রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় অতিপরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ হলো কিম্ভূতকিমাকার। প্রসঙ্গভেদে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটি ব্যবহার করেছি। শব্দটি ব্যবহারের প্রবণতার মধ্যে নিশ্চিতভাবেই একটি কুৎসিত কিংবা ভৌতিক ব্যাপার কাজ করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিম্ভূতকিমাকার শব্দটির মূল অর্থ কি তাই বলে? এর সঙ্গে কি সত্যিই ভৌতিক কোনো ঘটনার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে? আবার শব্দটির ব্যবহারকারী এবং যাকে উদ্দিষ্ট করে শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে উভয়ের মধ্যেই একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
সেটি কেন? তবে চলুন আজ জানব কিম্ভূতকিমাকার শব্দের সাতসতেরো।
সংস্কৃত ‘কিম্ভূত’ এবং ‘কিমাকার’ শব্দসহযোগে বাংলা ‘কিম্ভূতকিমাকার’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। এটি বিশেষণ পদ। শব্দটির অর্থ হলো কুৎসিত আকৃতিবিশিষ্ট, কদাকার, বিকটদর্শন, ভয়ংকর, অতিশয় বিশ্রী, অদ্ভুত প্রভৃতি। কিন্তু শব্দটির এমন অর্থ তৈরি হলো কী করে? এমন অর্থ হওয়ার পেছনে মূল কারিগর হলো ভূত শব্দটি অর্থাৎ ‘কিম্ভূত’ শব্দের ভূত শব্দটি এ জন্য দায়ী। এবার চলুন এর ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করে ভূতের গল্পে মশগুল হই।
প্রকৃতপক্ষে কিম্ভূত এবং কিমাকার শব্দের কোনোটিতেই কুৎসিত বা কদাকার কোনো বিষয় নেই। কিম্ভূত শব্দটি সংস্কৃত ‘কিম্ ভূত’ হতে এসেছে। এর অর্থ হলো কী রূপ, কী রকম, কীসের মতো প্রভৃতি। অপরদিকে কিমাকার শব্দটি সংস্কৃত ‘কিম্ আকার’ থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো কীরূপ বা কেমন আকারের। তার মানে কিম্ভূতকিমাকার শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো কীসের মতো বা কেমন আকারের। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে জানতে চাওয়ার নিমিত্তে কিম্ভূতকিমাকার শব্দদ্বারা প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এ শব্দটির অর্থ বিকট, কদাকার, ভয়ংকর প্রভৃতি। আদি অর্থের সঙ্গে বর্তমানে প্রচলিত অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই।
অর্থের এমন আমূল পরিবর্তন সাধনে মূল ভূমিকা পালন করেছে কিম্ভূতকিমাকার শব্দের ‘ভূত’ অংশটি। মূলত কিম্ভূত শব্দের ভূত ‘কিমাকার’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভয়ংকর অর্থদায়ক শব্দটির বিকাশ ঘটিয়েছে। আর বাঙালিমাত্রই যে আশৈশব ভূতের প্রতি অন্য রকম এক কৌতূহল বোধ করে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভূতের কোনো প্রসঙ্গ উঠলেই যেন বিকটদর্শন বা কদাকার কোনো অবয়বের কথা আমাদের অবচেতন মনে ভেসে ওঠে। অনুরূপভাবে অদ্ভুত বা বিসদৃশ কিছু নজরে এলে আমরা ‘কিম্ভূতকিমাকার’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করি। যার মধ্যে অবধারিতভাবেই কল্পিত ভূতের ধারণা নিরূপিত রয়েছে। এর ফলে এর অর্থ হয়েছে কুৎসিত, কদাকার বা বিকটদর্শন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কিম্ভূতকিমাকার শব্দের প্রচুর ব্যবহার রয়েছে এবং তা বিবিধ অর্থে। কখনো বিকটাকৃতিবিশিষ্ট অর্থে, কখনো অদ্ভুত অর্থে, আবার কখনো কাণ্ডজ্ঞানহীন বা বিষয়বোধশূন্য অর্থে।
সর্বশেষ অর্থাৎ কাণ্ডজ্ঞানহীন অর্থে শব্দটির প্রয়োগ করেছেন বাঙালি নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা অমৃতলাল বসু। এ ছাড়া রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনও তাঁর ‘মতিচুর’ রচনায় এ শব্দটির প্রয়োগ করেছেন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলা শব্দতত্ত্ব’ গ্রন্থে সংকলিত ‘মক্তব-মাদ্রাসার বাংলা ভাষা’ নিবন্ধে এ শব্দটির প্রয়োগ করেছেন। উভয়ই কুৎসিত বা কদাকার অর্থে শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
পরিশেষে বলা যায়, কিম্ভূতকিমাকার শব্দটি ব্যবহারের প্রবণতায় সাম্প্রতিককালে হেয় বা তাচ্ছিল্যের একটি অর্থও লক্ষণীয়। তবে শব্দটির নেতিবাচক অর্থের রূপ পরিগ্রহে এর বানানের অবয়বগত রূপটিও একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব তৈরি করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় অতিপরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ হলো কিম্ভূতকিমাকার। প্রসঙ্গভেদে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটি ব্যবহার করেছি। শব্দটি ব্যবহারের প্রবণতার মধ্যে নিশ্চিতভাবেই একটি কুৎসিত কিংবা ভৌতিক ব্যাপার কাজ করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিম্ভূতকিমাকার শব্দটির মূল অর্থ কি তাই বলে? এর সঙ্গে কি সত্যিই ভৌতিক কোনো ঘটনার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে? আবার শব্দটির ব্যবহারকারী এবং যাকে উদ্দিষ্ট করে শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে উভয়ের মধ্যেই একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
