Ajker Patrika

রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ ও খাতসমূহের সমন্বয়

জাহাঙ্গীর আলম শোভন
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৮: ০১
রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ ও খাতসমূহের সমন্বয়

প্রতি বছর সরকারের দুটো প্রধান চ্যালেঞ্জ থাকে যেগুলোর ওপর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নির্ভর করে। প্রথম, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, দ্বিতীয়, রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সহায়ক কিংবা প্রতিবন্ধক কিছু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নিয়ামক থাকে। সেগুলো এই লক্ষ্যমাত্রাকে সহজ কিংবা কঠিন করে তোলে। আসলে সহজ বলতে কিছু হয় না। সবই কঠিন হয়; কেবল কিছু কঠিনকে অতিক্রম করা যায় আর কিছু কঠিনকে যায় না। 

২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এর প্রধান কারণ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও বাজার অস্থিরতা। যার কারণ রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সংগত কারণে জ্বালানি তেল ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি। 

এসব সমস্যা অতিক্রমে সংশ্লিষ্টরা দুটি অনুভূতি অর্জন করেছে, এক. ভীতি, অন্যটি হচ্ছে সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলা। উদাহরণ হলো—আমাদের নিকট অতীতে আমরা দেখি বৈশ্বিক চিত্র ক্ষেত্রবিশেষে নেতিবাচক হলেও আমাদের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। যেমন বিগত ২০২১–২২ অর্থবছরে রপ্তানি খাতের আয় ছিল ৫২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। 

পরের বছর কিন্তু এর প্রভাব পড়েছে। মানে কখনো কোনো কিছু কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে গেলে পরে এটার কিছুটা সমন্বয় হয়। মানে ২০২২–২৩ অর্থবছরে যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং একই অর্থবছরের জুলাই থেকে মে এই সময়ের কৌশলগত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। অর্জিত আয় ছিল ৪৭ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। মানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি যত কমই হোক না কেন সেটা ভালো লক্ষণ নয়। কারণ এটি যদি প্রবণতায় পরিণত হয়ে ক্রমাগত হতে থাকে তাহলে এই চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। 

অন্যদিকে ইতিবাচক প্রবণতার ক্ষেত্রে হার কম হলেও সেটা স্বস্তিদায়ক। 

সমস্যা হলো, যেসব অনুঘটকের কারণে বিগত অর্থবছরে নেতিবাচক প্রবণতা বা প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেসব অনুঘটক এখনো বিদ্যমান। বিশেষ করে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ্বালানি তেলের মূল্য। যদিও ডলারের দামের ক্ষেত্রে একটি ভালো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে। ডলারের দাম যে গতিতে বেড়েছে প্রায় তার কাছাকাছি গতিতে কমেছে। যদিও তা আর আগের জায়গায় বা তার কাছাকাছি নেই। 

ডলারের দাম রপ্তানি আয়ের অঙ্কে একটি প্রভাব ফেললেও আমদানি বিবেচনা করলে এতে খুব লাভবান হওয়া যায় না। কারণ আমাদের দেশ থেকে আমরা যেসব প্রধান পণ্য–সেবা রপ্তানি করি সেগুলোকে রূপায়ণ করার জন্য আবার আমদানি নির্ভরতা রয়েছে। তখন কিন্তু কাঁচামাল, প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ আমদানিতে বড় অঙ্ক বেরিয়ে যায়। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক হিসাব মতে, গত ২০২২–২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে সময়ের মধ্যে মাত্র ১৬টি পণ্যের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২৫টি পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে। 

রপ্তানি বাড়া ১৬ খাতের কয়েকটির চিত্র এ রকম—নিট পোশাক ২৩২৭৮ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ, ওভেন পোশাক ১৯৩৫২ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, প্লাস্টিক দ্রব্য ১৯০ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ৩৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, টুপি ৪১৮ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ০৯ শতাংশ, কাগজ ও কাগজ পণ্য ২০৯ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার এবং এতে প্রবৃদ্ধি ১২৯ দশমিক ২১ শতাংশ, ইলেকট্রিক পণ্য ১১৫ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার আর প্রবৃদ্ধি দেখা যায় ৪৮ দশমিক ০৯ শতাংশ, জুতা (চামড়া ব্যতীত) রপ্তানি ৪৩৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলার ও প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২১ শতাংশ, গুঁড়া মসলা রপ্তানি হয়েছে ৩৮ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলারের এবং প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, চামড়াজাত পণ্য ৩৬১ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলার আর এর প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সিরামিক পণ্য বিদেশ গেছে ৩৯ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলারের, বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

উইগস ও মানুষের চুলের মতো পণ্য একটা ভালো অঙ্ক যোগ করেছে, যা ছিল ১১৩ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলারের প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো— ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, জীবন্ত মাছ অনেক বেশি নয়— ১২ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার তবে প্রবৃদ্ধি ভালো— ১১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নির্দেশ করছে। 

সিমেন্ট ১২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ৪৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, জাহাজ ৫ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ২১৮৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, রাসায়নিক পণ্য ৩৯ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। (সূত্র: ইপিবি প্রতিবেদন) 

এখানে আমরা দেখতে পাই বড় অঙ্কের রপ্তানি খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক কমবেশি ১০ শতাংশের কাছে। প্লাস্টিক দ্রব্য, টুপি, ইলেকট্রিক পণ্য, জীবন্ত মাছ ও জাহাজে প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। যদিও জাহাজ ও জীবন্ত মাছের ক্ষেত্রে পরিমাণ কম হওয়াতে বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। গোটা হিসাবটাতে এটা বোঝা যায় যে, এই খাতগুলোতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। 

অন্যদিকে রপ্তানি কমে যাওয়া ২৫টি খাতের মধ্যে রয়েছে— স্পেশাল টেক্সটাইল, শাকসবজি, পেট্রোলিয়াম বাই প্রোডাক্টস, ওষুধ, ফলমূল, হস্তশিল্প, ফার্নিচার, কার্পেট, চিংড়ি, রাবার, নিট ফেব্রিকস, বাইসাইকেল, তামার তার, কৌশল যন্ত্রাংশ, শুকনো খাবার, জুট ইয়ার্ন ও টোয়াইন, কাঁকড়া, টেরি টাওয়েলস, হোম টেক্সটাইল, কাঁচাপাট, চা, জুট সক্স ও ব্যাগ, চামড়ার জুতা, চামড়া, গলফ সফট ইত্যাদি। 

সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি কমেছে ফলমূলে— ৮১ শতাংশ, যার মূল্য ছিল দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার। শাকসবজির বাজার ফলের চেয়ে ভালো এবং বড় হলেও এখানে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যার মূল্য ছিল ৫৮ দশমিক ০৩ মিলিয়ন ডলার। এর পরিমাণ এবং হার দুটোই নেতিবাচক। এই বিষয়ে কারণ অনুসন্ধান প্রয়োজন। যদি আমরা মান নিশ্চিত না করার কারণে পিছিয়ে পড়ি সেটা যেমন একটি সমস্যা, আমাদের যদি উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত না হয় সেটাও ভাবার বিষয়। যদিও এই আইটেমটা রপ্তানির চেয়ে আমদানিই বেশি করি। বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও মানগত সমস্যার কারণে আমাদের ফল কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বিদেশে যায় না। দেশীয় ফলের বিদেশে বাজারের ব্যাপারও রয়েছে। আমাদের ফলের মূল ভোক্তা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। 

হস্তশিল্পের রপ্তানি কমেছে ৩২ দশমিক ১৪ শতাংশ, চিংড়ির রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ, পাট ইয়ার্ন ও টোয়াইন কমেছে ৩০ শতাংশ— এগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য খারাপ খবর নিয়ে এসেছে। যদিও এর মধ্যে চিংড়ি খাদ্যপণ্য হওয়া সত্ত্বেও চিংড়ির রপ্তানির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে যে, আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আর এর কারণ হচ্ছে ঘেরে যেসব উপকরণ ও খাবার ব্যবহার করা হয় সেগুলোর নিম্নমান। তাই এই বিষয়ে এখন সরকারের তদারকির প্রশ্ন আসে। আসে মান নিশ্চিতকরণ ও খামারিদের পাশে দাঁড়ানোর। 

সরকার ভেনামি আমদানির অনুমতি দিলেও ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনের জন্য যে পর্যাপ্ত খামারের অনুমোদন দরকার সেটা পাওয়া যায়নি। এ ধরনের সিদ্ধান্তের সমন্বয়হীনতা আমাদের খুব পুরোনো। এর থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। এই একই অর্থবছরে এ রকম অনেকগুলো সমস্যা দেখা দিয়েছে এর ফলে কিছু সুবিধা সরকার থেকে পাওয়া গেলেও সেখানে অন্য সুবিধার জন্য সেগুলো ব্যবহার করা যায় না। যেমন মেনমেইড ফাইবার তৈরির অনুমতি মিলেছে কিন্তু এর জন্য যে যন্ত্র ক্রয় করা দরকার সেগুলোর শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহার করা হয়নি। 

হোম টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ৩০ দশমিক ১৪ শতাংশ, এর পরিমাণ ছিল ১০২৪ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার, নিট ফেব্রিকস কমেছে ৩৪ শতাংশ এবং এর পরিমাণ ছিল ১৩৬ মিলিয়ন ডলার, প্রকৌশল যন্ত্রাংশ কমেছে ৪৪ শতাংশ, এর পরিমাণ ছিল ১১৮ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার। এগুলো শিল্পপণ্য বলে এসব খাতে শিল্পখাতে নেতিবাচক চাপ পড়বে বৈকি। 

সরকার এরই মধ্যে আগামী অর্থবছরের রপ্তানি চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে এবং খাত ভিত্তিক ও সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে কাজ করছে। সরকারের লক্ষ্য আগামী ২০২৫ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা। যা দেশকে ২০২৬ সালের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে সাহায্য করবে। সে অনুপাতে ২০২৩–২৪ সালে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত ৮০ বিলিয়ন ডলার এবং তা অর্জিত হওয়া জরুরি তাহলে পূর্ববর্তী বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তুলনামূলক সহজ হবে। 

এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয় প্রথমত বর্তমান খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি দ্বিতীয়ত নতুন নতুন খাতের সৃষ্টি করা।

এখানে সফটওয়্যার খাতের চিত্রটি আসেনি, এই খাতকে আরও শক্তিশালী করা উচিত। সরকারের রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর জন্য বিদেশ গমনের বাধা অপসারণ করে প্রক্রিয়া সহজ করা প্রয়োজন। আমাদের ওষুধ, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাজার প্রসারিত করতে হবে। 

ওষুধ, সিমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য, বিস্কুট, শুকনো খাবার, ঢেউটিন ও জাহাজের মতো খাতগুলোকে আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত করা যায়। সফটওয়্যার খাতের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে সব ধরনের সফটওয়্যার রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ ডিউটির বিষয়টি অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে। সফটওয়্যার তৈরি করতে যেসব সফটওয়্যার লাগে সেগুলোর ডিউটি না কমালে এই খাত একটি বড় ধাক্কা খেতে পারে। 

ক্রসবর্ডার ই–কমার্সের জন্য ভিন্নতর নীতিমালা না হলে এই খাতে উন্নয়ন হবে না। এতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসে তা খুব নগণ্য হলেও এই খাতের ৭৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিন্তু কমেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এই খাতের উদ্যোক্তারা দেশে নানাবিধ সমস্যার কারণে অন্যত্র বিশেষ করে দুবাইতে তাঁদের ব্যবসা স্থানান্তর করা শুরু করেছেন। 

সম্প্রতি সাদা ইঁদুর রপ্তানির বিষয়ে অনুমতির একটি দাবি উঠেছে। আমার মনে হয় যথাযথ প্রক্রিয়ায় এটি করলে নতুন একটি রপ্তানি খাত হতে পারে। এটির উৎপাদন খরচ কম আর শীতপ্রধান দেশের চেয়ে আমাদের দেশে উৎপাদন হয় বেশি। অল্প জায়গাতেই খামার গড়ে তোলা সম্ভব। তাই এই বিষয়টিতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। 

বর্তমান বছরে মোটের ওপর ১০ শতাংশের মতো লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৭২ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক খাতের উদ্যোক্তারা হাঁসফাঁস করছেন। অনেকে বিদ্যুৎ ঘাটতির কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, এটা অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। আবার দেখা যাবে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে সেখানে হিসাবের ফেরে কিছু অগ্রগতি সূচক আকারে আসবে। তাই সব মিলিয়ে অসম্ভব নয় মোটেও। তবে সঠিক নীতিমালার অভাবে এবারও ক্রসবর্ডার ই–কমার্স থেকে কোনো ভালো স্কোর দেখা যাচ্ছে না। 

বৈশ্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ইতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন, আরএমজির ক্ষেত্রে আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করি তা বেসিক বা প্রয়োজনীয় ফলে অর্থনীতির মন্দাভাব এতে খুব প্রভাব ফেলে না। আবার দেখা যায় মন্দাভাবের কারণে কখনো কখনো বিক্রেতাকে কম উৎপাদন মূল্যের কারণে বাংলাদেশকে বেছে নিতে হয়। কিন্তু আমাদের রপ্তানি পণ্যের প্রবাহ খাতওয়ারি আরও মজবুত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। 

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ত্রিভুজ সম্পর্কের অনিবার্য পরিণতির অপেক্ষায়

মাসুদ কামাল
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সংকট কাটেনি। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সংকট কাটেনি। ছবি: সংগৃহীত

ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।

গত বছরের এ সময়ে আমাদের রাজনীতিতে খুব শক্ত একটা ত্রিভুজ সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। বিএনপি-অন্তর্বর্তী সরকার-জামায়াত—এই তিন পক্ষের দহরম-মহরম। তাদের সবারই লক্ষ্য তখন ছিল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। এর প্রাথমিক ধাপ, কদিন আগে অর্থাৎ ২০২৪-এর অক্টোবরে অর্জিত হয়েছে। সে দিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এই সরকার একটা নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। এরপর বাকি ছিল মূল দল আওয়ামী লীগকে অকার্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক করা। গত বছরের এ সময়ে সেই চেষ্টা আমরা দেখেছি। প্রশাসনিকভাবে যেমন, ঠিক তেমনি সামাজিকভাবেও স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগবিরোধী প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। এ কাজে বিএনপি, জামায়াত, সরকার—সবাই বেশ আন্তরিকও ছিল। সে সময়ে মাঠের শক্তি হিসেবে বেশ বড় একটা ভূমিকা রেখেছে এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি। তারপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, আমার বিবেচনায় ত্রিভুজ দহরম-মহরমের সেটাই ছিল পিক-টাইম। এর পর থেকে নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ধীরে ধীরে সবাই মাঠে নেমে পড়ল। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল দূরত্ব।

মে মাসের ১২ তারিখে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার মাসখানেক পর জুনের ১৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে গিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। বলতে গেলে ওই বৈঠকটাই যেন সম্পর্কে ভাঙনের ক্ষেত্রে একটা প্রকাশ্য কারণ হতে পারল। জামায়াত অভিযোগ তুলল সরকারের প্রতি—বলল, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে সরকার। অভিযোগের পেছনের কারণটিও তারা প্রকাশ করল। বলল, ওই বৈঠকের পরই নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের কথাটি বলা হয়েছে। একটিমাত্র দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়, তাহলে সেই দলের প্রতি সরকারের পক্ষপাতের বিষয়টি অস্বীকার করা তো সহজ হয় না।

জুনের পর থেকে যত দিন যেতে থাকল, সাধারণ মানুষের কাছেও বিএনপি-জামায়াতের মুখোমুখি অবস্থানটা পরিষ্কার হতে থাকল। ঐকমত্য কমিশনেও দেখা গেল দুই দলের এই বিরোধের প্রকাশ। সংস্কারের অনেক প্রস্তাবেই বিএনপি-জামায়াতকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দেখা গেল। বিএনপির পক্ষ থেকে একের পর এক আসতে থাকল নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি। এরপর আবার বিপত্তি দেখা গেল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে ‘গণভোট’ করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠানের তারিখ নিয়ে। বিএনপি বলল, নির্বাচনের দিনই হোক গণভোট, বিপরীতে জামায়াত বলছে—নির্বাচনের আগে, সম্ভব হলে এই নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। গণভোটের রায় নিয়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই হবে নির্বাচন। আবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ, তার খসড়া নিয়েও বড় ধরনের আপত্তি তুলল বিএনপি। আপত্তির মাত্রাটা এতটাই প্রবল যে, তারা বলল—জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। খেলায় যে রেফারির ওপর সব পক্ষ ভরসা রাখে, সে রেফারিই এবার গোল দিয়ে বসে আছে। অর্থাৎ চরম পক্ষপাতের অভিযোগ। যে কমিশনের প্রধান হচ্ছেন খোদ সরকারপ্রধান ড. ইউনূস, তাঁরই বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও প্রতারণার অভিযোগ! বিষয়টি কিন্তু এরপর আর হালকা থাকল না।

