮ মিনিটে রোস্টেড চিকেন উইংস রান্না করতে সক্ষম হন। মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় তাপ সমভাবে ছড়ায় না বলে মহাকাশে রান্না করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওভেনটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে এটি তিয়ানগং স্টেশনের বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো চাপ সৃষ্টি না করে এবং ধোঁয়াবিহীন ও স্থিতিশীল তাপমাত্রায় রান্না করা যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, নভোচারীরা বিশেষভাবে তৈরি একটি গ্রিল কেস-এ চিকেন উইংস নিয়ে স্পেস স্টেশনের দেয়ালের একটি ছোট কেবিন আকৃতির অংশে স্থাপন করছেন।
অ্যারোস্পেস নলেজ সাময়িকীর প্রধান সম্পাদক ওয়াং ইয়ানান চায়না ডেইলিকে বলেন, ‘পৃথিবীতে যেমন ওভেনের ভেতর বাতাস ঘুরে তাপ সঞ্চালন ঘটায়, মহাকাশে তা হয় না। কারণ সেখানে কনভেকশন নামের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া অনুপস্থিত। তাই প্রকৌশলীদের এমন একটি বিশেষ পদ্ধতি বের করতে হয়েছে যাতে খাবার সমভাবে গরম হয় এবং রান্নার ধোঁয়াও নিরাপদভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নভোচারীদের সুরক্ষাও নিশ্চিত থাকে।’
ওভেনটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রাখা হয়েছে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৯০ ডিগ্রিতে। এর ফলে নভোচারীরা প্রসেসড ফুড গরম করার পাশাপাশি খাবার রান্নাও করতে পারছেন।
এর আগে ২০২০ সালে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস)-এ প্রথমবারের মতো মহাকাশে খাবার বেক করার একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ন্যানোরেকস ও জিরো জি কিচেন যৌথভাবে তৈরি একটি প্রোটোটাইপ ওভেন ব্যবহার করে ওই পরীক্ষা চালায়। তখন পাঁচটি চকলেট চিপ কুকি বেক করা হয়। এটি ছিল মহাকাশে প্রথমবারের মতো কোনো খাবার বেক করার ঘটনা। পরবর্তীতে স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানে করে এর মধ্যে তিনটি কুকি পৃথিবীতে ফেরত আনা হয়।
গত ৩১ অক্টোবর তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে পৌঁছান শেনঝো-২১ মিশনের তিন নভোচারী। তাঁরা সেখানে প্রায় ছয় মাসের জন্য অবস্থান করবেন। শেনঝো-২০ দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তাঁরা। শেনঝো-২০ এর সদস্যরা গত এপ্রিল থেকে স্টেশনে অবস্থান করছেন এবং আগামী ৫ নভেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।

বারবিকিউ পার্টি চলছে এখন মহাকাশেও! তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে চীনের ছয়জন নভোচারী এই আয়োজন করেছেন। চীনের অ্যাস্ট্রোনট সেন্টার (এসিসি) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শেনঝো–২০ ও শেনঝো–২১ মিশনের নভোচারীরা একটি নতুন ধরনের ওভেন ব্যবহার করে রান্না করছেন, যা মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে ব্যবহারের উপযোগী প্রথম ওভেন হিসেবে ইতিহাস গড়েছে।
স্পেস ডট কম-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ওভেন ব্যবহার করে নভোচারীরা ২৮ মিনিটে রোস্টেড চিকেন উইংস রান্না করতে সক্ষম হন। মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় তাপ সমভাবে ছড়ায় না বলে মহাকাশে রান্না করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওভেনটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে এটি তিয়ানগং স্টেশনের বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো চাপ সৃষ্টি না করে এবং ধোঁয়াবিহীন ও স্থিতিশীল তাপমাত্রায় রান্না করা যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, নভোচারীরা বিশেষভাবে তৈরি একটি গ্রিল কেস-এ চিকেন উইংস নিয়ে স্পেস স্টেশনের দেয়ালের একটি ছোট কেবিন আকৃতির অংশে স্থাপন করছেন।
অ্যারোস্পেস নলেজ সাময়িকীর প্রধান সম্পাদক ওয়াং ইয়ানান চায়না ডেইলিকে বলেন, ‘পৃথিবীতে যেমন ওভেনের ভেতর বাতাস ঘুরে তাপ সঞ্চালন ঘটায়, মহাকাশে তা হয় না। কারণ সেখানে কনভেকশন নামের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া অনুপস্থিত। তাই প্রকৌশলীদের এমন একটি বিশেষ পদ্ধতি বের করতে হয়েছে যাতে খাবার সমভাবে গরম হয় এবং রান্নার ধোঁয়াও নিরাপদভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নভোচারীদের সুরক্ষাও নিশ্চিত থাকে।’
ওভেনটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রাখা হয়েছে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৯০ ডিগ্রিতে। এর ফলে নভোচারীরা প্রসেসড ফুড গরম করার পাশাপাশি খাবার রান্নাও করতে পারছেন।
এর আগে ২০২০ সালে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস)-এ প্রথমবারের মতো মহাকাশে খাবার বেক করার একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ন্যানোরেকস ও জিরো জি কিচেন যৌথভাবে তৈরি একটি প্রোটোটাইপ ওভেন ব্যবহার করে ওই পরীক্ষা চালায়। তখন পাঁচটি চকলেট চিপ কুকি বেক করা হয়। এটি ছিল মহাকাশে প্রথমবারের মতো কোনো খাবার বেক করার ঘটনা। পরবর্তীতে স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানে করে এর মধ্যে তিনটি কুকি পৃথিবীতে ফেরত আনা হয়।
গত ৩১ অক্টোবর তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে পৌঁছান শেনঝো-২১ মিশনের তিন নভোচারী। তাঁরা সেখানে প্রায় ছয় মাসের জন্য অবস্থান করবেন। শেনঝো-২০ দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তাঁরা। শেনঝো-২০ এর সদস্যরা গত এপ্রিল থেকে স্টেশনে অবস্থান করছেন এবং আগামী ৫ নভেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।
১৯ এপ্রিল ২০২৫
নোবেলজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ডিএনএর (DNA) যুগান্তকারী ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারকদের অন্যতম তিনি। তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
২ দিন আগে
বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রে দাবি করেছেন, তাঁর আবিষ্কার মানুষের সঙ্গে কুকুরের বন্ধুত্বের ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে পারে। তাঁর মতে, কুকুরের গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে, যা প্রচলিত ধারণার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে!
২ দিন আগে
টাইটানের মতো চরম, প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণের উৎপত্তির আগে রসায়ন কীভাবে কাজ করতে পারত, এই গবেষণা সেই বিষয়েও নতুন অন্তর্দৃষ্টি যোগ করবে।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শনি গ্রহের বৃহত্তম এবং রহস্যময় উপগ্রহ টাইটান। চরম শীতল পরিবেশের এই উপগ্রহ রসায়ন শাস্ত্রের এক অতি মৌলিক নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বস্তু সাধারণত একে অপরের সঙ্গে মেশে না, যেমন পৃথিবীতে তেল ও পানি—টাইটানের তীব্র ঠান্ডায় (মাইনাস ১৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) দুটো একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে।
সুইডেনের চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং নাসার বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন চালমার্সের রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্টিন রাম।
সাধারণত পৃথিবীতে পোলার এবং নন-পোলার অণুগুলো একে অপরের সঙ্গে মেশে না। এটি ‘লাইক ডিসলভস লাইক’ নীতি নামে পরিচিত। পানির মতো পোলার অণুগুলোতে আধানের বণ্টন অসম থাকে, আর তেলের মতো নন-পোলার অণুগুলোতে আধান সুষম থাকে। এই ভিন্নতার কারণেই এরা একে অপরকে বিকর্ষণ করে এবং আলাদা স্তর তৈরি করে।
পিএনএএস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে দেখানো হয়েছে, টাইটানের চরম শীতল পরিস্থিতি এই নিয়মকে উল্টে দেয়। গবেষকেরা ল্যাবরেটরিতে টাইটানের পরিবেশ তৈরি করে পরীক্ষা করেন এবং দেখেন যে পোলার হাইড্রোজেন সায়ানাইড এবং নন-পোলার হাইড্রোকার্বন (যেমন মিথেন ও ইথেন) কঠিন রূপে একসঙ্গে ক্রিস্টালাইজড (স্ফটিক) হতে পারে।
অধ্যাপক রাম জানান, হাইড্রোজেন সায়ানাইড ক্রিস্টালগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক শক্তি অস্বাভাবিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই শক্তির কারণেই নন-পোলার অণুগুলো ক্রিস্টাল কাঠামোর ভেতরে প্রবেশ করে একসঙ্গে থাকতে পারে। এই ঘটনা পৃথিবীতে প্রায় অসম্ভব।
অধ্যাপক রাম বলেন, ‘এই আবিষ্কার টাইটানের ভূতত্ত্ব এবং এর অদ্ভুত সব ল্যান্ডস্কেপ—যেমন হ্রদ, সমুদ্র এবং বালিয়াড়ি—বোঝার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হবে।’
