Ajker Patrika

ভারতের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান, সুরক্ষিত এলাকায় বিক্ষোভকারীরা কীভাবে প্রবেশ করল—প্রশ্ন ঢাকার

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৩৯
ভারতের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান, সুরক্ষিত এলাকায় বিক্ষোভকারীরা কীভাবে প্রবেশ করল—প্রশ্ন ঢাকার

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে সংঘটিত কথিত বিক্ষোভ নিয়ে ভারতের প্রকাশিত একটি প্রেস নোট দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকায় কীভাবে বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করতে পারল, তা নিয়ে গুরুতর নিরাপত্তা ঘাটতির প্রশ্ন তুলেছে ঢাকা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের ওই প্রেস নোটের বিষয়টি আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন এটি খুবই সাধারণ ঘটনা; অথচ বাস্তবে তা নয়। আমাদের মিশন কূটনৈতিক এলাকার একেবারে ভেতরে অবস্থিত, কোনোভাবেই প্রান্তিক এলাকায় নয়।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতের প্রেস নোটের বিষয়টি অতি সরলীকরণ করা হয়েছে, অথচ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ মিশন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত কূটনৈতিক অঞ্চলের গভীরে অবস্থিত।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল, যাদের একটি উগ্র হিন্দু সংগঠনের সদস্য হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, এমন সংবেদনশীল এলাকায় প্রবেশ করতে সক্ষম হলো। তিনি বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হওয়ার কথা নয়।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত বলছে, ২০-২৫ জন হতে পারে, কিন্তু সেটাই মূল বিষয় নয়। প্রশ্ন হলো, কীভাবে একটি উগ্র হিন্দু সংগঠনের ২৫ বা ৩০ জন সদস্য একটি সংবেদনশীল ও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এলাকার এত ভেতরে প্রবেশ করতে পারল। স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের সেখানে পৌঁছানোরই কথা নয়।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিক্ষোভকারীরা কেবল বাংলাদেশে একজন হিন্দু নাগরিক হত্যার ঘটনায় স্লোগান দেয়নি, বরং অন্যান্য বক্তব্যও দিয়েছে। তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো মূলত সঠিক এবং বিভ্রান্তিকর নয়, যেমনটি দাবি করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই, তবে এমন হুমকি দেওয়া হয়েছে—এমন কথা শোনা গেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কাছে হত্যার হুমকির কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই, তবে আমরা এটাও শুনেছি যে, হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সেটি হয়তো বিক্ষোভকারীদের কেউ বলেছিল। কিন্তু আমার মূল প্রশ্ন হলো, প্রথমত তারা কীভাবে এত দূর আসতে পারল এবং কীভাবে সেখানে হুমকি দিতে পারল?’

আন্তর্জাতিক রীতিনীতির কথা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত বিক্ষোভকারীদের আগেই কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয় এবং পুলিশ তাদের দূরে আটকে দেয়। কখনো কখনো কেবল একজন বা দুজন প্রতিনিধিকে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে যা ঘটেছে, আমরা তা মানতে পারছি না।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ মনে করে, এ ঘটনায় স্বাভাবিক নিরাপত্তা বিধি ও প্রটোকল যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।

উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সে দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে অবহিত করেছে এবং আশা প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না।

ঢাকার প্রতিবাদের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, উভয় পক্ষ কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছে এবং নিজ নিজ অবস্থান জানাচ্ছে। তবে ভারতের প্রেস নোট প্রকাশের পর বাংলাদেশ প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, ঢাকা এখনো ভারতের ওপর আস্থা রাখে যে, তারা যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে উপস্থিতি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটি শুধু স্লোগানের বিষয় নয়। তিনি উল্লেখ করেন, হাইকমিশনার ও তাঁর পরিবার মিশন প্রাঙ্গণেই বসবাস করে এবং সে সময় সেখানে মাত্র দুজন নিরাপত্তাকর্মী থাকায় তাঁরা হুমকির মুখে পড়েছেন।

উপদেষ্টা বলেন, কূটনৈতিক মিশন ও কর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং এসব বক্তব্য বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানই প্রতিফলিত করে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশে একজন নাগরিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং একাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তারও হয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের ঘটনা পুরো অঞ্চলেই ঘটে এবং প্রতিটি দেশেরই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ সে দায়িত্ব পালন করছে এবং অন্যদেরও একইভাবে কাজ করা উচিত।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্র সেনা’র ব্যানারে একদল উগ্র হিন্দু কর্মী দিল্লিতে বাংলাদেশ হাউসের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