রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো ধুরন্ধর। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটি ব্যবহার করেছি; কখনোবা এ শব্দের প্রায়োগিক ব্যবহারের স্বীকার হয়েছি। বিশেষ করে ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে আমরা শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। উল্লেখ্য শব্দটির বর্তমান ব্যবহার স্পষ্টতই নেতিবাচক। কিন্তু শব্দটি কি সব সময় নেতিবাচকই ছিল? বাংলা ভাষায় এমন অর্থে কীভাবে জায়গা করে নিল শব্দটি? আমরা কি জানি অতীতে কোন কোন অর্থ পেরিয়ে শব্দটি আজ এমন নেতিবাচক অর্থ পরিগ্রহ করেছে? তবে চলুন আজ জানব ধুরন্ধর শব্দের সাতসতেরো।
ধুরন্ধর সংস্কৃত শব্দ। এর ব্যুৎপত্তি হলো [সংস্কৃত ধুরা+ধৃ+অ]। শব্দটি বিশেষণ পদ। এর অর্থ হলো চতুর, ধূর্ত, মতলববাজ; দক্ষতার সঙ্গে কার্যভার বহন করতে পারে এমন, কর্মকুশল; ভারবাহী; অগ্রণী; ওস্তাদ। উল্লিখিত অর্থসমূহের আলোকে আমরা বলতে পারি ধুরন্ধর শব্দটি মূলত শব্দের অর্থের বিবর্তনের ধারায় তিনটি ধাপে বিবর্তিত হয়েছে। আদতে ধুরন্ধর শব্দের মূল অর্থ ছিল ভারবাহী বা ভারবহনকারী। দ্বিতীয় ধাপে অর্থটি বিবর্তিত হয়ে কর্মদক্ষ বা কর্মকুশল রূপ লাভ করেছে। কিন্তু ভাষাভাষীদের দৈনন্দিন ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বর্তমানে ধুরন্ধর শব্দের অর্থ দাঁড়িয়েছে স্পষ্টতই নেতিবাচক তথা মতলববাজ, ধূর্ত, ছলনাময়ী, চতুর প্রভৃতি অর্থে।
কালের পরিক্রমায় কোনো শব্দের অর্থের বিবর্তনের ধারায় এর উন্নতি-অবনতি বা সংকোচন-প্রসারণ ঘটে। ‘ধুর’ শব্দের অর্থ ভার আর ‘ধর’ হলো যে ধারণ করে। সে হিসেবে ধুরন্ধর শব্দের আক্ষরিক অর্থ ছিল যে ভার বহন করে বা ভারবাহী। অর্থাৎ ঘোড়া, গাধা প্রভৃতি ভারবাহী প্রাণী ছিল মূল ধুরন্ধর। কেননা তখনকার সময়ে মানুষের ভারী বোঝা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে ঘোড়া, হাতি, গাধা প্রভৃতি প্রাণীই ব্যবহৃত হতো। সময়ের বিবর্তনে এবং ভাষাভাষীদের ক্রমব্যবহারে এর আলংকারিক অর্থ তৈরি হয়। যিনি বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে কার্য সম্পাদন করতে পারতেন বা দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারতেন এমন কর্মকুশল ব্যক্তিকেই আলংকারিক অর্থে বলা হতো ধুরন্ধর। অর্থাৎ একটি রাষ্ট্র বা সমাজের বিদ্বজ্জন, গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারপ্রধান পর্যন্ত সবাই ধুরন্ধর বলে বিবেচিত হতেন। আলংকারিক এই অর্থের আলোকে বলা যায় বহু গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া আর কাউকে ধুরন্ধর বলার সুযোগ নেই।
সাম্প্রতিক সময়ের দৈনন্দিন ব্যবহারে ধুরন্ধর শব্দটির অতীত অর্থের চরম অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে সম্পূর্ণ নেতিবাচক অর্থে ধুরন্ধর শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। টাউট-বাটপার, চতুর, দুষ্ট, ধূর্ত, ধড়িবাজ বা শয়তান প্রকৃতির ব্যক্তিকে আমরা বর্তমানে ধুরন্ধর বলে আখ্যায়িত করছি। অর্থাৎ শব্দটি বহু গুণে গুণান্বিত ব্যক্তির অভিধা থেকে অর্থগত ভারসাম্য হারিয়ে উপরিউক্ত নেতিবাচক অর্থ পরিগ্রহ করেছে। বোধকরি অর্থের এই বিবর্তন সাধনে মূল ধুরন্ধর ব্যক্তিবর্গের কর্মফলই প্রকৃত ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোজ বসুসহ আরও অনেকের রচনায় আমরা ধুরন্ধর শব্দের প্রয়োগ দেখতে পাই। তবে সবগুলোই নেতিবাচক অর্থে। কিন্তু অতীতের ধুরন্ধর শব্দের আলংকারিক অর্থ তথা গৌরবের কথা স্মরণে রেখে কেউ যদি সেমিনার বা সভায় ঘোষণা করেন, ‘এখন বক্তব্য রাখবেন আমাদের ধুরন্ধর নেতা’ বা ‘আমাদের ধুরন্ধর বড় ভাই’, তাহলে সাম্প্রতিক বাস্তবতায় এর পরিণতি যে কী হবে তা সহজেই অনুমেয়!
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো ধুরন্ধর। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটি ব্যবহার করেছি; কখনোবা এ শব্দের প্রায়োগিক ব্যবহারের স্বীকার হয়েছি। বিশেষ করে ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে আমরা শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। উল্লেখ্য শব্দটির বর্তমান ব্যবহার স্পষ্টতই নেতিবাচক। কিন্তু শব্দটি কি সব সময় নেতিবাচকই ছিল? বাংলা ভাষায় এমন অর্থে কীভাবে জায়গা করে নিল শব্দটি? আমরা কি জানি অতীতে কোন কোন অর্থ পেরিয়ে শব্দটি আজ এমন নেতিবাচক অর্থ পরিগ্রহ করেছে? তবে চলুন আজ জানব ধুরন্ধর শব্দের সাতসতেরো।
ধুরন্ধর সংস্কৃত শব্দ। এর ব্যুৎপত্তি হলো [সংস্কৃত ধুরা+ধৃ+অ]। শব্দটি বিশেষণ পদ। এর অর্থ হলো চতুর, ধূর্ত, মতলববাজ; দক্ষতার সঙ্গে কার্যভার বহন করতে পারে এমন, কর্মকুশল; ভারবাহী; অগ্রণী; ওস্তাদ। উল্লিখিত অর্থসমূহের আলোকে আমরা বলতে পারি ধুরন্ধর শব্দটি মূলত শব্দের অর্থের বিবর্তনের ধারায় তিনটি ধাপে বিবর্তিত হয়েছে। আদতে ধুরন্ধর শব্দের মূল অর্থ ছিল ভারবাহী বা ভারবহনকারী। দ্বিতীয় ধাপে অর্থটি বিবর্তিত হয়ে কর্মদক্ষ বা কর্মকুশল রূপ লাভ করেছে। কিন্তু ভাষাভাষীদের দৈনন্দিন ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বর্তমানে ধুরন্ধর শব্দের অর্থ দাঁড়িয়েছে স্পষ্টতই নেতিবাচক তথা মতলববাজ, ধূর্ত, ছলনাময়ী, চতুর প্রভৃতি অর্থে।
কালের পরিক্রমায় কোনো শব্দের অর্থের বিবর্তনের ধারায় এর উন্নতি-অবনতি বা সংকোচন-প্রসারণ ঘটে। ‘ধুর’ শব্দের অর্থ ভার আর ‘ধর’ হলো যে ধারণ করে। সে হিসেবে ধুরন্ধর শব্দের আক্ষরিক অর্থ ছিল যে ভার বহন করে বা ভারবাহী। অর্থাৎ ঘোড়া, গাধা প্রভৃতি ভারবাহী প্রাণী ছিল মূল ধুরন্ধর। কেননা তখনকার সময়ে মানুষের ভারী বোঝা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে ঘোড়া, হাতি, গাধা প্রভৃতি প্রাণীই ব্যবহৃত হতো। সময়ের বিবর্তনে এবং ভাষাভাষীদের ক্রমব্যবহারে এর আলংকারিক অর্থ তৈরি হয়। যিনি বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে কার্য সম্পাদন করতে পারতেন বা দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারতেন এমন কর্মকুশল ব্যক্তিকেই আলংকারিক অর্থে বলা হতো ধুরন্ধর। অর্থাৎ একটি রাষ্ট্র বা সমাজের বিদ্বজ্জন, গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারপ্রধান পর্যন্ত সবাই ধুরন্ধর বলে বিবেচিত হতেন। আলংকারিক এই অর্থের আলোকে বলা যায় বহু গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া আর কাউকে ধুরন্ধর বলার সুযোগ নেই।
সাম্প্রতিক সময়ের দৈনন্দিন ব্যবহারে ধুরন্ধর শব্দটির অতীত অর্থের চরম অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে সম্পূর্ণ নেতিবাচক অর্থে ধুরন্ধর শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। টাউট-বাটপার, চতুর, দুষ্ট, ধূর্ত, ধড়িবাজ বা শয়তান প্রকৃতির ব্যক্তিকে আমরা বর্তমানে ধুরন্ধর বলে আখ্যায়িত করছি। অর্থাৎ শব্দটি বহু গুণে গুণান্বিত ব্যক্তির অভিধা থেকে অর্থগত ভারসাম্য হারিয়ে উপরিউক্ত নেতিবাচক অর্থ পরিগ্রহ করেছে। বোধকরি অর্থের এই বিবর্তন সাধনে মূল ধুরন্ধর ব্যক্তিবর্গের কর্মফলই প্রকৃত ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোজ বসুসহ আরও অনেকের রচনায় আমরা ধুরন্ধর শব্দের প্রয়োগ দেখতে পাই। তবে সবগুলোই নেতিবাচক অর্থে। কিন্তু অতীতের ধুরন্ধর শব্দের আলংকারিক অর্থ তথা গৌরবের কথা স্মরণে রেখে কেউ যদি সেমিনার বা সভায় ঘোষণা করেন, ‘এখন বক্তব্য রাখবেন আমাদের ধুরন্ধর নেতা’ বা ‘আমাদের ধুরন্ধর বড় ভাই’, তাহলে সাম্প্রতিক বাস্তবতায় এর পরিণতি যে কী হবে তা সহজেই অনুমেয়!
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৩ মে পালিত হয় বিশ্ব মুক্তগণমাধ্যম দিবস। এই দিনটিতে সাংবাদিকেরা আত্ম-উপলব্ধির দিন হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের নিরাপত্তা ও পেশাগত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে থাকেন।
১১ ঘণ্টা আগেদেশের রাজনীতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সংস্কার এবং নির্বাচনের বিষয় তো আছেই। নির্বাচনের মধ্যেও এখন পর্যন্ত রয়েছে স্থানীয় সরকার, গণপরিষদ এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রশ্ন। এরই মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে সম্ভাব্য জোট গঠন কিংবা সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে...
১১ ঘণ্টা আগেমেয়েটি কি বাবার কাছেই যাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিল? নাকি বাবার স্মৃতি মনে গেঁথেই নতুন জীবন গড়তে চেয়েছিল? এসব প্রশ্নের আর উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না মেয়েটির কাছে। কেননা আত্মহননের পর মেয়েটি আর মনের কথা বলতে পারবে না। মৃত্যুর আগে এমনিতেও চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল সে। জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবর জিয়ারত করে বাড়ি...
১১ ঘণ্টা আগেরাখাইনে প্রস্তাবিত মানবিক করিডর বাস্তবায়নের আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ এবং চীন-ভারতের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশকে জটিল ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে ফেলতে পারে। এটি শুধু সীমান্ত নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ভারসাম্যকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
২ দিন আগে