মালিহা লোধি
এখনই ভারত-পাকিস্তান সংকটের সব দিক পুরোপুরি মূল্যায়ন করা হয়তো একটু তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপসংহার টানা সম্ভব। এর আগে কখনোই দুই দেশ একে অপরের মূল ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালায়নি কিংবা ড্রোনসহ নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবহার করেনি। তারা পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ার পর এর আগে কখনোই এ রকম পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তের এত কাছাকাছি পৌঁছায়নি।
সামরিক সংঘাতের উত্তেজনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চিরাচরিত যুদ্ধক্ষেত্র অধিকৃত কাশ্মীরের গণ্ডি ছাড়িয়ে এবং আগের যেকোনো সংকটের তুলনায় আরও অনেক দূর পর্যন্ত গিয়ে প্রতিরোধ করার সক্ষমতাকে চরম পরীক্ষায় ফেলে। এটি ছিল নজিরবিহীন। তবে যেভাবে এই সংকট প্রশমিত হলো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে, তা বহু চর্চিত একটি পদ্ধতি এবং অতীতেও অনেকবার এমনটা হয়েছে।
ভবিষ্যতের জন্য এই সংকটের সামরিক, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক দিকগুলোর একটি মূল্যায়ন করতে হলে সতর্কতার সঙ্গে তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এটা বলাই যায়, উভয় দেশ এই সংকট থেকে একেবারেই ভিন্ন ভিন্ন উপসংহার টেনেছে। ভারতের দাবি হলো—যা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন—তাদের সামরিক পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি ‘নতুন স্বাভাবিক’ অবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলাকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এই ‘নতুন’ নীতিমালার অধীনে সামরিকভাবে জবাব দেওয়া হবে।
পাকিস্তান মনে করে, এই সংকটে তাদের সামরিকভাবে জবাব দেওয়ার সক্ষমতা ও কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। কারণ এটাই ভারতকে আরও বড় ধরনের সংঘাতে জড়ানো থেকে বিরত রেখেছে এবং পরমাণু অস্ত্রের ছায়াতলে প্রচলিত যুদ্ধের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে ভারতের চেষ্টাকে ব্যর্থ করেছে। পাকিস্তানের প্রতিশোধমূলক আঘাতে একাধিক রাফাল যুদ্ধবিমান হারানো ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া ভারতের মূল ভূখণ্ডে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা পাকিস্তানের প্রচলিত সামরিক শক্তির প্রমাণ দেয়, যা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এবং ভারতের ‘সীমিত যুদ্ধ’ নীতিকে নিষ্ক্রিয় করতে সহায়ক হয়েছে।
বাস্তবতা হলো, সংঘাতের মধ্যে ভারত তার সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদি ভিত্তিহীনভাবে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংসের’ দাবি করেছেন। ভারত তার পদক্ষেপের পরিণতি ভুলভাবে হিসাব করেছে। সন্ত্রাসী হামলার প্রতিকারে সামরিক ‘সমাধান’ গ্রহণ তাদের জন্য উল্টো বিপদ ডেকে এনেছে। ভারতের দাবি যে তারা একটি নতুন মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করেছে, তা আসলে বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।
ভারতের পক্ষ থেকে যেভাবে বলা হয়েছে যে ভবিষ্যতে যদি আবার কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়, তাহলে তারা সামরিকভাবে জবাব দেবে—এটি বলা যত সহজ, বাস্তবে ততটাই কঠিন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সংকট নয়াদিল্লির জন্য যে বিব্রতকর ফলাফল বয়ে এনেছে। পাকিস্তানের প্রচলিত প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি নতুন করে বাড়াতে না-ও পারে, তাহলেও অন্তত তারা তাদের প্রতিরোধ সক্ষমতার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরায় প্রমাণ করেছে। ফলে ভবিষ্যতে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করলে ভারতকে এর জন্য আরও চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। ভারত একটি ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ পেয়েছে, তবে সে যেটি চেয়েছিল, তা তেমনটি নয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একধরনের অস্থির যুদ্ধবিরতি অবস্থা বিরাজ করছে, যেখানে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। দুই দেশ তাদের সামরিক সংঘাত থেকে একেবারে ভিন্ন ও বিপরীতমুখী উপসংহার টেনেছে এবং শিক্ষা নিয়েছে। এটি ভবিষ্যতের জন্য ভুল হিসাবের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। বিশেষ করে যদি তাদের মধ্যে স্থায়ী ও কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে না ওঠে।
যুদ্ধবিরতির পর দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনসের (ডিজিএমওস) মধ্যে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তবে এই যোগাযোগ শুধু প্রযুক্তিগত বা কৌশলগত পর্যায়ে সীমিত না থেকে আরও বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে এমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক ও অনিশ্চিত রয়ে গেছে। বিশেষ করে যখন মোদি ঘোষণা দিয়েছেন, ভারত কেবল ‘সামরিক অভিযান স্থগিত’ করেছে।
এই সংকটে ভারতের জন্য সামরিক খরচের চেয়েও কূটনৈতিক মূল্য অনেক বেশি ছিল। দায়িত্বহীন সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে নয়াদিল্লি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হারিয়েছে। কারণ বৈশ্বিক মনোযোগ সন্ত্রাসবাদ থেকে সরে গিয়ে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কার দিকে চলে গিয়েছিল। যেখানে ভারত উত্তেজনা আরও বাড়াতে থাকে। এটি দেখিয়েছে যে মোদি সরকার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে কতটা ভুল মূল্যায়ন করেছে। এই সংঘাতের ফলে আবার বৈশ্বিক দৃষ্টি কাশ্মীরের দিকে ফিরে আসে, যা মোদি সরকারের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর।
নয়াদিল্লির জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার সময় কাশ্মীর বিষয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। যদিও ভারত এটি প্রত্যাখ্যান করবে, তবু এর ফলে কাশ্মীর ইস্যু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। ভারত যখন সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়, তখনো তারা কোনো আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করতে পারেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও ব্যক্তিগত আলোচনায় ভারতীয় কর্মকর্তাদের চুক্তিটি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
তদুপরি, সংকট প্রশমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এবং যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্পের বক্তব্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুনরায় সম্পর্কের ‘হাইফেন’ তৈরি করেছে, যা ভারত বহু বছর ধরে যতটা সম্ভব বিচ্ছিন্ন রাখতে চেষ্টা করেছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম শরণ লন্ডনের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে স্বীকার করেছেন যে এই সংকট নয়াদিল্লির সেই চেষ্টাকে ব্যাহত করেছে, যাতে অন্য দেশগুলো ভারত ও পাকিস্তানকে সমতুল্য না মনে করে এবং তাদের সম্পর্ক আলাদা না দেখায়। তিনি বলেন, ‘ওই হাইফেন এখন ফিরে এসেছে।’ যদি ভারতের প্রধান ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য হয় বিশ্বে বড় খেলোয়াড়দের ক্লাবে যোগ দেওয়া, তাহলে এই সংকট নয়াদিল্লির জন্য সম্পূর্ণ উল্টো ফল দিয়েছে।
মোদি সরকার আমেরিকার পরিবর্তনশীল অবস্থানকে ভুলভাবে মূল্যায়ন করেছে। তারা ধারণা করেছিল যে পেহেলগামে সন্ত্রাসী ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া সামরিক পদক্ষেপের জন্য ওয়াশিংটন থেকে তারা নিঃশর্ত সমর্থন পাবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই সংকট প্রশমনের চেষ্টা করেছে এবং নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ উভয়কেই প্রকাশ্য ও গোপনে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
সংকট তীব্র হতে থাকায় মার্কিন কূটনৈতিক হস্তক্ষেপও জোরালো হয়। এটি বোঝা গেছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর উভয় দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিক ফোনালাপের মাধ্যমে এবং অবশেষে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির চূড়ান্ত আলাপে। এই সময়টায় অবশ্য সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
এর ফলে যুদ্ধবিরতি ঘটে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন এবং একে নিজের অবদান হিসেবে দাবি করেন। ভারতের পক্ষ থেকে তাঁর ঘোষণাকে জনসমক্ষে কখনো স্বাগত জানানো হয়নি এবং সংকট অবসানে মার্কিন ভূমিকা স্বীকারও করা হয়নি। যুদ্ধবিরতির পর দেওয়া ভাষণে মোদি এ বিষয়টির কোনো উল্লেখ করেননি। পরে ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন ভূমিকা অস্বীকার করেন। এই সংকট চলাকালে পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠ বোঝাপড়া ছিল নজিরবিহীন।
সংকটের রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে বিষয়টির পুরোপুরি ভিন্ন ছবি ফুটে ওঠে। এর ফল হিসেবে ভারতে বিভাজন এবং পাকিস্তানে একতা লক্ষ করা যায়। অপারেশন সিঁদুর থেকে প্রকৃতই কী অর্জিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে মোদির ওপর অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ছে। তাঁর দক্ষিণপন্থী সমর্থকেরাও যুদ্ধবিরতিতে ক্ষুব্ধ।
মোদির শক্তিশালী নেতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিরোধীরা মোদির কাছে অনেক প্রশ্নের জবাব চান। আর মোদি সরকারের কৌশলগত ভুল পদক্ষেপ নিয়ে তো কংগ্রেসের সভাপতি সরকারের সমালোচনায় মুখর। অন্যদিকে পাকিস্তান এই ফলাফলে খুশি। তাদের জাতীয় ঐক্য জোরদার হয়েছে। জাতীয় আত্মবিশ্বাস পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। একই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর খ্যাতি ও তাদের প্রতি জনসমর্থন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখন এক অস্বস্তিকর যুদ্ধবিরতি চলছে, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সামরিক উত্তেজনা কমাতে এবং ‘সতর্কতার স্তর’ হ্রাস করার জন্য বিশ্বাস বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে এটা ভাবা ভুল হবে যে শিগগিরই ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরে আসবে। পরিস্থিতি এখনো সংকটপূর্ণ ও অনিশ্চয়তায় ভরপুর।
মালিহা লোধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
(পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
এখনই ভারত-পাকিস্তান সংকটের সব দিক পুরোপুরি মূল্যায়ন করা হয়তো একটু তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপসংহার টানা সম্ভব। এর আগে কখনোই দুই দেশ একে অপরের মূল ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালায়নি কিংবা ড্রোনসহ নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবহার করেনি। তারা পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ার পর এর আগে কখনোই এ রকম পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তের এত কাছাকাছি পৌঁছায়নি।
সামরিক সংঘাতের উত্তেজনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চিরাচরিত যুদ্ধক্ষেত্র অধিকৃত কাশ্মীরের গণ্ডি ছাড়িয়ে এবং আগের যেকোনো সংকটের তুলনায় আরও অনেক দূর পর্যন্ত গিয়ে প্রতিরোধ করার সক্ষমতাকে চরম পরীক্ষায় ফেলে। এটি ছিল নজিরবিহীন। তবে যেভাবে এই সংকট প্রশমিত হলো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে, তা বহু চর্চিত একটি পদ্ধতি এবং অতীতেও অনেকবার এমনটা হয়েছে।
ভবিষ্যতের জন্য এই সংকটের সামরিক, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক দিকগুলোর একটি মূল্যায়ন করতে হলে সতর্কতার সঙ্গে তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এটা বলাই যায়, উভয় দেশ এই সংকট থেকে একেবারেই ভিন্ন ভিন্ন উপসংহার টেনেছে। ভারতের দাবি হলো—যা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন—তাদের সামরিক পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি ‘নতুন স্বাভাবিক’ অবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলাকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এই ‘নতুন’ নীতিমালার অধীনে সামরিকভাবে জবাব দেওয়া হবে।
পাকিস্তান মনে করে, এই সংকটে তাদের সামরিকভাবে জবাব দেওয়ার সক্ষমতা ও কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। কারণ এটাই ভারতকে আরও বড় ধরনের সংঘাতে জড়ানো থেকে বিরত রেখেছে এবং পরমাণু অস্ত্রের ছায়াতলে প্রচলিত যুদ্ধের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে ভারতের চেষ্টাকে ব্যর্থ করেছে। পাকিস্তানের প্রতিশোধমূলক আঘাতে একাধিক রাফাল যুদ্ধবিমান হারানো ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া ভারতের মূল ভূখণ্ডে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা পাকিস্তানের প্রচলিত সামরিক শক্তির প্রমাণ দেয়, যা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এবং ভারতের ‘সীমিত যুদ্ধ’ নীতিকে নিষ্ক্রিয় করতে সহায়ক হয়েছে।
বাস্তবতা হলো, সংঘাতের মধ্যে ভারত তার সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদি ভিত্তিহীনভাবে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংসের’ দাবি করেছেন। ভারত তার পদক্ষেপের পরিণতি ভুলভাবে হিসাব করেছে। সন্ত্রাসী হামলার প্রতিকারে সামরিক ‘সমাধান’ গ্রহণ তাদের জন্য উল্টো বিপদ ডেকে এনেছে। ভারতের দাবি যে তারা একটি নতুন মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করেছে, তা আসলে বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।
ভারতের পক্ষ থেকে যেভাবে বলা হয়েছে যে ভবিষ্যতে যদি আবার কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়, তাহলে তারা সামরিকভাবে জবাব দেবে—এটি বলা যত সহজ, বাস্তবে ততটাই কঠিন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সংকট নয়াদিল্লির জন্য যে বিব্রতকর ফলাফল বয়ে এনেছে। পাকিস্তানের প্রচলিত প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি নতুন করে বাড়াতে না-ও পারে, তাহলেও অন্তত তারা তাদের প্রতিরোধ সক্ষমতার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরায় প্রমাণ করেছে। ফলে ভবিষ্যতে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করলে ভারতকে এর জন্য আরও চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। ভারত একটি ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ পেয়েছে, তবে সে যেটি চেয়েছিল, তা তেমনটি নয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একধরনের অস্থির যুদ্ধবিরতি অবস্থা বিরাজ করছে, যেখানে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। দুই দেশ তাদের সামরিক সংঘাত থেকে একেবারে ভিন্ন ও বিপরীতমুখী উপসংহার টেনেছে এবং শিক্ষা নিয়েছে। এটি ভবিষ্যতের জন্য ভুল হিসাবের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। বিশেষ করে যদি তাদের মধ্যে স্থায়ী ও কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে না ওঠে।
যুদ্ধবিরতির পর দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনসের (ডিজিএমওস) মধ্যে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তবে এই যোগাযোগ শুধু প্রযুক্তিগত বা কৌশলগত পর্যায়ে সীমিত না থেকে আরও বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে এমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক ও অনিশ্চিত রয়ে গেছে। বিশেষ করে যখন মোদি ঘোষণা দিয়েছেন, ভারত কেবল ‘সামরিক অভিযান স্থগিত’ করেছে।
এই সংকটে ভারতের জন্য সামরিক খরচের চেয়েও কূটনৈতিক মূল্য অনেক বেশি ছিল। দায়িত্বহীন সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে নয়াদিল্লি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হারিয়েছে। কারণ বৈশ্বিক মনোযোগ সন্ত্রাসবাদ থেকে সরে গিয়ে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কার দিকে চলে গিয়েছিল। যেখানে ভারত উত্তেজনা আরও বাড়াতে থাকে। এটি দেখিয়েছে যে মোদি সরকার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে কতটা ভুল মূল্যায়ন করেছে। এই সংঘাতের ফলে আবার বৈশ্বিক দৃষ্টি কাশ্মীরের দিকে ফিরে আসে, যা মোদি সরকারের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর।
নয়াদিল্লির জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার সময় কাশ্মীর বিষয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। যদিও ভারত এটি প্রত্যাখ্যান করবে, তবু এর ফলে কাশ্মীর ইস্যু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। ভারত যখন সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়, তখনো তারা কোনো আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করতে পারেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও ব্যক্তিগত আলোচনায় ভারতীয় কর্মকর্তাদের চুক্তিটি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
তদুপরি, সংকট প্রশমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এবং যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্পের বক্তব্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুনরায় সম্পর্কের ‘হাইফেন’ তৈরি করেছে, যা ভারত বহু বছর ধরে যতটা সম্ভব বিচ্ছিন্ন রাখতে চেষ্টা করেছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম শরণ লন্ডনের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে স্বীকার করেছেন যে এই সংকট নয়াদিল্লির সেই চেষ্টাকে ব্যাহত করেছে, যাতে অন্য দেশগুলো ভারত ও পাকিস্তানকে সমতুল্য না মনে করে এবং তাদের সম্পর্ক আলাদা না দেখায়। তিনি বলেন, ‘ওই হাইফেন এখন ফিরে এসেছে।’ যদি ভারতের প্রধান ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য হয় বিশ্বে বড় খেলোয়াড়দের ক্লাবে যোগ দেওয়া, তাহলে এই সংকট নয়াদিল্লির জন্য সম্পূর্ণ উল্টো ফল দিয়েছে।
মোদি সরকার আমেরিকার পরিবর্তনশীল অবস্থানকে ভুলভাবে মূল্যায়ন করেছে। তারা ধারণা করেছিল যে পেহেলগামে সন্ত্রাসী ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া সামরিক পদক্ষেপের জন্য ওয়াশিংটন থেকে তারা নিঃশর্ত সমর্থন পাবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই সংকট প্রশমনের চেষ্টা করেছে এবং নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ উভয়কেই প্রকাশ্য ও গোপনে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
সংকট তীব্র হতে থাকায় মার্কিন কূটনৈতিক হস্তক্ষেপও জোরালো হয়। এটি বোঝা গেছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর উভয় দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিক ফোনালাপের মাধ্যমে এবং অবশেষে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির চূড়ান্ত আলাপে। এই সময়টায় অবশ্য সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
এর ফলে যুদ্ধবিরতি ঘটে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন এবং একে নিজের অবদান হিসেবে দাবি করেন। ভারতের পক্ষ থেকে তাঁর ঘোষণাকে জনসমক্ষে কখনো স্বাগত জানানো হয়নি এবং সংকট অবসানে মার্কিন ভূমিকা স্বীকারও করা হয়নি। যুদ্ধবিরতির পর দেওয়া ভাষণে মোদি এ বিষয়টির কোনো উল্লেখ করেননি। পরে ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন ভূমিকা অস্বীকার করেন। এই সংকট চলাকালে পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠ বোঝাপড়া ছিল নজিরবিহীন।
সংকটের রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে বিষয়টির পুরোপুরি ভিন্ন ছবি ফুটে ওঠে। এর ফল হিসেবে ভারতে বিভাজন এবং পাকিস্তানে একতা লক্ষ করা যায়। অপারেশন সিঁদুর থেকে প্রকৃতই কী অর্জিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে মোদির ওপর অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ছে। তাঁর দক্ষিণপন্থী সমর্থকেরাও যুদ্ধবিরতিতে ক্ষুব্ধ।
মোদির শক্তিশালী নেতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিরোধীরা মোদির কাছে অনেক প্রশ্নের জবাব চান। আর মোদি সরকারের কৌশলগত ভুল পদক্ষেপ নিয়ে তো কংগ্রেসের সভাপতি সরকারের সমালোচনায় মুখর। অন্যদিকে পাকিস্তান এই ফলাফলে খুশি। তাদের জাতীয় ঐক্য জোরদার হয়েছে। জাতীয় আত্মবিশ্বাস পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। একই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর খ্যাতি ও তাদের প্রতি জনসমর্থন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখন এক অস্বস্তিকর যুদ্ধবিরতি চলছে, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সামরিক উত্তেজনা কমাতে এবং ‘সতর্কতার স্তর’ হ্রাস করার জন্য বিশ্বাস বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে এটা ভাবা ভুল হবে যে শিগগিরই ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরে আসবে। পরিস্থিতি এখনো সংকটপূর্ণ ও অনিশ্চয়তায় ভরপুর।
মালিহা লোধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
(পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
লেখার শিরোনাম দেখেই যদি কেউ ভেবে থাকেন, এখানে অমূল্য রতন পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিল নিয়ে এমন এক গাড্ডায় পড়েছে নির্বাচন যে, কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার শক্তি কারও নেই। বিএনপির হাতে মুলা ধরিয়ে দিয়ে এই সরকারই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পোষণ করছে কি না...
১২ ঘণ্টা আগেবিশ্বে পরিবেশদূষণকারী হিসেবে ১৫টি প্রধান দূষক চিহ্নিত করা হয়েছে। পয়লা নম্বরে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণে ৫ নম্বর দূষণকারী এখন প্লাস্টিক। দূষণের মাত্রা অনুযায়ী এই অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন আমাদের সামনে একটি হতাশাজনক বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
১৩ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সভা এখন অতীত বিষয়। ওই সভার পর দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই সমন্বয় হয়ে গেছে এবং এখনো হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি দ্রুত অগ্রসরমাণ বিষয়। তার কয়েক দিনও এক জায়গায় অবস্থানের সুযোগ নেই।
১ দিন আগে