মাহবুব জাহান খান
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ, আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি কাতারে অনুষ্ঠিত আর্থনা সম্মেলনে বলেছেন, "We are aware that poverty is not created by poor people. It is a consequence of an economic system where resources surge upwards, concentrating wealth ever more narrowly. "। এ কথা অনস্বীকার্য যে, স্বপ্নের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে সম্পদের সুষম বণ্টনের কোন বিকল্প নেই। আমরা জানি, মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ যদি সমাজের সমস্ত আয়ের অথবা সম্পদের অধিকারী হন তাহলে সমাজে অনেক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। অর্থনীতির লরেঞ্জ কার্ভ (Lorenz Curve) এবং গিনি কো-ইফিসিয়েন্ট (Gini Coefficient) এর মান দেখে একটি দেশের আয়-বৈষম্য কিংবা সম্পদ বণ্টনের বৈষম্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর মান শূন্য (০) হলে সমাজের সুষম বণ্টন কিংবা এক (১) হলে সমাজের চরম বৈষম্যকে উপস্থাপন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের গিনি কো-ইফিসিয়েন্ট এর মান যেহেতু মোটামুটি ভাবে ০.৫০ এর আশপাশে আছে সেহেতু আমরা বলতে পারি যে, সম্পদের সুষম বণ্টনের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নেওয়া সময়ের দাবি মাত্র।
সমাজের ধনী গরিব বৈষম্যের দূরত্বটাকে কমিয়ে, সম্পদের অধিকতর সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে, একটি সুখী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা সম্পন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণে একটি নতুন প্রস্তাবনা পেশ করছি। প্রথমেই বলে রাখি, এই উদ্যোগটি হবে সীমিত আকারের এবং এর সাফল্যের ভিত্তিতে এটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ হাতে নেওয়া হবে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার পাশাপাশি, প্রস্তাবিত এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র সামাজিক ব্যবসার একটি আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করবে।
প্রচলিত বাজার ব্যবস্থায় আমরা পণ্যের গায়ে সব সময় সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা ম্যাক্সিমাম রিটেল প্রাইজ অর্থাৎ সংক্ষেপে এমআরপি (MRP) লেখা দেখতে পাই। এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপি লেখা হয় এ জন্য যে, খুচরা বিক্রেতা যেন এর চেয়ে বেশি মূল্য ভোক্তা বা ক্রেতাসাধারণের কাছ থেকে না নিতে পারেন। তবে এ ধরনের মূল্য নির্ধারণের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে, খুচরা বিক্রেতা কর্তৃক পাইকারি হারে ক্রয়মূল্য (Whole Sale Price) এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের মাঝখানে তফাৎটা অনেক সময় অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং এখান থেকে ইচ্ছা করলে খুচরা বিক্রেতা তার ক্রেতাকে কিছুটা ছাড় দিতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ক্রেতাসাধারণ এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য কিনে থাকেন কারণ তারা এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা সাধারণের কাছে এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ন্যায্য মূল্য হিসেবেও বিবেচিত হয়। তবে সীমিত আয়ের মানুষেরা এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য সামগ্রী অনেক ক্ষেত্রে ক্রয় করতে পারেন না এবং তারা তাদের চাহিদাকে কাটছাঁট করেন, কমিয়ে ফেলেন এবং অনেকটা কষ্টে জীবন যাপন করেন।
আমরা যদি এখন সমাজের বিভিন্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে এমন একটা মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু করতে পারি যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি কোন প্রকার লাভ না দিয়ে অর্থাৎ খরচ মূল্যে (Cost Price) পণ্যটা কিনে নিয়ে যাবেন এবং যারা উচ্চবিত্ত সমাজের মানুষ তারা কিছুটা প্রফিট দেবেন (Cost Price Plus Little Profit) এবং যারা নিম্নবিত্ত মানুষ তারা খরচ মূল্যের চেয়ে কম দামে (Cost Price minus Discount) জিনিসটা কেনার সুযোগ পাবেন। এখন কথা হচ্ছে যে, নিম্নবিত্তের মানুষ যদি খরচ মূল্যের চেয়ে কম দামেই পণ্য সামগ্রী কেনেন তাহলে সেই লোকসান পোষাবে কেমন করে? আমি প্রথমেই বলেছি যে, যারা উচ্চবিত্ত অথবা সমাজের যারা ধনী-গোষ্ঠী তারা যদি কিছুটা প্রফিট দেন (যা অবশ্যই প্রচলিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে কম হবে) তাহলে সেই লাভটা (প্রফিট) চলে আসবে সমাজের নিম্নবিত্তকে সাহায্য করার জন্য অর্থাৎ খরচ মূল্যের (Cost Price) চেয়ে কম দামে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে। এখানে আমি পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কস্ট প্রাইজ বা খরচ মূল্যকে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি অর্থাৎ পণ্যের গায়ে এমআরপি বা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা না রেখে আমরা খরচ মূল্য বা কস্ট প্রাইজ লিখে রাখব। এ ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হতে পারে এই কস্ট প্রাইজ কীভাবে নির্ধারিত হবে?
এই কস্ট প্রাইজ বা খরচ মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে পণ্যের প্রকৃত পারচেজ প্রাইজ যেটা সোর্সিং এর সময় খরচ করা হয়, তারপর পরিবহন খরচ, গুদামজাত করার খরচ (হোল্ডিং কস্ট) এবং ক্রেতাসাধারণের হাতে পণ্য তুলে দেওয়া অর্থাৎ পরিচালন খরচ ইত্যাদি যোগ হয়ে নির্ধারিত হবে যাতে এ ধরনের সামাজিক ব্যবসা একটি সফল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয় এবং লোকসানে না পড়ে। আমরা সবাই একটা কথা স্বীকার করব যে, আমাদের সমাজে যারা সচ্ছল উচ্চবিত্ত অথবা উচ্চ-মধ্যবিত্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আছেন তারা অবশ্যই আমাদের সমাজের যারা অবহেলিত মানুষ অথবা কষ্টে আছেন তাদের কিছুটা সাহায্য করতে চান। এর প্রমাণ আমরা নিকট অতীতেও বিভিন্ন দুর্যোগ সময়ে বহুবার পেয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তারা অনেক সময় শুধু একটা সুষ্ঠু উপায় খুঁজে পান না যে কীভাবে সাহায্য করবেন। আমাদের এই প্রস্তাবিত বাজার ব্যবস্থা এবং পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থার মাধ্যমে উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত মানুষ খুব সহজেই নিম্নবিত্ত অথবা গরিব মানুষকে সহযোগিতা করতে পারেন।
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, এ ধরনের ব্যবসা আসলে টেকসই হবে কিনা? আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশিরা যুগে যুগে ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং নানান দুর্যোগ এবং মহামারির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে আমাদের মন মানসিকতায় একটা ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আমরা অবশ্যই চাই যে, সমাজের অবহেলিত মানুষগুলো, কষ্টে থাকা মানুষগুলো আরও একটু ভালো থাকুক। অনেকেই প্রশ্ন করবেন যে, এ ধরনের বাজার ব্যবস্থা কিংবা পণ্যের মূল্য নির্ধারণী ব্যবস্থার সুযোগ নিতে সমাজের উচ্চবিত্তরা কি মধ্যবিত্ত হিসেবে কিংবা মধ্যবিত্তরা কি নিম্নবিত্ত হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেবেন? আমি এটা কখনোই বিশ্বাস করিনা। যদিও দুই একটা কেস এ রকম পাওয়া যায়, আমরা সেটাকে সিরিয়াসলি বিবেচনায় নেব না এবং এটা তার বিবেকের ওপর ছেড়ে দেব। আমরা আশাবাদী হতে চাই এবং আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি নাগরিক তার দায়িত্ব নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানটাকে পরিষ্কার করবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মোটামুটিভাবে সবাই কিন্তু সব পণ্যই বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে কিনবেন। কাজেই ক্রেতাসাধারণের শ্রেণিবিন্যাস, আমরা সম্মানিত ক্রেতাসাধারণের ওপর ছেড়ে দেব। তবে তা অবশ্যই একটা মানদণ্ডের ভিত্তিতে হবে।
প্রস্তাবিত এই বাজার ব্যবস্থাপনাকে অর্থবহ এবং টেকসই করার জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে দেশি পণ্য ও মৌলিক চাহিদার পণ্য বাজারজাত করার ব্যাপারে। প্রথম বেশ কয়েক বছর শুধুমাত্র মৌলিক চাহিদা সম্পন্ন পণ্য সামগ্রী পাওয়া যাবে। যেমন, খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বিভিন্ন কোয়ালিটির খাবারের চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ ইত্যাদি জিনিস থাকবে। পাশাপাশি, পোশাক-আশাকের কথা চিন্তা করে সহজলভ্য শার্ট, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ এবং শিশুদের পোশাক পাওয়া যাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় সাংসারিক আইটেম যেমন বালতি, মগ, থালাবাসন ইত্যাদিও সহজলভ্য করা হবে। মোদ্দা কথা, যে সমস্ত পণ্য আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটায়, সেগুলো থাকবে। নীতিগতভাবে আমরা লাক্সারি আইটেম রাখব না। তবে, উচ্চবিত্তের ক্রেতাসাধারণকে আকৃষ্ট করার জন্য অবশ্যই আমরা ভালো মানের চাল এবং সবুজ কৃষি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত অন্যান্য অরগানিক খাবার বিক্রয় করব। বেশ কিছু পণ্য রাখা হবে যা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে এবং সেগুলো বিক্রির জন্য সরাসরি উৎপাদকের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাবে। দেশি মোরগ-মুরগি, দেশি মুরগির ডিম, বাংলা কলা, খাঁটি সরিষার তেল, কৃষকের উৎপাদিত পাকা পেঁপে, ইত্যাদি পণ্য সামগ্রী বিক্রয় হবে। এসব পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘ডাইরেক্ট ফ্রম ফার্মার’ অর্থাৎ সরাসরি উৎপাদকের কাছ থেকে কেনার একটা বন্দোবস্ত রাখা হবে। আমরা আরও বিশ্বাস করি, এ ধরনের একটি মহৎ উদ্যোগকে সফল করার জন্য আমাদের সমাজে যারা উচ্চবিত্তের মানুষ আছেন তারা শুধু কিছুটা প্রফিট দিয়েই জিনিস কিনবেন না, বরং তারা অনেকেই অনেক পণ্য কিনে রেখে যাবেন সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোর জন্য যা চতুর্থ একটা কাউন্টার চালু করার মাধ্যমে সমাজের একদম হতদরিদ্র মানুষকে বিনা মূল্যে সরবরাহ করে হবে। একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের পরিমাণ অনুযায়ী পণ্য সামগ্রী মাসে মাসে তাদের দেওয়া হবে।
আমাদের প্রস্তাবিত এই বাজার ব্যবস্থায় যে শোরুমগুলো থাকবে, সেখানে মূলত চার ধরনের কাউন্টার থাকবে। এক ধরনের কাউন্টার হবে উচ্চবিত্তের মানুষের জন্য যারা কষ্ট প্লাস প্রাইজ দিয়ে অর্থাৎ খরচ মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দিয়ে ২ শতাংশ, ৩ শতাংশ অথবা ৪ শতাংশ অথবা আরও বেশি প্রফিট (পূর্ব ঘোষিত) দিয়ে পণ্যটা নিয়ে যাবেন। দ্বিতীয় ধরনের কাউন্টার হবে কস্ট প্রাইজ বা খরচ মূল্যের সমান সমান দাম দিয়ে যারা কিনতে চান অর্থাৎ এই কাউন্টারের নাম হবে কস্ট। তৃতীয় কাউন্টারটি হবে কষ্ট মাইনাস কাউন্টার, যেখান থেকে সমাজের নিম্নবিত্তের মানুষ, যাদের সীমিত আয়ের জন্য কিংবা পণ্য মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের সেবাটা দিতে চাই। সবশেষে, চতুর্থ কাউন্টার থেকে সমাজের হতদরিদ্র মানুষকে কার্ড করে দেওয়ার মাধ্যমে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের পণ্য বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হবে, প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য। এ কাউন্টারটি পরিচালিত হবে মূলত এই বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের এবং সমাজের উচ্চবিত্তের মানুষের অনুদানের মাধ্যমে। আমি আশা করব সমাজে যারা উচ্চবিত্ত আছেন, ব্যবসায়ী আছেন যারা হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেন, তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের একটা অংশ উৎপাদন খরচে আমাদের সরবরাহ করবেন এবং আমরা সেই পণ্যটা বিনা লাভে অথবা অল্প লাভে অথবা অল্প লোকসানে মানুষের হাতে পৌঁছে দেব। এ ক্ষেত্রে আমাদের পণ্য সামগ্রী সংগ্রহের ক্ষেত্রে শিল্প কারখানার অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কিছুটা কম মূল্যে পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যাবে।