সেটি কেন? তবে চলুন আজ জানব কিম্ভূতকিমাকার শব্দের সাতসতেরো।
সংস্কৃত ‘কিম্ভূত’ এবং ‘কিমাকার’ শব্দসহযোগে বাংলা ‘কিম্ভূতকিমাকার’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। এটি বিশেষণ পদ। শব্দটির অর্থ হলো কুৎসিত আকৃতিবিশিষ্ট, কদাকার, বিকটদর্শন, ভয়ংকর, অতিশয় বিশ্রী, অদ্ভুত প্রভৃতি। কিন্তু শব্দটির এমন অর্থ তৈরি হলো কী করে? এমন অর্থ হওয়ার পেছনে মূল কারিগর হলো ভূত শব্দটি অর্থাৎ ‘কিম্ভূত’ শব্দের ভূত শব্দটি এ জন্য দায়ী। এবার চলুন এর ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করে ভূতের গল্পে মশগুল হই।
প্রকৃতপক্ষে কিম্ভূত এবং কিমাকার শব্দের কোনোটিতেই কুৎসিত বা কদাকার কোনো বিষয় নেই। কিম্ভূত শব্দটি সংস্কৃত ‘কিম্ ভূত’ হতে এসেছে। এর অর্থ হলো কী রূপ, কী রকম, কীসের মতো প্রভৃতি। অপরদিকে কিমাকার শব্দটি সংস্কৃত ‘কিম্ আকার’ থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো কীরূপ বা কেমন আকারের। তার মানে কিম্ভূতকিমাকার শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো কীসের মতো বা কেমন আকারের। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে জানতে চাওয়ার নিমিত্তে কিম্ভূতকিমাকার শব্দদ্বারা প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এ শব্দটির অর্থ বিকট, কদাকার, ভয়ংকর প্রভৃতি। আদি অর্থের সঙ্গে বর্তমানে প্রচলিত অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই।
অর্থের এমন আমূল পরিবর্তন সাধনে মূল ভূমিকা পালন করেছে কিম্ভূতকিমাকার শব্দের ‘ভূত’ অংশটি। মূলত কিম্ভূত শব্দের ভূত ‘কিমাকার’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভয়ংকর অর্থদায়ক শব্দটির বিকাশ ঘটিয়েছে। আর বাঙালিমাত্রই যে আশৈশব ভূতের প্রতি অন্য রকম এক কৌতূহল বোধ করে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভূতের কোনো প্রসঙ্গ উঠলেই যেন বিকটদর্শন বা কদাকার কোনো অবয়বের কথা আমাদের অবচেতন মনে ভেসে ওঠে। অনুরূপভাবে অদ্ভুত বা বিসদৃশ কিছু নজরে এলে আমরা ‘কিম্ভূতকিমাকার’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করি। যার মধ্যে অবধারিতভাবেই কল্পিত ভূতের ধারণা নিরূপিত রয়েছে। এর ফলে এর অর্থ হয়েছে কুৎসিত, কদাকার বা বিকটদর্শন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কিম্ভূতকিমাকার শব্দের প্রচুর ব্যবহার রয়েছে এবং তা বিবিধ অর্থে। কখনো বিকটাকৃতিবিশিষ্ট অর্থে, কখনো অদ্ভুত অর্থে, আবার কখনো কাণ্ডজ্ঞানহীন বা বিষয়বোধশূন্য অর্থে।
সর্বশেষ অর্থাৎ কাণ্ডজ্ঞানহীন অর্থে শব্দটির প্রয়োগ করেছেন বাঙালি নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা অমৃতলাল বসু। এ ছাড়া রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনও তাঁর ‘মতিচুর’ রচনায় এ শব্দটির প্রয়োগ করেছেন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলা শব্দতত্ত্ব’ গ্রন্থে সংকলিত ‘মক্তব-মাদ্রাসার বাংলা ভাষা’ নিবন্ধে এ শব্দটির প্রয়োগ করেছেন। উভয়ই কুৎসিত বা কদাকার অর্থে শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
পরিশেষে বলা যায়, কিম্ভূতকিমাকার শব্দটি ব্যবহারের প্রবণতায় সাম্প্রতিককালে হেয় বা তাচ্ছিল্যের একটি অর্থও লক্ষণীয়। তবে শব্দটির নেতিবাচক অর্থের রূপ পরিগ্রহে এর বানানের অবয়বগত রূপটিও একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব তৈরি করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
লেখার শিরোনাম দেখেই যদি কেউ ভেবে থাকেন, এখানে অমূল্য রতন পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিল নিয়ে এমন এক গাড্ডায় পড়েছে নির্বাচন যে, কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার শক্তি কারও নেই। বিএনপির হাতে মুলা ধরিয়ে দিয়ে এই সরকারই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পোষণ করছে কি না...
১৫ ঘণ্টা আগেবিশ্বে পরিবেশদূষণকারী হিসেবে ১৫টি প্রধান দূষক চিহ্নিত করা হয়েছে। পয়লা নম্বরে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণে ৫ নম্বর দূষণকারী এখন প্লাস্টিক। দূষণের মাত্রা অনুযায়ী এই অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন আমাদের সামনে একটি হতাশাজনক বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
১৬ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সভা এখন অতীত বিষয়। ওই সভার পর দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই সমন্বয় হয়ে গেছে এবং এখনো হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি দ্রুত অগ্রসরমাণ বিষয়। তার কয়েক দিনও এক জায়গায় অবস্থানের সুযোগ নেই।
২ দিন আগে