Ajker Patrika

আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে: ট্রাইব্যুনালে উপদেষ্টা আসিফ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি ফেসবুক
স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি ফেসবুক

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে গত বছরের ১৮ জুলাই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুড়িয়ে দিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয় বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এ কথা জানান তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বেলা ২টার দিকে ট্রাইব্যুনালে আসেন। পরে এজলাসে আসেন ২টা ৩৫ মিনিটে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ নিয়ে সাক্ষ্য দিলেন ১৯ জন। তবে আসিফ মাহমুদের জবানবন্দি শেষ না হওয়ায় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

আসিফ মাহমুদ জবানবন্দিতে বলেন, ‘কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে গত বছরের ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং ব্লক রেইড দিয়ে ব্যাপক মাত্রায় ধরপাকড় শুরু করা হয়। সেদিন রাতে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। ওই দিন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর ব্যাপকভাবে গুলিবর্ষণ করে। সেদিন সারা দেশে কমপক্ষে ২৯ জন আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার খবর পাই। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাদের সঙ্গে আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য যোগাযোগ করে।’

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। ওই দিন সারা দেশে শতাধিক নিহত হওয়ার খবর পাই। সেদিন রাতে ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে ডিবি পরিচয়ে কিছু লোক আমাকে মাথায় কালো টুপি পরিয়ে তুলে নিয়ে যায়। ওই রাতে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে আন্দোলন প্রত্যাহারে একটি ভিডিও বার্তা প্রদানের জন্য চাপ দেওয়া হয়। আমি রাজি না হলে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ফেলে রাখে। ২৪ জুলাই সকালে আমাকে নিকেতনস্থ সেই স্থানে রেখে যায়। আমাকে তুলে নিয়ে যে রুমে রাখা হয় তা ৫ আগস্ট পরবর্তীকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়ে বুঝতে পারি, এটি সেই জায়গা।’

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘গত বছরের ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে এক দফা কর্মসূচি এবং অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করি। উক্ত কর্মসূচিতে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করে। ৪ আগস্ট সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগে আমাদের সমাবেশ ছিল। সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগে আমাদের সমাবেশস্থলে পুলিশ গুলি চালায়। সেখানে কমপক্ষে চারজন নিহত হয় এবং অসংখ্য আন্দোলনকারী আহত হয় মর্মে খবর পাই। সেদিন বিকেলে ৫ আগস্ট সারা দেশে বিক্ষোভ ও ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে মর্মে আমরা জানতে পারি। তাই আমি সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে দুই ঘণ্টার মধ্যে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ৬ তারিখের পরিবর্তে ৫ তারিখে পালনের আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তা প্রচার করি।’

আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি পালনের জন্য সারা দেশ থেকে সাধারণ জনগণ ঢাকা অভিমুখে আসতে শুরু করে। আমি, সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ও সমন্বয়ক মোয়াজ্জেম হোসেন চানখাঁরপুল হয়ে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি। সে সময় পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা নাজিম উদ্দিন রোডসহ চানখাঁরপুল এলাকায় অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে একের পর এক আন্দোলনকারী আহত হয়। আমার সামনে পুলিশের গুলিতে দুজন আন্দোলনকারী নিহত হয়। পরবর্তীতে জানতে পারি ওই দিন চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত