Ajker Patrika

মানবতাবিরোধী অপরাধ: নির্বাচনের আগেই হতে পারে ৪ মামলার রায়

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা  
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৫৩
শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত বছরের জুলাই-আগস্টে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আগামী নভেম্বরে ঘোষণা করা হতে পারে। আরও তিনটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ডিসেম্বরে শেষ হয়ে রায় হতে পারে আগামী বছরের জানুয়ারিতে।

এসব মামলায় আসামি রয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাসহ ৫৭ জন। অর্থাৎ, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার রায় হতে পারে। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার ব্যাপারেও আশাবাদী প্রসিকিউশন।

জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ট্রাইব্যুনাল-২-এ। বর্তমানে এ দুই ট্রাইব্যুনালে চারটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলায় সর্বশেষ সাক্ষীর জবানবন্দি গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাঁর জেরা শেষ হলে এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হবে। এরপর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল।

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা এই মামলার বিচারকাজ চলছে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ। তদন্ত কর্মকর্তাসহ এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)

আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। এর বাইরে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সদ্য প্রয়াত লেখক-গবেষক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের দেওয়া জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের সময় বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন ও কল রেকর্ড শোনানো হয়।

প্রসিকিউশন জানায়, এই মামলায় আর সাক্ষ্য নেওয়া হবে না। আগামী সোমবার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জেরা করা হবে। এরপর উভয় পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। পরে মামলাটির রায়ের জন্য দিন ধার্য করবেন ট্রাইব্যুনাল। সে হিসেবে চলতি অক্টোবরের মাঝামাঝি শেষ হতে পারে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম। রায় হতে পারে নভেম্বরে।

আদালত অবমাননার একটি মামলায় এরই মধ্যে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১।

জানতে চাইলে এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, শেখ হাসিনার মামলায় জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষ হতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। রায় লিখতে একটু সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে এই মামলার রায় নভেম্বরে হতে পারে।

চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণও বেশ এগিয়েছে। এ পর্যন্ত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এই মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের আট সদস্য আসামি। তাঁদের মধ্যে চারজন পলাতক।

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার পর পাঁচটি লাশ ও জীবন্ত একজনকে পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলার বিচারকাজ চলছে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২-এ। এই মামলায় ইতিমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাতজন। মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন আটজন। সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ আট আসামি পলাতক।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণও চলছে ট্রাইব্যুনাল-২-এ। এই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন। আসামিদের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ শিক্ষক, নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা এবং পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন।

প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, রামপুরায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আসামিরা পুলিশের সদস্য। কুষ্টিয়ায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক আট অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। তা আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের জন্য ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-২।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী এম এইচ তামীম বলেন, ‘রামপুরা, চানখাঁরপুল, হাসানুল হক ইনু, আশুলিয়ায় হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ও আবু সাঈদের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে সপ্তাহখানেক লাগতে পারে। এরপর রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন ট্রাইব্যুনাল। সব অভিযোগ প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে রয়েছে। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।’ তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) ও জুনাইদ আহমেদ পলকসহ (সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী) অন্তত ১০ জনের বিরুদ্ধে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এরপরই তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে। বিচার কার্যক্রম শুরুর পর এসব মামলায়ও জানুয়ারির মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করা যাবে বলে আশা করি।’

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর কল্যাণপুরের ‘জাহাজবাড়ী’তে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ৯ জনকে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে রয়েছেন সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক ডিসি জসিম উদ্দিন মোল্লা। গুমের মামলায় কারাগারে রয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, র‍্যাবের সাবেক কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন ও মহিউদ্দিন ফারুকী। উত্তরায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ ছয়জন কারাগারে রয়েছেন। এসব মামলার তদন্ত চলছে।

জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে কারাগারে থাকা সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, আমির হোসেন আমু, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী ও ডা. দীপু মনি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গ্রেপ্তার দেখানো অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম এবং সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সাভারে পুলিশের এপিসি থেকে আসহাবুল ইয়ামিনকে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় কারাগারে রয়েছেন বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ওরফে সুজনসহ চারজন। ওই মামলায় আসামি ১৩ জন। মহাখালী-তেজগাঁওয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নাসির কারাগারে রয়েছেন। এই দুই মামলারও তদন্ত চলছে।

এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে হত্যাকাণ্ড, কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরাম হত্যা, চট্টগ্রামে ওয়াসিম হত্যাসহ রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, রাজশাহী, গাজীপুর ও লক্ষ্মীপুরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা পৃথক মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলে ট্রাইব্যুনালের সূত্র জানায়।

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান ছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে আরও কয়েকটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে। আমি ন্যায়বিচারের জন্য আদালতকে সহায়তা করব। রায় কী হবে, সেটা আদালতের বিষয়। তবে আইনজীবী হিসেবে আমার আসামিরা খালাস পাবেন বলেই আশা থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ, দুই যুবক আটক

দূতাবাসে আফগানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারীদের বাধা, ‘কোনো ভূমিকা নেই’ বলল ভারত

বিয়ের আংটি পরলেন ইশরাক

ওকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: মাচাদোর সঙ্গে ফোনালাপ শেষে বললেন ট্রাম্প

চীনা পণ্যে আরও ১০০ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা ট্রাম্পের, অস্থির বিশ্ববাজার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত