রত্না খাতুন
বর্তমান বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়েছে। এর কেন্দ্রে রয়েছে তিনটি রাষ্ট্র—ভারত, বাংলাদেশ ও চীন। এই ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কের ভেতরে জড়িয়ে আছে অর্থনীতি, প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, উন্নয়ন, আধিপত্য এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ তার ভৌগোলিক অবস্থান ও বিকাশমান অর্থনীতির কারণে এখন দুই আঞ্চলিক শক্তির মাঝখানে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শুধু কয়েক দশকের বিষয় নয়, এ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। একাত্তর সালে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সেই থেকে সে সম্পর্ক নানা আঁকাবাঁকা পথে অগ্রসর হয়েছে। প্রতিবেশী হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ভারতের কাছে একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ। তবে বিশেষত তিস্তার পানিচুক্তি, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আধিপত্যের কারণে বর্তমানে সেই সম্পর্কে একটা ভাটা বা শীতল ভাব চলছে। ভারত প্রায়ই বন্ধুত্বের ছায়ায় নিজের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণে দাদাগিরি দেখিয়ে এসেছে। তবে বর্তমানে সম্পর্কের দেয়ালে ফাটল ধরায় ভারত বিশ্ববাসীসহ নিজের দেশের মিডিয়ায় বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী, সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী দেশ হিসেবে উপস্থাপন করছে। এসব ঘটনা ঘটছে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই। এই অবস্থায় বর্তমান সরকারের করণীয় দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। শুধু ভারতের কাছে আমাদের নির্ভরতার ক্ষেত্র পণ্য আমদানি বা রপ্তানিতে নয়। বাংলাদেশের অনেক মানুষ ভালো চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে বাধ্য হন। এই চিকিৎসানির্ভরতা কমাতে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের দিকে সরকারকে নজর দেওয়া অতীব জরুরি।
চীন বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং অবকাঠামো খাতে অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগকারী। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় বাংলাদেশের বন্দর, সেতু ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে চীনের অর্থায়নে। এ বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় চীন বাংলাদেশকে মোট ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মূল্যের ঋণ, বিনিয়োগ ও অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে প্রশ্ন আসে, চীনের এই বড় আকারের অর্থায়নের নির্ভরতার কারণে বাংলাদেশ কি তাদের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে না? এ কারণেই আরও প্রশ্ন আসে, চীনের এই উদারভাবে বিনিয়োগ কি নিছক উন্নয়ন সহযোগিতা, না অন্য কোনো ব্যাপার আছে? শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটার অভিজ্ঞতা আমাদের এই প্রশ্নকে আরও আশঙ্কা তৈরি করে। কারণ, ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার গভীর সমুদ্রবন্দর হাম্বানটোটা চীনা কোম্পানির ঋণে আধুনিকায়ন করার পর সেটা পরবর্তী সময়ে ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। আমরাও তবে ভবিষ্যতে চীনের ঋণের বেড়াজালে আটকে পড়ব না, তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? এ জন্য চীনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে আমাদেরও সাবধান হওয়া দরকার।
অতিরিক্ত চীননির্ভরতা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য নিয়ে যেতে হতে পারে। তাই বাংলাদেশকে এখন থেকেই কৌশলী নীতি অবলম্বন করা উচিত। এ জন্য চীননির্ভরতা কমিয়ে আগাম বিকল্প ভাবনা ভেবে রাখা দরকার। একই সঙ্গে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন আন্তর্জাতিক বাজার অনুসন্ধান করা দরকার, যাতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যায়। যতটা সম্ভব ভারত ও চীনের প্রতি মুখাপেক্ষিতা কমিয়ে দেশের মেরুদণ্ড সমুন্নত রাখার সময় এসেছে।
এ জন্য প্রয়োজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কূটনীতি। বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি একটি স্বাধীন ও স্বার্থনির্ভর কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা। যে নীতি দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে, আবার সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্বমঞ্চে মুনশিয়ানা দেখাবে। আন্তর্জাতিক কৌশলগত প্রতিযোগিতা আসবে-যাবে, কিন্তু বাংলাদেশ যদি নিজের স্বার্থকে সবার আগে রাখে, তবে তৃতীয় শক্তির খেলায় কেবল ‘পদাতিক’ না হয়ে সচেতন খেলোয়াড় হতে পারবে।
লেখক: শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা
বর্তমান বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়েছে। এর কেন্দ্রে রয়েছে তিনটি রাষ্ট্র—ভারত, বাংলাদেশ ও চীন। এই ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কের ভেতরে জড়িয়ে আছে অর্থনীতি, প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, উন্নয়ন, আধিপত্য এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ তার ভৌগোলিক অবস্থান ও বিকাশমান অর্থনীতির কারণে এখন দুই আঞ্চলিক শক্তির মাঝখানে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শুধু কয়েক দশকের বিষয় নয়, এ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। একাত্তর সালে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সেই থেকে সে সম্পর্ক নানা আঁকাবাঁকা পথে অগ্রসর হয়েছে। প্রতিবেশী হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ভারতের কাছে একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ। তবে বিশেষত তিস্তার পানিচুক্তি, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আধিপত্যের কারণে বর্তমানে সেই সম্পর্কে একটা ভাটা বা শীতল ভাব চলছে। ভারত প্রায়ই বন্ধুত্বের ছায়ায় নিজের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণে দাদাগিরি দেখিয়ে এসেছে। তবে বর্তমানে সম্পর্কের দেয়ালে ফাটল ধরায় ভারত বিশ্ববাসীসহ নিজের দেশের মিডিয়ায় বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী, সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী দেশ হিসেবে উপস্থাপন করছে। এসব ঘটনা ঘটছে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই। এই অবস্থায় বর্তমান সরকারের করণীয় দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। শুধু ভারতের কাছে আমাদের নির্ভরতার ক্ষেত্র পণ্য আমদানি বা রপ্তানিতে নয়। বাংলাদেশের অনেক মানুষ ভালো চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে বাধ্য হন। এই চিকিৎসানির্ভরতা কমাতে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের দিকে সরকারকে নজর দেওয়া অতীব জরুরি।
চীন বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং অবকাঠামো খাতে অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগকারী। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় বাংলাদেশের বন্দর, সেতু ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে চীনের অর্থায়নে। এ বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় চীন বাংলাদেশকে মোট ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মূল্যের ঋণ, বিনিয়োগ ও অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে প্রশ্ন আসে, চীনের এই বড় আকারের অর্থায়নের নির্ভরতার কারণে বাংলাদেশ কি তাদের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে না? এ কারণেই আরও প্রশ্ন আসে, চীনের এই উদারভাবে বিনিয়োগ কি নিছক উন্নয়ন সহযোগিতা, না অন্য কোনো ব্যাপার আছে? শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটার অভিজ্ঞতা আমাদের এই প্রশ্নকে আরও আশঙ্কা তৈরি করে। কারণ, ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার গভীর সমুদ্রবন্দর হাম্বানটোটা চীনা কোম্পানির ঋণে আধুনিকায়ন করার পর সেটা পরবর্তী সময়ে ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। আমরাও তবে ভবিষ্যতে চীনের ঋণের বেড়াজালে আটকে পড়ব না, তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? এ জন্য চীনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে আমাদেরও সাবধান হওয়া দরকার।
অতিরিক্ত চীননির্ভরতা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য নিয়ে যেতে হতে পারে। তাই বাংলাদেশকে এখন থেকেই কৌশলী নীতি অবলম্বন করা উচিত। এ জন্য চীননির্ভরতা কমিয়ে আগাম বিকল্প ভাবনা ভেবে রাখা দরকার। একই সঙ্গে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন আন্তর্জাতিক বাজার অনুসন্ধান করা দরকার, যাতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যায়। যতটা সম্ভব ভারত ও চীনের প্রতি মুখাপেক্ষিতা কমিয়ে দেশের মেরুদণ্ড সমুন্নত রাখার সময় এসেছে।
এ জন্য প্রয়োজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কূটনীতি। বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি একটি স্বাধীন ও স্বার্থনির্ভর কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা। যে নীতি দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে, আবার সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্বমঞ্চে মুনশিয়ানা দেখাবে। আন্তর্জাতিক কৌশলগত প্রতিযোগিতা আসবে-যাবে, কিন্তু বাংলাদেশ যদি নিজের স্বার্থকে সবার আগে রাখে, তবে তৃতীয় শক্তির খেলায় কেবল ‘পদাতিক’ না হয়ে সচেতন খেলোয়াড় হতে পারবে।
লেখক: শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা
লেখার শিরোনাম দেখেই যদি কেউ ভেবে থাকেন, এখানে অমূল্য রতন পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিল নিয়ে এমন এক গাড্ডায় পড়েছে নির্বাচন যে, কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার শক্তি কারও নেই। বিএনপির হাতে মুলা ধরিয়ে দিয়ে এই সরকারই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পোষণ করছে কি না...
১ দিন আগেবিশ্বে পরিবেশদূষণকারী হিসেবে ১৫টি প্রধান দূষক চিহ্নিত করা হয়েছে। পয়লা নম্বরে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণে ৫ নম্বর দূষণকারী এখন প্লাস্টিক। দূষণের মাত্রা অনুযায়ী এই অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে।
১ দিন আগেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন আমাদের সামনে একটি হতাশাজনক বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
১ দিন আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সভা এখন অতীত বিষয়। ওই সভার পর দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই সমন্বয় হয়ে গেছে এবং এখনো হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি দ্রুত অগ্রসরমাণ বিষয়। তার কয়েক দিনও এক জায়গায় অবস্থানের সুযোগ নেই।
২ দিন আগে