তিনি আরও মন্তব্য করেন, টাইটানের মতো চরম, প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণের উৎপত্তির আগে রসায়ন কীভাবে কাজ করতে পারত, এই গবেষণা সেই বিষয়েও নতুন অন্তর্দৃষ্টি যোগ করবে। হাইড্রোজেন সায়ানাইডের এই ভূমিকা প্রাণ সৃষ্টির মৌলিক উপাদান, যেমন প্রোটিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড এবং জেনেটিক কোডের জন্য প্রয়োজনীয় নিউক্লিওবেস অজৈবিকভাবে তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করতে পারে।

শনি গ্রহের বৃহত্তম এবং রহস্যময় উপগ্রহ টাইটান। চরম শীতল পরিবেশের এই উপগ্রহ রসায়ন শাস্ত্রের এক অতি মৌলিক নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বস্তু সাধারণত একে অপরের সঙ্গে মেশে না, যেমন পৃথিবীতে তেল ও পানি—টাইটানের তীব্র ঠান্ডায় (মাইনাস ১৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) দুটো একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে।
সুইডেনের চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং নাসার বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন চালমার্সের রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্টিন রাম।
সাধারণত পৃথিবীতে পোলার এবং নন-পোলার অণুগুলো একে অপরের সঙ্গে মেশে না। এটি ‘লাইক ডিসলভস লাইক’ নীতি নামে পরিচিত। পানির মতো পোলার অণুগুলোতে আধানের বণ্টন অসম থাকে, আর তেলের মতো নন-পোলার অণুগুলোতে আধান সুষম থাকে। এই ভিন্নতার কারণেই এরা একে অপরকে বিকর্ষণ করে এবং আলাদা স্তর তৈরি করে।
পিএনএএস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে দেখানো হয়েছে, টাইটানের চরম শীতল পরিস্থিতি এই নিয়মকে উল্টে দেয়। গবেষকেরা ল্যাবরেটরিতে টাইটানের পরিবেশ তৈরি করে পরীক্ষা করেন এবং দেখেন যে পোলার হাইড্রোজেন সায়ানাইড এবং নন-পোলার হাইড্রোকার্বন (যেমন মিথেন ও ইথেন) কঠিন রূপে একসঙ্গে ক্রিস্টালাইজড (স্ফটিক) হতে পারে।
অধ্যাপক রাম জানান, হাইড্রোজেন সায়ানাইড ক্রিস্টালগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক শক্তি অস্বাভাবিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই শক্তির কারণেই নন-পোলার অণুগুলো ক্রিস্টাল কাঠামোর ভেতরে প্রবেশ করে একসঙ্গে থাকতে পারে। এই ঘটনা পৃথিবীতে প্রায় অসম্ভব।
অধ্যাপক রাম বলেন, ‘এই আবিষ্কার টাইটানের ভূতত্ত্ব এবং এর অদ্ভুত সব ল্যান্ডস্কেপ—যেমন হ্রদ, সমুদ্র এবং বালিয়াড়ি—বোঝার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হবে।’
তিনি আরও মন্তব্য করেন, টাইটানের মতো চরম, প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণের উৎপত্তির আগে রসায়ন কীভাবে কাজ করতে পারত, এই গবেষণা সেই বিষয়েও নতুন অন্তর্দৃষ্টি যোগ করবে। হাইড্রোজেন সায়ানাইডের এই ভূমিকা প্রাণ সৃষ্টির মৌলিক উপাদান, যেমন প্রোটিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড এবং জেনেটিক কোডের জন্য প্রয়োজনীয় নিউক্লিওবেস অজৈবিকভাবে তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করতে পারে।

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।
১৯ এপ্রিল ২০২৫
নোবেলজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ডিএনএর (DNA) যুগান্তকারী ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারকদের অন্যতম তিনি। তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
২ দিন আগে
বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রে দাবি করেছেন, তাঁর আবিষ্কার মানুষের সঙ্গে কুকুরের বন্ধুত্বের ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে পারে। তাঁর মতে, কুকুরের গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে, যা প্রচলিত ধারণার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে!
২ দিন আগে
বারবিকিউ পার্টি চলছে এখন মহাকাশেও! তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে চীনের ছয়জন নভোচারী এই আয়োজন করেছেন। চীনের অ্যাস্ট্রোনট সেন্টার (এসিসি) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শেনঝো–২০ ও শেনঝো–২১ মিশনের নভোচারীরা একটি নতুন ধরনের ওভেন ব্যবহার করে রান্না করছেন, যা মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে ব্যবহারের উপযোগী
৫ দিন আগে