তাহলে এখন কী হবে? গণভোট কবে হবে? গণভোটে জনগণের সামনে প্রশ্ন কী থাকবে? এসব প্রশ্নের সমাধান কে দেবে? ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও সক্রিয় দুই ব্যক্তি ড. আলী রীয়াজ ও মনির হায়দার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তড়িঘড়ি করে তাঁদের এই চলে যাওয়া নিয়েও নানা ধরনের সন্দেহ উচ্চারিত হতে থাকল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুজনকে নিয়ে দেখা গেল নানা ধরনের ট্রল। সমাধানের পথ হিসেবে বলা হলো, সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এর সমাধান করবেন। এ প্রবণতা আমরা আগের সরকারের আমলেও দেখেছি। সবকিছুই যেন শেখ হাসিনা করতেন। যত সাফল্য, সব তাঁর। মন্ত্রীদের কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বলতেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সাফল্য এসেছে।’ আবার যদি কোনো জটিলতা দেখা দিত, সবাই মিলে মিটিং করে শেষে সিদ্ধান্ত হতো ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ এর সমাধান দেবেন। দল, অঙ্গসংগঠন, কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কোনো কমিটি করতে হবে—অবধারিতভাবেই দায়িত্ব চলে যাবে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর’ কাছে। এভাবেই একজন ব্যক্তি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। সব কাজ তাঁকেই করতে হয়। তিনি আসলে অন্যদের মতো নয়, তিনি অনেকটা মহাপুরুষের মতো। আমার মতে, এই স্বৈরাচারী মনোভাবের শুরুটা হয় আশপাশে থাকা মোসাহেবদের কারণেই। এবারও তা-ই হয়েছে, মোসাহেবরা বলতে শুরু করেছেন—ড. ইউনূসই দেবেন শেষ সিদ্ধান্ত!

সরকার অবশ্য অদ্ভুত একটা কাজ করেছে। যখন তাদের ওপর দায়িত্ব এল সংকট নিরসনের, তারা একটা বৈঠক করল, আর বলে দিল—সাত দিনের সময় দেওয়া হলো, এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের বসে সমস্যার নিরসন করতে হবে। যে বিরোধের নিরসন টানা আট মাস রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে সমাধান করতে পারেনি, সেটা সাত দিনে কীভাবে সম্ভব হবে? তা ছাড়া আরেকটি কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। জুলাই সনদ নিয়ে এই বিরোধ, বাস্তবায়ন প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্টগুলোকে না রাখা, এটা আসলে কার দায়? এ অপকর্মটি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যে কমিশনের প্রধান আবার ড. ইউনূস নিজে। তাহলে যে ক্রাইসিস সৃষ্টি করেছে ড. ইউনূসের কমিশন, সেটির সমাধানের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দেওয়া কেন? এদিকে আবার সেই সাত দিনও শেষ হয়ে গেছে গতকাল রোববার। কোনো সমাধান কি হয়েছে? এখন কী হবে? যথারীতি সেই একই কথা বলা হচ্ছে—ড. ইউনূসই দেবেন সমাধান। কিন্তু কীভাবে? তিনি কি খুব বড় রাজনীতিবিদ? আবার যদি ড. ইউনূস কিংবা তাঁর পরিষদ যদি কোনো একটা সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সেটাকে কি আর ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত বলা যাবে? এটা তো তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সরকারই যদি সিদ্ধান্ত দেবে, তাহলে আর সংস্কার কমিশনের নামে এত নাটকের কী প্রয়োজন ছিল? এত সময়ক্ষেপণই বা কেন করা হলো?

এতসব প্রশ্নের জবাব আসলে কে দেবে, কী দেবে, কেউ জানে না। হয়তো জবাব কখনোই পাওয়া যাবে না। তবে বিএনপি কিন্তু এরই মধ্যে সরকারের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে গত শনিবার দেখলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরাসরি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন—এভাবে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই। এই সরকার যে কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটাও তিনি তাদের স্মরণে রাখতে বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী আবার এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে আট দলের একটা জোট বানিয়ে নিয়েছে। এই আট দলকে নিয়ে রাস্তায়ও নেমে গেছে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে। তাদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রকাশ্যে বলেছেন—ঘি তাদের চাই। আর এই ঘি পেতে যদি আঙুল বাঁকা করতে হয়, তারা সেটাই করবে। এ বক্তব্য কি কেবলই রেটরিক, নাকি এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন কোনো হুমকি আছে; সেটাও কিন্তু চিন্তার বিষয়। এসবের বিপরীতে বিএনপিও বসে নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শনিবার এক জায়গায় বললেন, বিএনপির মতো বড় দলের কর্মীরা যদি রাস্তায় নামে, তাহলে সংঘাত হতে পারে।

এ রকম পরিস্থিতিতে জনগণের অবস্থান কোথায়? আমরা এখন বসে আছি ক্লাইমেক্সের অপেক্ষায়! এরই মধ্যে পরস্পরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শহীদ নূর হোসেন দিবস

গণতন্ত্র কি মুক্তি পেয়েছে

নূর হোসেনের পিঠে লেখা ছিল এই স্লোগান। ছবি: সংগৃহীত
নূর হোসেনের পিঠে লেখা ছিল এই স্লোগান। ছবি: সংগৃহীত

আমরা চব্বিশের আন্দোলন দেখেছি—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যা রূপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। এর আগপর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে দুটো ঘটনারই সাক্ষী। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হন পুলিশের গুলিতে। কারণটা শুধু তাঁর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছিল না, ছিল তাঁর বুকে-পিঠে লেখা স্লোগানও—‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। নূর হোসেনের এই অদম্য সাহসই যে পরবর্তী সময়ে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে যায়, সেটা না বললেও চলে। কেননা, ইতিহাস সাক্ষী এবং শিক্ষক—দুটো ভূমিকা পালন করে। শহীদ নূর হোসেন দিবসের নেপথ্যে কী, কেন তিনি শহীদ হন? এসব প্রশ্নের উত্তর না পেলে হয়তো আজকের প্রজন্ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারত না। তাই নূর হোসেনকে ভুলে যাওয়া যায় না।

বেবিট্যাক্সিচালকের সন্তান নূর হোসেনের জন্ম ঢাকায়, নারিন্দায়, ১৯৬১ সালে। পড়ালেখার দৌড় বেশি দূর যায়নি, অষ্টম শ্রেণিতেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয়। আর মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না নিয়েও রাজনীতির শব্দ নিয়ে খেলায় মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালে নাখোশ হয়ে আর সবার সঙ্গে রাজনৈতিক মিছিলে যোগ দেওয়ার আগের দিন, অর্থাৎ ১৯৮৭ সালের ৯ নভেম্বর নূর হোসেন ঠিক করে ফেলেছিলেন কী হবে তাঁর স্লোগান। সেদিন পপুলার আর্ট নামের একটি দোকান থেকে সাদা রং দিয়ে নিজের বুকে লিখিয়ে নেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। আর পিঠে লেখান ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। প্রচার সম্পাদকের কাজটা ভালোই জানতেন! এই কাজ করে বাড়ি গেলেন না। দুদিন আগেই ঘরছাড়া হয়েছিলেন যদিও। আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি মসজিদে। পরিবার ১০ নভেম্বর সকালে তাঁকে খুঁজে পেলেও তিনি বাড়ি ফিরতে চাননি। গায়ে কাপড় টেনে ঢেকে দিয়েছিলেন সেই কঠোর স্লোগান।

কাজ শেষে বাড়ি ফিরবে বলে মা-বাবাকে বিদায় দিয়েছিলেন নূর হোসেন। কিন্তু ফেরা আর হলো কই? ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর জোটবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ ‘ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়। সেদিন স্বৈরাচারবিরোধী যে মিছিলটি পল্টন এলাকার ‘জিরো পয়েন্ট’ অতিক্রম করছিল, সেখানে ছিলেন নূর। কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় তৎকালীন সরকারের পালিত পুলিশ। নূর হোসেনকে তখন আলাদা করে চেনা যাচ্ছিল খুব সহজে, গায়ে লেখা শ্বেত স্লোগানের কারণে। গুলি এসে বিঁধেছিল সেই গায়ে। তাঁর সঙ্গে সেদিন নিহত হন যুবলীগ নেতা বাবুলও। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি পাস নূর হোসেনের গায়ে লেখা স্লোগান তাঁকে আজও অমর করে রেখেছে।

কোঁকড়া চুলের নূর হোসেন তিন দশক পরেও তরুণ, প্রাসঙ্গিক। তাঁর আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পথ দেখায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন ঘটে এরশাদ সরকারের। যে গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে নূর প্রাণ দিয়েছিলেন, সেই গণতন্ত্র বন্দী হয়ে গিয়েছিল আবারও। আর আবারও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সরকার পতন হলো, কিন্তু গণতন্ত্র কি আজও মুক্তি পেল? কখনো পাবে? এ প্রশ্ন হয়তো নূর হোসেন মনে মনে ভাবছেন, অন্য জগতে বসে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সম্ভাবনার জটিল পথ

মামুনুর রশীদ
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গত এক বছরে আমাদের জাতি এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছে। জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ঘরের ভেতর থেকে চায়ের দোকান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই রাজনৈতিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই সঙ্গে যাঁর যাঁর সুচিন্তিত মন্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই সকাল-বিকেল কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে, সেসবের ওপরও তাৎক্ষণিক মন্তব্য হয়ে যাচ্ছে। এবারের উচ্চমাধ্যমিকের ফলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী হতে পারছে না। সমগ্র আলোচনা ওই রাজনীতিতে। চায়ের কাপেই বড় বড় সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে।

মধ্যবিত্তের বাজারঘাটে টান পড়লেও তা আলোচনায় খুব একটা জায়গা পাচ্ছে না। রাজনীতিই মুখ্য এবং মুখ্য আলোচনার বিষয়। একটা বিষয় অবশ্য দেখার আছে—ক্লান্তিহীন, আড্ডাবাজ বাঙালি যেকোনো বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে এবং সিদ্ধান্ত দিতে বড়ই উৎসাহী। ক্রিকেট খেলা দেখতে দেখতে অবলীলায় বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটার বা বোলারদের ভুল ধরতে একটুও বিলম্ব করে না।

বলা হয়ে থাকে, সম্মিলিতভাবে বাঙালি সব সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। জাতি যে এত রাজনীতিসচেতন হয়ে পড়ল, সেও ভালো কথা। কিন্তু যখন দেখি কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা হলো বা পুলিশের লাঠিপেটায় রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে, কোথাও কোনো নারীর অসম্মান হচ্ছে, তখন তার ফোনের ক্যামেরাটি গর্জে ওঠে বটে কিন্তু মানুষ আগায় না। সবকিছু যে ক্যামেরায় ধারণ করার বিষয় নয়, প্রতিবাদী হওয়া প্রয়োজন, তা বোঝার বোধ হয় এখন আর দরকার নেই।

আমাদের লেখাপড়ার সময়টা ছিল ষাটের দশক, যখন দেশে বিপুল পরিমাণে নানা জায়গায় আন্দোলন চলছিল। তার মধ্যে শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞানচিন্তা এবং বড় বড় রাজনৈতিক তত্ত্ব নিয়েও কথাবার্তা হতো। মিছিলে যাওয়ার আগে ও পরে এসব বিষয় নিয়ে তর্কের ঝড় উঠত। এই তর্কাতর্কির ফলেই একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন এমন একটা সময় এসেছে, যখন রাজনীতিই একমাত্র আলোচনা, তর্কবিতর্কের বিষয়।

এই সময়ের মধ্যে যে কত মানবিক বিপর্যয় ঘটে গেল, দুর্নীতি সকল সময়ের রেকর্ড অতিক্রম করল। শিক্ষাব্যবস্থা নিম্নমুখী, কতিপয় দুর্বৃত্ত আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠল—তার আলোচনা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ করে না। অসহায় কিছু মানুষকে দেখা যায় কোর্ট-কাচারিতে, জেলখানায় দৌড়াদৌড়ি করতে। আবার থানায় প্রচুর মানুষের ভিড়। মানুষ ভেবেছিল একটা পরিবর্তন আসবে, দুর্নীতির কবর রচনা হবে, সরকার একটি কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে, দুর্নীতি বিদায় করতে যেমন কমিশন গঠন করেছে, তা দিয়েই চিরতরে এই অসুখটি নির্মূল হয়ে যাবে। কিন্তু তা হলো না। নির্বাচনই এখন একমাত্র আলোচনার বিষয়। অধিকাংশ লোক ভাবছে নির্বাচন হবে না। এই অবিশ্বাসই-বা কেন? মানুষ একটা আস্থাহীনতা এবং অবিশ্বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল কেন?

বাঙালি চিরকালই সরকারবিরোধী। কারণ আছে অনেক। কিন্তু আস্থাহীনতা যদি সংক্রামক হয়ে জাতির সর্বক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তার পরিণতি কী হবে? উত্তরের জন্য বহু দূর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এখনই দেখা যাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধে ধস নেমেছে, যার হাজার হাজার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। আরও বহুবার বলেছি, রাষ্ট্রকে আমরা মানবিক করতে পারিনি। সব দল মিলেই ব্যবস্থাটা এমন হয়েছে যে সরকার রাষ্ট্রকে অধিকার করে ফেলেছে, সমাজ কোনোমতে ধিকিধিকি জ্বলছে। তবে সমাজের শক্তি এখনো আছে। নইলে যে নৈরাজ্যকে আমরা দেখেছি, তাতে দেশে বিপুল পরিমাণে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়ে অনেক কিছুই তছনছ হয়ে যেত। কোনো কোনো ওয়াজ-মাহফিল থেকে যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য আসে, তাতে সব জায়গায় অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার কথা। কিছু কিছু জায়গায় যে তা হয়নি, তা-ও সত্য নয়। অনেক জায়গায়ই ফেসবুকের একটি পোস্ট অনেক দাঙ্গাবাজির কারণ হয়েছে। সেসব ঘটনায় আমাদের সমাজ সত্যিই একটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এবার কোনো শক্তিই তেমন দুর্বার হয়ে উঠতে পারেনি। আর সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তিটি এখনো সোচ্চার হতে পারেনি।

