Ajker Patrika

মস্তিষ্কে স্থাপিত চিপ ব্যবহার করে প্রথমবার ইউটিউবের জন্য ভিডিও তৈরি

অনলাইন ডেস্ক
ব্যাড স্মিথ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
ব্যাড স্মিথ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

ব্র্যাড স্মিথ নামে এক ব্যক্তি কথা বলতে পারেন না। কিছুদিন আগে তিনি তাঁর মস্তিষ্কে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের উদ্যোগ নিউরালিংকের একটি ‘ব্রেইন চিপ’ বসিয়েছেন। তিনি তাঁর চিপ ব্যবহার করে কীভাবে জীবনযাপন করছেন—তার একটি ঝলক দেখিয়েছেন। ব্র্যাড স্মিথ চিপের মাধ্যমে তাঁর ব্রেন সিগন্যাল ব্যবহার করে একটি ইউটিউব ভিডিও সম্পাদনা এবং তাতে ভয়েস ওভার দিয়েছেন।

ব্র্যাড স্মিথ বিশ্বে তৃতীয় ব্যক্তি ও অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস বা এএলএস রোগে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি যিনি ইলন মাস্কের নিউরালিংক ব্রেন চিপ বসিয়েছেন। অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস লু গেরিগের রোগ নামেও পরিচিত। এটি এক মারাত্মক স্নায়বিক রোগ। এই রোগে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের মোটর নিউরনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই নিউরনগুলোই শরীরের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।

এই রোগের কারণে রোগীরা ধীরে ধীরে মাংসপেশির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান। ফলে কথা বলা, খাওয়া, নড়াচড়া করা এবং স্বাধীনভাবে শ্বাস নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। স্মিথ গত সপ্তাহে ইউটিউবে একটি ভিডিও পোস্ট করে দেখিয়েছেন, তিনি নিউরালিংক ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করে কীভাবে দৈনন্দিন কাজ করেন।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) ব্যবহার করে তিনি তাঁর মস্তিষ্কের সংকেত দিয়ে ম্যাকবুক প্রোর মাউস নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি দাবি করেছেন, এই ভিডিওটি নিউরালিংক বা বিসিআই ব্যবহার করে সম্পাদিত প্রথম ভিডিও। স্মিথের মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্সে বসানো এই চিপটি পাঁচটি কয়েনের সমান পুরু এবং এতে ১ হাজারটিরও বেশি ইলেক্ট্রোড রয়েছে।

স্মিথ জানান, নিউরালিংক তাঁর মনের ভেতরের চিন্তা সরাসরি পড়ে না, বরং তাঁর মস্তিষ্কের সংকেত বিশ্লেষণ করে বোঝে যে, তিনি কার্সরটি কোথায় এবং কীভাবে সরাতে চান। প্রথমদিকে তিনি হাত নাড়ানোর কথা চিন্তা করে কার্সর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন যে, জিহ্বা নাড়ানো এবং চোয়াল শক্ত করার কথা ভাবলে কার্সর নিয়ন্ত্রণ ও ভার্চুয়াল ক্লিক করা তাঁর জন্য বেশি সহজ হচ্ছে।

কথা বলার ক্ষমতা হারানোর আগে স্মিথের গলার স্বরের রেকর্ড ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তাঁর নিজস্ব কণ্ঠে ভিডিওটির ভয়েস ওভার তৈরি করা হয়েছে। আলাদা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, নিউরালিংকের টিম যখন স্মিথের বাড়িতে গিয়েছিল, তখন ইলন মাস্ক তাঁকে ফোন করেন। মাস্ক স্মিথকে বলেন, ‘আশা করি এটি আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য একটি বড় পরিবর্তন আনবে।’

স্মিথ কম্পিউটারের মাধ্যমে জানান, ‘আমি এটি আমার মাথায় বসাতে পেরে এবং আই-গেজ ব্যবহার করা বন্ধ করতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত।’ গত সপ্তাহে নিজের ভিডিওতে স্মিথ বলেছেন, তিনি আগে যোগাযোগের জন্য আই-গেজ প্রযুক্তি ব্যবহার করতেন, কিন্তু সেটি শুধুমাত্র অন্ধকার ঘরেই কার্যকর ছিল। নিউরালিংকের ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করে তিনি এখন বাইরে এবং বিভিন্ন আলোতেও যোগাযোগ করতে পারেন।

নিউরালিংক ইমপ্ল্যান্টের সাহায্যে স্মিথ তাঁর সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও গেমও খেলতে পারছেন। একটি ফুটেজে তাকে ‘মারিও কার্ট’ খেলতে দেখা গেছে। মাস্কের জীবনীকার অ্যাশলি ভ্যান্সের সাবস্ট্যাক প্রকাশনা ‘কোর মেমোরিতে’ স্মিথ বলেছেন, ‘এখানে পৌঁছাতে অনেক বছর লেগেছে, এবং আমি এখনো মাঝে মাঝে ভেঙে পড়ি ও কাঁদি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার জন্য বড় কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়াটা সত্যিই দারুণ। আমি ভবিষ্যতে এই কাজের মাধ্যমে অন্যদের সেবা করতে পারব ভেবে খুবই আনন্দিত।’

নিউরালিংক এর আগে বানরের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছিল। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এটি প্রথম মানুষের মস্তিষ্কে বসানো হয়। প্রথম রোগী ছিলেন কোয়াড্রিপ্লেজিক নোল্যান্ড আরবাউ। তিনি বিজনেস ইনসাইডারকে জানিয়েছেন, এই ইমপ্ল্যান্ট তাঁকে স্বাধীনতা ফিরে পেতে এবং নতুন সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করেছে।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত