রুমা মোদক, সাহিত্যিক
‘কইন্যার মায়ে কান্দন কর ওইন উন্দালে বসিয়া
অত মায়ার ফুরি আমি কেমনে দিতাম বিয়া,
...
কইন্যার বাপ অর মনমরা কান্দন দেখিয়া
ঘরর লক্ষ্মী কিলা দিতাম বিদায় করিয়া...।’
এটি একটি সিলেটি আঞ্চলিক গান এবং বিয়ের গান। সিলেটের জনপ্রিয় শিল্পী তোশিবার গানটি ইত্যাদিতে প্রচারিত হওয়ার পর আমি শেষ দেখা পর্যন্ত ইউটিউবে এর ভিউ ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১০। বিপুল জনপ্রিয় হওয়া এ গানটি বিয়ের গান হলেও এর শব্দে শব্দে, বাক্যে বাক্যে বিয়ের কনের জন্য মা-বাবার বেদনার্ত আকুতি। তোশিবা এর আগে আঞ্চলিকতা পেরিয়ে দেশ-বিদেশে ভাইরাল হন ‘আইলারে নয়া দামান’ গানটির রিমিক্স দিয়ে। এ গানটিও সিলেটি বহুল প্রচারিত একটি বিয়ের গান। আমরা আশৈশব নানা অনুষ্ঠান পার্বণে এ গানটি শুনে আসছি। দেখে আসছি নানান কোরিওগ্রাফি, নাট্যাভিনয়, নৃত্যসহযোগে। এ গানটি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শিল্পী মুজা র্যাপসহযোগে তোশিবার কণ্ঠে ধারণ করার পর তা ব্যাপকভাবে দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছে যায়। এ গানটির মাঝে বিয়ের আনন্দময় হাসি-ঠাট্টা-তামাশার বার্তা রয়েছে। গানটির উপস্থাপন রীতিতে আনন্দমুখরতা তাই খুবই প্রাসঙ্গিক।
এ গানটির জনপ্রিয়তায় ধারণা করি, পরে তোশিবার কণ্ঠে পরবর্তী সিলেটি আঞ্চলিক বিয়ের গানটি ইত্যাদিতে ধারণ করা হয়। লেখার শুরুতে উল্লিখিত গানটির লিরিক প্রমিত বাংলায় রূপান্তরিত করলে যা দাঁড়ায়, ‘মেয়ের মা চুলার পাশে বসে কান্না করছেন, এত আদরের মেয়ে তিনি কী করে বিয়ে দিয়ে পরের ঘরে পাঠাবেন। মেয়ের বাবারও মন খারাপ ঘরের লক্ষ্মীকে তিনি কী করে বিদায় দেন!’
পুরো গানটিতেই বিয়ের কনেকে ঘিরে কন্যার পিতা-মাতার আহাজারি। কন্যা বিদায়ের গভীর বিষাদ গানটির কথা-সুরে।
অথচ ইত্যাদিতে গানটি যেভাবে প্রচারিত হয়েছে, যে কোরিওগ্রাফি আর আনন্দমুখর প্রকাশভঙ্গিতে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে গানের মূল সুর, মূল বার্তা পুরোই হারিয়ে গেছে; বরং একটা ভুল বার্তা দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছে গেছে যে, এটি একটি মহা আনন্দের গান।
এবং এরপর বহু বর্ণিল পোশাক সাজসজ্জায় ছাদে-হাটে-মাঠে-ঘাটে চলছে গানটির নানা রকম চিত্রায়ণ। পাল্লা দিয়ে।
না, এতে খুব একটা মহাভারত অশুদ্ধ হচ্ছে, তা নয়। মানুষ একটি গান খুব আগ্রহভরে শুনছে। গ্রহণ করেছে। নিশ্চয়ই এটি খুব আনন্দের বিষয়।
কিন্তু ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু...’ গানটি যদি লাল বেনারসি পরে কেউ নাচতে নাচতে গায়, তা যেমন বেমানান, কন্যা বিদায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বিষাদময় গানটিও শুধু উপস্থাপন-কৌশলের কারণে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে।
শিল্প কিংবা সাহিত্যের যেকোনো শাখার একটি নিজস্ব ভাষ্য থাকে, বক্তব্য বা বার্তা থাকে। থাকে মানুষের মৌল অনুভূতির প্রকাশ। এই ভাষ্য, বার্তা, বক্তব্য কিংবা অনুভূতি ঠিকঠাক মানুষের কাছে পৌঁছানোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেকোনো কিছু প্রচার ও প্রকাশের আগেই বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি। নয়তো জন্মের আনন্দময় উদযাপন আর মৃত্যুর বিষাদময় যাত্রার অনুভূতির শৈল্পিক প্রকাশে তো কোনো পার্থক্য থাকে না।
আমরা যেন জনপ্রিয়তার লোভে এর দাসে পরিণত না হই, ভুল ব্যাখ্যা পৌঁছে না দিই।
‘কইন্যার মায়ে কান্দন কর ওইন উন্দালে বসিয়া
অত মায়ার ফুরি আমি কেমনে দিতাম বিয়া,
...
কইন্যার বাপ অর মনমরা কান্দন দেখিয়া
ঘরর লক্ষ্মী কিলা দিতাম বিদায় করিয়া...।’
এটি একটি সিলেটি আঞ্চলিক গান এবং বিয়ের গান। সিলেটের জনপ্রিয় শিল্পী তোশিবার গানটি ইত্যাদিতে প্রচারিত হওয়ার পর আমি শেষ দেখা পর্যন্ত ইউটিউবে এর ভিউ ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১০। বিপুল জনপ্রিয় হওয়া এ গানটি বিয়ের গান হলেও এর শব্দে শব্দে, বাক্যে বাক্যে বিয়ের কনের জন্য মা-বাবার বেদনার্ত আকুতি। তোশিবা এর আগে আঞ্চলিকতা পেরিয়ে দেশ-বিদেশে ভাইরাল হন ‘আইলারে নয়া দামান’ গানটির রিমিক্স দিয়ে। এ গানটিও সিলেটি বহুল প্রচারিত একটি বিয়ের গান। আমরা আশৈশব নানা অনুষ্ঠান পার্বণে এ গানটি শুনে আসছি। দেখে আসছি নানান কোরিওগ্রাফি, নাট্যাভিনয়, নৃত্যসহযোগে। এ গানটি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শিল্পী মুজা র্যাপসহযোগে তোশিবার কণ্ঠে ধারণ করার পর তা ব্যাপকভাবে দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছে যায়। এ গানটির মাঝে বিয়ের আনন্দময় হাসি-ঠাট্টা-তামাশার বার্তা রয়েছে। গানটির উপস্থাপন রীতিতে আনন্দমুখরতা তাই খুবই প্রাসঙ্গিক।
এ গানটির জনপ্রিয়তায় ধারণা করি, পরে তোশিবার কণ্ঠে পরবর্তী সিলেটি আঞ্চলিক বিয়ের গানটি ইত্যাদিতে ধারণ করা হয়। লেখার শুরুতে উল্লিখিত গানটির লিরিক প্রমিত বাংলায় রূপান্তরিত করলে যা দাঁড়ায়, ‘মেয়ের মা চুলার পাশে বসে কান্না করছেন, এত আদরের মেয়ে তিনি কী করে বিয়ে দিয়ে পরের ঘরে পাঠাবেন। মেয়ের বাবারও মন খারাপ ঘরের লক্ষ্মীকে তিনি কী করে বিদায় দেন!’
পুরো গানটিতেই বিয়ের কনেকে ঘিরে কন্যার পিতা-মাতার আহাজারি। কন্যা বিদায়ের গভীর বিষাদ গানটির কথা-সুরে।
অথচ ইত্যাদিতে গানটি যেভাবে প্রচারিত হয়েছে, যে কোরিওগ্রাফি আর আনন্দমুখর প্রকাশভঙ্গিতে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে গানের মূল সুর, মূল বার্তা পুরোই হারিয়ে গেছে; বরং একটা ভুল বার্তা দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছে গেছে যে, এটি একটি মহা আনন্দের গান।
এবং এরপর বহু বর্ণিল পোশাক সাজসজ্জায় ছাদে-হাটে-মাঠে-ঘাটে চলছে গানটির নানা রকম চিত্রায়ণ। পাল্লা দিয়ে।
না, এতে খুব একটা মহাভারত অশুদ্ধ হচ্ছে, তা নয়। মানুষ একটি গান খুব আগ্রহভরে শুনছে। গ্রহণ করেছে। নিশ্চয়ই এটি খুব আনন্দের বিষয়।
কিন্তু ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু...’ গানটি যদি লাল বেনারসি পরে কেউ নাচতে নাচতে গায়, তা যেমন বেমানান, কন্যা বিদায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বিষাদময় গানটিও শুধু উপস্থাপন-কৌশলের কারণে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে।
শিল্প কিংবা সাহিত্যের যেকোনো শাখার একটি নিজস্ব ভাষ্য থাকে, বক্তব্য বা বার্তা থাকে। থাকে মানুষের মৌল অনুভূতির প্রকাশ। এই ভাষ্য, বার্তা, বক্তব্য কিংবা অনুভূতি ঠিকঠাক মানুষের কাছে পৌঁছানোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেকোনো কিছু প্রচার ও প্রকাশের আগেই বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি। নয়তো জন্মের আনন্দময় উদযাপন আর মৃত্যুর বিষাদময় যাত্রার অনুভূতির শৈল্পিক প্রকাশে তো কোনো পার্থক্য থাকে না।
আমরা যেন জনপ্রিয়তার লোভে এর দাসে পরিণত না হই, ভুল ব্যাখ্যা পৌঁছে না দিই।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন। দীর্ঘ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। বর্তমানে ইমেরিটাস অধ্যাপক। মার্ক্সবাদী চিন্তাচেতনায় উদ্বুদ্ধ অধ্যাপক চৌধুরী নতুন দিগন্ত পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
৫ ঘণ্টা আগেরাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে শুরু হওয়া ‘জাতীয় ঐকমত্য’ প্রক্রিয়া তার শেষের দিকে এগিয়ে চলেছে, কিন্তু এখনো দেখা যাচ্ছে, প্রক্রিয়ার শুরুর জায়গাটিই ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। একদিকে রয়েছে ১৬৬টি প্রস্তাব, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের পাহাড়।
৫ ঘণ্টা আগেলেখার শিরোনাম দেখেই যদি কেউ ভেবে থাকেন, এখানে অমূল্য রতন পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিল নিয়ে এমন এক গাড্ডায় পড়েছে নির্বাচন যে, কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার শক্তি কারও নেই। বিএনপির হাতে মুলা ধরিয়ে দিয়ে এই সরকারই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পোষণ করছে কি না...
১ দিন আগেবিশ্বে পরিবেশদূষণকারী হিসেবে ১৫টি প্রধান দূষক চিহ্নিত করা হয়েছে। পয়লা নম্বরে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণে ৫ নম্বর দূষণকারী এখন প্লাস্টিক। দূষণের মাত্রা অনুযায়ী এই অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে।
১ দিন আগে