Ajker Patrika

খালেদার বিষয়ে আবেদন করবে বিএনপি, অপেক্ষা সবুজ সংকেতের  

রেজা করিম
খালেদার বিষয়ে আবেদন করবে বিএনপি, অপেক্ষা সবুজ সংকেতের  

ঢাকা: উন্নত চিকিৎসার জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠাতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তবে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেনি দলটি। আবেদন করার আগেই সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সবুজ সংকেত পেতে চায় তারা। সে নিয়ে চেষ্টাও করছে দলের নীতি নির্ধারকেরা। সংকেত মিললে অনেকটা আনুষ্ঠানিকতা রক্ষায় খালেদার বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করবে বিএনপি।

করোনা ও করোনা পরবর্তি জটিলতার চিকিৎসা নিয়ে ১৯ জুন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন খালেদা জিয়া। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৭ এপ্রিল ওই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। বর্তমানে গুলশানের বাড়িতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তারা জানান, হাসপাতাল থেকে যে অবস্থায় তিনি বাড়িতে ফিরেছিলেন, তাঁর অবস্থা এখনো তেমনই আছে। এ অবস্থায় তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য চেষ্টা শুরু করেছে বিএনপি।

এর আগে হাসপাতালে থাকার সময় চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে তাঁর পরিবার। কিন্তু আইনি জটিলতায় সেই আবেদন নাকচ হয়। বিষয়টিতে এত দিন দলীয়ভাবে কিছু না বললেও অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছে দলটি। ২০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদার চিকিৎসার দাবিটিকে এজেন্ডাভুক্ত করে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বেগম খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা দরকার। এ অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি তাঁর মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।

স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য জানান, খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে বিএনপি সরকারের কাছে আবেদন করতে চাচ্ছে। তবে পরিবারের আবেদনের মত তাদের আবেদনও প্রত্যাখ্যান হোক, সেটা বিএনপি চায় না। যেকারণে আবেদন করার আগেই সরকারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ইতিবাচক সাঁড়া না আসলেও ধারণা করা হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে একটা ভালো খবর আসবে। সেই সংকেতটা পেয়েই খালেদার বিষয়ে বিএনপি আবেদন করতে চায়। সেটার জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে। দলের পরবর্তি স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই এ ব্যাপারে বিএনপি একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারে বলে জানান তারা।
 
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ম্যাডামের পরিবারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আবেদন করা হয়েছিল। সরকার তা নির্দয়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা অত্যন্ত অমানবিক। আবার আমরা সরকারকে চাপ দেব।’
 
শনিবার বিকেলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে একটা দাবি করেছি যে, তাঁর (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা করানো দরকার। আমরা আশা করি সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
 
এ বিষয়ে সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি আবেদন করবে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এখনো করা হয়নি (আবেদন)। ফরমালি আবেদন তো ওনার পরিবার করেছিল। আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি আবেদন করব কী-না।’

১০ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। এর আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। করোনামুক্ত হওয়ার পর পুরোনো রোগগুলো আবারও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। একটা সময় জটিলতাগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে হার্ট, লিভার এবং কিডনির জটিলতা ভীষণভাবে কাবু করে ফেলে তাঁকে। সেখান থেকে তাঁর শারীরিক একটা স্থিতাবস্থায় আসে। এরপর হাসপাতালের জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হন। এ অবস্থায় সংক্রমণ এড়াতে তাঁকে বাড়িতে এনে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, খালেদার সুচিকিৎসার জন্য দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তি পর্যাপ্ত নয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ড দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। ২০২০ এর ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে বাসায় থাকার অনুমতি পান তিনি। গত মার্চে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে তাঁর পরিবার। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরে ৫মে আবারও একই বিষয়ে আবেদন করে পরিবার। দুটি আবেদনের একটিতেও সাড়া দেয়নি সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত