Ajker Patrika

বিসিএস নিয়োগ: নিজেই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকে

  • দলসংশ্লিষ্টতার তথ্য অনেক প্রার্থী নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন
  • পুলিশ ভেরিফিকেশনের সেসব তথ্যের প্রমাণ যাচাই করা হচ্ছে
  • রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে ৪৩তম বিসিএসের ৯৯ জন বাদ
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ২১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে দেখা হচ্ছে। যাঁদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলবে, তাঁদের নিয়োগ ঝুলে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খোঁজা পুলিশের কাজ নয়। নিয়ম মেনে পুলিশ ভেরিফিকেশন করে এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে।

সূত্র বলেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার থাকাকালে গত ১৫ বছরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যাঁদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশের পরও তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে পতিত সরকারের সময়ে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ১৪ আগস্ট তাঁদের নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে।

জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ক্যাডার পদে ২ হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল পিএসসি। তাঁদের তথ্য-উপাত্ত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশের এসবিকে দিয়ে আবার যাচাই করলে প্রায় একই ধরনের তথ্য আসে। এরপর গত মাসেই ৪৩তম বিসিএসের ২ হাজার ৬৪ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নিয়োগের জন্য পিএসসির সুপারিশ পাওয়া ৯৯ জনকে গেজেটভুক্ত করা হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৪৩তম বিসিএসে গেজেটভুক্তদের ১৭ নভেম্বরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশনে যাঁদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য রয়েছে, সেগুলো আবার যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য গেজেটভুক্তদের ১৭ নভেম্বরের পরিবর্তে ১ জানুয়ারি যোগ দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এসবির রিপোর্টে অনেকের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেসব প্রমাণ যাচাই করছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পতিত সরকারের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন এমন কাউকেই বিসিএসের মতো চাকরিতে আনতে চায় না সরকার। এ জন্য জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরকে (ডিজিএফআই) দিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, এর আগে বাদ দেওয়া প্রার্থীদের তথ্যও আবার যাচাই করা হচ্ছে। তাঁর ধারণা, তাঁদের অনেকে গেজেটভুক্ত হবেন এবং আগে গেজেটভুক্তদের কেউ কেউ বাদ পড়বেন।

সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক পুলিশি প্রতিবেদন দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এ জন্য সরকারি চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনেকেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য নিজ উদ্যোগেই পুলিশকে দিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তারাও নিজের সুবিধার কথা ভেবে সেসব তথ্য যুক্ত করেই ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। সেসব তথ্যই এখন অনেকের জন্য চাকরি হারানোর শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন প্রার্থীর প্রাক্-যাচাই ফরমে ১৬ ধরনের তথ্য দিতে হয়। সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি তিনি কোনো মামলায় গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হয়েছেন কি না, এই তথ্যও চাওয়া হয়। উত্তীর্ণ হওয়ার পর এসব যাচাই করে এসবি প্রতিবেদন দেয়। এর বাইরে অন্য কোনো তথ্য যাচাইয়ের কথা না থাকলেও বছরের পর বছর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রার্থীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করছে। যদিও ফৌজদারি অপরাধ করে না থাকলে কাউকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগবঞ্চিত করা যায় না।

৪৩তম বিসিএসে গেজেটভুক্ত একজন প্রার্থী বলেন, তিনি কখনোই ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি তৎকালীন সরকারদলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি তিনি পুলিশকে অনুরোধ করে লিখিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় তৎকালীন এমপির একটি প্রত্যয়নপত্রও ভেরিফিকেশনের সময় পুলিশকে দিয়েছিলেন। বর্তমানে পলাতক ওই এমপি কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এসব জানলে গেজেট বাতিল হয় কি না, সেই চিন্তায় আছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, শুধু ৪৩তম বিসিএস নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এর আগে কয়েকটি বিসিএসে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁদের বেশি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে, সেসব আবার যাচাই করা হবে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের আগে কোনো প্রার্থী ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কি না এবং তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ আছে কি না, সেটি পুলিশের খতিয়ে দেখার কথা। কে কোন দল করেন, কোন সংগঠনের সদস্য, সেটি পুলিশের বিবেচনার বিষয় নয়। কিন্তু গত সরকারের সময় এটিই প্রাধান্য পেয়েছে। এটি উচিত নয়। কারণ, বাংলাদেশের সব নাগরিকের সরকারি চাকরি পাওয়ার অধিকার আছে। তিনি বলেন, নিয়ম মেনে পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজটি করলে অযথা কেউ চাকরি থেকে বঞ্চিত হবেন না।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে কাউকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগবঞ্চিত করার সুযোগ নেই বলে জানান ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া গেলে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, এটা তো কোনো কথা নয়। কারণ, আমার রাজনৈতিক পরিচয় তো আমার সাংবিধানিক অধিকার। আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস তো কোনো অবৈধ কিছু না। আওয়ামী লীগ সরকার এটিকে ট্রেন্ড হিসেবে তৈরি করেছিল বলে এখনকার সরকারও করবে, এটার কোনো যুক্তি নেই। এই কালচার বন্ধ করা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদনের শেষ দিন আগামী সোমবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে আগামী সোমবার।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক আজ শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যাঁরা ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চান, তাঁদের ১০ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে।

এর আগে ৪ নভেম্বর ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরীর সই করা এ-সংক্রান্ত চিঠি সব উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।

আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে ভোটার স্থানান্তরের আবেদন নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার আগে আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে ভোটার স্থানান্তরের আবেদন দাখিল ও দাখিল করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে বিস্তারিত সময়সূচির অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হলে ফরম-১৩ পূরণ করে যে এলাকায় যেতে ইচ্ছুক, সংশ্লিষ্ট সেই উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে আবেদন জমা দিতে হবে।

এরই মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। দাবি-আপত্তি শেষে আগামী ১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আগামী ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তফসিল ঘোষণা করে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার কর্মবিরতি ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষকেরা।

প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

এদিকে আজ শনিবার শিক্ষকদের ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ ভন্ডুল করে দেওয়া হয়েছে। আজ বিকেলে শিক্ষকেরা কলম সমর্পণ কর্মসূচি পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়।

জানতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম ‘প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, ‘কলম সমর্পণ কর্মসূচি শেষে আমাদের শহীদ মিনারে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশি হামলায় শাহবাগে অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।’

এ বিষয়ে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিকেল ৫টায় দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তী সময় পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আজ সকাল থেকে তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও তাঁদের বাকি দুই দাবি হলো—চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চার শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করছে। প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ ছাড়াও এই মোর্চায় আছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭। এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।

গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকেরা। পরে আজ থেকে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’।

এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না এলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে: শফিকুল আলম

বাসস, ঢাকা  
‘রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলিত করতে পারে’ শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: বাসস
‘রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলিত করতে পারে’ শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: বাসস

রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। দলটির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে জাতির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ‘অস্তিত্বের হুমকি’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

আজ শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ট্রেস কনসাল্টিং আয়োজিত ‘রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলিত করতে পারে’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, “শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে এখন সবার একটি স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া জরুরি। তিনি এখনো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রেস সচিব বলেন, “তিনি বাংলাদেশের জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আমি মনে করি, এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অস্তিত্বের হুমকি। একজন মানুষকে যখন ‘সন্ত্রাসী’ বলা হয়, তখন আসলে তাঁকে হত্যাযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি কি ১৮ কোটি মানুষকে শত্রু ঘোষণা করে আবার ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছেন?”

সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘এনায়েতুল্লাহ খান একসময় লিখেছিলেন— ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে কোলাবরেটরস বা রাজাকার বানিয়েছিলেন, আর এখন তাঁর মেয়ে ১৮ কোটি মানুষকে সন্ত্রাসী বলছেন! এটা কল্পনাতীত।’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, ‘সরকার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ নিয়ে কোনো দ্বিধা-সংকোচ থাকা উচিত নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘শাসন ব্যবস্থা ও জুলাই সনদ নিয়ে বিতর্ক সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। সারা বিশ্বে সংবিধান সংক্রান্ত বিতর্কে সময় লাগে, কখনো তা দশক ধরেও চলে। রাতারাতি কোনো সমাধান চাপিয়ে দেওয়া যায় না।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনিশ্চয়তা দূর করতে ম্যান্ডেট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা এখন একটি ফ্র্যাকচারড পলিটিক্যাল সিচুয়েশন দেখছি। এখন ডান, বাম ও মধ্যপন্থী সব পক্ষের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক সমাধান প্রয়োজন।’

অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ট্রেস-এর সিইও ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন, বাংলাদেশ কটন ও কনফেকশনরি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম।

প্যানেল আলোচনায় সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান। এতে কূটনীতিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুভেচ্ছা সফরে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের পক্ষ থেকে চিফ স্টাফ অফিসার জাহাজের কর্মকর্তা ও নাবিকদের স্বাগত জানান। ছবি: আইএসপিআর
জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের পক্ষ থেকে চিফ স্টাফ অফিসার জাহাজের কর্মকর্তা ও নাবিকদের স্বাগত জানান। ছবি: আইএসপিআর

চার দিনের শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ পিএনএস সাইফ (PNS SAIF)। আজ শনিবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছালে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের পক্ষ থেকে চিফ স্টাফ অফিসার জাহাজের কর্মকর্তা ও নাবিকদের স্বাগত জানান। এ সময় নৌবাহিনীর সুসজ্জিত বাদকদল ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী ব্যান্ড পরিবেশন করে।

জাহাজটিকে স্বাগত জানাতে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রতিনিধিসহ নৌবাহিনীর স্থানীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা স্বাধীনতা তাদের অভ্যর্থনা জানায়। বিকেলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থানকালে জাহাজটির অধিনায়ক ও অন্যান্য কর্মকর্তাসহ একটি প্রতিনিধিদল কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চল, কমান্ডার বিএন ফ্লিট, এরিয়া সুপারিনটেনডেন্ট ডকইয়ার্ডের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলে অবস্থানকালে জাহাজের অফিসার, নাবিক ও প্রশিক্ষণার্থীগণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান, নৌবাহিনী জাহাজ ও ঘাঁটি পরিদর্শন করবেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকেরা পাকিস্তানের জাহাজটি পরিদর্শন করবেন।

পাকিস্তান নৌবাহিনী জাহাজের এই বাংলাদেশ সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুভেচ্ছা সফর শেষে জাহাজটি ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ ত্যাগ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত