মাসুমা হক প্রিয়াংকা
আমরা সবাই পাপী; আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি—কাজী নজরুল ইসলামের এই পঙ্ক্তিটি আমাদের সমাজের চিরন্তন বাস্তবতার নগ্ন প্রতিচিত্র। সময়ের পরিক্রমায় সভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে, মানুষ বিজ্ঞানের চূড়ান্ত উৎকর্ষে পৌঁছেছে, কিন্তু নৈতিকতার এই দ্বিচারিতা কখনো পরিবর্তন হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও গভীরভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত হয়েছে। আমরা নৈতিকতার কথা বলি, অথচ সেই নৈতিকতাকে আমরা ব্যবহার করি কেবল তখনই, যখন তা আমাদের স্বার্থের অনুকূলে যায়। আমাদের রাজনীতি, সমাজ, পরিবার, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও এই দ্বিচারিতার চিত্র সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
রাজনৈতিক পরিসরে আমরা দেখি, ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলো যখন বিরোধী দলে থাকে, তখন ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার কথা বলে, কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর তারাই আগের শাসকদের মতোই দমননীতি গ্রহণ করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা দলগুলো যখন ক্ষমতায় বসে, তখন তাদের হাতেই সবচেয়ে বড় দুর্নীতির চিত্র ফুটে ওঠে। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় যাদের স্বৈরাচার বলে গালি দেওয়া হয়, ক্ষমতায় গেলে তারাই একই ধরনের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চা করে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যারা সংগ্রাম করে, ক্ষমতায় গিয়ে তারাই মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের ফাঁদে ফেলে। অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো, অন্যের অপরাধের বিচার চাওয়া আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, অথচ নিজেদের ভুলগুলো যখন প্রকাশ পায়, তখন তা ধামাচাপা দেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়।
এই একই চিত্র আমরা সমাজের প্রতিটি স্তরে দেখতে পাই। সাধারণ জনগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, অথচ সুযোগ পেলে নিজেরাই ঘুষ দেওয়ার পথ খোঁজে। ব্যবসায়ীরা নৈতিকতার কথা বলেন, অথচ বাজারে সুযোগ বুঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন। শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়, কিন্তু সেখানেই প্রশ্নপত্র ফাঁস, অর্থের বিনিময়ে ভর্তি এবং দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। আমরা অন্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, কিন্তু নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অসততার আশ্রয় নিতে কুণ্ঠাবোধ করি না। সমাজের কোনো ব্যক্তি যখন অন্যায় করে, আমরা তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করি, কিন্তু যখন নিজের স্বজন বা পরিচিতজন একই ধরনের কাজ করে, তখন আমরা তাকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করি। পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরেও এই দ্বিচারিতা স্পষ্ট—অন্যের সন্তান ভুল করলে আমরা তীব্র সমালোচনা করি, কিন্তু নিজের সন্তান ভুল করলে তা লঘু করে দেখি।
ধর্মীয় মূল্যবোধের ক্ষেত্রেও এই দ্বিমুখী আচরণ দৃশ্যমান। আমরা ধর্মীয় অনুশাসনের কথা বলি, কিন্তু সেই অনুশাসনকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করি। আমরা অন্যদের ধর্মীয় অবমাননার জন্য তাদের প্রতি বিদ্বেষ দেখাই, কিন্তু নিজেদের ভুলগুলো এড়িয়ে যাই। ধর্মীয় নেতা, যারা সমাজে শুদ্ধাচারের কথা বলেন, তাদের মাঝেও সুবিধাবাদী মনোভাব দেখা যায়। কেউ কেউ ধর্মের নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেন, রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদার হন, ব্যবসা করেন, অথচ সাধারণ মানুষের কাছে কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের বয়ান দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসারের পর মানুষের এই দ্বিচারিতা আরও প্রকটভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। এখানে সবাই নীতিমান, সবাই অন্যের দোষ খোঁজার জন্য সদা প্রস্তুত। কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে পোস্ট দেন, কিন্তু বাস্তবে নিজেই অনৈতিক লেনদেনে জড়িয়ে থাকেন। কেউ নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, অথচ গোপনে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেন। কেউ সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলেন, কিন্তু সুযোগ পেলেই অন্যের প্রতি অন্যায় করেন। মিডিয়ায় যারা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, তারাও অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
এই দ্বিচারিতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তোলা। সমাজ বদলাতে হলে আগে ব্যক্তিকে বদলাতে হবে। আমরা অন্যের ভুল ধরার আগে নিজেদের ভুল বুঝতে শিখলে, অন্যের বিচারের আগে নিজেদের বিচার করলে, হয়তো এই সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব হবে। কিন্তু সেই পরিবর্তন কবে আসবে? নাকি আমরা চিরকালই আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপতে থাকব?
লেখক: সমাজকর্মী ও গবেষক
আমরা সবাই পাপী; আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি—কাজী নজরুল ইসলামের এই পঙ্ক্তিটি আমাদের সমাজের চিরন্তন বাস্তবতার নগ্ন প্রতিচিত্র। সময়ের পরিক্রমায় সভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে, মানুষ বিজ্ঞানের চূড়ান্ত উৎকর্ষে পৌঁছেছে, কিন্তু নৈতিকতার এই দ্বিচারিতা কখনো পরিবর্তন হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও গভীরভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত হয়েছে। আমরা নৈতিকতার কথা বলি, অথচ সেই নৈতিকতাকে আমরা ব্যবহার করি কেবল তখনই, যখন তা আমাদের স্বার্থের অনুকূলে যায়। আমাদের রাজনীতি, সমাজ, পরিবার, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও এই দ্বিচারিতার চিত্র সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
রাজনৈতিক পরিসরে আমরা দেখি, ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলো যখন বিরোধী দলে থাকে, তখন ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার কথা বলে, কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর তারাই আগের শাসকদের মতোই দমননীতি গ্রহণ করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা দলগুলো যখন ক্ষমতায় বসে, তখন তাদের হাতেই সবচেয়ে বড় দুর্নীতির চিত্র ফুটে ওঠে। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় যাদের স্বৈরাচার বলে গালি দেওয়া হয়, ক্ষমতায় গেলে তারাই একই ধরনের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চা করে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যারা সংগ্রাম করে, ক্ষমতায় গিয়ে তারাই মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের ফাঁদে ফেলে। অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো, অন্যের অপরাধের বিচার চাওয়া আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, অথচ নিজেদের ভুলগুলো যখন প্রকাশ পায়, তখন তা ধামাচাপা দেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়।
এই একই চিত্র আমরা সমাজের প্রতিটি স্তরে দেখতে পাই। সাধারণ জনগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, অথচ সুযোগ পেলে নিজেরাই ঘুষ দেওয়ার পথ খোঁজে। ব্যবসায়ীরা নৈতিকতার কথা বলেন, অথচ বাজারে সুযোগ বুঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন। শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়, কিন্তু সেখানেই প্রশ্নপত্র ফাঁস, অর্থের বিনিময়ে ভর্তি এবং দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। আমরা অন্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, কিন্তু নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অসততার আশ্রয় নিতে কুণ্ঠাবোধ করি না। সমাজের কোনো ব্যক্তি যখন অন্যায় করে, আমরা তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করি, কিন্তু যখন নিজের স্বজন বা পরিচিতজন একই ধরনের কাজ করে, তখন আমরা তাকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করি। পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরেও এই দ্বিচারিতা স্পষ্ট—অন্যের সন্তান ভুল করলে আমরা তীব্র সমালোচনা করি, কিন্তু নিজের সন্তান ভুল করলে তা লঘু করে দেখি।
ধর্মীয় মূল্যবোধের ক্ষেত্রেও এই দ্বিমুখী আচরণ দৃশ্যমান। আমরা ধর্মীয় অনুশাসনের কথা বলি, কিন্তু সেই অনুশাসনকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করি। আমরা অন্যদের ধর্মীয় অবমাননার জন্য তাদের প্রতি বিদ্বেষ দেখাই, কিন্তু নিজেদের ভুলগুলো এড়িয়ে যাই। ধর্মীয় নেতা, যারা সমাজে শুদ্ধাচারের কথা বলেন, তাদের মাঝেও সুবিধাবাদী মনোভাব দেখা যায়। কেউ কেউ ধর্মের নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেন, রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদার হন, ব্যবসা করেন, অথচ সাধারণ মানুষের কাছে কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের বয়ান দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসারের পর মানুষের এই দ্বিচারিতা আরও প্রকটভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। এখানে সবাই নীতিমান, সবাই অন্যের দোষ খোঁজার জন্য সদা প্রস্তুত। কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে পোস্ট দেন, কিন্তু বাস্তবে নিজেই অনৈতিক লেনদেনে জড়িয়ে থাকেন। কেউ নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, অথচ গোপনে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেন। কেউ সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলেন, কিন্তু সুযোগ পেলেই অন্যের প্রতি অন্যায় করেন। মিডিয়ায় যারা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, তারাও অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
এই দ্বিচারিতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তোলা। সমাজ বদলাতে হলে আগে ব্যক্তিকে বদলাতে হবে। আমরা অন্যের ভুল ধরার আগে নিজেদের ভুল বুঝতে শিখলে, অন্যের বিচারের আগে নিজেদের বিচার করলে, হয়তো এই সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব হবে। কিন্তু সেই পরিবর্তন কবে আসবে? নাকি আমরা চিরকালই আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপতে থাকব?
লেখক: সমাজকর্মী ও গবেষক
রাজনীতির মাঠে অশালীন শব্দ ব্যবহার করলে আর মিথ্যা কথা বললে জনপ্রিয়তা বাড়ে—এ রকম বক্তব্যসহ সহকর্মী জাহাঙ্গীর আলমের লেখা একটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবারের আজকের পত্রিকায়। ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক।
৫ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ভাইরাল নিউজ চোখে পড়ল। একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন ক্লিনার বকশিশ চেয়ে না পেয়ে অসুস্থ শিশুর মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলেন। এতে সেই শিশুর একপর্যায়ে করুণ মৃত্যু হয়। এমন অভিযোগ শিশুর মায়ের।
৫ ঘণ্টা আগেবাগছাস নেতা এসে স্কুলের ফেল করা শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে যাচ্ছেন—এটাকে কি রূপকথার গল্প বলে মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে কারও অলীক কল্পনা? চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী (অ্যাডহক) কমিটির আহ্বায়ক হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহম্মদ।
৫ ঘণ্টা আগেদেশের দু’টি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় উত্থান সাম্প্রতিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যে সংগঠনটি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে নিষিদ্ধ ছিল, তারাই কীভাবে এত সংখ্যক পদে জয়ী হলো—এই প্রশ্ন শিক্ষিত সমাজকে
১২ ঘণ্টা আগে