এমন একটি মহৎ উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সমাজের সকল মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। সদাশয় সরকার আমাদের কিছুটা জায়গা দিতে পারেন যেখানে খাস জমি আছে অথবা অন্য কোন জায়গা, যেখানে অল্প ভাড়ায় আউটলেট খোলা যায়। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ এ ধরনের উদ্যোগে এগিয়ে আসতে পারেন যাতে আমাদের ওভারহেড খরচটা কমে আসে। অন্যথায়, যেখানে ভাড়া কম সেরকম জায়গায় অল্প পরিসরে এই পরীক্ষামূলক কাজটি শুরু করা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের এই নতুন বাজার ব্যবস্থাপনার কমিটি হবে অত্যন্ত শক্তিশালী একটা কমিটি যেটাতে মূলত সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা থাকবেন, থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলারা, সমাজের সচ্ছল ব্যবসায়ীরা থাকবেন এবং অন্য যেকোনো ক্ষেত্র থেকে নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে যে কোনো ভলান্টিয়ার এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। আমার বিশ্বাস, এ উদ্যোগটি সফল হলে তা আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘তিন শূন্যের পৃথিবীর’ প্রথম শূন্য অর্থাৎ শূন্য-দারিদ্র্যের যে স্বপ্ন, সেটি কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সম্মানিত পাঠকদের মধ্যে যারা এই উদ্যোগটিকে এগিয়ে নিতে চান অথবা তাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে সাহায্য করতে চান তারা নিচের ইমেইলে যোগাযোগ করতে পারেন।
লেখক: অব. এয়ার কমোডর
ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, আই বি এ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
mahbubjkjk@gmail. com
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ, আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি কাতারে অনুষ্ঠিত আর্থনা সম্মেলনে বলেছেন, "We are aware that poverty is not created by poor people. It is a consequence of an economic system where resources surge upwards, concentrating wealth ever more narrowly. "। এ কথা অনস্বীকার্য যে, স্বপ্নের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে সম্পদের সুষম বণ্টনের কোন বিকল্প নেই। আমরা জানি, মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ যদি সমাজের সমস্ত আয়ের অথবা সম্পদের অধিকারী হন তাহলে সমাজে অনেক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। অর্থনীতির লরেঞ্জ কার্ভ (Lorenz Curve) এবং গিনি কো-ইফিসিয়েন্ট (Gini Coefficient) এর মান দেখে একটি দেশের আয়-বৈষম্য কিংবা সম্পদ বণ্টনের বৈষম্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর মান শূন্য (০) হলে সমাজের সুষম বণ্টন কিংবা এক (১) হলে সমাজের চরম বৈষম্যকে উপস্থাপন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের গিনি কো-ইফিসিয়েন্ট এর মান যেহেতু মোটামুটি ভাবে ০.৫০ এর আশপাশে আছে সেহেতু আমরা বলতে পারি যে, সম্পদের সুষম বণ্টনের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নেওয়া সময়ের দাবি মাত্র।
সমাজের ধনী গরিব বৈষম্যের দূরত্বটাকে কমিয়ে, সম্পদের অধিকতর সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে, একটি সুখী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা সম্পন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণে একটি নতুন প্রস্তাবনা পেশ করছি। প্রথমেই বলে রাখি, এই উদ্যোগটি হবে সীমিত আকারের এবং এর সাফল্যের ভিত্তিতে এটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ হাতে নেওয়া হবে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার পাশাপাশি, প্রস্তাবিত এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র সামাজিক ব্যবসার একটি আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করবে।
প্রচলিত বাজার ব্যবস্থায় আমরা পণ্যের গায়ে সব সময় সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা ম্যাক্সিমাম রিটেল প্রাইজ অর্থাৎ সংক্ষেপে এমআরপি (MRP) লেখা দেখতে পাই। এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপি লেখা হয় এ জন্য যে, খুচরা বিক্রেতা যেন এর চেয়ে বেশি মূল্য ভোক্তা বা ক্রেতাসাধারণের কাছ থেকে না নিতে পারেন। তবে এ ধরনের মূল্য নির্ধারণের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে, খুচরা বিক্রেতা কর্তৃক পাইকারি হারে ক্রয়মূল্য (Whole Sale Price) এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের মাঝখানে তফাৎটা অনেক সময় অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং এখান থেকে ইচ্ছা করলে খুচরা বিক্রেতা তার ক্রেতাকে কিছুটা ছাড় দিতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ক্রেতাসাধারণ এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য কিনে থাকেন কারণ তারা এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা সাধারণের কাছে এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ন্যায্য মূল্য হিসেবেও বিবেচিত হয়। তবে সীমিত আয়ের মানুষেরা এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য সামগ্রী অনেক ক্ষেত্রে ক্রয় করতে পারেন না এবং তারা তাদের চাহিদাকে কাটছাঁট করেন, কমিয়ে ফেলেন এবং অনেকটা কষ্টে জীবন যাপন করেন।
আমরা যদি এখন সমাজের বিভিন্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে এমন একটা মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু করতে পারি যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি কোন প্রকার লাভ না দিয়ে অর্থাৎ খরচ মূল্যে (Cost Price) পণ্যটা কিনে নিয়ে যাবেন এবং যারা উচ্চবিত্ত সমাজের মানুষ তারা কিছুটা প্রফিট দেবেন (Cost Price Plus Little Profit) এবং যারা নিম্নবিত্ত মানুষ তারা খরচ মূল্যের চেয়ে কম দামে (Cost Price minus Discount) জিনিসটা কেনার সুযোগ পাবেন। এখন কথা হচ্ছে যে, নিম্নবিত্তের মানুষ যদি খরচ মূল্যের চেয়ে কম দামেই পণ্য সামগ্রী কেনেন তাহলে সেই লোকসান পোষাবে কেমন করে? আমি প্রথমেই বলেছি যে, যারা উচ্চবিত্ত অথবা সমাজের যারা ধনী-গোষ্ঠী তারা যদি কিছুটা প্রফিট দেন (যা অবশ্যই প্রচলিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে কম হবে) তাহলে সেই লাভটা (প্রফিট) চলে আসবে সমাজের নিম্নবিত্তকে সাহায্য করার জন্য অর্থাৎ খরচ মূল্যের (Cost Price) চেয়ে কম দামে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে। এখানে আমি পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কস্ট প্রাইজ বা খরচ মূল্যকে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি অর্থাৎ পণ্যের গায়ে এমআরপি বা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা না রেখে আমরা খরচ মূল্য বা কস্ট প্রাইজ লিখে রাখব। এ ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হতে পারে এই কস্ট প্রাইজ কীভাবে নির্ধারিত হবে?
এই কস্ট প্রাইজ বা খরচ মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে পণ্যের প্রকৃত পারচেজ প্রাইজ যেটা সোর্সিং এর সময় খরচ করা হয়, তারপর পরিবহন খরচ, গুদামজাত করার খরচ (হোল্ডিং কস্ট) এবং ক্রেতাসাধারণের হাতে পণ্য তুলে দেওয়া অর্থাৎ পরিচালন খরচ ইত্যাদি যোগ হয়ে নির্ধারিত হবে যাতে এ ধরনের সামাজিক ব্যবসা একটি সফল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয় এবং লোকসানে না পড়ে। আমরা সবাই একটা কথা স্বীকার করব যে, আমাদের সমাজে যারা সচ্ছল উচ্চবিত্ত অথবা উচ্চ-মধ্যবিত্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আছেন তারা অবশ্যই আমাদের সমাজের যারা অবহেলিত মানুষ অথবা কষ্টে আছেন তাদের কিছুটা সাহায্য করতে চান। এর প্রমাণ আমরা নিকট অতীতেও বিভিন্ন দুর্যোগ সময়ে বহুবার পেয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তারা অনেক সময় শুধু একটা সুষ্ঠু উপায় খুঁজে পান না যে কীভাবে সাহায্য করবেন। আমাদের এই প্রস্তাবিত বাজার ব্যবস্থা এবং পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থার মাধ্যমে উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত মানুষ খুব সহজেই নিম্নবিত্ত অথবা গরিব মানুষকে সহযোগিতা করতে পারেন।
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, এ ধরনের ব্যবসা আসলে টেকসই হবে কিনা? আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশিরা যুগে যুগে ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং নানান দুর্যোগ এবং মহামারির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে আমাদের মন মানসিকতায় একটা ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আমরা অবশ্যই চাই যে, সমাজের অবহেলিত মানুষগুলো, কষ্টে থাকা মানুষগুলো আরও একটু ভালো থাকুক। অনেকেই প্রশ্ন করবেন যে, এ ধরনের বাজার ব্যবস্থা কিংবা পণ্যের মূল্য নির্ধারণী ব্যবস্থার সুযোগ নিতে সমাজের উচ্চবিত্তরা কি মধ্যবিত্ত হিসেবে কিংবা মধ্যবিত্তরা কি নিম্নবিত্ত হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেবেন? আমি এটা কখনোই বিশ্বাস করিনা। যদিও দুই একটা কেস এ রকম পাওয়া যায়, আমরা সেটাকে সিরিয়াসলি বিবেচনায় নেব না এবং এটা তার বিবেকের ওপর ছেড়ে দেব। আমরা আশাবাদী হতে চাই এবং আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি নাগরিক তার দায়িত্ব নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানটাকে পরিষ্কার করবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মোটামুটিভাবে সবাই কিন্তু সব পণ্যই বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে কিনবেন। কাজেই ক্রেতাসাধারণের শ্রেণিবিন্যাস, আমরা সম্মানিত ক্রেতাসাধারণের ওপর ছেড়ে দেব। তবে তা অবশ্যই একটা মানদণ্ডের ভিত্তিতে হবে।
প্রস্তাবিত এই বাজার ব্যবস্থাপনাকে অর্থবহ এবং টেকসই করার জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে দেশি পণ্য ও মৌলিক চাহিদার পণ্য বাজারজাত করার ব্যাপারে। প্রথম বেশ কয়েক বছর শুধুমাত্র মৌলিক চাহিদা সম্পন্ন পণ্য সামগ্রী পাওয়া যাবে। যেমন, খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বিভিন্ন কোয়ালিটির খাবারের চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ ইত্যাদি জিনিস থাকবে। পাশাপাশি, পোশাক-আশাকের কথা চিন্তা করে সহজলভ্য শার্ট, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ এবং শিশুদের পোশাক পাওয়া যাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় সাংসারিক আইটেম যেমন বালতি, মগ, থালাবাসন ইত্যাদিও সহজলভ্য করা হবে। মোদ্দা কথা, যে সমস্ত পণ্য আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটায়, সেগুলো থাকবে। নীতিগতভাবে আমরা লাক্সারি আইটেম রাখব না। তবে, উচ্চবিত্তের ক্রেতাসাধারণকে আকৃষ্ট করার জন্য অবশ্যই আমরা ভালো মানের চাল এবং সবুজ কৃষি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত অন্যান্য অরগানিক খাবার বিক্রয় করব। বেশ কিছু পণ্য রাখা হবে যা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে এবং সেগুলো বিক্রির জন্য সরাসরি উৎপাদকের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাবে। দেশি মোরগ-মুরগি, দেশি মুরগির ডিম, বাংলা কলা, খাঁটি সরিষার তেল, কৃষকের উৎপাদিত পাকা পেঁপে, ইত্যাদি পণ্য সামগ্রী বিক্রয় হবে। এসব পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘ডাইরেক্ট ফ্রম ফার্মার’ অর্থাৎ সরাসরি উৎপাদকের কাছ থেকে কেনার একটা বন্দোবস্ত রাখা হবে। আমরা আরও বিশ্বাস করি, এ ধরনের একটি মহৎ উদ্যোগকে সফল করার জন্য আমাদের সমাজে যারা উচ্চবিত্তের মানুষ আছেন তারা শুধু কিছুটা প্রফিট দিয়েই জিনিস কিনবেন না, বরং তারা অনেকেই অনেক পণ্য কিনে রেখে যাবেন সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোর জন্য যা চতুর্থ একটা কাউন্টার চালু করার মাধ্যমে সমাজের একদম হতদরিদ্র মানুষকে বিনা মূল্যে সরবরাহ করে হবে। একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের পরিমাণ অনুযায়ী পণ্য সামগ্রী মাসে মাসে তাদের দেওয়া হবে।
আমাদের প্রস্তাবিত এই বাজার ব্যবস্থায় যে শোরুমগুলো থাকবে, সেখানে মূলত চার ধরনের কাউন্টার থাকবে। এক ধরনের কাউন্টার হবে উচ্চবিত্তের মানুষের জন্য যারা কষ্ট প্লাস প্রাইজ দিয়ে অর্থাৎ খরচ মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দিয়ে ২ শতাংশ, ৩ শতাংশ অথবা ৪ শতাংশ অথবা আরও বেশি প্রফিট (পূর্ব ঘোষিত) দিয়ে পণ্যটা নিয়ে যাবেন। দ্বিতীয় ধরনের কাউন্টার হবে কস্ট প্রাইজ বা খরচ মূল্যের সমান সমান দাম দিয়ে যারা কিনতে চান অর্থাৎ এই কাউন্টারের নাম হবে কস্ট। তৃতীয় কাউন্টারটি হবে কষ্ট মাইনাস কাউন্টার, যেখান থেকে সমাজের নিম্নবিত্তের মানুষ, যাদের সীমিত আয়ের জন্য কিংবা পণ্য মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের সেবাটা দিতে চাই। সবশেষে, চতুর্থ কাউন্টার থেকে সমাজের হতদরিদ্র মানুষকে কার্ড করে দেওয়ার মাধ্যমে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের পণ্য বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হবে, প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য। এ কাউন্টারটি পরিচালিত হবে মূলত এই বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের এবং সমাজের উচ্চবিত্তের মানুষের অনুদানের মাধ্যমে। আমি আশা করব সমাজে যারা উচ্চবিত্ত আছেন, ব্যবসায়ী আছেন যারা হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেন, তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের একটা অংশ উৎপাদন খরচে আমাদের সরবরাহ করবেন এবং আমরা সেই পণ্যটা বিনা লাভে অথবা অল্প লাভে অথবা অল্প লোকসানে মানুষের হাতে পৌঁছে দেব। এ ক্ষেত্রে আমাদের পণ্য সামগ্রী সংগ্রহের ক্ষেত্রে শিল্প কারখানার অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কিছুটা কম মূল্যে পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যাবে।
এমন একটি মহৎ উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সমাজের সকল মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। সদাশয় সরকার আমাদের কিছুটা জায়গা দিতে পারেন যেখানে খাস জমি আছে অথবা অন্য কোন জায়গা, যেখানে অল্প ভাড়ায় আউটলেট খোলা যায়। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ এ ধরনের উদ্যোগে এগিয়ে আসতে পারেন যাতে আমাদের ওভারহেড খরচটা কমে আসে। অন্যথায়, যেখানে ভাড়া কম সেরকম জায়গায় অল্প পরিসরে এই পরীক্ষামূলক কাজটি শুরু করা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের এই নতুন বাজার ব্যবস্থাপনার কমিটি হবে অত্যন্ত শক্তিশালী একটা কমিটি যেটাতে মূলত সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা থাকবেন, থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলারা, সমাজের সচ্ছল ব্যবসায়ীরা থাকবেন এবং অন্য যেকোনো ক্ষেত্র থেকে নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে যে কোনো ভলান্টিয়ার এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। আমার বিশ্বাস, এ উদ্যোগটি সফল হলে তা আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘তিন শূন্যের পৃথিবীর’ প্রথম শূন্য অর্থাৎ শূন্য-দারিদ্র্যের যে স্বপ্ন, সেটি কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সম্মানিত পাঠকদের মধ্যে যারা এই উদ্যোগটিকে এগিয়ে নিতে চান অথবা তাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে সাহায্য করতে চান তারা নিচের ইমেইলে যোগাযোগ করতে পারেন।
লেখক: অব. এয়ার কমোডর
ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, আই বি এ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
mahbubjkjk@gmail. com
কাশ্মীরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝিলাম নদী। কাশ্মীর উপত্যকা হলো ঝিলামের উত্তর ভাগের অংশ। উপত্যকাটি ১৩৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি চওড়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সেখানে অনেকে বেড়াতে যান। ১৯৪৭ সালের আগে কেউ ভাবতে পারেননি যে কাশ্মীর হয়ে
৪ ঘণ্টা আগেরাখাইনে মানবিক করিডরের প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য একদিকে মানবিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ, অন্যদিকে চরম ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি। মিয়ানমারের জান্তা, বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও ভারত-চীনের প্রতিক্রিয়া না বুঝে করিডর চালু করলে তা ‘প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদে’ পরিণত হতে পারে। ভারতের কালাদান প্রকল্প ও চীনের ২১ বিলিয়ন ডলারের
৭ ঘণ্টা আগেসহজ কথা বলা যেমন সহজ নয়, তেমনি সহজ নয় আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিষয়ে একমত হওয়া। আমাদের দেশে যত মাথা, তত মত—যে যার মতে অটল, নিজের বক্তব্যে অনড়। ফলে এখানে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই যেন যুদ্ধ জয়ের সমান। রাজনীতি তো আর গণিতের সূত্র নয়, যেখানে সবাই একই জবাব মেনে নেবে; এখানে আবেগ, স্বার্থ, বিশ্বাস আর...
১৬ ঘণ্টা আগেকোনো মানুষ নিজের চোখে স্বর্গ দেখেছেন—এমন দাবি কেউ কখনো করেনি। পুরোটাই কল্পনায়। কিন্তু স্বর্গ যে অতীব মনোরম, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই হয়তো হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ কাশ্মীরকে ভূস্বর্গ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। কাশ্মীরে যাঁরা গেছেন, তাঁরা এর সৌন্দর্যে মোহিত হননি, এমন লোক খুঁজে...
১৬ ঘণ্টা আগে