আমাদের অর্ধশতকের শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে সত্য বলতে শেখায়নি। রাজনীতিবিদ, আমলা, বিচারক, শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকও সত্য ভাষাকে উৎসাহিত করেনি। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা সর্বত্রই উৎসাহিত হয়েছে। আজকে যে শুধু রাজনীতিই একমাত্র আলোচ্য বিষয়, তার কারণও হচ্ছে সমাজের অন্য সমস্যাগুলোর সমাধান না করে একটি দুর্নীতির পথই বেছে নিয়েছে সবাই। যদি সব জায়গায়ই একটা সুস্থ-স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত থাকত, তাহলে এ জায়গায় এসে দাঁড়াতাম না আমরা। সমাজের সর্বত্র সত্যকে মূল্যায়ন করার একটা ব্যবস্থাই পারত সমাজকে রক্ষা করতে। রাজনীতির বৃহত্তর অর্থে প্রয়োগটাও হয়নি।

মানুষের মহত্তম কল্যাণের পথটা রাজনীতিই খুলে দেয়। চীন, রাশিয়া, কিউবার বিপ্লবে সে দেশগুলোর জনগণ একটা মুক্তির পথ পেয়েছিল। তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক সব ধর্মান্ধতা এবং গোঁড়ামি থেকে একটা মুক্ত সমাজ গড়েছিলেন। আমাদের দেশেও লাখ লাখ মানুষ দেশের জন্য বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা সমাজের কাজে ব্যবহার করতে পারেননি। একটাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো ক্ষমতা। ক্ষমতার ব্যবহার এবং অপব্যবহার একটি সমাজের জন্য যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তা আমরা দেখেছি। এটা সবাই স্বীকার করছেন, আমরা একটি সংকটকাল পার করছি। তার মধ্যেও মানুষের মনে আশা জাগে—একটা সুদিন আসবে। কীভাবে যে সে আশা পূর্ণ হবে আমি জানি না, কেউ জানে কি না জানি না, তবে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই জানেন। জেনে থাকলে আমাদের খবর দেবেন।

লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নদীপাড়ের মাটি লুট

সম্পাদকীয়
নদীপাড়ের মাটি লুট

দেশে এমনিতেই ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সেটি কমে যাওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে।

সেই ফসলি জমির মাটিই যদি কেটে নেওয়া হয়, তাহলে খাদ্য উৎপাদনের কী হবে! মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পাড়ের অন্তত ২০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁদের একজন হলেন ইলিয়াস চৌকিদার। প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ট্রলারে করে অবাধে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে নদীপাড়ের গ্রামগুলোর মানুষের জীবনে এক বিশাল ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ৪-এর খ ও গ ধারা অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু বা মাটি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু যাঁরা মাটি কাটেন তাঁরা এই আইন মানেন না। আইন অমান্য করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কম ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। প্রশাসন অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না কেন, সেটা বোধগম্য নয়।

নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভাঙনে সহায়তা করবে। শুধু নদীভাঙনই নয়, এভাবে মাটি কাটার ফলে একজন কৃষকের সবজিখেত সরাসরি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং ফলনও কমে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ সত্ত্বেও ইলিয়াস চৌকিদার মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি প্রতিবাদ করায় তিনি গ্রামের একজনকে ‘চোখ তুলে ফেলার’ হুমকিও দিয়েছেন। ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অবৈধভাবে এই মাটি কাটা রোধে নদের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা চালু করা দরকার। কেবল দিনের বেলাতেই নয়, মাটি কাটার মূল সময় অর্থাৎ রাতে ও ভোরে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যাঁরা রাজনৈতিক প্রভাবে এ ধরনের অপকর্ম করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল জরিমানা নয়, মাটি কাটার সরঞ্জাম জব্দ এবং কঠোর কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্যরা এমন কাজ করার সাহস না পান।

নদীর পাড়ের ফসলি জমি বাঁচানো না গেলে, পুরো গ্রামই একদিন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। সে জন্য প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে এই দুই নদ স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে এবং নদের দুই পাড়ের স্থানীয় মানুষজন ভাঙন ও ভূমি হারানোর আতঙ্ক থেকে মুক্তি পান।

অবৈধভাবে মাটি কাটা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি যে আইন রয়েছে, আমরা সেই আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত