আব্দুর রাজ্জাক
আমরা সবাই দীর্ঘদিন যাবৎ ‘মেধা পাচার হওয়া’ কথাটির সঙ্গে পরিচিত। আসলেই কি মেধা পাচার হয়? এর একটা কারণ উদ্ঘাটন করা দরকার। আমাদের যে মেধার দরকার, সেই মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে মেধাবী মানুষ রাষ্ট্রীয় জীবনে, সমাজজীবনে—সেটাই সবার কাম্য। মেধাবী মানুষ ছাড়া কোনো জাতি অগ্রসর হতে পারে না। এই আধুনিক যুগে প্রতিটা বিষয়ে, প্রতিটা ক্ষেত্রে মেধাবীরা সঠিকভাবে তাঁদের মেধার পরিচয় দিলে রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। সেই জন্যই দীর্ঘদিন থেকে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশ থেকে মেধাবী মানুষকে রাষ্ট্রীয় বৃত্তি দিয়ে তাদের দেশে নিয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্পেশাল ভিসার ব্যবস্থা করে এই মেধাবীদের নিয়ে যায় এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। যার কারণে আমেরিকা আজ এত শক্তিশালী—শিক্ষাদীক্ষায়, বিজ্ঞানে ও অন্যান্য বিষয়ে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও কোরিয়াও এ রকম মেধাবী ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করে, সেই দেশের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত করে।
আমাদের দেশের মেধাবী মানুষেরা তাঁদের মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর হয়তো অনেক ক্ষেত্রে সুযোগই পান না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অবহেলা ও অদূরদর্শিতার অভাবে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন মেধাবীরা। আধুনিক যুগের বিশেষভাবে বিশেষায়িত কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করার পরে, সেই বিষয়ে ভালো কোনো কাজ পাওয়া দুরূহ ব্যাপার আমাদের দেশে। আবার যদি কোনো সময় কাজ পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে যথাযথ মর্যাদা ও এর পরিধির ব্যাপ্তি ঘটানো যায় না বলে মেধাবীরা এ দেশে থাকতে চান না।
এবার আসি যথার্থ উদাহরণ নিয়ে। কয়েক বছর আগে আমাদের দেশের একজন নারী শিক্ষার্থী বুয়েটে পড়া অবস্থায় আইআইটি দিল্লির স্কলারশিপ নিয়ে মলিকুলার বায়োলজিতে মাস্টার্স পাস করে দেশে আসার পর সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিটা ছিল বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে। কিছুদিন পরে তিনি বুঝতে পারলেন এখানে তাঁর ভবিষ্যৎ নেই, এই পদটা একটি ব্লক পদ, এখানে চাকরি করলে এই পদ থেকেই তাঁকে অবসরে যেতে হবে। পরবর্তী সময়ে তিনি আবার আইআইটি দিল্লি থেকে পিএইচডি করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুই-এক জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেন। প্রায় দুই বছর বাংলাদেশে থেকে কোনো উপায় না করতে পেরে আমেরিকার নিউইয়র্কের একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে চলে যান। সেখানে তিনি এখন সম্মানের সঙ্গে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে চাকরিতে আছেন। ভবিষ্যতে তাঁর পদোন্নতি ও অন্যান্য সুবিধা বাড়বে। এককথায়, তাঁর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এ রকম একজন মেধাবী প্রতিশ্রুতিশীল বিশেষজ্ঞকে আমরা কোনো জায়গা করে দিতে পারলাম না। আমেরিকা ঠিকই তাঁকে চিনে নিয়েছে এবং সঠিক জায়গা দিয়েছে।
অন্যান্য বিষয়েও বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসেন আমাদের মেধাবী বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এ দেশে যথাযোগ্য মর্যাদা পান না। এ দেশেও তৈরি হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট থেকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেধাবী বিশেষজ্ঞরা। স্বদেশে কাজ করতে চাইলে তাঁরাও স্থান করে নিতে পারেন না।
এবার আসি আজকের লেখার মূল বিষয়ে। সাত-আট বছর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি বিষয়ের ওপর গ্র্যাজুয়েশন কোর্স চালু হয়। বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসা এই বিষয়ের মেধাবী শিক্ষকদের দিয়ে এই বিভাগ চালু করা হয়। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি অনুসারে ওপরের দিকের শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে ভর্তি হন। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ ব্যাচ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে পড়াশোনা করা মেধাবী বিশেষজ্ঞদের দেশে কোনো সম্মানিত পেশায় চাকরির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বাংলাদেশ সরকার।
বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়, সেইসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার, ক্রয়, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যা করার দরকার—এসব ব্যাপারে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ানো হয়। এক বাক্যে শিক্ষিত মানুষ স্বীকার করবেন, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার বা প্রকৌশলী আমাদের খুবই দরকার, প্রতিটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ও বড় বড় হাসপাতালে। আধুনিক যুগে ক্যানসার ডিটেকশন মেশিন আছে, এমআরআই, সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন ধরনের খুবই বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি আছে উল্লিখিত হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে। অনেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখবেন এই ধরনের হাজার হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পড়ে আছে, সেটা চালু করা হচ্ছে না বা ব্যবহার করা হচ্ছে না সঠিক প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞের অভাবে। অথচ এই বিষয়ের ওপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর ৩০ জন বিশেষজ্ঞ তৈরি করে থাকে। আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের চাহিদা আছে। তাই প্রতিবছর এইসব মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার বিদেশে পাড়ি জমান। তাঁরা উচ্চশিক্ষা লাভের পরে বাংলাদেশে আসবেন বলে কেউ মনে করেন না।
অথচ আধুনিক যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ রকম দামি যন্ত্রপাতির ব্যবহার, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা বিদেশ থেকে মাঝে মাঝে অনেক টাকা দিয়ে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসি, সময়ের প্রয়োজনে। মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে এইসব যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য স্থায়ীভাবে আমরা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী নিয়োগ দিই না। কেন দিই না? নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে আধুনিক প্রকৌশলী তৈরি হয় আমাদের বুয়েট থেকে, তাঁদের সঠিক জায়গা করে কেন দিতে পারি না? এর কোনো সঠিক জবাব কারও কাছ থেকেই পাবেন না।
প্রতিবছর যে ৩০ জন প্রকৌশলী বের হন, ভর্তির সময় তাঁদের যত উৎসাহ থাকে, পাস করার পর সেটা থাকে না। তাঁরা সামনে দেখতে পান নিজ দেশে অন্ধকার ভবিষ্যৎ! অবশ্য কোনো না কোনোভাবে তাঁরা আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার কথা বলে চলে যাচ্ছেন হয়তো। নিজেদের ভবিষ্যৎ রচনা করার জন্য আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বে তাঁরা হয়তো যেকোনোভাবে স্থান করে নেবেন। কিন্তু আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থে, নিজস্ব মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে, আমাদের নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী তৈরি করলাম, এর সুবিধা ভোগ করবে অন্য দেশ। হায়রে আমাদের দুর্ভাগা দেশ!
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তর-পরিদপ্তর আছে। অনুরোধ রইল—স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পরিদপ্তর অনতিবিলম্বে করা হোক, যেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাস করা মেধাবী প্রকৌশলীদের। তাঁদের পদায়ন করা হবে বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে। প্রথম যখন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি বুয়েটে চালু করে, তখন কথা ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাস করা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়োগের ব্যবস্থা করবে। গত চারটি ব্যাচ এই বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পরেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আশা করি, এবার এই বাজেটে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি পরিদপ্তর করে এইসব মেধাবী প্রকৌশলীকে বাংলাদেশে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার। এই সামান্য দায়িত্বটুকু যদি রাষ্ট্র গ্রহণ করে, তবে আমাদের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের হাজার হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রক্ষা পাবে, এগুলোর সাহায্যে বিভিন্ন রোগ শনাক্ত করা যাবে, অপারেশনসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা ত্বরান্বিত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সবাইকে এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষ থেকে।
লেখক: প্রকৌশলী
আমরা সবাই দীর্ঘদিন যাবৎ ‘মেধা পাচার হওয়া’ কথাটির সঙ্গে পরিচিত। আসলেই কি মেধা পাচার হয়? এর একটা কারণ উদ্ঘাটন করা দরকার। আমাদের যে মেধার দরকার, সেই মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে মেধাবী মানুষ রাষ্ট্রীয় জীবনে, সমাজজীবনে—সেটাই সবার কাম্য। মেধাবী মানুষ ছাড়া কোনো জাতি অগ্রসর হতে পারে না। এই আধুনিক যুগে প্রতিটা বিষয়ে, প্রতিটা ক্ষেত্রে মেধাবীরা সঠিকভাবে তাঁদের মেধার পরিচয় দিলে রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। সেই জন্যই দীর্ঘদিন থেকে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশ থেকে মেধাবী মানুষকে রাষ্ট্রীয় বৃত্তি দিয়ে তাদের দেশে নিয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্পেশাল ভিসার ব্যবস্থা করে এই মেধাবীদের নিয়ে যায় এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। যার কারণে আমেরিকা আজ এত শক্তিশালী—শিক্ষাদীক্ষায়, বিজ্ঞানে ও অন্যান্য বিষয়ে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও কোরিয়াও এ রকম মেধাবী ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করে, সেই দেশের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত করে।
আমাদের দেশের মেধাবী মানুষেরা তাঁদের মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর হয়তো অনেক ক্ষেত্রে সুযোগই পান না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অবহেলা ও অদূরদর্শিতার অভাবে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন মেধাবীরা। আধুনিক যুগের বিশেষভাবে বিশেষায়িত কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করার পরে, সেই বিষয়ে ভালো কোনো কাজ পাওয়া দুরূহ ব্যাপার আমাদের দেশে। আবার যদি কোনো সময় কাজ পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে যথাযথ মর্যাদা ও এর পরিধির ব্যাপ্তি ঘটানো যায় না বলে মেধাবীরা এ দেশে থাকতে চান না।
এবার আসি যথার্থ উদাহরণ নিয়ে। কয়েক বছর আগে আমাদের দেশের একজন নারী শিক্ষার্থী বুয়েটে পড়া অবস্থায় আইআইটি দিল্লির স্কলারশিপ নিয়ে মলিকুলার বায়োলজিতে মাস্টার্স পাস করে দেশে আসার পর সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিটা ছিল বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে। কিছুদিন পরে তিনি বুঝতে পারলেন এখানে তাঁর ভবিষ্যৎ নেই, এই পদটা একটি ব্লক পদ, এখানে চাকরি করলে এই পদ থেকেই তাঁকে অবসরে যেতে হবে। পরবর্তী সময়ে তিনি আবার আইআইটি দিল্লি থেকে পিএইচডি করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুই-এক জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেন। প্রায় দুই বছর বাংলাদেশে থেকে কোনো উপায় না করতে পেরে আমেরিকার নিউইয়র্কের একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে চলে যান। সেখানে তিনি এখন সম্মানের সঙ্গে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে চাকরিতে আছেন। ভবিষ্যতে তাঁর পদোন্নতি ও অন্যান্য সুবিধা বাড়বে। এককথায়, তাঁর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এ রকম একজন মেধাবী প্রতিশ্রুতিশীল বিশেষজ্ঞকে আমরা কোনো জায়গা করে দিতে পারলাম না। আমেরিকা ঠিকই তাঁকে চিনে নিয়েছে এবং সঠিক জায়গা দিয়েছে।
অন্যান্য বিষয়েও বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসেন আমাদের মেধাবী বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এ দেশে যথাযোগ্য মর্যাদা পান না। এ দেশেও তৈরি হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট থেকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেধাবী বিশেষজ্ঞরা। স্বদেশে কাজ করতে চাইলে তাঁরাও স্থান করে নিতে পারেন না।
এবার আসি আজকের লেখার মূল বিষয়ে। সাত-আট বছর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি বিষয়ের ওপর গ্র্যাজুয়েশন কোর্স চালু হয়। বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসা এই বিষয়ের মেধাবী শিক্ষকদের দিয়ে এই বিভাগ চালু করা হয়। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি অনুসারে ওপরের দিকের শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে ভর্তি হন। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ ব্যাচ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে পড়াশোনা করা মেধাবী বিশেষজ্ঞদের দেশে কোনো সম্মানিত পেশায় চাকরির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বাংলাদেশ সরকার।
বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়, সেইসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার, ক্রয়, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যা করার দরকার—এসব ব্যাপারে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ানো হয়। এক বাক্যে শিক্ষিত মানুষ স্বীকার করবেন, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার বা প্রকৌশলী আমাদের খুবই দরকার, প্রতিটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ও বড় বড় হাসপাতালে। আধুনিক যুগে ক্যানসার ডিটেকশন মেশিন আছে, এমআরআই, সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন ধরনের খুবই বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি আছে উল্লিখিত হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে। অনেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখবেন এই ধরনের হাজার হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পড়ে আছে, সেটা চালু করা হচ্ছে না বা ব্যবহার করা হচ্ছে না সঠিক প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞের অভাবে। অথচ এই বিষয়ের ওপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর ৩০ জন বিশেষজ্ঞ তৈরি করে থাকে। আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের চাহিদা আছে। তাই প্রতিবছর এইসব মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার বিদেশে পাড়ি জমান। তাঁরা উচ্চশিক্ষা লাভের পরে বাংলাদেশে আসবেন বলে কেউ মনে করেন না।
অথচ আধুনিক যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ রকম দামি যন্ত্রপাতির ব্যবহার, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা বিদেশ থেকে মাঝে মাঝে অনেক টাকা দিয়ে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসি, সময়ের প্রয়োজনে। মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে এইসব যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য স্থায়ীভাবে আমরা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী নিয়োগ দিই না। কেন দিই না? নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে আধুনিক প্রকৌশলী তৈরি হয় আমাদের বুয়েট থেকে, তাঁদের সঠিক জায়গা করে কেন দিতে পারি না? এর কোনো সঠিক জবাব কারও কাছ থেকেই পাবেন না।
প্রতিবছর যে ৩০ জন প্রকৌশলী বের হন, ভর্তির সময় তাঁদের যত উৎসাহ থাকে, পাস করার পর সেটা থাকে না। তাঁরা সামনে দেখতে পান নিজ দেশে অন্ধকার ভবিষ্যৎ! অবশ্য কোনো না কোনোভাবে তাঁরা আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার কথা বলে চলে যাচ্ছেন হয়তো। নিজেদের ভবিষ্যৎ রচনা করার জন্য আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বে তাঁরা হয়তো যেকোনোভাবে স্থান করে নেবেন। কিন্তু আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থে, নিজস্ব মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে, আমাদের নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী তৈরি করলাম, এর সুবিধা ভোগ করবে অন্য দেশ। হায়রে আমাদের দুর্ভাগা দেশ!
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তর-পরিদপ্তর আছে। অনুরোধ রইল—স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পরিদপ্তর অনতিবিলম্বে করা হোক, যেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাস করা মেধাবী প্রকৌশলীদের। তাঁদের পদায়ন করা হবে বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে। প্রথম যখন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি বুয়েটে চালু করে, তখন কথা ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাস করা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়োগের ব্যবস্থা করবে। গত চারটি ব্যাচ এই বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পরেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আশা করি, এবার এই বাজেটে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি পরিদপ্তর করে এইসব মেধাবী প্রকৌশলীকে বাংলাদেশে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার। এই সামান্য দায়িত্বটুকু যদি রাষ্ট্র গ্রহণ করে, তবে আমাদের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের হাজার হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রক্ষা পাবে, এগুলোর সাহায্যে বিভিন্ন রোগ শনাক্ত করা যাবে, অপারেশনসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা ত্বরান্বিত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সবাইকে এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষ থেকে।
লেখক: প্রকৌশলী
চিড়িয়াখানা হচ্ছে বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের বিনোদনকেন্দ্র। কিন্তু সম্প্রতি একটি ঘটনায় মনে হচ্ছে, এটা আর শুধু বিনোদনকেন্দ্র না হয়ে পশুদের জন্য এক নির্মম নির্যাতনের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেএককালে চাকা খুলে যাওয়া বলতে বোঝাত ভাঙা ঠেলাগাড়ি, পুরোনো সাইকেল কিংবা ফুচকার ভ্যান। কিন্তু আজকাল সেই সাদামাটা ঘটনা আর মহল্লার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। এখন আকাশেও বিমানের চাকা খুলে যাচ্ছে! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন।
১৯ ঘণ্টা আগেসুনামগঞ্জের তাহিরপুরে পাটলাই নদের ওপর ২০১৮ সালে যে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল, তার তিন বছরের নির্ধারিত সময় পার হয়ে সাত বছরে গড়ালেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। ১৭ মে আজকের পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত একটি খবর ছাপা হয়েছে।
১৯ ঘণ্টা আগেমিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ।
২ দিন আগে