রাজীব কুমার সাহা
আমাদের দৈনন্দিন আলাপচারিতায় আমরা প্রায়ই ‘কথার ফুলঝুরি’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। প্রসঙ্গভেদে আলাপ-আলোচনা বা কথাবার্তায় আমরা কথার তুবড়ি ছোটাই। ক্ষেত্রবিশেষে কথা প্রসঙ্গে বলি, ‘তুমি তো কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসেছ, কোনো কাজেকর্মে নেই!’ আবার রাজনীতির মাঠে দিব্যি সাধারণ মানুষকে নাচিয়ে যেতে পারেন ‘কথার ফুলঝুরি’ ফোটানো কোনো নেতা। কিন্তু এই কথার ফুলঝুরির মানে কী? কথাবার্তায় কীভাবে ফুলঝুরি শব্দটি যুক্ত হলো? ফুলের সঙ্গে কি এর কোনো সম্পর্ক রয়েছে? তবে চলুন মূল আলোচনায় আজ কথার ফুলঝুরি নিয়ে তুবড়ি ছোটাই!
ফুলঝুরি বাংলা শব্দ। এটি বিশেষ্য পদ। বাংলায় ফুলঝুরি শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। আভিধানিকভাবে ফুলঝুরি হলো একধরনের আতশবাজিবিশেষ অর্থাৎ ফোয়ারার মতো আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে এমন আতশবাজি। এর আরেক নাম তারাবাতি। ফুলঝুরি দেখতে অনেকটা আগরবাতি বা ধূপকাঠির মতো। প্রজ্বলিত অবস্থায় এটি থেকে অনেকটা ফুলের মতো আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হয়। প্রকৃতপক্ষে ফুলঝুরি একটি সরু বারুদশলাকা, যার স্তরে স্তরে বারুদ পূর্ণ করে তৈরি করা হয়। ফুলঝুরির মুখে অগ্নিসংযোগের ফলে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ফোয়ারার মতো চারপাশে প্রবল বেগে ছড়িয়ে পড়ে। শলাকার ঠাসা বারুদ নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি বিরামহীনভাবে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে জ্বলতে থাকে। ফুলঝুরি বিশেষ করে দীপাবলি, লক্ষ্মী পূজা, কালী পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব উদ্যাপনে আনন্দের প্রতীকরূপে জ্বালানো হয়। এ তো গেল আতশবাজি ফুলঝুরির কথা। এটি ছাড়াও ফুলঝুরি শব্দের আরেকটি অর্থ হলো ময়দা, চিনি প্রভৃতি সহযোগে তৈরি ডুবোতেলে ভাজা পিঠাবিশেষ।
কথা ও ফুলঝুরি শব্দ দুটোর সংযোগে ‘কথার ফুলঝুরি’ বাগধারার উৎপত্তি। আগেই বলেছি ফুলঝুরি একপ্রকার আতশবাজি। ‘কথার ফুলঝুরি’ বাক্যবন্ধের আলংকারিক অর্থ হলো অনর্গল বা বিরামহীনভাবে কথা বলা; অর্থাৎ ফুলঝুরি একবার জ্বলতে শুরু করলে যেমন ফোয়ারার মতো বিরামহীনভাবে আগুনের স্ফুলিঙ্গ চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তেমনি আমাদের চারপাশে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যাঁরা কোনো প্রসঙ্গে একবার কথা বলতে শুরু করলে অনর্গল বাক্যস্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে চলতে থাকেন। তাঁদের নিরন্তর অর্থহীন কথার স্ফুলিঙ্গ যেন শেষই হতে চায় না। ফলে তাঁদের কোনোভাবে থামানোও যায় না। কারও মুখ থেকে যখন এমনভাবে অবিরাম কথা বের হতে থাকে, তখনই বলা হয়, যেন কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসেছে! ব্যক্তিবর্গের এমন কার্যক্রমের সঙ্গে আতশবাজি ফুলঝুরির এমন সাদৃশ্যই বাংলা ভাষায় ‘কথার ফুলঝুরি’ বাগধারার জন্ম দিয়েছে। মূলত অর্থহীন কথাবার্তা বা বাগাড়ম্বর অর্থ প্রকাশে এই বাগধারাটি ব্যবহার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ‘কথার ফুলঝুরি’ কেবল একা নয়, এর সঙ্গে ‘কথার তুবড়ি ছোটানো’ও রয়েছে। এই ‘ফুলঝুরি’ এবং ‘তুবড়ি’ দুটোই আতশবাজি। আনন্দ-উৎসবের প্রতিষঙ্গ হিসেবে যেটি প্রজ্বলিত হয়ে আমাদের মুখের ভাষায় জায়গা করে নিয়েছে। যদিও দুটো শব্দবন্ধের মধ্যে অর্থগত বৈসাদৃশ্য রয়েছে। কেননা ফুলঝুরি অপেক্ষা তুবড়িতে বারুদের পরিমাণ বেশি থাকে বিধায় এটি দ্রুতগতিতে এবং দীর্ঘ সময় স্ফুলিঙ্গ বর্ষণ করতে পারে। পাশাপাশি আকৃতিগতভাবেও রয়েছে ভিন্নরূপ। অনুরূপ আমাদের আটপৌরে জীবনেও হয়তো স্ত্রীর কথাবার্তা অনেকটা তুবড়ির মতো লাগতে পারে! অপরদিকে প্রেমিকার কথাগুলো যেন পুষ্পবৃষ্টি বর্ষণকারী ফুলঝুরি!
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
আমাদের দৈনন্দিন আলাপচারিতায় আমরা প্রায়ই ‘কথার ফুলঝুরি’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। প্রসঙ্গভেদে আলাপ-আলোচনা বা কথাবার্তায় আমরা কথার তুবড়ি ছোটাই। ক্ষেত্রবিশেষে কথা প্রসঙ্গে বলি, ‘তুমি তো কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসেছ, কোনো কাজেকর্মে নেই!’ আবার রাজনীতির মাঠে দিব্যি সাধারণ মানুষকে নাচিয়ে যেতে পারেন ‘কথার ফুলঝুরি’ ফোটানো কোনো নেতা। কিন্তু এই কথার ফুলঝুরির মানে কী? কথাবার্তায় কীভাবে ফুলঝুরি শব্দটি যুক্ত হলো? ফুলের সঙ্গে কি এর কোনো সম্পর্ক রয়েছে? তবে চলুন মূল আলোচনায় আজ কথার ফুলঝুরি নিয়ে তুবড়ি ছোটাই!
ফুলঝুরি বাংলা শব্দ। এটি বিশেষ্য পদ। বাংলায় ফুলঝুরি শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। আভিধানিকভাবে ফুলঝুরি হলো একধরনের আতশবাজিবিশেষ অর্থাৎ ফোয়ারার মতো আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে এমন আতশবাজি। এর আরেক নাম তারাবাতি। ফুলঝুরি দেখতে অনেকটা আগরবাতি বা ধূপকাঠির মতো। প্রজ্বলিত অবস্থায় এটি থেকে অনেকটা ফুলের মতো আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হয়। প্রকৃতপক্ষে ফুলঝুরি একটি সরু বারুদশলাকা, যার স্তরে স্তরে বারুদ পূর্ণ করে তৈরি করা হয়। ফুলঝুরির মুখে অগ্নিসংযোগের ফলে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ফোয়ারার মতো চারপাশে প্রবল বেগে ছড়িয়ে পড়ে। শলাকার ঠাসা বারুদ নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি বিরামহীনভাবে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে জ্বলতে থাকে। ফুলঝুরি বিশেষ করে দীপাবলি, লক্ষ্মী পূজা, কালী পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব উদ্যাপনে আনন্দের প্রতীকরূপে জ্বালানো হয়। এ তো গেল আতশবাজি ফুলঝুরির কথা। এটি ছাড়াও ফুলঝুরি শব্দের আরেকটি অর্থ হলো ময়দা, চিনি প্রভৃতি সহযোগে তৈরি ডুবোতেলে ভাজা পিঠাবিশেষ।
কথা ও ফুলঝুরি শব্দ দুটোর সংযোগে ‘কথার ফুলঝুরি’ বাগধারার উৎপত্তি। আগেই বলেছি ফুলঝুরি একপ্রকার আতশবাজি। ‘কথার ফুলঝুরি’ বাক্যবন্ধের আলংকারিক অর্থ হলো অনর্গল বা বিরামহীনভাবে কথা বলা; অর্থাৎ ফুলঝুরি একবার জ্বলতে শুরু করলে যেমন ফোয়ারার মতো বিরামহীনভাবে আগুনের স্ফুলিঙ্গ চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তেমনি আমাদের চারপাশে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যাঁরা কোনো প্রসঙ্গে একবার কথা বলতে শুরু করলে অনর্গল বাক্যস্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে চলতে থাকেন। তাঁদের নিরন্তর অর্থহীন কথার স্ফুলিঙ্গ যেন শেষই হতে চায় না। ফলে তাঁদের কোনোভাবে থামানোও যায় না। কারও মুখ থেকে যখন এমনভাবে অবিরাম কথা বের হতে থাকে, তখনই বলা হয়, যেন কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসেছে! ব্যক্তিবর্গের এমন কার্যক্রমের সঙ্গে আতশবাজি ফুলঝুরির এমন সাদৃশ্যই বাংলা ভাষায় ‘কথার ফুলঝুরি’ বাগধারার জন্ম দিয়েছে। মূলত অর্থহীন কথাবার্তা বা বাগাড়ম্বর অর্থ প্রকাশে এই বাগধারাটি ব্যবহার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ‘কথার ফুলঝুরি’ কেবল একা নয়, এর সঙ্গে ‘কথার তুবড়ি ছোটানো’ও রয়েছে। এই ‘ফুলঝুরি’ এবং ‘তুবড়ি’ দুটোই আতশবাজি। আনন্দ-উৎসবের প্রতিষঙ্গ হিসেবে যেটি প্রজ্বলিত হয়ে আমাদের মুখের ভাষায় জায়গা করে নিয়েছে। যদিও দুটো শব্দবন্ধের মধ্যে অর্থগত বৈসাদৃশ্য রয়েছে। কেননা ফুলঝুরি অপেক্ষা তুবড়িতে বারুদের পরিমাণ বেশি থাকে বিধায় এটি দ্রুতগতিতে এবং দীর্ঘ সময় স্ফুলিঙ্গ বর্ষণ করতে পারে। পাশাপাশি আকৃতিগতভাবেও রয়েছে ভিন্নরূপ। অনুরূপ আমাদের আটপৌরে জীবনেও হয়তো স্ত্রীর কথাবার্তা অনেকটা তুবড়ির মতো লাগতে পারে! অপরদিকে প্রেমিকার কথাগুলো যেন পুষ্পবৃষ্টি বর্ষণকারী ফুলঝুরি!
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং নির্বাচিত সরকার জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে দেশ পরিচালনা করবে—এ রকম বিশ্বাস নানা কারণেই দোদুল্যমান হয়ে উঠছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন শর্ত আরোপ করায় নির্বাচন নিয়ে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেকয়েক সপ্তাহ থেকে ফেসবুক খুললে কম বয়সী দুটি ছেলের গান শুনতে পাচ্ছি। একজন গাইছে আর একজন তবলা বাজাচ্ছে। তারা দুই ভাই হবে—চেহারা দেখে সেটা অনুমান করা যায়। বড় ভাই গাইছে। কী অসম্ভব ভালো গলা! ভালো মানে, কণ্ঠে যেমন সুর আছে, তেমনি কণ্ঠের চর্চা আছে।
১০ ঘণ্টা আগেকারাগারে বন্দীদের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে থাকার কথা থাকলেও সেখানে সেই কারাবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত এই অবৈধ লেনদেন দেশের কারাগারে অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে।
১০ ঘণ্টা আগেড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১ দিন আগে