Ajker Patrika

হেমন্তের দিকে চেয়ে শরৎযাপন

প্রশান্ত মৃধা
হেমন্তের দিকে চেয়ে শরৎযাপন

ভাদ্রের শেষ দিকে এমন অস্বস্তিকর গরম পড়ে যে, তা গ্রীষ্মকেও হার মানায়। কিন্তু গ্রীষ্মের দাবদাহের সঙ্গে এর তফাত অনেকটাই। এমন প্রাণ ওষ্ঠাগত গরম নিয়ে বাঙালিজীবনে বহু কথার প্রচলনও আছে। যেমন, টিকতে না পেরে মানুষ কষ্টের খেদে বলে, এই 
যে শুরু হয়েছে ভাদ্রের তালপাকা গরম! শ্রাবণের জলভর্তি নরম তালশাঁস এ সময়ে পেকে শক্ত ও পরিণত হয়। সেই তাল পাকাতে যেন এমন অস্বস্তিকর 
গরম খুব প্রয়োজন। নইলে তালের মতো অমন শক্ত ফল পেকে নরম হতো কী 
করে! বোঁটাটা খসে পাড়া কাঁপিয়ে মাটিতে পড়ে তাল।

ওদিকে কুকুরের মতো জলাতঙ্কগ্রস্ত প্রাণী, যার গায়ে পানি পড়লে দৌড়ে পালায়, সে-ও তখন অমন গা-জ্বলুনি তাপ সহ্য করতে না পেরে হাঁটুজলে গিয়ে দাঁড়ায়। গ্রামাঞ্চলে খালে আর শহরে কুকুরকে ড্রেনে নেমে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য খুব বিরল নয়। ধীরে ধীরে সংখ্যায় কমতির দিকে মহিষও, আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টির পর এই ভাদ্রে জলকাদায় মাখামাখি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বোকা মানুষের উদাহরণ গরু; কিন্তু হাবভাবে মহিষ সম্ভবত গরুর চেয়েও বোধহীন আর হাবাগোবা।

অথচ শীতের পর ফাগুনে খুব সংক্ষিপ্ত ‘মাধবী এসেই বলে যায়’ গোছের বসন্তের পর যে চৈত্র মাস, সে রাবীন্দ্রিক চোখে নায়ক-নায়িকার জন্য যত সর্বনাশাই হোক, প্রকৃতিতে ভাদ্রের মতো এতটা গরমের ভার নিয়ে আসে না। যদিও তখন মাঠ ফেটে চৌচির। পানির জন্য অন্তহীন হাহাকার। লোকগানে আকুতির শেষ নেই। কখন আসবে বৃষ্টি।

বৈশাখের মাঝামাঝিও তার দেখা নেই। হঠাৎ কালবৈশাখীর তাণ্ডব, তার সঙ্গে এক-আধ পশলা বৃষ্টি। তাতে ওই চৌচির মাঠ-প্রান্তরের খাঁ খাঁ বুকের তৃষিত ভাবের তেমন কিছু যায়-আসে না। জ্যৈষ্ঠের দিকে চাতকের চোখে প্রতীক্ষায় তাকিয়ে, আষাঢ়ের অঝোর ধারায় পৌঁছানোর অবশ্য সুযোগ থাকে। উত্তর ভারতে নাকি শ্রাবণ-ভাদ্র বর্ষাকাল। তাই আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে নয়, ওটা পশম-দিবস। অর্থাৎ আষাঢ়ের শেষ, বর্ষার শুরু। বাঙালি হয়তো ‘প্রথম দিবস’ বলে নিজ বর্ষা ঋতুকে মনে রাখে।

কিন্তু বঙ্গদেশে শেষ ভাদ্রের সঙ্গে এর কোনো কিছুরই তুলনা চলে না, সে যতই আমরা বলি না কেন, এ দারুণ শরৎকাল। শরতের এই মাঝামাঝি ছাড়িয়ে সেই দারুণ আর থাকে কই? বরং নিদারুণ! এর-ও দিন পনেরো আগে তেরোই ভাদ্র জলে কাঁটা পড়েছে। শীতের দিকে এগোনোর পয়লা আভাস। দিন দক্ষিণায়নে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু এমন অসহনীয় গরমে সে ভাবনার পুরোটাই মন থেকে একেবারে সরে যায়। আর অপেক্ষা, আসছে হেমন্ত, পাতা বিবর্ণ হওয়ার আর ধীরে ধীরে ঝরে পড়ার দিন।

হয়তো সেদিনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ভাদ্রের এই গরমকে সহ্য করে নেওয়া যায়!

লেখক: সাহিত্যিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

অস্থিরতার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই আমরা চলে যাব

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত